ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারে স্বাস্থ্যকর্মীরা

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩: ৫৯
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪: ২৬

জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান দুলালের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডজনখানেক স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে। নৌকাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকে সরাসরি প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। 

নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে কেউ ফেসবুক পোস্ট দিচ্ছেন, কেউ সরাসরি মিছিল ও সমাবেশ করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। কোনো কোনো স্বাস্থ্যকর্মী অকপটে স্বীকারও করেন, তাঁরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারে অংশও নিচ্ছেন। কেউ কেউ দাম্ভিকতার সুরে জানান, নৌকায় ভোট চাওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে যে যা খুশি করতে পারলে করুক। এতে তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। 

সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারি চাকরিতে কর্মরত কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। প্রমাণ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালকে বিজয় করতে নৌকা প্রতীকের প্রচারে অংশ নিয়েছেন উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের (এফডব্লিওসি) পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) আসাদুল হক দুলাল। তিনি জামালপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা মাঠ কর্মচারী সমিতির সভাপতি হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এখানকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। আসাদুল হক দুলাল প্রায় দিনই ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনী সভায় নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছেন। 

এ ছাড়া নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন একই ইউনিয়নের পোড়ারচর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) মো. জিয়াউল হক এবং চন্দনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী আশিকুল হক হেলাল। 

জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা আল মাহমুদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবী হয়ে ডজনখানেক স্বাস্থ্যকর্মী নৌকা প্রতীকের ভোট চেয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ ভোট গ্রহণে দায়িত্বও পেয়েছেন। এতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে।’

কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম শাহীনুজ্জামান শাহীনের নির্বাচনী সমন্বয়ক পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুর ইসলাম নুর বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মী আসাদুল হক দুলাল, তাঁর ছোট ভাই আশিকুল হক হেলাল এবং স্বাস্থ্য সহকারী জিয়াউল হক নৌকা প্রতীকে ভোট চাওয়াসহ মিছিল সমাবেশ করে যাচ্ছেন।’ 

পোড়ারচর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘নৌকার মাধ্যমে আমার চাকরি হয়েছে। সে কারণেই আমি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছি। এতে আমার বিরুদ্ধে যে যা করার করুক। আমার মতো শত শত চাকরিজীবী প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছে।’ 

আশিকুল হক হেলাল বলেন, ‘আমি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিইনি। আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে।’ 

গাইবান্ধা ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও জামালপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা মাঠ কর্মচারী সমিতির সভাপতি অভিযুক্ত আসাদুল হক দুলাল বলেন, ‘ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাঁর মতো সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নেই। এলাকাবাসী ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে ‘কর্মবীর’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। নৌকা প্রতীক বিজয়ী হলে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। আমি ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। এ কারণে তাঁর পক্ষে নির্বাচনী কয়েকটি সভায় বক্তব্য দিয়েছি। এটা দোষের কিছু দেখছি না।’

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামান চৌধুরী বলেন, ‘কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছে—এমন সরকারি চাকরিজীবী কোনো স্বাস্থ্যকর্মীকে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’ 

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফারুক আল ফয়সাল বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদটি সরকারি। এ পদে কর্মরত থেকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার আইনগত সুযোগ নেই। নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কোনো পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দেয়নি। নির্বাচনী প্রচারে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের অংশ নেওয়ার বিষয়টি এখন যেহেতু জানলাম। সেহেতু বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ এ এম আবু তাহের বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই। সরকারি চাকরিজীবী হয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কাজ করতে পারেন না। এটা সরকারি চাকরিজীবী শৃঙ্খলা পরিপন্থী। তবে নির্বাচনী প্রচারে স্বাস্থ্যকর্মীদের অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রমাণ পেলে তাঁদের শোকজ করা হবে।’ 

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই উপজেলায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত কোনো সরকারি চাকরিজীবী নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, এর আগে আওয়ামী লীগের অর্ধশত নেতা-কর্মী ভোট গ্রহণে দায়িত্ব পেয়ে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের আয়োজনে প্রশিক্ষণ নেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে প্রশাসন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত