Ajker Patrika

চীন সফর ও নতুন দলে থাকা নিয়ে আলোচনা, যা জানালেন জোনায়েদ ও রিফাত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ১৩
নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ ও যুগ্ম সদস্যসচিব রাফে সালমান রিফাত। ফাইল ছবি
নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ ও যুগ্ম সদস্যসচিব রাফে সালমান রিফাত। ফাইল ছবি

চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপিসহ আটটি রাজনৈতিক দলের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত সোমবার ১০ দিনের চীন সফরে গেছে। এই প্রতিনিধিদলে জাতীয় নাগরিক কমিটির চারজন সদস্যও রয়েছেন। এর মধ্যে আলী আহসান জোনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাতকে নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি বলছে, সংগঠনের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে এই সফরে অংশ নেননি। জোনায়েদ ও রিফাতের বিষয়ে সংগঠন জানত না।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে ‘জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ও পাঠিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কমিটি এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পায়নি। সংগঠনের কেউ চীন সফরের প্রতিনিধিত্ব করছেন না।

এ নিয়ে পরে নিজেরাই কথা বলেছেন, চীন সফরে অংশ নেওয়া আলী আহসান জোনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত। তাঁরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে নয়, বরং ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন। দুজনেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি।

এদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলে আলী আহসান জোনায়েদ বড় পদ পেতে যাচ্ছেন এমন কথা শোনা যাচ্ছিল। আগামী শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এই নতুন রাজনৈতিক দলটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তবে জোনায়েদ নিজেই পরে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তিনি নতুন রাজনৈতিক দলে থাকছেন না। তাঁর পোস্টটি শেয়ার করে একই কথা লিখেছেন রিফাত।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রিফাত তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি জানাকের প্রতিনিধি হিসেবে ডেলিগেশনে যাচ্ছি না। বিভিন্ন মিডিয়ায় বিষয়টি ভুলভাবে এসেছে এবং মিডিয়ার রিপোর্টগুলিতে আমার নাম ও জানাকের পদবি ভুল আসছে। [যাস্ট ফর ক্লারিফিকেশন]’। (বানান অপরিবর্তিত)

একই দিন রিফাতের পোস্টটি শেয়ার করে জোনায়েদ চীন সফরের প্রতিনিধিদলের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘Same for me. I am also with this delegation. Please pray for us. ’

নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার প্রশ্নে গতকাল সোমবার জোনায়েদ তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, ‘আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তরুণদের নেতৃত্বে যেই নতুন রাজনৈতিক দলটি আসছে, সেখানে আমি থাকছি না। সে কথা আমি আরও সপ্তাহখানেক আগেই জানিয়েছি দলের নেতাদেরকে। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ও জাতির নজর নতুন দলের উপর নিবদ্ধ রাখতে নীরবতা বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু, চারপাশের গুঞ্জন থামছে না। তাই, স্পষ্ট করে রাখছি।

দেখুন, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারীদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল দেশের স্বার্থেই প্রয়োজন। নতুন এই রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার দোয়া ও শুভকামনা রইলো। জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সততা ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত না হোক এই দল। দুর্নীতির সকল সুযোগ বন্ধ করে নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হোক এই দলে।

বারবার বলার পরও যদিও হয়নি, তবুও চাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার যথাযথ অনুসরণ ও ইনক্লুসিভনেস এই দলের বৈশিষ্ট্য হোক। দু: খজনক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পরও ট্যাগিং ও ট্যাবুর রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়ে নতুন ধারার রাজনীতি এই দলের মাধ্যমে শুরু হোক এই প্রত্যাশাই করি। আশা করি, অভ্যুত্থানের সময়ে আমাদের মধ্যে যেই ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা ও সহযোগিতার সম্পর্ক ছিলো, নতুন রাজনৈতিক পথচলায়ও আমাদের পারস্পরিক এই সম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধ অপরিবর্তিত থাকবে ৷

নতুন দল, নাহিদ ইসলাম এবং নব নেতৃত্বের জন্য শুভকামনা রইলো।’ (বানান অপরিবর্তিত)

তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলের পরিচিতিতে এখনো জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক লেখা রয়েছে।

কয়েক ঘণ্টা পর জোনায়েদের পোস্টটি শেয়ার করে রাফে সালমান রিফাত লিখেছেন, ‘২৮ তারিখে ঘোষিত হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলে আমিও থাকছি না। তবে, আমার রাজনৈতিক পথচলা থেমে থাকবে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার যে জোয়ার তৈরী হয়েছিলো তাতে শর্ট টার্মে খুব ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা রাখি না আপাতত। কিন্তু, একই সাথে এটাও মনে রাখি যে, রাজনীতি একটা লম্বা রেইস। ধৈর্য নিয়ে লম্বা সময়ের জন্যই আমাদেরকে এই রেইসে টিকে থাকতে হবে। আমরা নতুন সেই বাংলাদেশের প্রত্যাশি যেটা হবে সত্যিকার অর্থেই ডেমোক্রেটিক, ইনক্লুসিভ, বৈষম্যহীন এবং আধিপত্য মুক্ত। ঐক্যবদ্ধতা ও মধ্যমপন্থাই হবে আমাদের শক্তি। দূর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিহাদ চলবে। আঞ্চলিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই চলবে। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমরা জান দিয়ে লড়বো।

নতুন দলের জন্য দোয়া এবং শুভকামনা রইলো।’ (বানান অপরিবর্তিত)

তাঁর প্রোফাইলেও পরিচিতিতে লেখা, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব।

উল্লেখ্য, জাতীয় নাগরিক কমিটিতে বিভিন্ন মতাদর্শের সদস্য রয়েছেন। নতুন দলে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার দাবি উঠেছিল। বিশেষ করে আলী আহসান জোনায়েদ ও রাফে সালমান ছিলেন আলোচনায়। তবে নতুন দলে সাবেক শিবির নেতাদের রাখা নিয়ে নানামুখী মতামত আসতে শুরু করে। কৌশলগত কারণে সাবেক শিবির নেতাদের দলের সম্মুখ সারির নেতা না করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন অনেকে। কারণ এতে জুলাই অভ্যুত্থানকে জামায়াত–শিবিরের আন্দোলন হিসেবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ যে প্রচার চালাচ্ছে, সেটিতে রসদ সরবরাহ করা হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। আবার দলকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ করার জন্য সাবেক শিবির নেতাদেরও সম্মুখে রাখা পক্ষে মত অনেকের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত