জাহীদ রেজা নূর
সততা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, মানবতা ইত্যাদি এখন আর মানুষকে মহীয়ান করে তোলে না। অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেওয়া হলে দেশটা এভাবেই জবাবদিহিহীনভাবে এগিয়ে যাবে। এটা তো টের পাওয়া যায়, ই-ভ্যালি, যুবক, ক্যাসিনোসম্রাটের জন্ম থেকে, সাহেদদের রাজত্ব থেকে, কীভাবে ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা গায়েব হয়ে যায়, তা দেখে।
আজ একটু খোশগল্প করি। কথা প্রসঙ্গেই আমরা আমাদের জাতিগত প্যাটার্নটা বুঝে ওঠার চেষ্টা করব। আমাদের মনের যে গভীর অসুখ হয়েছে, তার মূলে যাওয়ার একটা পথ হয়তো এই আলোচনায় উঠে আসতে পারে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটা অসাধারণ পঙ্ক্তি আছে তাঁর ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ কবিতায়। পঙ্ক্তিটি হলো, ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে, সে চিরসুন্দর।’ আমরা অভিজ্ঞতায় দেখতে পাই, এ দেশে জাতীয় কবির এই পঙ্ক্তিটি খুব একটা অর্থ বহন করে না। আমরা ভাঙতে যতটা পছন্দ করি, ততটা মনোযোগ দিই না গড়ার দিকে। যেকোনো ভাঙাভাঙিতেই আমাদের মহানন্দ; বিশেষ করে আইন ভাঙার প্রশ্নে তো আমরা চাইলেই গিনেস বুকে নাম লেখাতে পারি।
দুই.
শুরু করি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নামের বাহনটি নিয়ে। টু-স্ট্রোক বেবিট্যাক্সির জায়গায় যখন ফোর-স্ট্রোক সিএনজিচালিত অটোরিকশা এল, তখন যাত্রীদের অনেকেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন দুটি কারণে: সাশ্রয়ী ভাড়া আর পরিবেশদূষণ থেকে মুক্তিলাভ।
মিটারশোভিত সেই সিএনজিগুলো প্রথম প্রথম কী আনন্দই না নিয়ে এল আমজনতার মনে। সিএনজিতে চড়ে বসো, মিটারে ভ্রমণ করো, ভাড়া দাও, নেমে পড়ো, চলে যাও গন্তব্যে! আহা!
কী শান্তি!
কিন্তু নিয়ম গড়া হয়েছে বলেই তা মানতে হবে? একেবারেই না। তাই কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল টালবাহানা। মালিক নামের এক ভয়াবহ দৈত্যের কথা শোনা যেতে লাগল চালকদের মুখে। প্রত্যেকের মুখে তোতাপাখির মতো একই কাহিনি। সিএনজি চালিয়ে মালিককে দেওয়ার টাকাই নাকি ওঠে না! তাই মিটার বাদ হয়ে গেল। আবার আগের মতোই দরদাম করে ওঠা শুরু হলো সিএনজিতে। সে ক্ষেত্রে মিটারে যা ১০০ টাকা, বিনা মিটারে তা ২০০ টাকা হলেও অনন্যোপায় হয়ে মানুষ তা মেনে নিতে বাধ্য হলো।
এখানে ওপরমহলে যে আলোচনাটা খুবই জরুরি ছিল, সেদিকে কেউ গেল না। আমাদের দেশে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতে চায় না। যদি কেউ সে অধিকার আদায় করতে চায়, তাহলে তাকে ঘাটে ঘাটে অপদস্ত হতে হয়। গোটা সিস্টেমই ক্ষমতাবানের কর্তৃত্বের কাছে নতজানু।
তিন.
সিএনজির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই তো একটা নিয়ম করে দিতে পারত। মিটারে চলতে হবে, এর বিকল্প নেই। মালিকেরা যেন অবৈধভাবে বেশি টাকা দাবি করতে না পারেন, সেটা দেখার জন্য নির্দিষ্ট কমিটি করে দেওয়া যেত। মালিক-চালক-কর্তৃপক্ষ মিলে সে বোঝাপড়া করতে পারত, যাত্রীকে অভয় দিয়ে তারা বলতে পারত, ‘ভাড়া করবেন, মিটারে যা উঠবে তা দেবেন। অন্য কিছু দেখার দায় যাত্রীর নেই।’
না। আমাদের যাত্রীদের সেই সৌভাগ্য কখনোই হয়নি।
আমরা যে নৈতিকভাবে খুবই ন্যুব্জ হয়ে পড়ছি, তার আলামত পাওয়া যায় এই সিএনজি-বিষয়ক আলোচনা থেকেই। করোনার ভয়াবহতার সময় যখন মানুষের চলাচলে নেমে এসেছিল স্থবিরতা, তখন মোড়ে মোড়ে এই দাম্ভিক সিএনজিচালকদের দেখা গেছে যাত্রীদের অনুনয়-বিনয় করতে। বিনয়ের অবতার তখন তাঁরা। শুধু মিটারে না, মিটারের চেয়ে কম ভাড়ায়ও তাঁরা তখন যাত্রী নিতে চেয়েছেন। এই তো কয়েক দিন হলো কেরোসিন আর ডিজেলের দাম বাড়ানোয় আবার মওকা পেয়ে গেছেন তাঁরা।
৩০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা চেয়ে নির্বিকারভাবে বসে থাকছেন।
নিয়মের প্রতি সিএনজিচালকদের এই অনীহাকেই একটু বিশদে দেখলে আমাদের সমাজটাকেই দেখতে পাব এবং বুঝতে পারব, আইন অমান্য করার এই প্রবণতা আসলে আমাদের সহজাত। যেকোনোভাবেই হোক, যাদের হাতে আইন রক্ষার ভার, তাদের নাগাল পায় না সাধারণ জনগণ।
চার.
আইন মেনে চলার ব্যাপারে মোটরসাইকেল চালকদের কথাই ভেবে দেখুন। বেশির ভাগ সময় বাঁ দিক দিয়ে ওভারটেক করে থাকেন মোটরসাইকেল আরোহী। কিন্তু সারি সারি যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেল চালকদের কারও কারও কীর্তি দেখলে তাঁদের তারিফ করতে ইচ্ছে করে। কোনো গাড়ি যদি রাস্তায় বাঁ দিক ঘেঁষে চলে, তাহলে মোটরসাইকেল আরোহীরা এতটাই বিরক্ত হন যে শুধু বারবার হর্ন বাজিয়েই ক্ষান্ত হন না, পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কখনো কখনো অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন।
শুধু কি তাই, রাস্তায় যানজট হলে পথচারীদের চলার জন্য তৈরি ফুটপাতে অবলীলায় উঠে পড়েন তাঁরা। কখনো তো উল্টোপথ দিয়ে মহানন্দে চলছে মোটরসাইকেল!
রাজধানীতে চলাচল খুবই ব্যয়বহুল হওয়ায় মোটরসাইকেল একটি সাশ্রয়ী বাহন। কিন্তু এই বাহন ব্যবহারকারীদের অনেকেই অনেক সময় বেপরোয়াভাবে বাইক চালান, যার সামনে রাস্তার নিয়মকানুন সব ম্লান হয়ে যায়।
পাঁচ.
এবার রিকশার কথা। গত তিন দিনে কারও কি রিকশায় ওঠার সুযোগ হয়েছে? তাঁরা কি ভাড়ার ক্ষেত্রে কত ধানে কত চাল, সেটা বুঝতে পেরেছেন? মওকা পেলেই রিকশাচালকেরা যে আকাশচুম্বী ভাড়া হাঁকেন, ভুক্তভোগীমাত্রই সেটা জানেন। যাঁদের হাতে অঢেল অর্থ, তাঁদের জন্য সিএনজি বা রিকশা ভাড়া কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু যাঁরা বাসভাড়া সম্বল করে সরকারি পরীক্ষা দিতে আসেন, এসে দেখেন পরিবহন ধর্মঘট, তখন তাঁরা কেমন বিপাকে পড়েন, সেটা বোঝার মতো মানবিক কি আমরা হয়ে উঠতে পেরেছি?
এই আমজনতার কষ্ট বোঝার মতো দরদি হয়ে ওঠেনি আমাদের প্রশাসন। আপাত নিরীহ এই তিনটি বাহনের কথা বলে মূলত আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে ঢুকতে চাইছি। এই ক্ষুদ্র পরিবহন সেক্টরেই আমরা কোনো নীতিমালার প্রয়োগ ঘটাতে পারিনি। সিএনজি বা রিকশাকে নির্দিষ্ট ভাড়ায় চলতে বাধ্য করতে পারিনি, মোটরসাইকেলকে আইনের আওতায় আনতে পারিনি। এই ছোট্ট একটা ব্যাপারেই আইন অমান্য করার যে কসরত চলে এসেছে এতকাল ধরে এবং এখনো চলছে, তা থেকেই বৃহৎ অঙ্গনে কী ঘটছে, তা অনুমান করে নেওয়া যায়।
পরিবহন সেক্টরের কথা বলতে গিয়ে এই সেক্টরের চাঁদাবাজির কথা আর বলা হলো না, বললে তা মহাভারত হয়ে যাবে এবং সেটা আলোচনা করার চেষ্টা করলে আমরা দেখতে পেতাম, শুধু সরকারি ট্রেড ইউনিয়নিস্টরাই নন, এই চাঁদাবাজিতে হাত মকশো করার জন্য ডান-বাম-মধ্যপন্থী সবাই এককাট্টা হয়ে উঠেছেন।
পাঁচ.
কিছু সিদ্ধান্তে তো আমরা আসতেই পারি।
১. আমাদের দেশে অন্যায়কারী হতে হলে শুধু বুর্জোয়া, পেটি বুর্জোয়াই হতে হয় না। যেকোনো শ্রেণির যেকোনো মানুষই সুযোগ পেলে অন্যায়ভাবে সে সুযোগ নিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে কোটিপতি থেকে শুরু করে রিকশাচালক পর্যন্ত রয়েছেন। আইন রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে নির্বিকারত্ব উপহার পেলেই কেল্লাফতে!
২. রাজনীতির পাশাপাশি অন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, তার প্রায় সবগুলোই ভেঙে পড়ছে। অনেকগুলো এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে। ভাঙার পাশাপাশি গড়ে তোলার অভিপ্রায় কম। সেটা আমাদের নৈতিক অবস্থানকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
৩. বিচারের শ্লথগতি কিংবা বিচারহীনতা এই অন্যায়গুলোকে পোক্ত করে তুলছে। দলবাজির খড়্গের নিচে পড়েছে আইন।
৪. প্রত্যেকেই নিজের কাজের মাধ্যমে নয়, অন্যের পেশিশক্তির বলে বলীয়ান হতে চাইছে। রাজনৈতিক শক্তির কাছাকাছি থাকা, কর কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগসূত্র, পুলিশ বাহিনীর কারও সঙ্গে যোগাযোগ, পেটোয়া বাহিনীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক, সাংবাদিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইত্যাদি নানা কিছুই এখন মানুষের বেঁচে থাকার কণ্টকাকীর্ণ পথকে মসৃণ করে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।
সততা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, মানবতা ইত্যাদি এখন আর মানুষকে মহীয়ান করে তোলে না। অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেওয়া হলে দেশটা এভাবেই জবাবদিহিহীনভাবে এগিয়ে যাবে। এটা তো টের পাওয়া যায় ই-ভ্যালি, যুবক, ক্যাসিনোসম্রাটের জন্ম থেকে, সাহেদদের রাজত্ব থেকে, কীভাবে ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা গায়েব হয়ে যায়, তা দেখে।
আদার ব্যাপারী হয়ে একটু জাহাজের খবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম আরকি!
সততা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, মানবতা ইত্যাদি এখন আর মানুষকে মহীয়ান করে তোলে না। অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেওয়া হলে দেশটা এভাবেই জবাবদিহিহীনভাবে এগিয়ে যাবে। এটা তো টের পাওয়া যায়, ই-ভ্যালি, যুবক, ক্যাসিনোসম্রাটের জন্ম থেকে, সাহেদদের রাজত্ব থেকে, কীভাবে ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা গায়েব হয়ে যায়, তা দেখে।
আজ একটু খোশগল্প করি। কথা প্রসঙ্গেই আমরা আমাদের জাতিগত প্যাটার্নটা বুঝে ওঠার চেষ্টা করব। আমাদের মনের যে গভীর অসুখ হয়েছে, তার মূলে যাওয়ার একটা পথ হয়তো এই আলোচনায় উঠে আসতে পারে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটা অসাধারণ পঙ্ক্তি আছে তাঁর ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ কবিতায়। পঙ্ক্তিটি হলো, ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে, সে চিরসুন্দর।’ আমরা অভিজ্ঞতায় দেখতে পাই, এ দেশে জাতীয় কবির এই পঙ্ক্তিটি খুব একটা অর্থ বহন করে না। আমরা ভাঙতে যতটা পছন্দ করি, ততটা মনোযোগ দিই না গড়ার দিকে। যেকোনো ভাঙাভাঙিতেই আমাদের মহানন্দ; বিশেষ করে আইন ভাঙার প্রশ্নে তো আমরা চাইলেই গিনেস বুকে নাম লেখাতে পারি।
দুই.
শুরু করি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নামের বাহনটি নিয়ে। টু-স্ট্রোক বেবিট্যাক্সির জায়গায় যখন ফোর-স্ট্রোক সিএনজিচালিত অটোরিকশা এল, তখন যাত্রীদের অনেকেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন দুটি কারণে: সাশ্রয়ী ভাড়া আর পরিবেশদূষণ থেকে মুক্তিলাভ।
মিটারশোভিত সেই সিএনজিগুলো প্রথম প্রথম কী আনন্দই না নিয়ে এল আমজনতার মনে। সিএনজিতে চড়ে বসো, মিটারে ভ্রমণ করো, ভাড়া দাও, নেমে পড়ো, চলে যাও গন্তব্যে! আহা!
কী শান্তি!
কিন্তু নিয়ম গড়া হয়েছে বলেই তা মানতে হবে? একেবারেই না। তাই কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল টালবাহানা। মালিক নামের এক ভয়াবহ দৈত্যের কথা শোনা যেতে লাগল চালকদের মুখে। প্রত্যেকের মুখে তোতাপাখির মতো একই কাহিনি। সিএনজি চালিয়ে মালিককে দেওয়ার টাকাই নাকি ওঠে না! তাই মিটার বাদ হয়ে গেল। আবার আগের মতোই দরদাম করে ওঠা শুরু হলো সিএনজিতে। সে ক্ষেত্রে মিটারে যা ১০০ টাকা, বিনা মিটারে তা ২০০ টাকা হলেও অনন্যোপায় হয়ে মানুষ তা মেনে নিতে বাধ্য হলো।
এখানে ওপরমহলে যে আলোচনাটা খুবই জরুরি ছিল, সেদিকে কেউ গেল না। আমাদের দেশে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতে চায় না। যদি কেউ সে অধিকার আদায় করতে চায়, তাহলে তাকে ঘাটে ঘাটে অপদস্ত হতে হয়। গোটা সিস্টেমই ক্ষমতাবানের কর্তৃত্বের কাছে নতজানু।
তিন.
সিএনজির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই তো একটা নিয়ম করে দিতে পারত। মিটারে চলতে হবে, এর বিকল্প নেই। মালিকেরা যেন অবৈধভাবে বেশি টাকা দাবি করতে না পারেন, সেটা দেখার জন্য নির্দিষ্ট কমিটি করে দেওয়া যেত। মালিক-চালক-কর্তৃপক্ষ মিলে সে বোঝাপড়া করতে পারত, যাত্রীকে অভয় দিয়ে তারা বলতে পারত, ‘ভাড়া করবেন, মিটারে যা উঠবে তা দেবেন। অন্য কিছু দেখার দায় যাত্রীর নেই।’
না। আমাদের যাত্রীদের সেই সৌভাগ্য কখনোই হয়নি।
আমরা যে নৈতিকভাবে খুবই ন্যুব্জ হয়ে পড়ছি, তার আলামত পাওয়া যায় এই সিএনজি-বিষয়ক আলোচনা থেকেই। করোনার ভয়াবহতার সময় যখন মানুষের চলাচলে নেমে এসেছিল স্থবিরতা, তখন মোড়ে মোড়ে এই দাম্ভিক সিএনজিচালকদের দেখা গেছে যাত্রীদের অনুনয়-বিনয় করতে। বিনয়ের অবতার তখন তাঁরা। শুধু মিটারে না, মিটারের চেয়ে কম ভাড়ায়ও তাঁরা তখন যাত্রী নিতে চেয়েছেন। এই তো কয়েক দিন হলো কেরোসিন আর ডিজেলের দাম বাড়ানোয় আবার মওকা পেয়ে গেছেন তাঁরা।
৩০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা চেয়ে নির্বিকারভাবে বসে থাকছেন।
নিয়মের প্রতি সিএনজিচালকদের এই অনীহাকেই একটু বিশদে দেখলে আমাদের সমাজটাকেই দেখতে পাব এবং বুঝতে পারব, আইন অমান্য করার এই প্রবণতা আসলে আমাদের সহজাত। যেকোনোভাবেই হোক, যাদের হাতে আইন রক্ষার ভার, তাদের নাগাল পায় না সাধারণ জনগণ।
চার.
আইন মেনে চলার ব্যাপারে মোটরসাইকেল চালকদের কথাই ভেবে দেখুন। বেশির ভাগ সময় বাঁ দিক দিয়ে ওভারটেক করে থাকেন মোটরসাইকেল আরোহী। কিন্তু সারি সারি যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেল চালকদের কারও কারও কীর্তি দেখলে তাঁদের তারিফ করতে ইচ্ছে করে। কোনো গাড়ি যদি রাস্তায় বাঁ দিক ঘেঁষে চলে, তাহলে মোটরসাইকেল আরোহীরা এতটাই বিরক্ত হন যে শুধু বারবার হর্ন বাজিয়েই ক্ষান্ত হন না, পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কখনো কখনো অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন।
শুধু কি তাই, রাস্তায় যানজট হলে পথচারীদের চলার জন্য তৈরি ফুটপাতে অবলীলায় উঠে পড়েন তাঁরা। কখনো তো উল্টোপথ দিয়ে মহানন্দে চলছে মোটরসাইকেল!
রাজধানীতে চলাচল খুবই ব্যয়বহুল হওয়ায় মোটরসাইকেল একটি সাশ্রয়ী বাহন। কিন্তু এই বাহন ব্যবহারকারীদের অনেকেই অনেক সময় বেপরোয়াভাবে বাইক চালান, যার সামনে রাস্তার নিয়মকানুন সব ম্লান হয়ে যায়।
পাঁচ.
এবার রিকশার কথা। গত তিন দিনে কারও কি রিকশায় ওঠার সুযোগ হয়েছে? তাঁরা কি ভাড়ার ক্ষেত্রে কত ধানে কত চাল, সেটা বুঝতে পেরেছেন? মওকা পেলেই রিকশাচালকেরা যে আকাশচুম্বী ভাড়া হাঁকেন, ভুক্তভোগীমাত্রই সেটা জানেন। যাঁদের হাতে অঢেল অর্থ, তাঁদের জন্য সিএনজি বা রিকশা ভাড়া কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু যাঁরা বাসভাড়া সম্বল করে সরকারি পরীক্ষা দিতে আসেন, এসে দেখেন পরিবহন ধর্মঘট, তখন তাঁরা কেমন বিপাকে পড়েন, সেটা বোঝার মতো মানবিক কি আমরা হয়ে উঠতে পেরেছি?
এই আমজনতার কষ্ট বোঝার মতো দরদি হয়ে ওঠেনি আমাদের প্রশাসন। আপাত নিরীহ এই তিনটি বাহনের কথা বলে মূলত আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে ঢুকতে চাইছি। এই ক্ষুদ্র পরিবহন সেক্টরেই আমরা কোনো নীতিমালার প্রয়োগ ঘটাতে পারিনি। সিএনজি বা রিকশাকে নির্দিষ্ট ভাড়ায় চলতে বাধ্য করতে পারিনি, মোটরসাইকেলকে আইনের আওতায় আনতে পারিনি। এই ছোট্ট একটা ব্যাপারেই আইন অমান্য করার যে কসরত চলে এসেছে এতকাল ধরে এবং এখনো চলছে, তা থেকেই বৃহৎ অঙ্গনে কী ঘটছে, তা অনুমান করে নেওয়া যায়।
পরিবহন সেক্টরের কথা বলতে গিয়ে এই সেক্টরের চাঁদাবাজির কথা আর বলা হলো না, বললে তা মহাভারত হয়ে যাবে এবং সেটা আলোচনা করার চেষ্টা করলে আমরা দেখতে পেতাম, শুধু সরকারি ট্রেড ইউনিয়নিস্টরাই নন, এই চাঁদাবাজিতে হাত মকশো করার জন্য ডান-বাম-মধ্যপন্থী সবাই এককাট্টা হয়ে উঠেছেন।
পাঁচ.
কিছু সিদ্ধান্তে তো আমরা আসতেই পারি।
১. আমাদের দেশে অন্যায়কারী হতে হলে শুধু বুর্জোয়া, পেটি বুর্জোয়াই হতে হয় না। যেকোনো শ্রেণির যেকোনো মানুষই সুযোগ পেলে অন্যায়ভাবে সে সুযোগ নিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে কোটিপতি থেকে শুরু করে রিকশাচালক পর্যন্ত রয়েছেন। আইন রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে নির্বিকারত্ব উপহার পেলেই কেল্লাফতে!
২. রাজনীতির পাশাপাশি অন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, তার প্রায় সবগুলোই ভেঙে পড়ছে। অনেকগুলো এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে। ভাঙার পাশাপাশি গড়ে তোলার অভিপ্রায় কম। সেটা আমাদের নৈতিক অবস্থানকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
৩. বিচারের শ্লথগতি কিংবা বিচারহীনতা এই অন্যায়গুলোকে পোক্ত করে তুলছে। দলবাজির খড়্গের নিচে পড়েছে আইন।
৪. প্রত্যেকেই নিজের কাজের মাধ্যমে নয়, অন্যের পেশিশক্তির বলে বলীয়ান হতে চাইছে। রাজনৈতিক শক্তির কাছাকাছি থাকা, কর কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগসূত্র, পুলিশ বাহিনীর কারও সঙ্গে যোগাযোগ, পেটোয়া বাহিনীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক, সাংবাদিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইত্যাদি নানা কিছুই এখন মানুষের বেঁচে থাকার কণ্টকাকীর্ণ পথকে মসৃণ করে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।
সততা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, মানবতা ইত্যাদি এখন আর মানুষকে মহীয়ান করে তোলে না। অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেওয়া হলে দেশটা এভাবেই জবাবদিহিহীনভাবে এগিয়ে যাবে। এটা তো টের পাওয়া যায় ই-ভ্যালি, যুবক, ক্যাসিনোসম্রাটের জন্ম থেকে, সাহেদদের রাজত্ব থেকে, কীভাবে ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা গায়েব হয়ে যায়, তা দেখে।
আদার ব্যাপারী হয়ে একটু জাহাজের খবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম আরকি!
ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান ২৫ ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-এর সমন্বয়ক। জনপ্রশাসনে আন্তক্যাডার বৈষম্য ও বিরোধ, প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি বাকি ক্যাডারদের ক্ষোভ এবং তাঁদের অন্যান্য দাবি-দাওয়ার বিষয় নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলেছেন।
৩ ঘণ্টা আগেনব্বইয়ের দশক থেকে দীর্ঘদিন ঢাকা শহরের মণিপুরিপাড়ায় ছিলাম। তখন সেখান থেকে রাস্তা পার হয়ে শহীদ আনোয়ারা উদ্যানের ভেতর দিয়ে ইন্দিরা রোডের দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে যেতাম। দুটি প্রধান রাস্তার মাঝে একটি আয়তাকার ছোট পরিসরে গড়ে তোলা হয়েছিল সেই উদ্যান।
৩ ঘণ্টা আগেচালের দাম এবং বাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের জনগণের নিত্যদিনের বাস্তবতা। আমনের ভরা মৌসুমে গত কয়দিনে চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চড়া দর নিয়ে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা এবং মিলাররা একে অপরকে দুষছেন।
৩ ঘণ্টা আগেআমার শিক্ষক, শিক্ষাগুরু ও পথপ্রদর্শক প্রফেসর মো. আনিসুর রহমান ৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৭২ সালে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, তখন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য প্রফেসর আনিসুর রহমান তাঁর কমিশনের কর্মপরিধি কিছুটা...
১ দিন আগে