মির্জা ফখরুল-আব্বাসসহ ১৩৮ জনের জামিন শুনানি কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ২২: ১৩
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ২২: ২১

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আগামীকাল সোমবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ ১৩৮ জনের জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি হবে।

আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজাউল করিম এই তারিখ ধার্য করেন।

এর আগে সকালে আদালতে ১৩৮ জনের জামিন চেয়ে আবেদন দাখিল করা হয়। অন্য যাদের আবেদন করা হয় তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, গাজীপুর বিএনপির সভাপতি মো. ফজলুল হক মিলন, নরসিংদী বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সেলিম রেজা হাবিব। 

আইনজীবী জয়নাল আবেদীন মেজবাহ আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি সকালে মির্জা ফখরুলসহ ১৭ জনের জামিনের আবেদন করেন। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালতে বেলা ১১টায় আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরে তিনি আগামীকাল সংশ্লিষ্ট আদালতে জামিন শুনানির তারিখ ধার্য করেন। অন্যান্য আইনজীবীরা যেসব আবেদন করেন সেগুলোর শুনানির জন্য আগামীকাল রাখা হয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টায় মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে তাঁদের নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত শুক্রবার পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতে পাঠানো হলে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অন্যদের বুধবার সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বৃহস্পতিবার আদালতে আনার পর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। 

এই একই মামলায় রিজভী আহমেদসহ ৪৩৪ জনকে বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানো হয়। রিমান্ডে নেওয়া হয় ১৪ জন নেতা-কর্মীকে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টন থানার উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। 

গত বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে পল্টন মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হয়। মামলায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত দেড় থেকে দুই হাজার বিএনপির নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। 

এজাহারে বলা হয়, গত বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেআইনি সমাবেশ করে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কোনো প্রকার পূর্বানুমতি ছাড়া অবৈধভাবে এই সমাবেশের ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে চাল, পানি, খিচুড়ি, নগদ টাকা ও বিস্ফোরকদ্রব্য পাওয়া যায়। 

 ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বুধবার বিএনপি জড়ো হয়েছিল পার্টি অফিসের সামনে। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যাওয়ার পরে পল্টন, রমনা, শাহজাহানপুর ও মতিঝিল থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। 

রিমান্ড ফেরত ১৪ জনের জামিন নামঞ্জুর কারাগারে প্রেরণ
এই মামলায় ১৪ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয় গত বৃহস্পতিবার। দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কারাগারে আটক রাখার প্রার্থনা জানান। অন্যদিকে প্রত্যেকের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। 

এই ১৪ জন হলেন—শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য একেএম আমিনুর ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা বিএনপি'র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াকিল আহমেদ, নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সজিব ভূঁইয়া, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সারোয়ার হোসেন শেখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাঈদ ইকবাল মাহমুদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শরীফ, ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের সদস্যসচিব আল আমিন, রমনা থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল, ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শুভ ফরাজী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদুল হাসান রনি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক মোরসালিন, সহসাধারণ সম্পাদক মাহবুব মিয়া, ছাত্রদল নেতা সাঈদ ইকবাল টিটু। 

টুকুসহ ৯ জনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর
পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ সাতজনের জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে। আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। 

চার দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল শনিবার তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। ওই দিন তাদের জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। আদালত জামিনের আবেদন শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন। আজ শুনানি শেষে প্রত্যেকের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। 

অন্যরা হলেন—যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, যুবদল কর্মী মোখলেস মিয়া, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোশারফ হোসেন খোকন, লালবাগ থানা বিএনপির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন রানা, একই থানার যুগ্ম আহ্বায়ক জজ মিয়া ও সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাঁধন। 

পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০ মে পল্টন থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন পল্টন থানার এসআই (নিরস্ত্র) কামরুল হাসান। তিনি এজাহারে বলেন, ২০ মে রাত ৮টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে প্রায় দেড় শ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা–কর্মীরা হঠাৎ মশাল মিছিল বের করে। কোনো প্রকার পূর্বানুমতি ছাড়া এই মশাল মিছিল সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির সংলগ্ন কালভার্ট রোডে এসে যানবাহন বন্ধ করে দেয়। পুলিশ মশাল মিছিলে বাধা দিলে মিছিলকারীরা অতর্কিত হামলা চালায় পুলিশের ওপরে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দিয়ে তাঁরা অপরাধ সংগঠিত করে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত