হোসেন রায়হান, পঞ্চগড়
কুয়াশা ভরা সকাল। ঘাড়ে মোটর গাড়ির ফুলানো টিউব, সঙ্গে ঢাকি কোদাল এবং চালনি। গন্তব্য মহানন্দার ঠান্ডা জলরাশি। উদ্দেশ্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যস্ত নদীর বুক থেকে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের জোগান। সঙ্গে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা চাপ। এই হলো জীবনসংগ্রামের সঙ্গে লাগাতার যুদ্ধ করা যোদ্ধা রহমত আলীর কথা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সিপাইপাড়া গ্রামে রহমতের বাড়ি। ৩০ বছর ধরে মহানন্দার পানিতে গা ভাসিয়ে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করেই জীবন চালিয়ে আসছেন তিনি। ছেলে মেয়ে নিয়ে ৬ সদস্যের সংসার তাঁর। পরিবারে স্ত্রী সহ ৩ ছেলে সবাই কাজ করে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন পাথর কুড়ানো। শীতের চেয়েও ভয়ানক তাঁদের কাছে খিদে। একবেলা কাজ না করলে পরের বেলায় না খেয়ে থাকতে হবে। প্রতিদিনের রোজগার থেকে আলাদা করে রাখতে হবে টাকা, কারণ সপ্তাহ ঘুরলে কিস্তির টাকা নিতে চলে আসবে এনজিও কর্মী। তাই তাঁদের কাছে কি শীত কি বর্ষা কাজ ছাড়া বিকল্প নেই।
বন্দরে পাথার ভাঙার কাজ করেন ৪ সন্তানে জননী মরিয়ম বেগম (৩৫)। ২ বছর আগে থেকে স্বামী তাঁর সন্তান এবং তাঁকে রেখে আলাদা ঘর করছে। সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য প্রতিদিন ৩০০ টাকার হাজিরায় কাজ করেন তিনি। এই শীতে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর।
এমনি শত শত রহমত আলী ও মরিয়মের মতো মানুষগুলো এই তীব্র শীতে পাথর ভাঙা সহ মহানন্দা ঠান্ডা পানিতে গা ভাসিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাথর সংগ্রহের কাজ করছেন। এসব মানুষের জীবনের গল্প গুলো অনেক ভয়ানক। কাজ এবং খাদ্যের জোগান ছাড়া এদের জীবনে নেই কোনো স্বপ্ন।
বাংলাবান্ধা থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার অংশে মহানন্দা প্রবাহিত হয়েছে। নদী পাড়ের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের জীবন জীবিকা নদী কেন্দ্রিক। গ্রামের এসব মানুষ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নদীর গভীর অংশ থেকে পাথর সংগ্রহ করে পাড়ে স্তূপ করেন। নারী ও শিশুরা সেই পাথর সাইজ মাফিক বাছাই করে। সন্ধ্যায় মহাজনের কাছ থেকে মজুরি নিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা। এতে করে একজন পুরুষ শ্রমিক দিনে আয় করে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮শ টাকা। নারীরা পায় হাজিরা হিসেবে সর্বোচ্চ ৩শ টাকা। সারা মৌসুমেই চলে এই পাথর উত্তোলনের কাজ।
কিন্তু এই কাজ কঠিন হয়ে পড়ে কেবল শীতকালে। কারণ হিমালয়ের খুব কাছে অবস্থান হওয়ার কারণে এই এলাকায় শীতের তীব্রতা প্রকট হয়ে পড়ে। অসহনীয় হয়ে উঠে এসব শ্রমজীবী মানুষের জীবন জীবিকা। ঠান্ডায় কর্ম পরিধি কমে আসায় অনেকে খাদ্যের অভাবে মানবেতর জীবন কাটান। বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা পড়েন বিপাকে। এ অঞ্চলের শতকরা ৩০ শতাংশ নারীই হচ্ছে স্বামী পরিত্যক্তা, একাধিক সন্তানসহ পরিবারের একাধিক সদস্যের খাদ্য জোগান এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ তাঁদের জন্য হয়ে পড়ে কঠিন।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কুদরত ই খুদা মিলন বলেন, বাংলাবান্ধা থেকে ভজনপুর পর্যন্ত এই উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জীবন জীবিকা ছিল পাথর কেন্দ্রিক। ভূগর্ভস্থ থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব মানুষের একটা বড় অংশই এখন বেকার হয়ে পড়েছে। এদের কেউ কেউ এখন কাজ করছে সমতলের চা বাগান গুলোতে, কেউ বন্দরে, আবার কেউ নদীর পাথর উত্তোলন করে জীবন চালাচ্ছেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র বর্মণ বলেন, সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় তেমন কোনো শিল্পকারখানা গড়ে না ওঠায় অভাবী মানুষের কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। সরকারিভাবে এই উপজেলায় বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। অভাবের সময়ে মানুষদের নানাভাবে সরকারি অনুদানের আওতায় আনা হচ্ছে। বন্দর ব্যবস্থাপনা জোরদার করে অনেক মানুষকে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এসব মানুষের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে।
কুয়াশা ভরা সকাল। ঘাড়ে মোটর গাড়ির ফুলানো টিউব, সঙ্গে ঢাকি কোদাল এবং চালনি। গন্তব্য মহানন্দার ঠান্ডা জলরাশি। উদ্দেশ্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যস্ত নদীর বুক থেকে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসারের জোগান। সঙ্গে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা চাপ। এই হলো জীবনসংগ্রামের সঙ্গে লাগাতার যুদ্ধ করা যোদ্ধা রহমত আলীর কথা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সিপাইপাড়া গ্রামে রহমতের বাড়ি। ৩০ বছর ধরে মহানন্দার পানিতে গা ভাসিয়ে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করেই জীবন চালিয়ে আসছেন তিনি। ছেলে মেয়ে নিয়ে ৬ সদস্যের সংসার তাঁর। পরিবারে স্ত্রী সহ ৩ ছেলে সবাই কাজ করে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন পাথর কুড়ানো। শীতের চেয়েও ভয়ানক তাঁদের কাছে খিদে। একবেলা কাজ না করলে পরের বেলায় না খেয়ে থাকতে হবে। প্রতিদিনের রোজগার থেকে আলাদা করে রাখতে হবে টাকা, কারণ সপ্তাহ ঘুরলে কিস্তির টাকা নিতে চলে আসবে এনজিও কর্মী। তাই তাঁদের কাছে কি শীত কি বর্ষা কাজ ছাড়া বিকল্প নেই।
বন্দরে পাথার ভাঙার কাজ করেন ৪ সন্তানে জননী মরিয়ম বেগম (৩৫)। ২ বছর আগে থেকে স্বামী তাঁর সন্তান এবং তাঁকে রেখে আলাদা ঘর করছে। সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য প্রতিদিন ৩০০ টাকার হাজিরায় কাজ করেন তিনি। এই শীতে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর।
এমনি শত শত রহমত আলী ও মরিয়মের মতো মানুষগুলো এই তীব্র শীতে পাথর ভাঙা সহ মহানন্দা ঠান্ডা পানিতে গা ভাসিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাথর সংগ্রহের কাজ করছেন। এসব মানুষের জীবনের গল্প গুলো অনেক ভয়ানক। কাজ এবং খাদ্যের জোগান ছাড়া এদের জীবনে নেই কোনো স্বপ্ন।
বাংলাবান্ধা থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার অংশে মহানন্দা প্রবাহিত হয়েছে। নদী পাড়ের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের জীবন জীবিকা নদী কেন্দ্রিক। গ্রামের এসব মানুষ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নদীর গভীর অংশ থেকে পাথর সংগ্রহ করে পাড়ে স্তূপ করেন। নারী ও শিশুরা সেই পাথর সাইজ মাফিক বাছাই করে। সন্ধ্যায় মহাজনের কাছ থেকে মজুরি নিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা। এতে করে একজন পুরুষ শ্রমিক দিনে আয় করে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮শ টাকা। নারীরা পায় হাজিরা হিসেবে সর্বোচ্চ ৩শ টাকা। সারা মৌসুমেই চলে এই পাথর উত্তোলনের কাজ।
কিন্তু এই কাজ কঠিন হয়ে পড়ে কেবল শীতকালে। কারণ হিমালয়ের খুব কাছে অবস্থান হওয়ার কারণে এই এলাকায় শীতের তীব্রতা প্রকট হয়ে পড়ে। অসহনীয় হয়ে উঠে এসব শ্রমজীবী মানুষের জীবন জীবিকা। ঠান্ডায় কর্ম পরিধি কমে আসায় অনেকে খাদ্যের অভাবে মানবেতর জীবন কাটান। বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা পড়েন বিপাকে। এ অঞ্চলের শতকরা ৩০ শতাংশ নারীই হচ্ছে স্বামী পরিত্যক্তা, একাধিক সন্তানসহ পরিবারের একাধিক সদস্যের খাদ্য জোগান এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ তাঁদের জন্য হয়ে পড়ে কঠিন।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কুদরত ই খুদা মিলন বলেন, বাংলাবান্ধা থেকে ভজনপুর পর্যন্ত এই উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জীবন জীবিকা ছিল পাথর কেন্দ্রিক। ভূগর্ভস্থ থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব মানুষের একটা বড় অংশই এখন বেকার হয়ে পড়েছে। এদের কেউ কেউ এখন কাজ করছে সমতলের চা বাগান গুলোতে, কেউ বন্দরে, আবার কেউ নদীর পাথর উত্তোলন করে জীবন চালাচ্ছেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র বর্মণ বলেন, সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় তেমন কোনো শিল্পকারখানা গড়ে না ওঠায় অভাবী মানুষের কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। সরকারিভাবে এই উপজেলায় বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। অভাবের সময়ে মানুষদের নানাভাবে সরকারি অনুদানের আওতায় আনা হচ্ছে। বন্দর ব্যবস্থাপনা জোরদার করে অনেক মানুষকে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এসব মানুষের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে।
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪