Ajker Patrika

হাওর ও হুমকি

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ২৪
হাওর ও হুমকি

টাঙ্গুয়ার হাওর হুমকির মুখে, এ রকম একটা খবর বেরিয়েছে আজকের পত্রিকায়। নানা কারণেই বিপন্ন হয়ে উঠছে হাওরটি। এর বেশির ভাগই মানুষ-সৃষ্ট বিপন্নতা। চুরি-চামারি, গায়ের জোর,অভব্য আচরণের কারণেই তৈরি হয়েছে এই হুমকির পরিবেশ।

হাওর নিয়ে কিছু কথা বলা শুরু করা যাক। এ কথা অনেকেরই জানা আছে, ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা আর মণিপুরের উচ্চভূমি দিয়ে আমাদের দেশের হাওরাঞ্চল ঘেরা। মূলত বৃহত্তর সিলেট আর ময়মনসিংহ অঞ্চলেই হাওর দেখা যায়। বিশাল এই সমভূমিতে ছয় হাজারের বেশি জলমহাল আছে।

জলমহালগুলো মূলত বিল নামে পরিচিত। বর্ষাকালে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে পানি নেমে এসে বিশাল এই সমভূমিকে প্লাবিত করে, তখন এই অঞ্চলে শুধু পানি আর পানি। প্রায় ছয় মিটার পর্যন্ত গভীরতা নিয়ে সাগরের রূপ নেয় হাওর।

শুষ্ক মৌসুমে হাওরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পানি থাকে না। প্রচুর পরিমাণ জলজ উদ্ভিদ গজিয়ে ওঠে কোনো কোনো বিলের অগভীর পানিতে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর প্রচুর পলি জমা হওয়ার কারণে উর্বর মাটিতে হয় ধানের ব্যাপক ফলন। রবিশস্যও ফলে।

হাওর এলাকা পরিযায়ী পাখিদের সাময়িক বিশ্রামক্ষেত্র। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সব ধরনের আয়োজনই করে রেখেছে হাওর। একটু সতর্ক হয়ে হাওরের কাছে গেলেই সে দুই হাত ভরে দিতে পারে।

হাওরের জীবনে বিপদ ডেকে এনেছে যারা, তারা মানুষই। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে হাওর হুমকির সম্মুখীন, সেটা নতুন কোনো খবর নয়। এ ছাড়া যে বিষয়গুলো হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে, সেগুলোও পুরোনো। নতুন করে হুমকির কথা বলতে হচ্ছে, কারণ মানুষের ‘খাসলত’ বদলাচ্ছে না।

মানুষ আপন করে দেখছে না তার নিজের দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক রক্ষাকর্তা হাওরকে। হাওরের মৃত্যু হলে তার দায় মানুষ নেবে না। মানুষ নিজেকে প্রকৃতির অংশ বলে মনে করছে না। মানুষ হাওর এলাকায় নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল পাতবে, ফাঁদ পেতে পরিযায়ী পাখি হত্যা করবে, হিজল আর করচগাছ কেটে উজাড় করবে। এটা তাদের অধিকার বলেই মনে করবে। এখন তো নৌকা বলতে ইঞ্জিন নৌকারই কাল, সেটাই তেল ছড়াতে ছড়াতে চলবে হাওরের ওপর দিয়ে এবং মানুষ সেখানে বসে অবলীলায় প্লাস্টিকের বর্জ্য, চিপসের প্যাকেট, কোমল পানীয়ের বোতল ফেলতে থাকবে পানিতে। তারপরও আমরা ভাবব যে, এখানকার জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন থাকবে, মায়ের মতো হাওর জোগাবে অন্ন?

প্রকৃতির সঙ্গে বেয়াদবি করে শিল্পোন্নত দেশগুলো এখন বুঝতে পারছে, প্রকৃতির প্রতিশোধ কাকে বলে। ক্ষুদ্রভাবে আমরাও যে একই অন্যায় করে চলেছি, সেটা হাওরের প্রতি অনাচার দেখলেই  বোঝা যায়।

শুধু সরকারের খবরদারিতে কাজ হবে না, সাধারণ মানুষেরও ‘খাসলত’ বদলাতে হবে। নইলে এই অন্নদাতা হাওর একসময় মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তার পরিণতি যা হবে, সেটা অল্প কথায় বলা সম্ভব নয়। তবে সেটা যে ভয়াবহ একটি বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে আসবে, সে কথা বলাই বাহুল্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফাইনালে ভারতের ‘যম’কে খেলানো নিয়ে দোটানায় নিউজিল্যান্ড

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিলুপ্তের সিদ্ধান্ত হয়নি, নাহিদের মন্তব্যের জবাবে উমামা

আ.লীগ নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

বোনের বাড়িতে ‘ধর্ষণের’ শিকার: ২৪ ঘণ্টা পরও অচেতন শিশু, মূর্ছা যাচ্ছেন মা

আওয়ামী লীগ নেতা ‘ব্যাটারি বাবু’ ভবনে ঢুকে হাওয়া!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত