সুব্রত বোস
১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাস। পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন অধ্যাপক আব্দুস সালাম। পুরস্কার গ্রহণ করে সুইডেন থেকে কাজের জায়গা লন্ডনে ফিরে এলেন। এসেই যোগাযোগ করলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। খুবই অদ্ভুত একটা অনুরোধ—অধ্যাপক অনিলেন্দ্র গাঙ্গুলি নামের এক ভদ্রলোককে খুঁজে বের করতে হবে। অধ্যাপক গাঙ্গুলি কোন রাজ্যে বা কোন শহরে থাকেন, তার কিছুই জানা নেই ড. সালামের। শুধু এটুকু জানেন তিনি ভারতে আছেন।
কিছুদিন পরই ড. সালামের ভারত সফর। এর মধ্যে যদি অধ্যাপক গাঙ্গুলিকে খুঁজে বের করে তাঁর সাথে সাক্ষাতের একটা ব্যবস্থা মিসেস গান্ধী করে দিতে পারেন, তাহলে খুবই ভালো হয়। ড. সালামের অনুরোধ বলে কথা। শুরু হলো ড. গাঙ্গুলিকে খোঁজার কাজ। তখন তো আর ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ নয়। চাইলেই অত সহজে কাউকে খুঁজে পাওয়া যেত না।
কে এই অনিলেন্দ্র গাঙ্গুলি? ভারত ভাগের আগে অনিলেন্দ্র গাঙ্গুলি লাহোরের সনাতন ধর্ম কলেজের অঙ্কের নামকরা শিক্ষক ছিলেন। তাঁর ছাত্র ছিলেন আব্দুস সালাম। ১৯৪৭-এর পর অধ্যাপক গাঙ্গুলি সপরিবারে লাহোর থেকে ভারতে চলে এসেছেন। ড. সালাম এর আগেও অনেকবার তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পাননি।
দুই বছর পর অধ্যাপক গাঙ্গুলির খোঁজ পাওয়া গেল দক্ষিণ কলকাতায়। খবর পেয়েই ১৯৮১ সালের ১৯ জানুয়ারি লন্ডন থেকে ড. সালাম ছুটে এলেন কলকাতায়। অধ্যাপক গাঙ্গুলি তখন বয়সের ভারে অসুস্থ। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। ড. সালাম বিছানার পাশে বসে অধ্যাপক গাঙ্গুলির হাত দুটো ধরলেন। পকেট থেকে নোবেল পদকটি বের করে ড. সালাম বললেন, ‘আমার এই নোবেল প্রাপ্তি আপনার জন্য। আপনিই আমাকে অঙ্ক শিখিয়েছিলেন। অঙ্কের প্রতি আমার ভালোবাসা তৈরি করেছিলেন। এই পদক আপনার, আমার নয়।’
ওপরের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ সচিত্র বিবরণ একাধিক নিবন্ধে এবং ড. সালামকে নিয়ে নেটফ্লিক্সের সাম্প্রতিক তথ্যচিত্রে পাওয়া যাবে।
কিছুদিন পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় গণিতে ড. সালামের অবদানের জন্য তাঁকে ‘দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী পুরস্কার’-এর জন্য মনোনীত করে। কিন্তু ড. সালাম বলেন, এই পুরস্কারের জন্য সব থেকে যোগ্য ব্যক্তি অধ্যাপক গাঙ্গুলি। তাঁর পরামর্শ শুনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ড. গাঙ্গুলিকে এই পুরস্কারে ভূষিত করে।
ড. সালামের মতো গুনি, মেধাবী এবং জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী বিলেতে সব কাজ ফেলে পুরোনো কলেজের শিক্ষককে কৃতজ্ঞতা জানাতে ছুটে এসেছিলেন পৃথিবীর আরেক প্রান্তে।
দুই.
সন্ধ্যা হলেই আমাকে পড়াতে আসতেন শামসুর রহমান খান। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। সাইকেলে। আমার দুই ভাষার বর্ণপরিচয় তাঁর কাছেই। নিজ হাতে আমার জন্য কাগজ কেটে খাতা সেলাই করতেন। বইয়ের মলাট দিতেন। কোন পেনসিল দিয়ে লিখলে হাতের লেখা ভালো হয়, সেটা খুঁজে নিয়ে আসতেন বাজার থেকে। পরীক্ষার ফল বেরোনোর আগে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় থাকতেন। সাইকেল চালানো শেখা তাঁর কাছে; টাইপ করাও। বছরের পর বছর অব্যাহত চেষ্টা করে গেছেন আমাকে আরেকটু এগিয়ে দেওয়ার।
হাইস্কুলে অঙ্ক করাতেন লুৎফর রহমান। সঙ্গে বিজ্ঞানও পড়াতেন। স্কুলের এক পরীক্ষায় অঙ্কের নতুন এক শিক্ষক অজানা এক কারণে প্রাপ্য নম্বর দেননি। লুৎফর রহমান গিয়ে সেই শিক্ষকের সঙ্গে রীতিমতো তর্ক করে নম্বর বাড়িয়েছিলেন। আরেক শিক্ষক ইউসুফ আলী। বিতর্কে অংশ নেওয়ার জন্য সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গেছেন। নার্ভাস হলেই মঞ্চ থেকে তাঁর মুখের দিকে তাকাতাম। একটা হাসি দিয়েই বোঝাতেন ভয় নেই। সেই একই কারণে; আরেকটু এগিয়ে দেওয়ার জন্য।
বিলেতে আমার পিএইচডির তিনজন সুপারভাইজার ছিলেন। একজন খ্রিষ্টান, একজন বৌদ্ধ, আরেকজন মুসলিম। পিছিয়ে পড়লে তিনজনই টেনে তুলেছেন। সাহস জুগিয়েছেন। সাহায্য করেছেন আরেকটু এগিয়ে যেতে।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ধর্ম-বর্ণ-জাতি বা দেশ—সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ক তো শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ থাকে না। এই সম্পর্কের ব্যাপ্তি আর গভীরতা বহুমাত্রিক। পৃথিবীর সব দেশেই। শ্রেণিকক্ষের বাইরে ছাত্র শিক্ষকের এই সম্পর্ক আর কোনো বিষয়ে স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনাগুলোই ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের মনোজগৎ তৈরি করে। চিন্তার গভীরতা বাড়ায়।
জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে অবস্থান শক্ত করতে তথ্যপ্রযুক্তি, বিশেষ করে প্রোগ্রামিং, গণিত ও পরিসংখ্যানের মতো বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে দরকার সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি, তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, বিশ্লেষণী শক্তি, আর নেতৃত্ব দানের গুণাবলি। সঙ্গে সহমর্মিতা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফায়দা নেওয়ার জন্য শিক্ষিত জনসম্পদ তৈরি অত্যন্ত জরুরি। আর শিক্ষিত জনসম্পদ তৈরি করতে হলে প্রয়োজন সাহসী, সৎ, দক্ষ ও সুখী শিক্ষকদের। ফেসবুক, টিকটক, টুইটার দিয়ে শিক্ষিত জনসম্পদ গড়ে তোলা যায় না।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে শিক্ষকদের সঙ্গে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলোকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জাতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের শুরু বলতে পারেন। এই ঘটনাগুলো প্রথমে এক জায়গায় শুরু হয়। তারপর কিছুদিনের বিরতি দিয়ে আরেক জায়গায়। প্রতিরোধ করা না গেলে ঘটনাগুলো চলতেই থাকে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে টিপিং পয়েন্ট। গোড়াতেই যদি এই ঘটনাগুলো বন্ধ করা না যায়, তাহলে এগুলো সমাজের একটা অংশের কাছে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে ওঠে।
বিলেতে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষ শেষ হতে চলেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই গরমের ছুটি। স্কুল বন্ধ হওয়ার আগে এখানে ছেলেমেয়েরা তাদের শিক্ষকদের ধন্যবাদ হিসেবে ছোট্ট উপহার তুলে দেয়। ফুল, চকলেট, আর হাতে লেখা ধন্যবাদ কার্ড। এটি বছরজুড়ে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য। অনেকবার দেখেছি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খুব ছোট্ট এই উপহার পেয়ে চোখ ভেজা শিক্ষকদের। এই লেখা যখন লিখছি, বিলেতে আমার বাড়িতে ছোট্ট দুই শিক্ষার্থী শিক্ষকদের কী উপহার দেবে, তা নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত।
আমার স্বদেশেও শিক্ষকদের উপহার দেওয়া হচ্ছে। বেশ জোগাড়যন্ত্র করেই। তবে এই উপহারের ধরনটা আলাদা।
আজ হয়তো আপনি ভাবছেন আপনি আক্রান্ত নন। এড়িয়ে গেলেন। শারীরিকভাবে আপনি হয়তো আক্রান্ত হননি। কিন্তু আপনার, বাঙালি জাতিসত্তার মূল্যবোধ আক্রান্ত। আপনি ভেবে দেখুন আপনার শিশুকে শিক্ষকদের কোন উপহার দেওয়া শেখাবেন? চকলেট আর ফুল, না জুতোর মালা? সিদ্ধান্তটা আপনারই।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট
১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাস। পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন অধ্যাপক আব্দুস সালাম। পুরস্কার গ্রহণ করে সুইডেন থেকে কাজের জায়গা লন্ডনে ফিরে এলেন। এসেই যোগাযোগ করলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। খুবই অদ্ভুত একটা অনুরোধ—অধ্যাপক অনিলেন্দ্র গাঙ্গুলি নামের এক ভদ্রলোককে খুঁজে বের করতে হবে। অধ্যাপক গাঙ্গুলি কোন রাজ্যে বা কোন শহরে থাকেন, তার কিছুই জানা নেই ড. সালামের। শুধু এটুকু জানেন তিনি ভারতে আছেন।
কিছুদিন পরই ড. সালামের ভারত সফর। এর মধ্যে যদি অধ্যাপক গাঙ্গুলিকে খুঁজে বের করে তাঁর সাথে সাক্ষাতের একটা ব্যবস্থা মিসেস গান্ধী করে দিতে পারেন, তাহলে খুবই ভালো হয়। ড. সালামের অনুরোধ বলে কথা। শুরু হলো ড. গাঙ্গুলিকে খোঁজার কাজ। তখন তো আর ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ নয়। চাইলেই অত সহজে কাউকে খুঁজে পাওয়া যেত না।
কে এই অনিলেন্দ্র গাঙ্গুলি? ভারত ভাগের আগে অনিলেন্দ্র গাঙ্গুলি লাহোরের সনাতন ধর্ম কলেজের অঙ্কের নামকরা শিক্ষক ছিলেন। তাঁর ছাত্র ছিলেন আব্দুস সালাম। ১৯৪৭-এর পর অধ্যাপক গাঙ্গুলি সপরিবারে লাহোর থেকে ভারতে চলে এসেছেন। ড. সালাম এর আগেও অনেকবার তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পাননি।
দুই বছর পর অধ্যাপক গাঙ্গুলির খোঁজ পাওয়া গেল দক্ষিণ কলকাতায়। খবর পেয়েই ১৯৮১ সালের ১৯ জানুয়ারি লন্ডন থেকে ড. সালাম ছুটে এলেন কলকাতায়। অধ্যাপক গাঙ্গুলি তখন বয়সের ভারে অসুস্থ। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। ড. সালাম বিছানার পাশে বসে অধ্যাপক গাঙ্গুলির হাত দুটো ধরলেন। পকেট থেকে নোবেল পদকটি বের করে ড. সালাম বললেন, ‘আমার এই নোবেল প্রাপ্তি আপনার জন্য। আপনিই আমাকে অঙ্ক শিখিয়েছিলেন। অঙ্কের প্রতি আমার ভালোবাসা তৈরি করেছিলেন। এই পদক আপনার, আমার নয়।’
ওপরের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ সচিত্র বিবরণ একাধিক নিবন্ধে এবং ড. সালামকে নিয়ে নেটফ্লিক্সের সাম্প্রতিক তথ্যচিত্রে পাওয়া যাবে।
কিছুদিন পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় গণিতে ড. সালামের অবদানের জন্য তাঁকে ‘দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী পুরস্কার’-এর জন্য মনোনীত করে। কিন্তু ড. সালাম বলেন, এই পুরস্কারের জন্য সব থেকে যোগ্য ব্যক্তি অধ্যাপক গাঙ্গুলি। তাঁর পরামর্শ শুনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ড. গাঙ্গুলিকে এই পুরস্কারে ভূষিত করে।
ড. সালামের মতো গুনি, মেধাবী এবং জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী বিলেতে সব কাজ ফেলে পুরোনো কলেজের শিক্ষককে কৃতজ্ঞতা জানাতে ছুটে এসেছিলেন পৃথিবীর আরেক প্রান্তে।
দুই.
সন্ধ্যা হলেই আমাকে পড়াতে আসতেন শামসুর রহমান খান। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। সাইকেলে। আমার দুই ভাষার বর্ণপরিচয় তাঁর কাছেই। নিজ হাতে আমার জন্য কাগজ কেটে খাতা সেলাই করতেন। বইয়ের মলাট দিতেন। কোন পেনসিল দিয়ে লিখলে হাতের লেখা ভালো হয়, সেটা খুঁজে নিয়ে আসতেন বাজার থেকে। পরীক্ষার ফল বেরোনোর আগে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় থাকতেন। সাইকেল চালানো শেখা তাঁর কাছে; টাইপ করাও। বছরের পর বছর অব্যাহত চেষ্টা করে গেছেন আমাকে আরেকটু এগিয়ে দেওয়ার।
হাইস্কুলে অঙ্ক করাতেন লুৎফর রহমান। সঙ্গে বিজ্ঞানও পড়াতেন। স্কুলের এক পরীক্ষায় অঙ্কের নতুন এক শিক্ষক অজানা এক কারণে প্রাপ্য নম্বর দেননি। লুৎফর রহমান গিয়ে সেই শিক্ষকের সঙ্গে রীতিমতো তর্ক করে নম্বর বাড়িয়েছিলেন। আরেক শিক্ষক ইউসুফ আলী। বিতর্কে অংশ নেওয়ার জন্য সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গেছেন। নার্ভাস হলেই মঞ্চ থেকে তাঁর মুখের দিকে তাকাতাম। একটা হাসি দিয়েই বোঝাতেন ভয় নেই। সেই একই কারণে; আরেকটু এগিয়ে দেওয়ার জন্য।
বিলেতে আমার পিএইচডির তিনজন সুপারভাইজার ছিলেন। একজন খ্রিষ্টান, একজন বৌদ্ধ, আরেকজন মুসলিম। পিছিয়ে পড়লে তিনজনই টেনে তুলেছেন। সাহস জুগিয়েছেন। সাহায্য করেছেন আরেকটু এগিয়ে যেতে।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ধর্ম-বর্ণ-জাতি বা দেশ—সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ক তো শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ থাকে না। এই সম্পর্কের ব্যাপ্তি আর গভীরতা বহুমাত্রিক। পৃথিবীর সব দেশেই। শ্রেণিকক্ষের বাইরে ছাত্র শিক্ষকের এই সম্পর্ক আর কোনো বিষয়ে স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনাগুলোই ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের মনোজগৎ তৈরি করে। চিন্তার গভীরতা বাড়ায়।
জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে অবস্থান শক্ত করতে তথ্যপ্রযুক্তি, বিশেষ করে প্রোগ্রামিং, গণিত ও পরিসংখ্যানের মতো বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে দরকার সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি, তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, বিশ্লেষণী শক্তি, আর নেতৃত্ব দানের গুণাবলি। সঙ্গে সহমর্মিতা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফায়দা নেওয়ার জন্য শিক্ষিত জনসম্পদ তৈরি অত্যন্ত জরুরি। আর শিক্ষিত জনসম্পদ তৈরি করতে হলে প্রয়োজন সাহসী, সৎ, দক্ষ ও সুখী শিক্ষকদের। ফেসবুক, টিকটক, টুইটার দিয়ে শিক্ষিত জনসম্পদ গড়ে তোলা যায় না।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে শিক্ষকদের সঙ্গে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলোকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জাতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের শুরু বলতে পারেন। এই ঘটনাগুলো প্রথমে এক জায়গায় শুরু হয়। তারপর কিছুদিনের বিরতি দিয়ে আরেক জায়গায়। প্রতিরোধ করা না গেলে ঘটনাগুলো চলতেই থাকে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে টিপিং পয়েন্ট। গোড়াতেই যদি এই ঘটনাগুলো বন্ধ করা না যায়, তাহলে এগুলো সমাজের একটা অংশের কাছে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে ওঠে।
বিলেতে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষ শেষ হতে চলেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই গরমের ছুটি। স্কুল বন্ধ হওয়ার আগে এখানে ছেলেমেয়েরা তাদের শিক্ষকদের ধন্যবাদ হিসেবে ছোট্ট উপহার তুলে দেয়। ফুল, চকলেট, আর হাতে লেখা ধন্যবাদ কার্ড। এটি বছরজুড়ে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য। অনেকবার দেখেছি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খুব ছোট্ট এই উপহার পেয়ে চোখ ভেজা শিক্ষকদের। এই লেখা যখন লিখছি, বিলেতে আমার বাড়িতে ছোট্ট দুই শিক্ষার্থী শিক্ষকদের কী উপহার দেবে, তা নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত।
আমার স্বদেশেও শিক্ষকদের উপহার দেওয়া হচ্ছে। বেশ জোগাড়যন্ত্র করেই। তবে এই উপহারের ধরনটা আলাদা।
আজ হয়তো আপনি ভাবছেন আপনি আক্রান্ত নন। এড়িয়ে গেলেন। শারীরিকভাবে আপনি হয়তো আক্রান্ত হননি। কিন্তু আপনার, বাঙালি জাতিসত্তার মূল্যবোধ আক্রান্ত। আপনি ভেবে দেখুন আপনার শিশুকে শিক্ষকদের কোন উপহার দেওয়া শেখাবেন? চকলেট আর ফুল, না জুতোর মালা? সিদ্ধান্তটা আপনারই।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নাম জুড়ে দিয়ে ওই তিন দলসহ মোট ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে রিট করার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। ১১টি দলের তালিকায় এলডিপির নামও
১২ ঘণ্টা আগেঅত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এই লেখাটা লিখছি। রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ে অন্য একটি প্রবন্ধ লিখব বলে ভেবেছিলাম। গত রোববার থেকেই বুকের মধ্যে কেমন যেন পাথরচাপা একটা কষ্ট অনুভব করছি। প্রথমে টেলিভিশনে খবরে দেখলাম, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তিন ছাত্র মারা গেছেন। যে তিন ছাত্র মারা গেছেন, তাঁদের সমবয়সী হবে
১২ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় বহুল পরিচিত একটি শব্দ হলো কালাজ্বর। শব্দটি কমবেশি আমরা সবাই শুনেছি। এমনকি কেউ কেউ কালাজ্বরে আক্রান্তও হয়েছি। কিন্তু এই জ্বরকে কালাজ্বর কেন বলা হয়? কালো রঙের সঙ্গে এর কি কোনো সম্পর্ক রয়েছে? জ্বরের প্রকারভেদে রঙের কি আদৌ কোনো ভূমিকা রয়েছে? যদি না থাকে তাহলে প্রশ্ন হলো, কেন এ জ্বরকে কালাজ্ব
১২ ঘণ্টা আগেসাংবাদিকদের হয়রানি করা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থল ও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের ইমিগ্রেশনে যেভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, তা কেবল পেশাগত বাধার উদাহরণ নয়, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার ওপর একধরনের চাপ। এই ধরনের আচরণ রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনা ও মানব
১২ ঘণ্টা আগে