ফারুক মেহেদী
আমাদের কাজ হচ্ছে একটি সুন্দর, উদার, দ্রুত অগ্রসরমাণ দেশকে এর এগিয়ে চলার যে গতি তাকে সচল রাখা–সব ভুল-বোঝাবুঝি ভুলে গিয়ে, ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাতনির্বিশেষে, অসুস্থ রাজনৈতিক হানাহানি, সাম্প্রদায়িক রক্তারক্তি থেকে বের হয়ে আসা।
কয়েক দিন ধরে খবরের কাগজে একটি ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। ছবিটি যেন কিছুক্ষণ পর পর আমার চোখের সামনে এসে উঁকি দিচ্ছে! যখনই ছবিটি দেখি বা ছবিটি মনে পড়ে, তখনই মনটা ভালো হয়ে যায়। শুধু ছবিটি দেখতে সুন্দর বলে নয়; এ ছবিটির মধ্যে আমি আসলে বাংলাদেশকেই দেখি। একটি অন্য রকম বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের গল্প বুনে যাচ্ছে!
বলছি পায়রা-লেবুখালী সেতুর কথা। সেতুটি দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। তবে উদ্বোধনের আগে থেকেই এর একটি সুন্দর ছবি প্রকাশ হয় খবরের কাগজে। পায়রা নদীর এপার আর ওপারকে সংযুক্ত করা দৃষ্টিনন্দন সেতুর ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে! ভাবি, সেতু হওয়ার আগে তাঁদের কত না ভোগান্তি সইতে হয়েছে! সেতুটি এখন শুধু দুই অঞ্চলের মানুষের চলাচলের পথ সহজ করেনি; বরং এটি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার অসংখ্য গল্পের একটি। হাজারো সমস্যা, কষ্ট, সংগ্রাম পেরিয়ে একটি দেশের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর গল্প তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। আমি মনে করি এটিই বাংলাদেশের আসল সৌন্দর্য।
এখন দেশজুড়ে চলছে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনার প্রতিক্রিয়া। শান্তির ধর্ম ইসলামকে ভুল ব্যাখ্যা করে একটি চক্র বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি ধ্বংস করে এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা করছে না, এটা বলা যায় না। ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ধর্মীয় উগ্রপন্থা, উন্মাদনা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন—এসবই একটি সুন্দর, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রগতিশীল ও সার্বিকভাবে এগিয়ে চলা একটি দেশকে বিশ্বদরবারে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিন্তু এটিই বাংলাদেশ নয়। কারও ঘরে ঢিল ছুড়ে রক্তের নেশায় ছুরি হাতে নেওয়ার এমন ছবি বাংলাদেশের ছবি নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে শিকারে পরিণত করা–বাংলাদেশের আসল চিত্র নয়; বরং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মুসলমান বন্ধুর মৃত্যুতে তার কবরের পাশে গিয়ে কান্নারত এক মনভাঙা হিন্দুর গল্পই আসল বাংলাদেশ। অথচ এ ছবি নিয়ে শোরগোল কম। পাকিস্তানের অত্যাচার, নির্যাতন আর শোষণ থেকে লাখো মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে বাংলাদেশের জন্ম, ধ্বংসস্তূপের ওপর গোলাবারুদের ছাইভস্মে যে বাংলাদেশ, তার স্বরূপ অনেক উঁচুতে।
গত ৫০ বছরের বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত। ভাঙা সড়ক, সেতু, কুপির আলোয় ঘুটঘুটে অন্ধকারের দেশ নয় এখন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন পদ্মা সেতুর দেশ। যে সেতু তৈরিতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল বিছানো ছিল সুনিপুণভাবে। শত ষড়যন্ত্র, সমালোচনা, বিতর্ক, প্রতিবন্ধকতার মুখে চুনকালি দিয়ে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। এ সেতু যেন শুধু এপার-ওপারই জুড়ে দেয়নি; বরং মিলন ঘটিয়েছে ভালোবাসা ও বিরহেরও! এ সংযোগ যেন আস্থা, আত্মবিশ্বাস আর সক্ষমতার। নদীর ওপর মাইলের পর মাইল যেন রূপকথার বিমূর্ত ছবি! অথচ রূপকথা নয় এটি; বরং এটিই আসল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের কাজ-কর্মহীন জনপদে এখন ব্যস্ত মেশিনের শব্দ। দল বেঁধে অবহেলিত নারীদের কাজে যোগ দেওয়ার মনোরম ছবি। ফসলের মাঠে মনজুড়ানো ধান, গম, সরিষা, আলু, টমেটোসহ নানান জাতের শাকসবজির বিপুল সমাহার। ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাতনির্বিশেষে মিলেমিশে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ছবি বাংলাদেশ। নিজের চেষ্টায় হাঁস-মুরগি পালন, পোলট্রি, ডেইরি খামার করে লাখো নারী, পুরুষ-তরুণের জীবন বদলে দেওয়ার গল্প বাংলাদেশ। শূন্য থেকে শুরু করা লাখো তরুণের চোখের সামনে তার সোনা ফলানো মৎস্য খামারে রুপালি মাছের ছবির চেয়ে সুন্দর ছবি আর কী হতে পারে!
রূপপুরের আকাশে উঠে যাচ্ছে পারমাণবিক চুল্লির চিমনি। যে পদার্থে বিশ্বময় বোমা আর বিস্ফোরক বানিয়ে রক্তারক্তির আয়োজন চলে পরাশক্তিদের; তা দিয়ে ঘরে ঘরে আলো আর অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে মানুষের ভাগ্য বদলে দেওয়ার গল্প বাংলাদেশ। প্রতিটি গ্রামে যার যা কিছু আছে তাই দিয়ে নিজেরাই লিখছে নিজেদের ভাগ্যবদলের গল্প। কে ভেবেছিল বাংলাদেশের নারীদের হাতের স্পর্শে তৈরি হওয়া ইউনিফর্ম পরবেন ন্যাটোর সেনাসদস্যরা? আর কারই-বা ধারণায় ছিল আমাদের রাবেয়া, আলেয়া, সালেহাদের নিপুণ হাতের তৈরি জামা উঠবে ইউরোপ-আমেরিকার সুন্দরীদের গায়ে?
মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষক হেনরি কিসিঞ্জারের দম্ভভরা বুলি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয় এখন বাংলাদেশ। প্রায় শতবর্ষী এ মার্কিন বেঁচে আছেন। নিশ্চয় তিনিই দেখছেন, জানছেন তাঁর দেশের গণমাধ্যমই বাংলাদেশকে কীভাবে ছাইভস্ম থেকে ফিনিক্স পাখি হয়ে নীল আকাশে উড়ে চলা বাংলাদেশের ছবির গল্প বলছে। তিনি হয়তো এ-ও দেখছেন তাঁরা যে পোশাক পরছেন, তার বেশির ভাগ ধ্বংসস্তূপ থেকে ফুল হয়ে ওঠা বাংলাদেশের তৈরি।
বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা ক্যানভাসে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এটা বিশ্বময় রূপান্তরিত বাংলাদেশের ছবি। জীবনসংগ্রামের সাফল্য আর মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার প্রতীক এই স্যাটেলাইট। আর এটিই আসল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ যখন সাবমেরিন কেনে, তখন অনেকের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিল। প্রতিবেশী অনেক দেশের টিভির পর্দায় সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। পত্রিকার পাতাজুড়ে টিপ্পনী আর নানান ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা! পানির নিচে সমরাস্ত্রবাহী যান শুধু একটি সাবমেরিন নয়; এটি বাংলাদেশের আরেক পরিচয়। এর মধ্য দিয়ে ফিনিক্স পাখির পালকে যুক্ত হয় আত্মবিশ্বাস আর সক্ষমতার নতুন স্বীকৃতি।
কে ভেবেছিল কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে এপার-ওপার করা যাবে? হ্যাঁ, এমন স্বপ্ন হয়তো দেখেছেন কেউ কেউ। কিন্তু সেটা স্বপ্ন। আসলে এটা কি এখন স্বপ্ন? না, স্বপ্ন নয়, সত্যি। দেশের প্রথম টানেলটির একাংশ পুরো তৈরি। আরেক অংশও তৈরি হয়ে যাচ্ছে। একদা অপরিকল্পিত শহর ঢাকার যানজট নিরসনে বিপুল অঙ্কের বাজেটে নির্মিতব্য মেট্রোরেলও এখন বাস্তবতা। ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে একের পর এক। একটি-দুটি নয়, একে একে তৈরি হচ্ছে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। সারা দেশে আমূল বদলে যাচ্ছে সড়ক নেটওয়ার্ক। সর্বত্র অবকাঠামো খাতে বিপুল রূপান্তর চলছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি। দেশে বসেই তরুণেরা আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, আর প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মূল্যবোধে সমৃদ্ধ, পরিমিত উদার দেশের ছবিই বাংলাদেশ।
একটি দেশ যখন এগিয়ে যাওয়ার রসদ নিয়ে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত; একদল একে টেনে নামানোর হীনস্বার্থে ব্যস্ত। যে দেশটি রোহিঙ্গাদের মতো ১১-১২ লাখ বাড়তি মানুষকে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, বছরের পর বছর তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে, তাদের সঙ্গে মানুষ হিসেবে মানুষের মতো আচরণ করছে, সেই দেশটি আর যা-ই হোক সাম্প্রদায়িক হতে পারে না।
আমাদের কাজ হচ্ছে একটি সুন্দর, উদার, দ্রুত অগ্রসরমাণ দেশকে এর এগিয়ে চলার যে গতি, তাকে সচল রাখা—সব ভুল-বোঝাবুঝি ভুলে গিয়ে, ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাতনির্বিশেষে, অসুস্থ রাজনৈতিক হানাহানি, সাম্প্রদায়িক রক্তারক্তি থেকে বের হয়ে আসা। কোনো ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের কাজ, আয়, মর্যাদাহানি আর বিশ্বে নিজেদের খাটো করার যেকোনো অপচেষ্টা থেকে দূরে থাকতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে না বলে রূপান্তরের বাংলাদেশকে সঙ্গী করে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা।
আমাদের কাজ হচ্ছে একটি সুন্দর, উদার, দ্রুত অগ্রসরমাণ দেশকে এর এগিয়ে চলার যে গতি তাকে সচল রাখা–সব ভুল-বোঝাবুঝি ভুলে গিয়ে, ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাতনির্বিশেষে, অসুস্থ রাজনৈতিক হানাহানি, সাম্প্রদায়িক রক্তারক্তি থেকে বের হয়ে আসা।
কয়েক দিন ধরে খবরের কাগজে একটি ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। ছবিটি যেন কিছুক্ষণ পর পর আমার চোখের সামনে এসে উঁকি দিচ্ছে! যখনই ছবিটি দেখি বা ছবিটি মনে পড়ে, তখনই মনটা ভালো হয়ে যায়। শুধু ছবিটি দেখতে সুন্দর বলে নয়; এ ছবিটির মধ্যে আমি আসলে বাংলাদেশকেই দেখি। একটি অন্য রকম বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ একটি রূপান্তরের গল্প বুনে যাচ্ছে!
বলছি পায়রা-লেবুখালী সেতুর কথা। সেতুটি দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। তবে উদ্বোধনের আগে থেকেই এর একটি সুন্দর ছবি প্রকাশ হয় খবরের কাগজে। পায়রা নদীর এপার আর ওপারকে সংযুক্ত করা দৃষ্টিনন্দন সেতুর ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে! ভাবি, সেতু হওয়ার আগে তাঁদের কত না ভোগান্তি সইতে হয়েছে! সেতুটি এখন শুধু দুই অঞ্চলের মানুষের চলাচলের পথ সহজ করেনি; বরং এটি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার অসংখ্য গল্পের একটি। হাজারো সমস্যা, কষ্ট, সংগ্রাম পেরিয়ে একটি দেশের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর গল্প তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। আমি মনে করি এটিই বাংলাদেশের আসল সৌন্দর্য।
এখন দেশজুড়ে চলছে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনার প্রতিক্রিয়া। শান্তির ধর্ম ইসলামকে ভুল ব্যাখ্যা করে একটি চক্র বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি ধ্বংস করে এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা করছে না, এটা বলা যায় না। ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ধর্মীয় উগ্রপন্থা, উন্মাদনা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন—এসবই একটি সুন্দর, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রগতিশীল ও সার্বিকভাবে এগিয়ে চলা একটি দেশকে বিশ্বদরবারে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিন্তু এটিই বাংলাদেশ নয়। কারও ঘরে ঢিল ছুড়ে রক্তের নেশায় ছুরি হাতে নেওয়ার এমন ছবি বাংলাদেশের ছবি নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে শিকারে পরিণত করা–বাংলাদেশের আসল চিত্র নয়; বরং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মুসলমান বন্ধুর মৃত্যুতে তার কবরের পাশে গিয়ে কান্নারত এক মনভাঙা হিন্দুর গল্পই আসল বাংলাদেশ। অথচ এ ছবি নিয়ে শোরগোল কম। পাকিস্তানের অত্যাচার, নির্যাতন আর শোষণ থেকে লাখো মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে বাংলাদেশের জন্ম, ধ্বংসস্তূপের ওপর গোলাবারুদের ছাইভস্মে যে বাংলাদেশ, তার স্বরূপ অনেক উঁচুতে।
গত ৫০ বছরের বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত। ভাঙা সড়ক, সেতু, কুপির আলোয় ঘুটঘুটে অন্ধকারের দেশ নয় এখন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন পদ্মা সেতুর দেশ। যে সেতু তৈরিতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল বিছানো ছিল সুনিপুণভাবে। শত ষড়যন্ত্র, সমালোচনা, বিতর্ক, প্রতিবন্ধকতার মুখে চুনকালি দিয়ে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। এ সেতু যেন শুধু এপার-ওপারই জুড়ে দেয়নি; বরং মিলন ঘটিয়েছে ভালোবাসা ও বিরহেরও! এ সংযোগ যেন আস্থা, আত্মবিশ্বাস আর সক্ষমতার। নদীর ওপর মাইলের পর মাইল যেন রূপকথার বিমূর্ত ছবি! অথচ রূপকথা নয় এটি; বরং এটিই আসল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের কাজ-কর্মহীন জনপদে এখন ব্যস্ত মেশিনের শব্দ। দল বেঁধে অবহেলিত নারীদের কাজে যোগ দেওয়ার মনোরম ছবি। ফসলের মাঠে মনজুড়ানো ধান, গম, সরিষা, আলু, টমেটোসহ নানান জাতের শাকসবজির বিপুল সমাহার। ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাতনির্বিশেষে মিলেমিশে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ছবি বাংলাদেশ। নিজের চেষ্টায় হাঁস-মুরগি পালন, পোলট্রি, ডেইরি খামার করে লাখো নারী, পুরুষ-তরুণের জীবন বদলে দেওয়ার গল্প বাংলাদেশ। শূন্য থেকে শুরু করা লাখো তরুণের চোখের সামনে তার সোনা ফলানো মৎস্য খামারে রুপালি মাছের ছবির চেয়ে সুন্দর ছবি আর কী হতে পারে!
রূপপুরের আকাশে উঠে যাচ্ছে পারমাণবিক চুল্লির চিমনি। যে পদার্থে বিশ্বময় বোমা আর বিস্ফোরক বানিয়ে রক্তারক্তির আয়োজন চলে পরাশক্তিদের; তা দিয়ে ঘরে ঘরে আলো আর অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে মানুষের ভাগ্য বদলে দেওয়ার গল্প বাংলাদেশ। প্রতিটি গ্রামে যার যা কিছু আছে তাই দিয়ে নিজেরাই লিখছে নিজেদের ভাগ্যবদলের গল্প। কে ভেবেছিল বাংলাদেশের নারীদের হাতের স্পর্শে তৈরি হওয়া ইউনিফর্ম পরবেন ন্যাটোর সেনাসদস্যরা? আর কারই-বা ধারণায় ছিল আমাদের রাবেয়া, আলেয়া, সালেহাদের নিপুণ হাতের তৈরি জামা উঠবে ইউরোপ-আমেরিকার সুন্দরীদের গায়ে?
মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষক হেনরি কিসিঞ্জারের দম্ভভরা বুলি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয় এখন বাংলাদেশ। প্রায় শতবর্ষী এ মার্কিন বেঁচে আছেন। নিশ্চয় তিনিই দেখছেন, জানছেন তাঁর দেশের গণমাধ্যমই বাংলাদেশকে কীভাবে ছাইভস্ম থেকে ফিনিক্স পাখি হয়ে নীল আকাশে উড়ে চলা বাংলাদেশের ছবির গল্প বলছে। তিনি হয়তো এ-ও দেখছেন তাঁরা যে পোশাক পরছেন, তার বেশির ভাগ ধ্বংসস্তূপ থেকে ফুল হয়ে ওঠা বাংলাদেশের তৈরি।
বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা ক্যানভাসে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এটা বিশ্বময় রূপান্তরিত বাংলাদেশের ছবি। জীবনসংগ্রামের সাফল্য আর মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার প্রতীক এই স্যাটেলাইট। আর এটিই আসল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ যখন সাবমেরিন কেনে, তখন অনেকের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিল। প্রতিবেশী অনেক দেশের টিভির পর্দায় সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। পত্রিকার পাতাজুড়ে টিপ্পনী আর নানান ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা! পানির নিচে সমরাস্ত্রবাহী যান শুধু একটি সাবমেরিন নয়; এটি বাংলাদেশের আরেক পরিচয়। এর মধ্য দিয়ে ফিনিক্স পাখির পালকে যুক্ত হয় আত্মবিশ্বাস আর সক্ষমতার নতুন স্বীকৃতি।
কে ভেবেছিল কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে এপার-ওপার করা যাবে? হ্যাঁ, এমন স্বপ্ন হয়তো দেখেছেন কেউ কেউ। কিন্তু সেটা স্বপ্ন। আসলে এটা কি এখন স্বপ্ন? না, স্বপ্ন নয়, সত্যি। দেশের প্রথম টানেলটির একাংশ পুরো তৈরি। আরেক অংশও তৈরি হয়ে যাচ্ছে। একদা অপরিকল্পিত শহর ঢাকার যানজট নিরসনে বিপুল অঙ্কের বাজেটে নির্মিতব্য মেট্রোরেলও এখন বাস্তবতা। ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে একের পর এক। একটি-দুটি নয়, একে একে তৈরি হচ্ছে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। সারা দেশে আমূল বদলে যাচ্ছে সড়ক নেটওয়ার্ক। সর্বত্র অবকাঠামো খাতে বিপুল রূপান্তর চলছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি। দেশে বসেই তরুণেরা আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি, আর প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মূল্যবোধে সমৃদ্ধ, পরিমিত উদার দেশের ছবিই বাংলাদেশ।
একটি দেশ যখন এগিয়ে যাওয়ার রসদ নিয়ে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত; একদল একে টেনে নামানোর হীনস্বার্থে ব্যস্ত। যে দেশটি রোহিঙ্গাদের মতো ১১-১২ লাখ বাড়তি মানুষকে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, বছরের পর বছর তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে, তাদের সঙ্গে মানুষ হিসেবে মানুষের মতো আচরণ করছে, সেই দেশটি আর যা-ই হোক সাম্প্রদায়িক হতে পারে না।
আমাদের কাজ হচ্ছে একটি সুন্দর, উদার, দ্রুত অগ্রসরমাণ দেশকে এর এগিয়ে চলার যে গতি, তাকে সচল রাখা—সব ভুল-বোঝাবুঝি ভুলে গিয়ে, ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাতনির্বিশেষে, অসুস্থ রাজনৈতিক হানাহানি, সাম্প্রদায়িক রক্তারক্তি থেকে বের হয়ে আসা। কোনো ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের কাজ, আয়, মর্যাদাহানি আর বিশ্বে নিজেদের খাটো করার যেকোনো অপচেষ্টা থেকে দূরে থাকতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে না বলে রূপান্তরের বাংলাদেশকে সঙ্গী করে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা।
ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান ২৫ ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-এর সমন্বয়ক। জনপ্রশাসনে আন্তক্যাডার বৈষম্য ও বিরোধ, প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি বাকি ক্যাডারদের ক্ষোভ এবং তাঁদের অন্যান্য দাবি-দাওয়ার বিষয় নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলেছেন।
৯ ঘণ্টা আগেনব্বইয়ের দশক থেকে দীর্ঘদিন ঢাকা শহরের মণিপুরিপাড়ায় ছিলাম। তখন সেখান থেকে রাস্তা পার হয়ে শহীদ আনোয়ারা উদ্যানের ভেতর দিয়ে ইন্দিরা রোডের দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে যেতাম। দুটি প্রধান রাস্তার মাঝে একটি আয়তাকার ছোট পরিসরে গড়ে তোলা হয়েছিল সেই উদ্যান।
১০ ঘণ্টা আগেচালের দাম এবং বাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের জনগণের নিত্যদিনের বাস্তবতা। আমনের ভরা মৌসুমে গত কয়দিনে চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চড়া দর নিয়ে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা এবং মিলাররা একে অপরকে দুষছেন।
১০ ঘণ্টা আগেআমার শিক্ষক, শিক্ষাগুরু ও পথপ্রদর্শক প্রফেসর মো. আনিসুর রহমান ৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৭২ সালে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, তখন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য প্রফেসর আনিসুর রহমান তাঁর কমিশনের কর্মপরিধি কিছুটা...
১ দিন আগে