পাঁচ মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪: ৩০
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫: ২৮

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে দায়ের হওয়া পাঁচটি মানহানির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভিন্ন ভিন্ন আদেশে খালেদা জিয়াকে এসব মামলা থেকে খালাস দেন। 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক চার মামলায় এবং অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এক মামলায় এই খালাস আদেশ দিয়েছেন।

এই পাঁচ মামলার মধ্যে চারটি দায়ের করেছিলেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। অপরটি দায়ের করেছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম। 

খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার খালাসের বিষয়টি নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে জানান, পাঁচ মামলার বাদী দীর্ঘদিন আদালতে অনুপস্থিত থাকার কারণে খালাসের আবেদন করা হয়। আদালত ওই সব আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছেন। 

মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করার অভিযোগে মামলা
মুক্তিযুদ্ধকে ‘কলঙ্কিত’ করার অভিযোগে করা মামলায় বলা হয়, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোট করে নির্বাচিত হয়ে সরকারের দায়িত্ব নেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনি (খালেদা জিয়া) রাজাকার-আলবদর নেতা-কর্মীদের মন্ত্রী-এমপি বানিয়ে তাঁদের বাড়ি-গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা তুলে দেন। ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির এই মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। 

আদালত ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। পরের বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক মশিউর রহমান (তদন্ত) অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদন দেন। মামলার অন্য আসামি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মৃত হওয়ায় তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। 

ভুয়া জন্মদিন পালন
অন্যদিকে ‘ভুয়া’ জন্মদিন পালনের মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালে দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী জন্ম তারিখ ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একটি দৈনিকে তাঁর জীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জন্মদিন ১৯৪৫ সালের ১৯ আগস্ট লেখা হয়। তাঁর বিয়ের কাবিননামায় জন্মদিন ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট। সর্বশেষ ২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী তাঁর জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর পাঁচটি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি পাঁচটি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীর দিন জাতীয় শোক দিবসে (১৫ আগস্ট) আনন্দ-উৎসব করে জন্মদিন পালন করে আসছেন। ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ, বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগে মামলা
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়। এ মামলাও দায়ের করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। 

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগে মামলা
২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার এক বক্তব্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে এই মামলা দায়ের করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। 

বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন অভিযোগ করে তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানহানির মামলা করা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। এ মামলাটিও দায়ের করেন এ বি সিদ্দিকী।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত