অরুণ কর্মকার
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরুদ্বিগ্ন একজন মানুষও বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। অর্থনৈতিক, সামাজিক, আইনশৃঙ্খলা—সব ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আপাতদৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে কিছু লোক বেশি রকম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসন অবসানের পর মানুষ ভেবেছিল এবার দেশে একটা মুক্ত, গণতান্ত্রিক, জনবান্ধব পরিবেশ ফিরে আসবে। মুক্ত পরিবেশে, মুক্ত বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবে সবাই। কিন্তু সেই আশার উজ্জ্বল আলো ক্রমান্বয়ে গোধূলির মতো ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে বলে মনে হয়।
বহুল আলোচিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, তাঁর গ্রেপ্তার, তাঁকে আদালতে আনা-নেওয়ার সময় সংঘটিত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড এবং তাঁকে কেন্দ্র করে অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনা এখনো চলমান। এই ঘটনা সম্পর্কে প্রতিদিন নতুন তথ্যাদি জনসমক্ষে আসছে। তাই সেটি নিয়ে আলাদা করে এখানে কিছু না বললেও চলে। তার চেয়েও বড় কথা, ওই ঘটনাবলি ছাড়াও গভীর উদ্বেগজনক এত কিছু প্রতিদিন ঘটে চলেছে, সেগুলো নিয়ে অনেক কথাই বলার থেকে যায়।
যেমন বলা যায় হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে বিচারকাজ চলার সময় একজন বিচারপতিকে কতিপয় আইনজীবীর ডিম ছুড়ে মারার কথা। ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে ঘটেছে এই অপ্রত্যাশিত ও বেনজির ঘটনা। ২০১৬ সালের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল তাঁর পর্যবেক্ষণে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। তার জের ধরে ঘটানো হয়েছে এই ঘটনা। ঘটনা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। আর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, ডিম ছুড়ে মারা আইনজীবীদের বার কাউন্সিল লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এর মাধ্যমে ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের একটি আশ্বাস পাওয়া যায়। কিন্তু দেশে এখন অনেক ঘটনাই ঘটছে, যার কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
ওই দিনই জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলামের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তাঁরা শঙ্কামুক্ত পরিবেশে বিচারকার্য পরিচালনা এবং আদালত চত্বরে আইনজীবী ও জনসাধারণের স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের দাবি জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন আদালতে অভিযুক্তের প্রতি ডিম ছুড়ে মারা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কিংবা করার চেষ্টার অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তার একটিরও প্রতিকার হয়নি। হলে হয়তো হাইকোর্টেও একই ঘটনা ঘটত না। আদালতের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সুপ্রিম কোর্টের গত বছরের ১৬ জানুয়ারি ও ৫ ডিসেম্বরের নির্দেশনা থাকার পরও এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলেছে, তারা সারা দেশের বিচারাঙ্গনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এর আগে ২১, ২২ ও ২৩ নভেম্বর দেশের প্রধান দুটি জাতীয় দৈনিক—প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের অফিসকে কেন্দ্র করে গুটিকয়েক লোক যা করল তা বোধ হয় পৃথিবীতেই নজিরবিহীন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৃতীয় দিন রাত ৮টার পর সেই লোকগুলোকে সরিয়ে দিয়েছে বটে; কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে যে ক্ষমতাবান কোনো গোষ্ঠীর আশকারা না থাকলে কি এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব? সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি আরও আগে এ ঘটনার সুরাহা করতে পারত না?
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কিছু কথা উল্লেখযোগ্য। ড্যাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা কয়েকটা দিন ধরে খুবই চিন্তিত, খুবই উদ্বিগ্ন ভয়াবহভাবে। আপনারা চিন্তা করতে পারেন ধর্মকে কেন্দ্র করে যে উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আমরা মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য, প্রেসের জন্য, সভা করার জন্য এত দিন লড়াই করলাম, তারা উড়িয়ে দিচ্ছে। পত্রিকা অফিসে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না।’
কিন্তু এই বাংলাদেশই তো আজকের বাস্তবতা! হামলার ভয়ে নাট্যজন মামুনুর রশীদকে শিল্পকলা একাডেমিতে অভিনয় না করার অনুরোধ জানিয়েছেন একাডেমির মহাপরিচালক স্বয়ং। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামী সমর্থক অপবাদ দিয়ে এক সৌদিপ্রবাসী যুবককে মারধর করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আসলে তাঁর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। চাঁদা না দেওয়ায় ওই অপবাদ ও হত্যা। শেরপুরে এক পীরের দরবারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। কয়েক দিন আগে নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় প্রতিদিন রাস্তা বন্ধ করে কোনো না কোনো গোষ্ঠীর বিক্ষোভ, অবস্থান প্রভৃতি চলছে। সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনা চলছে অব্যাহতভাবে। এ তো গেল মোটা দাগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কী? কয়েক দিন আগে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দেশ অর্থনৈতিক সংকটে (রেসিশন) পড়তে পারে। বেসরকারি বিনিয়োগ নেই। এডিপির বাস্তবায়ন হতাশাজনক।’ অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়া কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। অবশ্য এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো উদ্যোগ-আয়োজন আছে বলেও দৃশ্যমান নয়। সবকিছু চলছে সেই পুরোনো ধারায়। এসব নিয়ে উদ্বেগ শুধু দেশের ভেতরে নয়, বিদেশেও।
যুক্তরাজ্যের সংসদ দ্য হাউস অব কমন্সের ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) ফর দ্য কমনওয়েলথ’ বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ২৫ নভেম্বর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে এপিপিজির ওই প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিচারব্যবস্থাকে “অস্ত্রে পরিণত করেছে”।’ আমরা এমন প্রমাণ পেয়েছি যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করার প্রয়োজন রয়েছে। মানবাধিকার এবং আইনের শাসন অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। এটা করতে ব্যর্থ হলে তা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তির জন্য ভালো হবে না।
এপিপিজির প্রতিবেদনে পাইকারি হত্যা মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, আইনের শাসনের অভাব, ইসলামি উগ্রবাদীদের উত্থানসহ নানা বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তিন মাস পরও বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এপিপিজির চেয়ারম্যান, টোরি পার্টির সংসদ সদস্য অ্যান্ড্রু রসিন্ডেল বলেন, এই প্রতিবেদন বাংলাদেশ এবং কমনওয়েলথের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সরকার ও উন্নয়ন সংস্থার কাছে পাঠানো হবে।
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চলেছে। ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদলের চার দিনের সফর শেষে দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই মন্তব্য করেছে।
এখন কথা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি, সমাজ, বিচারব্যবস্থা, গণমাধ্যম—সর্বত্র যদি বিশৃঙ্খলা ও নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচার চলে, মব জাস্টিস অব্যাহত থাকে এবং সরকার যদি তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? সুতরাং সরকারকে শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে অবিলম্বে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান যে প্রত্যাশার উজ্জ্বল আলো জ্বেলেছে, তা যেন কোনোভাবেই মরীচিকায় পরিণত না হয়।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরুদ্বিগ্ন একজন মানুষও বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। অর্থনৈতিক, সামাজিক, আইনশৃঙ্খলা—সব ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আপাতদৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে কিছু লোক বেশি রকম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসন অবসানের পর মানুষ ভেবেছিল এবার দেশে একটা মুক্ত, গণতান্ত্রিক, জনবান্ধব পরিবেশ ফিরে আসবে। মুক্ত পরিবেশে, মুক্ত বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবে সবাই। কিন্তু সেই আশার উজ্জ্বল আলো ক্রমান্বয়ে গোধূলির মতো ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে বলে মনে হয়।
বহুল আলোচিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, তাঁর গ্রেপ্তার, তাঁকে আদালতে আনা-নেওয়ার সময় সংঘটিত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড এবং তাঁকে কেন্দ্র করে অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনা এখনো চলমান। এই ঘটনা সম্পর্কে প্রতিদিন নতুন তথ্যাদি জনসমক্ষে আসছে। তাই সেটি নিয়ে আলাদা করে এখানে কিছু না বললেও চলে। তার চেয়েও বড় কথা, ওই ঘটনাবলি ছাড়াও গভীর উদ্বেগজনক এত কিছু প্রতিদিন ঘটে চলেছে, সেগুলো নিয়ে অনেক কথাই বলার থেকে যায়।
যেমন বলা যায় হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে বিচারকাজ চলার সময় একজন বিচারপতিকে কতিপয় আইনজীবীর ডিম ছুড়ে মারার কথা। ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে ঘটেছে এই অপ্রত্যাশিত ও বেনজির ঘটনা। ২০১৬ সালের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল তাঁর পর্যবেক্ষণে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। তার জের ধরে ঘটানো হয়েছে এই ঘটনা। ঘটনা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। আর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, ডিম ছুড়ে মারা আইনজীবীদের বার কাউন্সিল লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এর মাধ্যমে ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের একটি আশ্বাস পাওয়া যায়। কিন্তু দেশে এখন অনেক ঘটনাই ঘটছে, যার কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
ওই দিনই জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলামের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তাঁরা শঙ্কামুক্ত পরিবেশে বিচারকার্য পরিচালনা এবং আদালত চত্বরে আইনজীবী ও জনসাধারণের স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের দাবি জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন আদালতে অভিযুক্তের প্রতি ডিম ছুড়ে মারা, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কিংবা করার চেষ্টার অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তার একটিরও প্রতিকার হয়নি। হলে হয়তো হাইকোর্টেও একই ঘটনা ঘটত না। আদালতের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সুপ্রিম কোর্টের গত বছরের ১৬ জানুয়ারি ও ৫ ডিসেম্বরের নির্দেশনা থাকার পরও এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলেছে, তারা সারা দেশের বিচারাঙ্গনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এর আগে ২১, ২২ ও ২৩ নভেম্বর দেশের প্রধান দুটি জাতীয় দৈনিক—প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের অফিসকে কেন্দ্র করে গুটিকয়েক লোক যা করল তা বোধ হয় পৃথিবীতেই নজিরবিহীন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৃতীয় দিন রাত ৮টার পর সেই লোকগুলোকে সরিয়ে দিয়েছে বটে; কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে যে ক্ষমতাবান কোনো গোষ্ঠীর আশকারা না থাকলে কি এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব? সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি আরও আগে এ ঘটনার সুরাহা করতে পারত না?
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কিছু কথা উল্লেখযোগ্য। ড্যাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা কয়েকটা দিন ধরে খুবই চিন্তিত, খুবই উদ্বিগ্ন ভয়াবহভাবে। আপনারা চিন্তা করতে পারেন ধর্মকে কেন্দ্র করে যে উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আমরা মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য, প্রেসের জন্য, সভা করার জন্য এত দিন লড়াই করলাম, তারা উড়িয়ে দিচ্ছে। পত্রিকা অফিসে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না।’
কিন্তু এই বাংলাদেশই তো আজকের বাস্তবতা! হামলার ভয়ে নাট্যজন মামুনুর রশীদকে শিল্পকলা একাডেমিতে অভিনয় না করার অনুরোধ জানিয়েছেন একাডেমির মহাপরিচালক স্বয়ং। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামী সমর্থক অপবাদ দিয়ে এক সৌদিপ্রবাসী যুবককে মারধর করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আসলে তাঁর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। চাঁদা না দেওয়ায় ওই অপবাদ ও হত্যা। শেরপুরে এক পীরের দরবারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। কয়েক দিন আগে নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় প্রতিদিন রাস্তা বন্ধ করে কোনো না কোনো গোষ্ঠীর বিক্ষোভ, অবস্থান প্রভৃতি চলছে। সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনা চলছে অব্যাহতভাবে। এ তো গেল মোটা দাগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কী? কয়েক দিন আগে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দেশ অর্থনৈতিক সংকটে (রেসিশন) পড়তে পারে। বেসরকারি বিনিয়োগ নেই। এডিপির বাস্তবায়ন হতাশাজনক।’ অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়া কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। অবশ্য এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো উদ্যোগ-আয়োজন আছে বলেও দৃশ্যমান নয়। সবকিছু চলছে সেই পুরোনো ধারায়। এসব নিয়ে উদ্বেগ শুধু দেশের ভেতরে নয়, বিদেশেও।
যুক্তরাজ্যের সংসদ দ্য হাউস অব কমন্সের ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) ফর দ্য কমনওয়েলথ’ বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ২৫ নভেম্বর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে এপিপিজির ওই প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিচারব্যবস্থাকে “অস্ত্রে পরিণত করেছে”।’ আমরা এমন প্রমাণ পেয়েছি যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করার প্রয়োজন রয়েছে। মানবাধিকার এবং আইনের শাসন অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। এটা করতে ব্যর্থ হলে তা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তির জন্য ভালো হবে না।
এপিপিজির প্রতিবেদনে পাইকারি হত্যা মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, আইনের শাসনের অভাব, ইসলামি উগ্রবাদীদের উত্থানসহ নানা বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তিন মাস পরও বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এপিপিজির চেয়ারম্যান, টোরি পার্টির সংসদ সদস্য অ্যান্ড্রু রসিন্ডেল বলেন, এই প্রতিবেদন বাংলাদেশ এবং কমনওয়েলথের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সরকার ও উন্নয়ন সংস্থার কাছে পাঠানো হবে।
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চলেছে। ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদলের চার দিনের সফর শেষে দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই মন্তব্য করেছে।
এখন কথা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি, সমাজ, বিচারব্যবস্থা, গণমাধ্যম—সর্বত্র যদি বিশৃঙ্খলা ও নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচার চলে, মব জাস্টিস অব্যাহত থাকে এবং সরকার যদি তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? সুতরাং সরকারকে শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে অবিলম্বে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান যে প্রত্যাশার উজ্জ্বল আলো জ্বেলেছে, তা যেন কোনোভাবেই মরীচিকায় পরিণত না হয়।
আওয়ামী লীগের অন্ধভক্ত অনেকেই এখনো গলাবাজি করে চলেছেন যে হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশে প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জিত হয়েছে। এসব গলাবাজি যাঁরা করেন তাঁরা প্রকৃতপক্ষে অর্থনীতি সম্পর্কে তেমন ওয়াকিবহাল নন।
৯ ঘণ্টা আগেদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি জটিল ও অস্থির হয়ে ওঠার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের কর্মকাণ্ড, এই সংগঠনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারকে ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন-সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে একধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকার বিনোদন ডেস্ক মারফত একটি দারুণ তথ্য জানা গেল। ১৯৭১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিটলস গ্রুপ-খ্যাত জন লেনন একটি চিঠি লিখেছিলেন সুগায়ক ও গিটারিস্ট এরিক ক্ল্যাপটনকে। তত দিনে বিটলস ছেড়েছেন লেনন, নতুন স্ত্রী ইয়োকো ওনোর সঙ্গে কাটাচ্ছেন রোমান্টিক সময়। গান নিয়ে মগ্ন আছেন।
৯ ঘণ্টা আগেমুখপুস্তক বা ফেসবুক আমাদের জনগোষ্ঠীর মনের অবস্থা বোঝার ক্ষুদ্র জানালা হলেও অগুরুত্বপূর্ণ নয়। ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার-এক্স বা থ্রেডস নয়, এ দেশের আমজনতার কাছে জনপ্রিয় হলো ফেসবুক। তারা এর ভেতর দিয়ে নিজেকে অবিরত প্রকাশ করে, আবার খবরাখবরও সংগ্রহ করে,
১ দিন আগে