Ajker Patrika

‘দ্বন্দ্ব-লেজুড়বৃত্তিতে’ জাপার দুর্গ তছনছ

শিপুল ইসলাম, রংপুর
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১০: ১৮
‘দ্বন্দ্ব-লেজুড়বৃত্তিতে’ জাপার দুর্গ তছনছ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের দুর্গ হিসেবে খ্যাত রংপুরে চরম দুর্গতি হয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা)। ছয়টি আসনের পাঁচটিতেই পরাজিত হয়েছেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা। তিনজন হারিয়েছেন জামানত। এমন অবস্থার জন্য অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সরকারের লেজুড়বৃত্তির মতো নানা বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছেন রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এবারের নির্বাচনে জাপাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ২৬টি আসন থেকে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলীয় নেতারা ভোটের মাঠে ছিলেন। ক্ষমতার মোহে জাপার এমন আসন ভাগাভাগির কারণে লাঙ্গলবিমুখ হয়ে পড়েন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে বিভক্ত হয়ে পড়েন নেতা-কর্মীরাও। ফলে ভোটের মাঠে ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হন নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

জাপার তৃণমূলের অন্তত ১০ নেতা জানান, দলের প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর লাঙ্গলের প্রতি এই অঞ্চলের মানুষের আবেগ কমে গেছে। এর মূল কারণ এরশাদ পরিবারে বিভক্তি, মনোনয়ন বাণিজ্য ও আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকা। এ ছাড়া এবার এরশাদপুত্র সাদ এরশাদ ও বহিষ্কৃত নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে দলীয় কোন্দলের কারণে মনোনয়ন না দেওয়ায় এই ভরাডুবি।

রংপুর-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত গঙ্গাচড়ার এক জাপা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এরশাদের জাতীয় পার্টি এখন নেই। এটা আওয়ামী লীগের জাতীয় পার্টি। এই অঞ্চলে যতটুকু গ্রহণযোগ্যতা ছিল, এবারের নির্বাচনে সেটি বিলীন হয়েছে। ছয়টির মধ্যে শুধু একটিতে জি এম কাদের জয়লাভ করেছেন। সেখানেও নৌকার প্রার্থী থাকলে তাঁর পরাজয় হতো।’

রংপুরে দুটি আসনে জাপাকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুর-৩ ও তাঁর ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার রংপুর-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কাদের ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেও জামানত রক্ষার মতো ভোট পাননি শাহরিয়ার। এই আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলুর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাপার বহিষ্কৃত নেতা রাঙ্গাঁ।

রংপুর-২ (তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ) আসনে জাপার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার বিটুর পক্ষে কাজ করায় লাঙ্গল প্রতীকে তৃতীয় হন আনিছুল ইসলাম মণ্ডল। নৌকা প্রতীকে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক বিজয়ী হন। রংপুর-৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া) আসনে টিপু মুনশির নৌকা প্রতীকের কাছে পরাজিত হন জাপার মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল।

তারাগঞ্জের ইকরচালী ইউনিয়নের কৃষক শফি ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় পার্টির রাজনীতি শেষ। যে দলের চেয়ারম্যান অন্য আরেক দলের কথায় ওঠে-বসে, মানুষ কি তাঁকে ভোট দিবে, তাঁকে চাইবে বলেন?’

এদিকে রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনেও ত্রিমুখী লড়াইয়ে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার। এই আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী আনিছুর রহমান জামানত হারিয়েছেন। রংপুর-৬ আসনে পীরগঞ্জের মানুষ এবারও ভরসা রেখেছেন শিরীন শারমিন চৌধুরীর ওপর। লাঙ্গলের প্রার্থী নুর আলম যাদু মিয়া হারিয়েছেন জামানত।

লাঙ্গলের এমন পরাজয়ের বিষয়ে মিঠাপুকুর বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘রংপুরের মানুষ এরশাদ মারা যাওয়ার পর লাঙ্গলকে আর চায় না। বিশেষ করে দেবর-ভাবির নাটকীয়তা ও সরকারের দালালি করায় রংপুরের মানুষের কাছে দলটি গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তাই রংপুরের মতো ঘাঁটিতেও জাপার তিনজন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে যে একটি আসন আছে, সেটিও হারাবে।’

অন্যদিকে রিকশাচালক প্রদীপ রায় বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিলুপ্ত দল হবে। উত্তরের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় দলটি সরকারের চামচামির কারণে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত