Ajker Patrika

নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত, ১৪ দলের সভায় সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৯: ৫৩
নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত, ১৪ দলের সভায় সিদ্ধান্ত

দেশে নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি। তাদের নিষিদ্ধ করার পক্ষে একমত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।

প্রধানমন্ত্রী ও ১৪ দলীয় জোটের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে গতকাল সোমবার জোটের বৈঠকে দলগুলো জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে একমত হয়। বৈঠক শেষে গণভবনের ফটকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

কাদের বলেন, জামায়াত-শিবির গোষ্ঠীর অপশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য ১৪ দলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি জানান, বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির এবং তাদের দোসর উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে মনে করেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র করছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অতিসম্প্রতি চোরাগোপ্তা হামলা এবং গুলিবর্ষণ করে সরকারের ওপর দায় চাপাতে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ মানুষ হত্যা করে লাশ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রেখেছে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে প্রক্রিয়ায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী এ অপশক্তিকে নির্মূল করা প্রয়োজন।

বৈঠকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য প্রথমে দাবি জানান তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। তখন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে মত দেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইনি দিকগুলো দেখে সরকারের নির্বাহী আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সেই প্রজ্ঞাপন হতে পারে বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত সরকারকে জানিয়েছি। এখন তাদের দায়িত্ব বাস্তবায়ন করা। আইনগত দিক পর্যালোচনা করে নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত একধিক নেতা জানান, তাঁরা এর আগেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের প্রস্তাব তুলেছিল। সে সময় সরকার বলেছিল, তাদের নিষিদ্ধ করা হবে; কিন্তু এত দিন ধরে হয়নি। এখন তারা পুরোনো কায়দায় টার্গেট করে রাষ্ট্র ও সরকারের ওপর আঘাত হেনেছে। জনজীবনে এক দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে এসেছে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক দল বা সংগঠন হিসেবে তাদের অস্তিত্ব থাকার প্রয়োজন নেই। তাদের অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, ‘বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আমাদের জিজ্ঞেস করেন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের পক্ষে আমাদের ঐকমত্য আছে কি না? আমরা সবাই সম্মতি দিয়েছি। পরে সবাই একমত হয়েছি। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিসংগঠন হিসেবে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করবেন।’

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে কী কী প্রভাব পড়তে পারে, সেটা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। এক নেতা বলেন, তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলে কিছু হবে না। তখন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ডে তো তারাও ছিল। আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে কোনো দিন সফলভাবে কিছুই করা যায় না। জামায়াত-শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলে নিজেরাই শেষ হয়ে যাবে।

রাজনৈতিক দিল হিসেবে জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরীকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি রিট আবেদন করেন। সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।

তার আগেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের মার্চে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ মার্কা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট জারি করে নির্বাচন কমিশন। আদালতে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় জামায়াত দশম এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা হারায়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রতীকে ছাড় দেওয়া আসনে দলটির নেতারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছিলেন।

আন্দোলনে বিএনপিরও জড়িত থাকার অভিযোগ
১৪ দলের বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হওয়া সহিংসতায় বিএনপি জড়িত ছিল বলেও একাধিক নেতা অভিযোগ করেন। তাঁরা বিএনপির কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করলেও দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেননি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শান্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান জোটের নেতারা। তাঁরা বলেন, ধারাবাহিকভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

নিরাপত্তার অজুহাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৭ সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। ডিবি হেফাজতে থাকার সময় ভিডিও বার্তায় আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তাঁরা। সেখানে থাকাকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ এই সমন্বয়কদের সঙ্গে খাবার খাওয়ার ছবি তাঁর ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন।

বিষয়টি নিয়েও জোটের বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘হারুনের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ হলো আমলা দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয় না। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনীতিবিদদের দিয়েই করতে হয়।’

বৈঠকে দেশের পরিবেশ শান্ত হওয়ার পরও কয়েক দিন কারফিউ না তোলার পক্ষে মত দেন একাধিক নেতা। তাঁরা বলেন, কারফিউ তোলার পরও ১৫-৩০ দিন সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখতে হবে। কারণ এখন কী হয়, ঠিক নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত