মন্টি বৈষ্ণব, সাংবাদিক
সেদিন পল্টন যাওয়ার পথে বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে দেখতে পেলাম, অনেক শ্রমিক জড়ো হয়ে আছেন। ঘটনা কী, বোঝার জন্য রিকশা থেকে নেমে হেঁটে পৌঁছালাম শ্রম ভবনে। তখন সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই। দেখলাম, বেশ কিছু নারী শ্রমিক লাইনে বসে সন্ধ্যার আগমুহূর্তে খেতে বসেছেন। এই অসময়ে তাঁদের খিচুড়ি খেতে দেখে কিছুটা অবাক হলাম বৈকি। দুই লাইন করে সুশৃঙ্খলভাবে খেতে বসেছেন তাঁরা। খাওয়ার সময় তেমন কোনো অনিয়ম চোখে পড়ল না। এই সময় মাইক থেকে ভেসে এল এক পুরুষ শ্রমিকের কণ্ঠ। তিনি বলছেন, ‘আমরা এখানে আমাদের চার মাসের পরিশ্রমের টাকা ফেরত নিতে এসেছি। এখানে আমাদের খাওয়ার অনেক সমস্যা।
তবু আমরা আমাদের বোনদের আগে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।
এরপর আমরা ভাইয়েরা লাইন ধরে খেতে বসব।’
এই ঘোষণার পর দেখলাম দীর্ঘ লাইনে বাকি নারী শ্রমিকেরা খেতে বসেছেন। তাঁদের হাতে প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম সাদা প্লেট, সেই প্লেটে দেওয়া হয়েছে অল্প পরিমাণ খিচুড়ি। সেই খিচুড়ি খেয়ে তাঁরা সারা দিনের ক্ষুধা নিবারণ করবেন। খোঁজ নিয়ে জানলাম, পরিমাণে এর চেয়ে বেশি খিচুড়ি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
শ্রমিকেরা একবেলা খাবার খাচ্ছেন। অনেক নারী শ্রমিকের কোলে শিশু। একপর্যায়ে খাওয়ার জায়গা থেকে চলে গেলাম শ্রম ভবনের বাঁয়ের সিঁড়ির নিচে। সেখানে বেশ কিছু নারী শ্রমিক এলোপাতাড়িভাবে ঘুমাচ্ছেন। সিঁড়ির নিচে কোনো কোনো নারী শ্রমিক কোলে ছোট সন্তান নিয়ে অসহায়ভাবে বসে আছেন।
শ্রম ভবনের এদিক-সেদিক ঘুরতে ঘুরতে বুঝলাম, এখানকার শ্রমিকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, এখানে যাঁরা আছেন, তাঁরা একটি কারখানার শ্রমিক। দীর্ঘ চার মাস তাঁদের পাওনা টাকা বুঝে পাননি মালিকপক্ষ থেকে। গত কোরবানির ঈদে মালিকপক্ষ তাঁদের ৫ হাজার টাকা করে দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে কারখানা। চার মাসের বেতন না পেয়ে এই কারখানার শ্রমিকেরা না পারছেন বাড়িভাড়া দিতে, না পারছেন পেটভরে খেতে। কারণ তাঁরা কী দিয়ে খাবেন? টাকার অভাবে তাঁদের ঘরে চাল, ডাল, তেল, লবণ কিছুই নেই। বেশ কিছু শ্রমিক পরিবারকে বাড়িওয়ালা ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। এলাকার দোকানদারেরা তাঁদের কাছে বিক্রি করছেন না কোনো পণ্য।
আবার অনেকের টাকার অভাবে নিজের তো দূরের কথা, সন্তানের জন্য ওষুধও কিনতে পারছেন না। তাঁদের কথায় বুঝলাম তাঁরা তাঁদের ন্যায্য মজুরি, অর্থাৎ বেতন চান কিন্তু মালিকপক্ষ বলছে, টাকা নেই। তাহলে এই বড় অঙ্কের টাকা কোন ব্যাংকে জমা আছে? ইতিমধ্যে শ্রমিকেরা এই পাওনা টাকা আদায়ের জন্য বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সমাধান না পেয়ে শ্রম ভবনে অবস্থান নিয়েছেন। সেদিন শ্রমিকদের কষ্টের কথা শুনে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাসায় ফিরে গেলাম।
পরদিন পত্রিকায় দেখলাম, স্টাইল ক্রাফট শ্রমিকদের ১০ দিন ও ১০ রাত শ্রম ভবনে লাগাতার অবস্থানের পর, তাঁদের আংশিক পাওনা দেওয়া হবে। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুসারে আগামী ২ ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রমিকদের সব বকেয়াও পরিশোধ করা হবে।
পত্রিকায় এ খবর দেখে মনে মনে খুশি হলাম। ফোন দিলাম জান্নাত বেগমকে। যাঁর সঙ্গে সেদিন কথা হলো। ফোনে জানতে পারলাম, তাঁদের সবাইকে এক মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা আগামী ২ ডিসেম্বরের মধ্যে পাবেন–এমনটি শুনেছেন। তাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অজানা আশঙ্কা ভিড় করেছে জান্নাতের মনে।। তাঁর দুই মাসের বাচ্চা কেমন আছে জানতে চাইলে অনেক হতাশা নিয়ে বললেন, ‘শ্রম ভবনে থাকার সময় তাঁর দুই মাসের বাচ্চার ঠান্ডা লেগেছিল, সেই ঠান্ডা এখন ছেলেকে ভোগাচ্ছে।’
সেদিন পল্টন যাওয়ার পথে বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে দেখতে পেলাম, অনেক শ্রমিক জড়ো হয়ে আছেন। ঘটনা কী, বোঝার জন্য রিকশা থেকে নেমে হেঁটে পৌঁছালাম শ্রম ভবনে। তখন সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই। দেখলাম, বেশ কিছু নারী শ্রমিক লাইনে বসে সন্ধ্যার আগমুহূর্তে খেতে বসেছেন। এই অসময়ে তাঁদের খিচুড়ি খেতে দেখে কিছুটা অবাক হলাম বৈকি। দুই লাইন করে সুশৃঙ্খলভাবে খেতে বসেছেন তাঁরা। খাওয়ার সময় তেমন কোনো অনিয়ম চোখে পড়ল না। এই সময় মাইক থেকে ভেসে এল এক পুরুষ শ্রমিকের কণ্ঠ। তিনি বলছেন, ‘আমরা এখানে আমাদের চার মাসের পরিশ্রমের টাকা ফেরত নিতে এসেছি। এখানে আমাদের খাওয়ার অনেক সমস্যা।
তবু আমরা আমাদের বোনদের আগে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।
এরপর আমরা ভাইয়েরা লাইন ধরে খেতে বসব।’
এই ঘোষণার পর দেখলাম দীর্ঘ লাইনে বাকি নারী শ্রমিকেরা খেতে বসেছেন। তাঁদের হাতে প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম সাদা প্লেট, সেই প্লেটে দেওয়া হয়েছে অল্প পরিমাণ খিচুড়ি। সেই খিচুড়ি খেয়ে তাঁরা সারা দিনের ক্ষুধা নিবারণ করবেন। খোঁজ নিয়ে জানলাম, পরিমাণে এর চেয়ে বেশি খিচুড়ি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
শ্রমিকেরা একবেলা খাবার খাচ্ছেন। অনেক নারী শ্রমিকের কোলে শিশু। একপর্যায়ে খাওয়ার জায়গা থেকে চলে গেলাম শ্রম ভবনের বাঁয়ের সিঁড়ির নিচে। সেখানে বেশ কিছু নারী শ্রমিক এলোপাতাড়িভাবে ঘুমাচ্ছেন। সিঁড়ির নিচে কোনো কোনো নারী শ্রমিক কোলে ছোট সন্তান নিয়ে অসহায়ভাবে বসে আছেন।
শ্রম ভবনের এদিক-সেদিক ঘুরতে ঘুরতে বুঝলাম, এখানকার শ্রমিকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, এখানে যাঁরা আছেন, তাঁরা একটি কারখানার শ্রমিক। দীর্ঘ চার মাস তাঁদের পাওনা টাকা বুঝে পাননি মালিকপক্ষ থেকে। গত কোরবানির ঈদে মালিকপক্ষ তাঁদের ৫ হাজার টাকা করে দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে কারখানা। চার মাসের বেতন না পেয়ে এই কারখানার শ্রমিকেরা না পারছেন বাড়িভাড়া দিতে, না পারছেন পেটভরে খেতে। কারণ তাঁরা কী দিয়ে খাবেন? টাকার অভাবে তাঁদের ঘরে চাল, ডাল, তেল, লবণ কিছুই নেই। বেশ কিছু শ্রমিক পরিবারকে বাড়িওয়ালা ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। এলাকার দোকানদারেরা তাঁদের কাছে বিক্রি করছেন না কোনো পণ্য।
আবার অনেকের টাকার অভাবে নিজের তো দূরের কথা, সন্তানের জন্য ওষুধও কিনতে পারছেন না। তাঁদের কথায় বুঝলাম তাঁরা তাঁদের ন্যায্য মজুরি, অর্থাৎ বেতন চান কিন্তু মালিকপক্ষ বলছে, টাকা নেই। তাহলে এই বড় অঙ্কের টাকা কোন ব্যাংকে জমা আছে? ইতিমধ্যে শ্রমিকেরা এই পাওনা টাকা আদায়ের জন্য বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সমাধান না পেয়ে শ্রম ভবনে অবস্থান নিয়েছেন। সেদিন শ্রমিকদের কষ্টের কথা শুনে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাসায় ফিরে গেলাম।
পরদিন পত্রিকায় দেখলাম, স্টাইল ক্রাফট শ্রমিকদের ১০ দিন ও ১০ রাত শ্রম ভবনে লাগাতার অবস্থানের পর, তাঁদের আংশিক পাওনা দেওয়া হবে। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুসারে আগামী ২ ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রমিকদের সব বকেয়াও পরিশোধ করা হবে।
পত্রিকায় এ খবর দেখে মনে মনে খুশি হলাম। ফোন দিলাম জান্নাত বেগমকে। যাঁর সঙ্গে সেদিন কথা হলো। ফোনে জানতে পারলাম, তাঁদের সবাইকে এক মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা আগামী ২ ডিসেম্বরের মধ্যে পাবেন–এমনটি শুনেছেন। তাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অজানা আশঙ্কা ভিড় করেছে জান্নাতের মনে।। তাঁর দুই মাসের বাচ্চা কেমন আছে জানতে চাইলে অনেক হতাশা নিয়ে বললেন, ‘শ্রম ভবনে থাকার সময় তাঁর দুই মাসের বাচ্চার ঠান্ডা লেগেছিল, সেই ঠান্ডা এখন ছেলেকে ভোগাচ্ছে।’
ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান ২৫ ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-এর সমন্বয়ক। জনপ্রশাসনে আন্তক্যাডার বৈষম্য ও বিরোধ, প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি বাকি ক্যাডারদের ক্ষোভ এবং তাঁদের অন্যান্য দাবি-দাওয়ার বিষয় নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলেছেন।
৩ ঘণ্টা আগেনব্বইয়ের দশক থেকে দীর্ঘদিন ঢাকা শহরের মণিপুরিপাড়ায় ছিলাম। তখন সেখান থেকে রাস্তা পার হয়ে শহীদ আনোয়ারা উদ্যানের ভেতর দিয়ে ইন্দিরা রোডের দোকানগুলোতে কেনাকাটা করতে যেতাম। দুটি প্রধান রাস্তার মাঝে একটি আয়তাকার ছোট পরিসরে গড়ে তোলা হয়েছিল সেই উদ্যান।
৩ ঘণ্টা আগেচালের দাম এবং বাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের জনগণের নিত্যদিনের বাস্তবতা। আমনের ভরা মৌসুমে গত কয়দিনে চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চড়া দর নিয়ে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা এবং মিলাররা একে অপরকে দুষছেন।
৩ ঘণ্টা আগেআমার শিক্ষক, শিক্ষাগুরু ও পথপ্রদর্শক প্রফেসর মো. আনিসুর রহমান ৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৭২ সালে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, তখন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য প্রফেসর আনিসুর রহমান তাঁর কমিশনের কর্মপরিধি কিছুটা...
১ দিন আগে