বঙ্গবন্ধু হত্যা: জীবন সায়াহ্নে তোফায়েল আহমেদকে ব্যর্থতা স্বীকার করার অনুরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২২, ২১: ২৯
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২২, ০০: ৫১

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরে তাঁর তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদকে প্রতিবাদ না করায় নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন। 

গত ১৯ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আনোয়ার হোসেন। শহীদুলল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। 

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশের বিরাট নেতা। আশা করেছিলাম গত ১৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় জীবনের সায়াহ্ণে দাঁড়িয়ে অন্তত পক্ষে একটি সত্য কথা বলে যাবেন। কিন্তু উনি বললেন না, উনি বলবেন না, বলেননি। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা আশা করেছিল তোফায়েল আহমেদ ব্যর্থতা স্বীকার করুক। বলুক আমরা বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা রাজ্জাক, তোফায়েলকে সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসত। এই হচ্ছে প্রতিদান ওদের।’

আনোয়ার বলেন, ‘১৪ আগস্ট গভীর রাতে খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। ১৫ আগস্ট বিকেল বেলা খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গিপাড়ায় সমাহিত করতে নিয়ে যায়। আমার প্রশ্ন যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যায় কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। যারা ১০ জন, ২০ জন, ৩০ জন মন্ত্রীর ক্ষমতা রাখত, যাদেরকে বঙ্গবন্ধু পুত্র সমতুল্য স্নেহ করত। বঙ্গবন্ধু অনেক বিশ্বাস করতেন, ভরসা করতেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দেহ পড়ে থাকল ৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়ির কোনায়।’

বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ আপনি থাকতেন আওয়ামী লীগ সভাপতির আজকের কার্যালয়ের (ধানমন্ডির ৩ /এ সড়ক) পাশের দেয়ালে। আপনি (তোফায়েল) কী পারতেন না, ঢাবির ১০টি হলে বঙ্গবন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিল শিক্ষার্থীরা। ধানমন্ডির ৩ /এ বাসা থেকে আপনি যদি দৌড়েই আসতেন কত সময় লাগত? ১৫ মিনিট? ২০ মিনিট? আপনারা আসেননি। আপনারা যদি এসে বলতেন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আক্রমণ হয়েছে, তোমরা কে কোথায় আছ? ১০টা হল থেকে ১০০০ করে ছাত্র যেত তাহলে ১০ হাজার লোকের মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অভিমুখে যেত। ঢাকা কলেজের ছাত্ররা প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আপনারা আসেননি বিশ্ববিদ্যালয়ে, আপনারা পরের দিনও আসেননি, যদি একটা মিছিল হত, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হত।’

এ সময় তিনি জাতীয় নেতা প্রয়াত আবদুর রাজ্জাকেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমার মত মানুষেরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জানতে চাইবে আপনাদের কাছে ভূমিকার বিষয়ে। আপনাদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। আপনারা ১৯৭৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছিলেন। আপনারা এই ১৫ দিন কোথায় ছিলেন? কি করছিলেন? আমরা যত দূর জানি ওই ফরিদপুরের খুনি কেএম ওবায়দুর রহমানের হাতে পায়ে ধরে খুনি জিয়ার অনুকম্পা নিয়ে সেদিন স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আমরা সবাই কম বেশি জানি। কেউ বলে, কেউ বলে না। আমি আজকে আপনাদের সামনে বলে গেলাম।’

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এইখানেই আব্দুর রাজ্জাক ক্ষান্ত হয়নি, জেল থেকে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিল। তাঁর সভাপতি হয়েছিল ওই বিশ্ব বেইমান, মোনাফেক মোশতাকের দোসর আবদুর মালেক উকিল। তিনি তথাকথিত আওয়ামী লীগের সভাপতি। লন্ডনে যাত্রাবিরতির এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন দেশ… আপনারা জানেন না সেদিন তিনি কী বলেছিলেন? জানেন আপনারা কী বলেছিলেন লন্ডন বিমানবন্দরে? বলেছিলেন ফেরাউনের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। এটা হচ্ছে আব্দুল মালেক উকিল।’

তিনি বলেন, ওই আওয়ামী লীগ গঠন হয়েছিল খুনি জিয়ার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী। ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগ যদি শিরদাঁড়া সোজা করে, মেরুদণ্ড সোজা করে নির্বাচন করত তাহলে ওই নির্বাচনে ৩৯টি আসন পেত না। আওয়ামী লীগ ২৯০টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করত। সব হচ্ছে ধূর্ত ও চতুর আবদুর রাজ্জাকের খেলা। যিনি সারা জীবন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। যখনই সুযোগ পেয়েছেন ষড়যন্ত্র করেছেন। এক এগারোর সময়ে এই আব্দুর রাজ্জাক শেখ হাসিনাকে মাইনাস করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল। সেই স্বপ্নসাধ কোনো দিন পূরণ হয়নি। পূরণ কোনো দিন কারও হবে না।’

এ সময় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কেউ প্রশ্ন করতে পারে এই লোক আওয়ামী লীগে কেন্দ্রীয় নেতা কী করে হয়? আমি সত্য কথা বলে গেলাম। এর জন্য আমার যদি রাজনীতিতে কোন ভাগ্য বিড়ম্বনা হয়, আমি মেনে নিতে রাজি আছি।

জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা আমার নিজের বক্তব্য। আমার ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার করেছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত