৬ মামলায় সাজা হলো তারেকের

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৩, ১৮: ৫৩

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের মামলায় তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে সাজা দিয়েছেন ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। আজ বুধবার রায় ঘোষণা হয়। রায়ে তারেককে ৯ বছর ও জোবাইদাকে ৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এই নিয়ে তারেক রহমানকে মোট ছয়টি মামলায় সাজা দেওয়া হলো। কোনো মামলাতেই তারেক রহমান বিচারের মুখোমুখি হননি। পলাতক ঘোষণা করে মামলার বিচার কাজ শেষ করা হয়েছে।

১ / ১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ও ব্যবসায়ীদের আটক অভিযান চালানো হয়। এর অংশ হিসেবে তারেক রহমানকে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডেও নেওয়া হয়। ১৮ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান তিনি। ওই ১৮ মাসে ১৩ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তারেককে। ১৩ মামলায় ধাপে ধাপে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতায় তারেক রহমান লন্ডন চলে যান। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার আট দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। সেই থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

আগে যেসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন তারেক
এক.
২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের একটি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় তারেকের বন্ধু ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারেক রহমানকে খালাস দেওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন।

দুই. ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তারেকের দণ্ড হয় ১০ বছর। এই মামলায় সাজা হয় তাঁর মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ারও। বিচারিক আদালত তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিলেও রাষ্ট্রের আপিলে উচ্চ আদালত সাজা দ্বিগুণ করেছেন।

তিন. ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়। গ্রেনেড হামলার ঘটনা থেকে উদ্ভূত হত্যা মামলায় তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

চার. একই দিনে ওই ঘটনা থেকে উদ্ভূত বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায়ও রায় দেওয়া হয়। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় তারেক রহমানকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পাঁচ. ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে নড়াইলের একটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় নড়াইলে তারেকের বিরুদ্ধে মানহানির এই মামলা করেছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার ও পাকবন্ধু আখ্যা দিয়ে বেশ কিছু বক্তব্য দেন তারেক। সেই খবর প্রকাশিত হয় দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে। এতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানহানি হয়েছে জানিয়ে সে সময় নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস নড়াইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারেকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। 

আরও যত মামলা
১ / ১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে অর্থ পাচারের মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাজা হয়েছে তারেক রহমানের। ওই সময় দায়ের করা একটি করফাঁকির মামলা স্থগিত রয়েছে। বাকি ৯টি মামলা ছিল চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা। 

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান চার্জশিট ভুক্ত হন। গ্রেনেড হামলায় উদ্ভূত দুটি মামলায় তারেক রহমানের সাজা হয়। 

ওই সময় দায়ের করা আরেকটি উল্লেখযোগ্য মামলা হচ্ছে, একটি হত্যা মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের ছেলেকে বাঁচাতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার মামলা। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর তারেক রহমান ও বসুন্ধরার মালিক এই মামলার আসামি। মামলাটি চলমান রয়েছে। 

এসব মামলা ছাড়াও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে অসংখ্য মামলা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি ও ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে এসব মামলা করা হয়। 

২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি তেজগাঁও থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলা হয়। ওই মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। নোয়াখালীতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আরেকটি মামলা আছে। ওই মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। 

২০২১ সালের ১ মার্চ রাজধানীর শাহবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম। ওই মামলাও তদন্তাধীন রয়েছে। একই ঘটনায় প্রায় একই সময়ে সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা হয়। ওই মামলাটি ও তদন্তাধীন আছে। 

২০২০ সালের ২ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তারেকের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা এই মামলা পুলিশকে তদন্ত দেওয়া হয়। সেটিও তদন্তাধীন আছে। 

ঢাকার আদালতে মানহানির অভিযোগের দায়ের করা কমপক্ষে ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। 

তারেক রহমানের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, কতটি মামলা রয়েছে পুরোপুরি হিসেব নেই। তবে সারা দেশে শতাধিক মামলা রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। এগুলো সব মিথ্যা মামলা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত