২ ঘণ্টার মধ্যে সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেব: ইনু 

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪, ২২: ০৮
Thumbnail image

দুই ঘণ্টায় নিত্যপণ্য পরিবহনে সড়কের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেছেন, ‘উত্তরবঙ্গের এক ট্রাক ঢাকায় পৌঁছাতে ১৪ জায়গায় চাঁদাবাজি। হিসাব করে দেখেছি, ছয় হাজার টাকা চাঁদা। এটা কার ওপরে পড়ে? ক্রেতা আপনার ওপরে পড়ে, টাকাটা আপনাকে দিতে হয়! ছয় হাজার টাকা চাঁদা এক ট্রাকে, বন্ধ করতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। দেন আমাকে ক্ষমতা, জাসদকে। আমি দুই ঘণ্টার ভেতরে চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেব, সম্ভব! এর জন্য কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা লাগে না।’

আজ সোমবার বিকেলে জাতীয় যুবজোটের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আপনার মন্ত্রীরা বললেন মূল্য নির্ধারণ কমিশন নাই! কেন নাই? পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। মূল্য নির্ধারণ কমিশন করেন। বছরের শুরুতে দাম বলে দেবে। তার একটা এদিক-ওদিক হলে ব্যবসাদারের পিঠের ছাল তুলে নেব। আপনি খুচরা বাজারে হানা দেন, পাইকারি বাজারে যান না। ব্যাপারটা কী? ওদের পেট মোটা, এই জন্যে? আপনি জানেন না যে দাম ওঠানামা করে পাইকাররা? আপনি জানেন না নিত্যপণ্যের ৫০ ভাগ আমদানি করে ছয়টা কোম্পানি! নাম বললাম না। টিকে গ্রুপ, অমুক গ্রুপ, মোহাম্মদী গ্রুপ, সালাম গ্রুপ, ৫০ ভাগ আমদানি করে। একটা টেলিফোন করে দাম সকালে-বিকেলে এদিক-ওদিক করে দেয়। একচেটিয়া চক্র, ছয়টা কোম্পানি ভাঙতে কতক্ষণ লাগে? কত বড় ব্যবসাদার হয়েছে, তোরে বেঁধে রেখে বলব—দাম কমা এখনই। সম্ভব না? কেন? সবই সম্ভব!’

এ বাম নেতা বলেন, ‘বিএনপি শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার জন্যে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। আমি বলব, আমার এই দেশে একাত্তরের অসম্ভব সাধন করেছি। পাকিস্তানিদের নাকের জল, চোখের জল এক করে পায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করিয়েছি। নব্বইয়ের সামরিক শাসনকে বিদায় করেছি। সেই বাংলাদেশে বাজার সিন্ডিকেট দমন হবে না, এটা হতে পারে না। এত শক্তি কার? পাকিস্তান আর্মিদের চেয়েও শক্তিশালী? বিএনপি-জামায়াত সরকারের চেয়েও শক্তিশালী?’

সাবেক মন্ত্রী ইনু আরও বলেন, ‘দুঃখে আমার রাগ হলো। তো আপনারা মনে করছেন ইনু সাহেব ভোটে হারছে, এই জন্য রাগ করতেছে। না ভাই, আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম, মন্ত্রিপরিষদে এইভাবেই কথা বলেছি আঙুল তুলে। এমপি থাকা অবস্থায় পার্লামেন্টে যা বলেছি, তা-ই বলছি আজ। কোনো রাগের ব্যাপার নাই। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে জনগণকে যদি স্বস্তি দিতে না পারেন, সেই সুযোগ বিএনপি-জামায়াত নিবে। এই দুর্নীতির হোতা কে? আমি বহু গবেষণা করে দেখেছি তিন মাথার দানব এই দুর্নীতির হোতা। অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ রাজনীতিক আর অসৎ আমলা যে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে—এটা হচ্ছে তিন মাথার দানব। বাংলাদেশকে অক্টোপাসের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে। যদি দুর্নীতি বন্ধ করতে চান, তিন মাথার দুর্নীতির মাথা থেঁতলে দিন। আসুন আমরা এদের মাথা থেঁতলে দিই।’

তাঁর কথায় প্রধানমন্ত্রীকে রাগ না করার অনুরোধ জানিয়ে ১৪ দলীয় জোটের এই নেতা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার কথায় রাগ করবেন না। আপনি আপনার গোয়েন্দাদের কাছ থেকে আমার বক্তব্য শুনুন। চিন্তা করুন। আপনি এই রাজনৈতিক দুর্দিনে ১৫ বছর অনেক বিপদের ভেতরে দক্ষ নাবিকের মতন জাহাজকে পরিচালনা করেছেন। এখন এই দুর্নীতির সিন্ডিকেটের কারণে মাঝ দরিয়ায় আমাদের জাহাজটা ডুবতে পারে না। আপনি কেন পারবেন না দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভাঙতে। আমি মনে করি, পারতেই হবে। আপনি এখনো পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় যুবজোটের সভাপতি শরিফুল কবির স্বপন। যুবজোটের রাজশাহী মহানগর সভাপতি শরিফুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাসদের সহসভাপতি মজিবুল হক বকু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, মহানগরের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত