সবচেয়ে চিকন ধান উদ্ভাবন

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

প্রতিদিনের সংবাদপত্রে অসংখ্য খারাপ খবর পাঠ করে পাঠক যখন ক্লান্ত, ত্যক্তবিরক্ত, ঠিক তখন ২৯ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘এবার সবচেয়ে চিকন ধান উদ্ভাবন নূরের’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি পড়ে পাঠক খুশি হবেন, আনন্দিত হবেন। রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার নূর মোহাম্মদ নামের একজন ‘কৃষিবিজ্ঞানী’ একটি খুব চিকন বা সরু জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন।

দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা কৃষক নূর মোহাম্মদের বাড়ি রাজশাহীর তানোর পৌরসভার গোল্লাপাড়া মহল্লায়। বরেন্দ্রের পোড়ামাটিতে কীভাবে কম পানিতে ধান উৎপাদন করা যায়, সে বিষয়ে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণা করছেন তিনি। নিজের বাড়ির মাটির ঘরে রীতিমতো গড়ে তুলেছেন গবেষণাগার।

ধানের উৎপাদন ক্রমাগত বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ও কৃষক নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, তবে শুধু সরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নয়, অনেক সাধারণ কৃষকও তাঁদের জীবনভর সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কৃষির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। এর আগে ঝিনাইদহের এক সাধারণ কৃষক হরিপদ কাপালী যেমন হরি ধানের উৎপাদন করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তেমনি তানোরের নূর মোহাম্মদও উদ্ভাবন করেছেন নতুন একটি ধানের জাত, যা সবার নজর কেড়েছে। এই ধানের উদ্ভাবন শুধু নূর মোহাম্মদের দক্ষতা ও পরিশ্রমের ফল নয়, এটি সাধারণ কৃষকের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং দেশীয় বাস্তবতার সঠিক প্রয়োগের ফলও।

এ ধরনের উদ্ভাবন শুধু কৃষিবিজ্ঞানীদেরই নয়, বরং কৃষকদের জন্যও এক বড় অনুপ্রেরণা। নূর মোহাম্মদের উদ্ভাবিত ‘নূর ধান-২’-এর মতো অধিক উৎপাদনশীল জাতের উদ্ভাবন আমাদের সামনে এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যা কৃষির উন্নয়ন ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক সেচের অভাব, খরা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তাই অধিক ফলনশীল ও খরাসহিষ্ণু ধান জাতের উদ্ভাবন যেমন তাদের জন্য লাভজনক, তেমনি এটি দেশের খাদ্যনিরাপত্তা এবং কৃষি অর্থনীতির উন্নয়নেও সহায়ক।

নূর মোহাম্মদ যেমন কৃষকপর্যায়ে গবেষণা করে বিভিন্ন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন, তেমনি তিনি কৃষকদের মধ্যে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা তুলে ধরেছেন। তাঁর উদ্ভাবিত জাতগুলো খরার সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম এবং কম সময়ে বেশি ফলন দিতে পারে, যা আমাদের দেশের কৃষকদের জন্য এক বড় সহায়তা। তাঁর মতো উদ্ভাবকেরা কৃষির প্রতি তাঁদের একাগ্রতা ও মেধা দিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছেন।

এভাবে কৃষকদের হাতে-কলমে শিক্ষা এবং তাঁদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উদ্ভাবিত নতুন ধানের জাত শুধু এককভাবে কৃষকদের লাভজনক করবে না, বরং এটি দেশের কৃষির উন্নয়ন, খাদ্য চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কৃষির প্রতি অনুপ্রেরণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা একটি আত্মনির্ভরশীল কৃষিব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে পারি, যা দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে নিঃসন্দেহে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে একগুচ্ছ সুপারিশ কমিশনের

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত