সন্ত্রাস আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যগত চরিত্র: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭: ১৩

সারা দেশে বিএনপির চলমান আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী এবং পুলিশের হামলা-মামলার বিবরণ তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সন্ত্রাস আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যগত চরিত্র।’ 

আজ রোববার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় বিগত ১০ দিনে বিএনপির ৪ হাজার ৮১ জনের নামে এবং অজ্ঞাত ২০ হাজার জন নেতা কর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা আছে, দুরাত্মার ছলের অভাব নেই। তেমনি আওয়ামী লীগের ছলের অভাব নেই। তারা প্রতি মুহূর্তেই ছল তৈরি করে, আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে। এগুলো তাদের কমন বিষয়। আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর যে চরিত্র সেটা হলো সন্ত্রাস। সন্ত্রাসেই তাদের জন্ম, সন্ত্রাস করেই তারা রাজনীতি করে, সন্ত্রাস দিয়েই তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে।’ 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২২ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির কর্মসূচিতে ৩ জন নিহত হয়েছে। ২ হাজারের অধিক নেতা কর্মী আহত হয়েছে। ২০০ এর অধিক নেতা কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮১ জনের বিরুদ্ধে। সারা দেশে অজ্ঞাত আসামি প্রায় ২০ হাজার, সারা দেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে ২৫টি স্থানে এবং বাড়িঘরে ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা প্রায় ২৫টি স্থানে।’ 

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়ায় রামদা, লাঠি, পিস্তল নিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। এতে প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এতে শতাধিক নেতা কর্মী আহত হয়েছে। দুজনের অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন।’ 

দ্রব্যমূল্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং লোডশেডিং ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে বিএনপি ক্রমাগত জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি পালন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে ভোলাতে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে যখন হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি দিয়েছি সেখানেও অত্যাচার হয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশ নির্বিচারে হামলা করেছে, গুলি করেছে।’ 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সারা দেশে ঘোষণা করেছে। কোথাও গন্ডগোল করার কোনো কারণই নেই। সেখানে নারায়ণগঞ্জে তারা বিনা উসকানিতে র‍্যালির চারিদিক থেকে হামলা করে সেখানে কনক নামে একজন পুলিশের কর্মকর্তা সরাসরি চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করেছে। তার কাছে এই রাইফেল আসলো কোথা থেকে? এটা রাখার তো এখতিয়ার তার নেই।’ 

জনসম্পৃক্ততা দেখে আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘তারা ঘাবড়ে গেছে, ভয় পেয়েছে। এখন তারা পাল্টা ভয় দেখানো শুরু করেছে। সারা দেশে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তাদের হামলাই এটা প্রমাণ করে। নারায়ণগঞ্জে আজকে এসআই কনকসহ আরও ৪২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছি। প্রত্যেকটা হামলা, হত্যা আমরা আইনিভাবে লড়াই করবো।’ 

আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা দাবি করে তিনি বলেন, ‘ভয়ভীতি, হত্যা, খুন, গুম করেই তারা ক্ষমতায় টিকে আছে এবং এভাবেই তারা ভবিষ্যতেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে। সামনের নির্বাচনে বিরোধী দল কোনোমতেই যেন অংশ নিতে না পারে সেই কারণে এখন থেকেই মাঠ বিরোধী দলমুক্ত করতে চাইছে।’ 

তিনি আরও বলেন, সরকারের একটা বড় চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র হচ্ছে বিএনপিকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়া। তারা প্রত্যেকদিন বলছে, বিএনপি আগুন সন্ত্রাস করে। তাদের সমস্যা হচ্ছে, এখনো আগুন নাই। লক্ষ লক্ষ মানুষ নিয়ে বিএনপি যে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে এটাই তাদের মূল সমস্যা ৷ 

বাংলাদেশে মিয়ানমারের মর্টার শেল পড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা অনির্বাচিত সরকারের কখনোই শক্তি থাকে না। এই সরকার টিকে আছে অন্যদের শক্তি দিয়ে। তাই নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে তার যে ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন সেই ভূমিকা সে নিতে পারে না। বিদেশিদের দিয়ে প্রভাবিত হয়ে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বার্মার সঙ্গে সমস্যার সমাধান এমনিতেই হবে না, তাদের প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করতে হবে। ভারত এবং চীনকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে রাজি করাতে হবে।’ 

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোন কথা বলব না।’ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুতে শোক জানান মির্জা ফখরুল।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত