জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই, বিদেশি বন্ধুরাও ছেড়ে চলে গেছে: ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪: ৪২
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪: ৫৩

দেশের জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই, বিদেশি বন্ধুরাও তাদের ছেড়ে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডিতে রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের জনগণও বিএনপির সঙ্গে নেই, বিদেশি বন্ধুরা তাদের ছেড়ে এখন চলে গেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লম্বা চিঠি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার জন্য। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারে বিশেষভাবে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। পিটার হাসও মার্কিন নীতি কৌশলের প্রতিধ্বনিই করছেন।’ 
 
সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন আপনারা কী বলবেন? কে আপনাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য আসবে? কে আমাদের হটাতে আসবে? যাদের আশায় ছিলেন তারা তো এখন একসঙ্গেই কাজ করার জন্য এসেছেন। নেতারা তো অনেকেই পালিয়ে আছেন, অনেকে প্রকাশ্যে আসেন না। এখন আপনাদের সাহসের উৎস কোথায়? কে সাহায্য করবে? দেশের জনগণ আপনাদের থেকে সরে গেছে। ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে, সংসদ বসেছে। অধিবেশনের শুরুতেই স্ট্যান্ডিং কমিটি পর্যন্ত হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি নিজ হাতে লিখেছেন।’ 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আবারও রাজনীতি করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা খালেদা জিয়া কোনো পর্যায়ে রাজনীতি করবেন কি না বা উনি কী রাজনীতি করবেন এটা বিএনপির নেতাদের প্রশ্ন করাটাই ভালো, এটা তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।’ 

সংসদে বিএনপিকে ব্যান করার দাবি উঠেছে, এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেখুন আমি একটা কথা বলি, সংসদে সবাই কথা বলতে পারেন। সদস্যদের নানা মতামত (ওপিনিয়ন) থাকতে পারে। কিন্তু মতামতটাই সিদ্ধান্ত এমনটা মনে করার এখনো কোনো কারণ নেই। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবেও আমরা চিন্তা করিনি।’ 

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ফলে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের তিনজন আহত হয়েছেন, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যা ঘটছে তা তো আমরা জানি। এটা আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিষয়। তিনি একটা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সেটাই আমাদের দলের প্রতিক্রিয়া। এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের আশপাশের দুই-তিনটা গ্রামের জনগণ বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আমাদের জন্য এটা উদ্বেগের। গোলা, মর্টারের শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও পড়ছে। ইতিমধ্যে আমাদের তিনজন আহত হয়েছেন। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব ব্যাপারে নিশ্চয়ই মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’ 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগস্টের ২৫ তারিখে যখন মিয়ানমারের জনগণ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে, আমাদের এয়ার স্পেস অনেক সময় লঙ্ঘিত হয়েছে। তারপরও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা ছিল-তারা যতই প্রভোকট করুক, আমরা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করব না। আমরা যুদ্ধের পক্ষে নয়, আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। এখানে ব্যাপারটা হলো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। এটা তাদের নিজেদের বিষয়। আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সেনাবাহিনীর যুদ্ধ। এটা তাদের ইন্টারনাল কনফ্লিক্ট। আমরা আহ্বান করব-পার্শ্ববর্তী দেশের জন্য আতঙ্কের কারণ হয় এমন কনফ্লিক্টের সমাধান তাদের নিজেদেরই করা উচিত। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটা সমাধান হতে পারে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘চিনের রাষ্ট্রদূত গতকাল আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, আমি তাঁকেও এ ব্যাপারে বলেছি, আপনাদের কথা তারা শোনে বলেই সারা বিশ্ব জানে। কাজেই আপনারা তাদেরকে যুদ্ধ থেকে, ইন্টারনাল কনফ্লিক্ট থেকে দূরে থাকার জন্য এবং তাদের বিরোধ বাংলাদেশে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করুক, এই বিষয়টা আপনাদের একটু দেখা উচিত। যেহেতু আপনারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার, সে হিসেবে আপনাদের সহযোগিতার আহ্বান আমরা জানাচ্ছি।’ 

বর্তমান পরিস্থিতিতে আবারও যদি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায় সে ক্ষেত্রে আপনাদের পলিসিটা কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বলেছে যে, আমরা সে উদারতা দেখানোর ব্যাপারটা অ্যাফোর্ট করতে পারব না। এমনিতেই একটা বোঝা, তারপর আরেক বোঝা এটা আর সম্ভব নয়।’ 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণকাণ্ডের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম, সহযোগী সংগঠন আছে। এই দলের ভেতরে শতভাগ ভালো মানুষ, এই দাবি আমরা করতে পারি না। এর মধ্যে খারাপ কাজও কিছু লোক করে। খারাপ কাজের জন্য আমাদের একটা বৈশিষ্ট্য হলো-আমরা খারাপ কাজটা প্রশ্রয় দিই না। আইনের আওতায় আসার মতো যে অপরাধ, তা আইনের আওতায় এনেই করা উচিত। এই পর্যন্ত অনেক দৃষ্টান্ত আছে, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর যারা খারাপ কাজ করেছে, যারা অপরাধ করেছে, তারা কেউই পার পেয়ে যায়নি।’ 

তিনি বলেন, ‘আবরার হত্যার বিচার হয়েছে, বিশ্বজিত হত্যায়ও কাউকে বিচারহীন অবস্থায়...দায়মুক্তির যে কালচার সেটা আমরা গড়তে দিইনি, এটা সবার জানা আছে। এখন কথা হলো-একটা দলে ভালোর সাথে খারাপ লোকও থাকতে পারে, খারাপ কাজও করতে পারে কিন্তু দল সেটাকে কীভাবে নিচ্ছে। দল কি সে অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? দল কি সে অপরাধের ব্যাপারে উদাসীন? আমরা তা নই। আবারও আমি সেটা দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করতে চাই।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত