ফজলুল কবির
গণপরিবহন নেই। ভারী যানবাহনেরও চলাচল নেই। এ হিসেবে রাস্তা ফাঁকা থাকার কথা। কিন্তু তেমনটি নয়। বরং বিভিন্ন স্থানে বেশ জটলা করে আছে গাড়িগুলো। তারপরও মোড়ে মোড়ে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা মানুষের জটলা কমছে না। এত ভিড় ঠেলে তবু এগিয়ে যাওয়া যাচ্ছে দু-চাকার জোরে। একে পাশ কাটিয়ে, তাকে পিছে ফেলে এগোনো যাচ্ছে। মোটরসাইকেল চালককেও দেখা গেল বেশ ফুরফুরে। নাম নাজিম। পুরো নাম নাজিমুল হক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে থেকে বেশ খানিকটা বচসার পর তাঁর মোটরসাইকেলে চড়ে বসা। মেজাজ কিছুটা খচে আছে। কারণ, স্বাভাবিকের চেয়ে ভাড়া বেশ খানিকটা বেশি দিতে হচ্ছে। মনে হয়েছিল এক টানে চলে যাওয়া যাবে। কিন্তু সেই ভুল ভাঙল টিএসসি পর্যন্ত গিয়েই; রিকশা-গাড়ি সব দাঁড়িয়ে আছে। বোঝা গেল শাহবাগ পর্যন্ত এই দশা। টিএসসি থেকে শাহবাগের রাস্তা মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কল্যাণে এমনিতেই সরু। তারপরও তেমন জট লাগে না সাধারণত। যখন লাগে, তখন বুঝতে হয়—সামনে বিরাট হ্যাপা।
অনেক ঠেলেঠুলে চারুকলা অনুষদের সামনে যেতেই নট নড়ন-চড়ন দশা। এবার মোটরবাইক চালক পেছন ফিরে বললেন, ‘রাস্তায় গাড়ি দেখছেন?’ বাড়তি ভাড়ার কারণে সপ্তমে চড়া মেজাজ তখনো ঠান্ডা হয়নি। তাই নিশ্চুপ। এদিকে সময়ের তাড়া একটা অস্থিরতা তৈরি করছে ভেতরে। এর মধ্যেই চালক আবার বললেন, ‘ভাড়া চাইতে পারি না, লজ্জা লাগে।’
এই কথা শুনে বেশ সচকিত হতে হলো। এমনিতেই বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে বাড়িয়ে বলার পরও যে লোক উদাস হয়ে আকাশ দেখতে পারে ভীষণ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে, সে কিনা বলছে—ভাড়া চাইতে পারে না! বিস্ময়ের ধাক্কা কোনোমতে সামলে, আলাপ শুরু করতে হলো। প্রথমেই নাম-পরিচয়। নাম বললেন, নাজিমুল হক; কিছুক্ষণ থেমে বললেন ‘নাজিম’। বেশ ‘জেমস বন্ড’ ধরনের নাম জানানোর ভঙ্গি। পার্থক্য এই যে, পর্দার বিখ্যাত এই চরিত্র নিজের সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে শেষাংশটি বলেন, আর নাজিম বলছেন প্রথমাংশ।
তারপর নিজেই বললেন, ‘আমার পাশে যে লোক ছিল। সে আপনার কাছে কত চাইছে?’ বললাম, ‘আপনার চেয়ে বেশি।’ নাজিম বললেন, ‘কমপক্ষে এক শ বেশি চাইছে, তাই না?’ উত্তর দিলাম না আর। কারণ, ওই তরুণ আসলে নাজিমের চেয়েও দেড় শ টাকা বেশি ভাড়া চেয়েছেন। নীরবতায় নাজিম দমলেন না একটুও। বললেন, ‘অনেকগুলা ভাড়া ছাইড়া আমি খালি তার ভাড়া চাওয়া দেখছি। কারও কাছে ৫০০, কারও কাছে ৪০০ টাকা চায়। আমি বেকুব হইয়া তাকাইয়া থাকি। এই যে আপনার কাছে চাইতে গিয়াও কিন্তু আমি খুব বেশি বাড়ায়া বলতে পারলাম না। সে কিন্তু পারছে। আমার লজ্জা লাগে।’
‘এত বাড়িয়ে চান কেন?’ এই প্রশ্ন নাজিম বেশ আহত বোধ করলেন। মোটরসাইকেল ব্রেক করে প্রশ্নের উত্তর দিতে বেশ প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। দেখে দমে যেতে হলো। কারণ, ততক্ষণে শাহবাগের সিগনাল ছেড়েছে। এই সুযোগে সিগনাল পার হতে না পারলে আবার কখন ট্রাফিক পুলিশের সুনজর পড়বে রাস্তার এ অংশে, তা নিয়ে বিরাট সংশয় আছে। ফলে সিগনালটা অন্তত পার হওয়ার অনুরোধ করতে হলো। নাজিম সে অনুরোধ রাখলেন। তারপর নানা জ্যাম ঠেলে, একসময় মগবাজার রেলগেট। এবার ট্রেনের সিগনাল। নাজিম বেশ কসরত করে কয়েকটা রিকশাকে বাম পাশ দিয়ে ওভারটেক করলেন। ঢাকার রাস্তার জন্য এটি বেশ স্বাভাবিক দৃশ্য। বাম পাশ দিয়ে হরহামেশাই যানবাহনগুলো পরস্পরকে ওভারটেক করে। ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই অন্য পাশ থেকে রিকশাচালক ও যাত্রীর উচ্চগ্রামে ঝগড়ার শব্দ পাওয়া গেল। বিষয় আর কিছু নয়, ভাড়া।
রাজধানীর প্রায় সব পথেরই আজ এটাই সাধারণ দৃশ্য। জ্বালানি তেলের হঠাৎ দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় গণপরিবহন নেই, তাই সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, সাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, পিকআপ, মোটরসাইকেল ইত্যাদিই আজ রাজধানীর প্রধান পরিবহন। কিন্তু মানুষের চলাচল তো আর থেমে নেই। ফলে গণপরিবহনের যাত্রীদের বাধ্য হয়ে এসব ব্যক্তিগত যানবাহনের শরণ নিতে হচ্ছে। আর অন্য উপায়গুলো না থাকায় এসব পরিবহনের ভাড়া গেছে অত্যধিক বেড়ে। অনেকটা যেমন খুশি তেমন চাওয়ার মতো করে ভাড়া হাঁকাচ্ছেন চালকেরা। উপায়ন্তর না দেখে অনেকেই হেঁটে চলেছেন। যাদের শারীরিক অবস্থা তেমনটা সমর্থন করে না, তাদের অবস্থা ভীষণ সঙিন।
এসব ভাবনার মধ্যেই নাজিম আবার বলে উঠলেন—‘ধর্মঘটের সময় বোঝা যায়, বাস না থাকলেও চলে।’
-কীভাবে?
-বাস-টাস তুইলা দিলেও হয়। জ্যাম কইমা যাইব।
শুনে কিছু বলার আগেই পাশের আরেক মোটরবাইক চালক বলে উঠলেন—‘আমার আজকে সেই অবস্থা। অফিসে যাওয়ার সময় একটা খ্যাপ নিয়া গেছি।’
-বাসা কই? আর অফিস কই?
-বাসা তেজগাঁও, অফিস মিরপুর। সকালে যাওয়ার সময় একটা খ্যাপ পাইলাম। এক লোক কয়েকজনরে বলতেছিল। সবাই অনেক বেশি চাইছে। আমার কাছে আসার পর বুদ্ধি কইরা কাছাকাছি একটা ভাড়া চাইছি।
-এখন এখানে কী করেন? অফিস শেষ?
-না, অফিস আছে। মগবাজারে একটা কাজে পাঠাইছে। আসার সময়ও ভাড়া পাইছি।
-৫০০ হইছে—নাজিমের প্রশ্ন।
-হ্যাঁ। হইয়া গেছে। এখন সিগনালের পর আরেকটা মিরপুরের খ্যাপ পাইলে হয়। ধর্মঘটটা কালকে পর্যন্ত চললে হয়। ছুটি নিমু। খালি ‘পাঠাও’।
বললাম, ‘মানুষের তো সমস্যা হবে।’ নাজিমের ঘোর আপত্তি—‘মানুষ তো সব জায়গায় যাইতে পারতেছে। সমস্যা কী? বরং বাস তুইলা দিলে ঢাকার রাস্তা অনেক ভালো থাকব।’
-আজ যে বাস নেই, তাতে কি জ্যাম কমছে?
-না।
নাজিম ভাবলেন, বাড়তি ভাড়া নিয়ে আমার একটা খচখচানি আছে, তাই এই সাধারণ বিষয়টা নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। বললেন, ‘ভাড়া তো প্রথম প্রথম একটু বেশি থাকবই। করোনার সময় দেখছেন না? শুরুতে ভাড়া কিছু বেশি ছিল। পরে তো স্বাভাবিক হইছে। আমি তো শাহবাগ থেকে মিরপুর ১০০ টাকাতেও গেছি।’
-কিন্তু বাসে যে পরিমাণ যাত্রী ধরে, সে পরিমাণ মোটরসাইকেল কি আছে?
-তা নাই।
-তাহলে?
-একটু সমস্যা হইব। কিন্তু এই খবর পাইলে দেশ থেকে বহু গাড়ি (মোটরসাইকেল) চইলা আসব।
বোঝা গেল, নাজিমের চিন্তা ও চাহিদার জগতের সঙ্গে এই সংকটের যে সংযোগ, তার থেকে নিরাপদ বলয়ে থাকা মধ্যবিত্ত বা পথে পথে ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীদের জগতের এক বিরাট পার্থক্য আছে। এই বাস তার বহু সম্ভাব্য যাত্রীকে কম খরচায় গন্তব্যে নিয়ে যায়। ফলে সে তার দরকারি আয় হারিয়ে বসে, যা কিনা ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয়ের চেয়ে ঢের কম। যে মাথাপিছু আয়ের হিসাবটি তার দিকে রাষ্ট্রের এক তির্যক ঠাট্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। ফলে সমষ্টি, গোষ্ঠী কিংবা রাষ্ট্র তা ধর্তব্যে আর থাকে না। থাকার কথাও নয়।
এদিকে ট্রেন এসে চলেও গেল। বড় একটা ঝাঁকুনিতে সম্বিত ফিরল। কিন্তু জ্বালানি তেল, মাথাপিছু আয় এবং এমনতর আর আর সব হিসাব ঘোট পাকিয়ে মাথায় একটা নিস্পৃহ ভাব তৈরি করল। আপাতত চিন্তা অফিস পৌঁছাতে হবে। ফলত, দেশ-রাষ্ট্র ও মানুষ সব গোল্লায়।
গণপরিবহন নেই। ভারী যানবাহনেরও চলাচল নেই। এ হিসেবে রাস্তা ফাঁকা থাকার কথা। কিন্তু তেমনটি নয়। বরং বিভিন্ন স্থানে বেশ জটলা করে আছে গাড়িগুলো। তারপরও মোড়ে মোড়ে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা মানুষের জটলা কমছে না। এত ভিড় ঠেলে তবু এগিয়ে যাওয়া যাচ্ছে দু-চাকার জোরে। একে পাশ কাটিয়ে, তাকে পিছে ফেলে এগোনো যাচ্ছে। মোটরসাইকেল চালককেও দেখা গেল বেশ ফুরফুরে। নাম নাজিম। পুরো নাম নাজিমুল হক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে থেকে বেশ খানিকটা বচসার পর তাঁর মোটরসাইকেলে চড়ে বসা। মেজাজ কিছুটা খচে আছে। কারণ, স্বাভাবিকের চেয়ে ভাড়া বেশ খানিকটা বেশি দিতে হচ্ছে। মনে হয়েছিল এক টানে চলে যাওয়া যাবে। কিন্তু সেই ভুল ভাঙল টিএসসি পর্যন্ত গিয়েই; রিকশা-গাড়ি সব দাঁড়িয়ে আছে। বোঝা গেল শাহবাগ পর্যন্ত এই দশা। টিএসসি থেকে শাহবাগের রাস্তা মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কল্যাণে এমনিতেই সরু। তারপরও তেমন জট লাগে না সাধারণত। যখন লাগে, তখন বুঝতে হয়—সামনে বিরাট হ্যাপা।
অনেক ঠেলেঠুলে চারুকলা অনুষদের সামনে যেতেই নট নড়ন-চড়ন দশা। এবার মোটরবাইক চালক পেছন ফিরে বললেন, ‘রাস্তায় গাড়ি দেখছেন?’ বাড়তি ভাড়ার কারণে সপ্তমে চড়া মেজাজ তখনো ঠান্ডা হয়নি। তাই নিশ্চুপ। এদিকে সময়ের তাড়া একটা অস্থিরতা তৈরি করছে ভেতরে। এর মধ্যেই চালক আবার বললেন, ‘ভাড়া চাইতে পারি না, লজ্জা লাগে।’
এই কথা শুনে বেশ সচকিত হতে হলো। এমনিতেই বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে বাড়িয়ে বলার পরও যে লোক উদাস হয়ে আকাশ দেখতে পারে ভীষণ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে, সে কিনা বলছে—ভাড়া চাইতে পারে না! বিস্ময়ের ধাক্কা কোনোমতে সামলে, আলাপ শুরু করতে হলো। প্রথমেই নাম-পরিচয়। নাম বললেন, নাজিমুল হক; কিছুক্ষণ থেমে বললেন ‘নাজিম’। বেশ ‘জেমস বন্ড’ ধরনের নাম জানানোর ভঙ্গি। পার্থক্য এই যে, পর্দার বিখ্যাত এই চরিত্র নিজের সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে শেষাংশটি বলেন, আর নাজিম বলছেন প্রথমাংশ।
তারপর নিজেই বললেন, ‘আমার পাশে যে লোক ছিল। সে আপনার কাছে কত চাইছে?’ বললাম, ‘আপনার চেয়ে বেশি।’ নাজিম বললেন, ‘কমপক্ষে এক শ বেশি চাইছে, তাই না?’ উত্তর দিলাম না আর। কারণ, ওই তরুণ আসলে নাজিমের চেয়েও দেড় শ টাকা বেশি ভাড়া চেয়েছেন। নীরবতায় নাজিম দমলেন না একটুও। বললেন, ‘অনেকগুলা ভাড়া ছাইড়া আমি খালি তার ভাড়া চাওয়া দেখছি। কারও কাছে ৫০০, কারও কাছে ৪০০ টাকা চায়। আমি বেকুব হইয়া তাকাইয়া থাকি। এই যে আপনার কাছে চাইতে গিয়াও কিন্তু আমি খুব বেশি বাড়ায়া বলতে পারলাম না। সে কিন্তু পারছে। আমার লজ্জা লাগে।’
‘এত বাড়িয়ে চান কেন?’ এই প্রশ্ন নাজিম বেশ আহত বোধ করলেন। মোটরসাইকেল ব্রেক করে প্রশ্নের উত্তর দিতে বেশ প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। দেখে দমে যেতে হলো। কারণ, ততক্ষণে শাহবাগের সিগনাল ছেড়েছে। এই সুযোগে সিগনাল পার হতে না পারলে আবার কখন ট্রাফিক পুলিশের সুনজর পড়বে রাস্তার এ অংশে, তা নিয়ে বিরাট সংশয় আছে। ফলে সিগনালটা অন্তত পার হওয়ার অনুরোধ করতে হলো। নাজিম সে অনুরোধ রাখলেন। তারপর নানা জ্যাম ঠেলে, একসময় মগবাজার রেলগেট। এবার ট্রেনের সিগনাল। নাজিম বেশ কসরত করে কয়েকটা রিকশাকে বাম পাশ দিয়ে ওভারটেক করলেন। ঢাকার রাস্তার জন্য এটি বেশ স্বাভাবিক দৃশ্য। বাম পাশ দিয়ে হরহামেশাই যানবাহনগুলো পরস্পরকে ওভারটেক করে। ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই অন্য পাশ থেকে রিকশাচালক ও যাত্রীর উচ্চগ্রামে ঝগড়ার শব্দ পাওয়া গেল। বিষয় আর কিছু নয়, ভাড়া।
রাজধানীর প্রায় সব পথেরই আজ এটাই সাধারণ দৃশ্য। জ্বালানি তেলের হঠাৎ দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় গণপরিবহন নেই, তাই সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, সাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, পিকআপ, মোটরসাইকেল ইত্যাদিই আজ রাজধানীর প্রধান পরিবহন। কিন্তু মানুষের চলাচল তো আর থেমে নেই। ফলে গণপরিবহনের যাত্রীদের বাধ্য হয়ে এসব ব্যক্তিগত যানবাহনের শরণ নিতে হচ্ছে। আর অন্য উপায়গুলো না থাকায় এসব পরিবহনের ভাড়া গেছে অত্যধিক বেড়ে। অনেকটা যেমন খুশি তেমন চাওয়ার মতো করে ভাড়া হাঁকাচ্ছেন চালকেরা। উপায়ন্তর না দেখে অনেকেই হেঁটে চলেছেন। যাদের শারীরিক অবস্থা তেমনটা সমর্থন করে না, তাদের অবস্থা ভীষণ সঙিন।
এসব ভাবনার মধ্যেই নাজিম আবার বলে উঠলেন—‘ধর্মঘটের সময় বোঝা যায়, বাস না থাকলেও চলে।’
-কীভাবে?
-বাস-টাস তুইলা দিলেও হয়। জ্যাম কইমা যাইব।
শুনে কিছু বলার আগেই পাশের আরেক মোটরবাইক চালক বলে উঠলেন—‘আমার আজকে সেই অবস্থা। অফিসে যাওয়ার সময় একটা খ্যাপ নিয়া গেছি।’
-বাসা কই? আর অফিস কই?
-বাসা তেজগাঁও, অফিস মিরপুর। সকালে যাওয়ার সময় একটা খ্যাপ পাইলাম। এক লোক কয়েকজনরে বলতেছিল। সবাই অনেক বেশি চাইছে। আমার কাছে আসার পর বুদ্ধি কইরা কাছাকাছি একটা ভাড়া চাইছি।
-এখন এখানে কী করেন? অফিস শেষ?
-না, অফিস আছে। মগবাজারে একটা কাজে পাঠাইছে। আসার সময়ও ভাড়া পাইছি।
-৫০০ হইছে—নাজিমের প্রশ্ন।
-হ্যাঁ। হইয়া গেছে। এখন সিগনালের পর আরেকটা মিরপুরের খ্যাপ পাইলে হয়। ধর্মঘটটা কালকে পর্যন্ত চললে হয়। ছুটি নিমু। খালি ‘পাঠাও’।
বললাম, ‘মানুষের তো সমস্যা হবে।’ নাজিমের ঘোর আপত্তি—‘মানুষ তো সব জায়গায় যাইতে পারতেছে। সমস্যা কী? বরং বাস তুইলা দিলে ঢাকার রাস্তা অনেক ভালো থাকব।’
-আজ যে বাস নেই, তাতে কি জ্যাম কমছে?
-না।
নাজিম ভাবলেন, বাড়তি ভাড়া নিয়ে আমার একটা খচখচানি আছে, তাই এই সাধারণ বিষয়টা নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। বললেন, ‘ভাড়া তো প্রথম প্রথম একটু বেশি থাকবই। করোনার সময় দেখছেন না? শুরুতে ভাড়া কিছু বেশি ছিল। পরে তো স্বাভাবিক হইছে। আমি তো শাহবাগ থেকে মিরপুর ১০০ টাকাতেও গেছি।’
-কিন্তু বাসে যে পরিমাণ যাত্রী ধরে, সে পরিমাণ মোটরসাইকেল কি আছে?
-তা নাই।
-তাহলে?
-একটু সমস্যা হইব। কিন্তু এই খবর পাইলে দেশ থেকে বহু গাড়ি (মোটরসাইকেল) চইলা আসব।
বোঝা গেল, নাজিমের চিন্তা ও চাহিদার জগতের সঙ্গে এই সংকটের যে সংযোগ, তার থেকে নিরাপদ বলয়ে থাকা মধ্যবিত্ত বা পথে পথে ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীদের জগতের এক বিরাট পার্থক্য আছে। এই বাস তার বহু সম্ভাব্য যাত্রীকে কম খরচায় গন্তব্যে নিয়ে যায়। ফলে সে তার দরকারি আয় হারিয়ে বসে, যা কিনা ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয়ের চেয়ে ঢের কম। যে মাথাপিছু আয়ের হিসাবটি তার দিকে রাষ্ট্রের এক তির্যক ঠাট্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। ফলে সমষ্টি, গোষ্ঠী কিংবা রাষ্ট্র তা ধর্তব্যে আর থাকে না। থাকার কথাও নয়।
এদিকে ট্রেন এসে চলেও গেল। বড় একটা ঝাঁকুনিতে সম্বিত ফিরল। কিন্তু জ্বালানি তেল, মাথাপিছু আয় এবং এমনতর আর আর সব হিসাব ঘোট পাকিয়ে মাথায় একটা নিস্পৃহ ভাব তৈরি করল। আপাতত চিন্তা অফিস পৌঁছাতে হবে। ফলত, দেশ-রাষ্ট্র ও মানুষ সব গোল্লায়।
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪