গোলাম কবির বিলু, পীরগঞ্জ (রংপুর)
‘ককন কুদি (কোন দিকে) নদী আইসে, কওয়া যায় না। কারণ তিস্তা হৈল্ পাগলা নদী। যিদিক-সিদিক যায়। পানি হইলে ঘর ভাংগে। বাড়িঘর সারে (সরিয়ে) নি যাই। এ পর্যন্ত পেরায় (প্রায়) একশবার বাড়িঘর সারাচি।’
সব হারিয়ে তিস্তার বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মুনছুর আলীর ষাটোর্ধ্ব স্ত্রী জোহরা বেগম জীবনের অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত সার এটিই! রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর সেতুর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে জোহরার পরিবার।
ওই ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। নদীটির গর্ভে জোহরাদের মতো হাজারো মানুষের স্বপ্ন, বসতভিটা, জমি-জিরাত চলে গেছে। গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। তারপরও তাঁরা নদীর পাড় ছাড়েন না। কারণ, যদি তাঁদের জীবদ্দশায় ভেঙে যাওয়া জমিতে ফের চর জাগে, সে আশায় বছরের পর বছর ধরে নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই বসবাস করছেন। তাঁরা বোঝেন না নদী সিকস্তি বা নদী পয়স্তি আইন। তাঁরা শুধু আশায় থাকেন- কখন নদীতে স্বপ্নের মতো জেগে উঠবে বাপ-দাদার জমি।
জোহরা বেগমের দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৪৫) এবং মেয়ে মঞ্জিলা বেগম। তাঁদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলের সংসারে থাকেন বাবা মুনছুর আলী ও মা জোহরা বেগম। মুনছুর আলী লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের জয়রাম মাজার গ্রামের বাসিন্দা। জয়রাম মাজার গ্রামের বাড়িটি অনেক আগেই তিস্তার পেটে গেছে। সঙ্গে সাড়ে ৩ দোন জমিও গেছে। ৩০ শতকে এক দোন। এ হিসেবে ১০৫ শতাংশ জমি গিলে ফেলেছে তিস্তা। এখন তাঁরা ভূমিহীন।
মুনছুর আলী বয়োবৃদ্ধ, কর্মক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে। জয়রাম মাজারের বাড়ি ভেঙে গেলে পার্শ্ববর্তী বিজয় বাঁধ গ্রাম, শংকরদহ, মহিপুরসহ কয়েকটি স্থানে ঘর-বসতি করেন মুনছুর। কিন্তু তিস্তা কোনোখানেই তাঁকে নিস্তার দেয়নি। এভাবে এক জীবনে প্রায় একশবার বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন বলে জানান জোহরা ও তাঁর ছেলে জাহিদুল ইসলাম।
১৩ বছর আগে বিয়ে করেছেন জাহিদুল। স্ত্রী সুমি বেগম। তাঁদের সংসারে ৩ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে সোহাগ মিয়া তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার ছোট সিয়াম হোসেন প্রথম শ্রেণিতে। আর ৫ বছরের জেমি খাতুন এবং ছোট ছেলে সামিউল ইসলামের তিন বছর বয়স।
জাহিদুল বলেন, ‘এখন হামরা ভূমিহীন। মহিপুর শেখ হাসিনা সেতুর পূর্বে বাঁধের পাশে অন্যের জমিতে বসবাস করতিছি। জমির মালিক ঘর সরাতে বললে খাসজমি বা অন্যের জমিতে ঘর করা নাগবি। হামার সংসারোত আট জন মানুষ খানেঅলা।’
জাহিদুলের স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, ‘একসময় আমার শ্বশুরের বাড়িঘর, জমি-জাগা সগি আছিল। এখন হামরা পতের ফকির। অন্যের জমিত থাকি।’ জাহিদুল বলেন, ‘প্রতিদিন মহিপুরের সেতু দেকতে মানুষ আইসে। আর মুই এ্যাকনা দোকান দিয়া ফুচক্যা ব্যাচো। সাত আটশ ট্যাকা ব্যাচা হয়। যে লাব হয়, সেইটা দি সংসার চলাও। এ ছাড়া নদীর পাড়োত আয়ের পথ নাই! একন বালুর চর। বাইশ্যার (বর্ষা) সোমায় পানিতে ভরপুর।’
বারবার তিস্তার আঘাতে ক্লান্ত হতাশ জাহিদুলের মা জোহরা তবু তিস্তাপাড় ছাড়তে নারাজ। তাঁর কণ্ঠে ঝরে অসহায়ত্বের সুর। বলেন, ‘নদীর বাতা (ধার) ছাড়ি যাই ক্যাংকরি। যদি ট্যাকা থাকিল হায়, তাহলি কি এটি থাকি! কোনোমতে কষ্ট-মষ্ট করি এ্যাটে কোনা দিন কাটাই হামরা। তিস্তার মহিপুর সেতুর বাঁধের পাশোত এ্যাকন হামরা মানষের জমিত ঘর করি আছি। জমিঅলা যদি কয় তোরা জমি ছাড়ো, তাহলে হামার মরণ। যাওয়ার জাগা শ্যাষ। সরকার হামাক এ্যাকনা ঘর বানে দিলে বাকি জেবনটা থাকনো হয়।’
‘ককন কুদি (কোন দিকে) নদী আইসে, কওয়া যায় না। কারণ তিস্তা হৈল্ পাগলা নদী। যিদিক-সিদিক যায়। পানি হইলে ঘর ভাংগে। বাড়িঘর সারে (সরিয়ে) নি যাই। এ পর্যন্ত পেরায় (প্রায়) একশবার বাড়িঘর সারাচি।’
সব হারিয়ে তিস্তার বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মুনছুর আলীর ষাটোর্ধ্ব স্ত্রী জোহরা বেগম জীবনের অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত সার এটিই! রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর সেতুর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে জোহরার পরিবার।
ওই ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। নদীটির গর্ভে জোহরাদের মতো হাজারো মানুষের স্বপ্ন, বসতভিটা, জমি-জিরাত চলে গেছে। গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। তারপরও তাঁরা নদীর পাড় ছাড়েন না। কারণ, যদি তাঁদের জীবদ্দশায় ভেঙে যাওয়া জমিতে ফের চর জাগে, সে আশায় বছরের পর বছর ধরে নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই বসবাস করছেন। তাঁরা বোঝেন না নদী সিকস্তি বা নদী পয়স্তি আইন। তাঁরা শুধু আশায় থাকেন- কখন নদীতে স্বপ্নের মতো জেগে উঠবে বাপ-দাদার জমি।
জোহরা বেগমের দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৪৫) এবং মেয়ে মঞ্জিলা বেগম। তাঁদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলের সংসারে থাকেন বাবা মুনছুর আলী ও মা জোহরা বেগম। মুনছুর আলী লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের জয়রাম মাজার গ্রামের বাসিন্দা। জয়রাম মাজার গ্রামের বাড়িটি অনেক আগেই তিস্তার পেটে গেছে। সঙ্গে সাড়ে ৩ দোন জমিও গেছে। ৩০ শতকে এক দোন। এ হিসেবে ১০৫ শতাংশ জমি গিলে ফেলেছে তিস্তা। এখন তাঁরা ভূমিহীন।
মুনছুর আলী বয়োবৃদ্ধ, কর্মক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে। জয়রাম মাজারের বাড়ি ভেঙে গেলে পার্শ্ববর্তী বিজয় বাঁধ গ্রাম, শংকরদহ, মহিপুরসহ কয়েকটি স্থানে ঘর-বসতি করেন মুনছুর। কিন্তু তিস্তা কোনোখানেই তাঁকে নিস্তার দেয়নি। এভাবে এক জীবনে প্রায় একশবার বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন বলে জানান জোহরা ও তাঁর ছেলে জাহিদুল ইসলাম।
১৩ বছর আগে বিয়ে করেছেন জাহিদুল। স্ত্রী সুমি বেগম। তাঁদের সংসারে ৩ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে সোহাগ মিয়া তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার ছোট সিয়াম হোসেন প্রথম শ্রেণিতে। আর ৫ বছরের জেমি খাতুন এবং ছোট ছেলে সামিউল ইসলামের তিন বছর বয়স।
জাহিদুল বলেন, ‘এখন হামরা ভূমিহীন। মহিপুর শেখ হাসিনা সেতুর পূর্বে বাঁধের পাশে অন্যের জমিতে বসবাস করতিছি। জমির মালিক ঘর সরাতে বললে খাসজমি বা অন্যের জমিতে ঘর করা নাগবি। হামার সংসারোত আট জন মানুষ খানেঅলা।’
জাহিদুলের স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, ‘একসময় আমার শ্বশুরের বাড়িঘর, জমি-জাগা সগি আছিল। এখন হামরা পতের ফকির। অন্যের জমিত থাকি।’ জাহিদুল বলেন, ‘প্রতিদিন মহিপুরের সেতু দেকতে মানুষ আইসে। আর মুই এ্যাকনা দোকান দিয়া ফুচক্যা ব্যাচো। সাত আটশ ট্যাকা ব্যাচা হয়। যে লাব হয়, সেইটা দি সংসার চলাও। এ ছাড়া নদীর পাড়োত আয়ের পথ নাই! একন বালুর চর। বাইশ্যার (বর্ষা) সোমায় পানিতে ভরপুর।’
বারবার তিস্তার আঘাতে ক্লান্ত হতাশ জাহিদুলের মা জোহরা তবু তিস্তাপাড় ছাড়তে নারাজ। তাঁর কণ্ঠে ঝরে অসহায়ত্বের সুর। বলেন, ‘নদীর বাতা (ধার) ছাড়ি যাই ক্যাংকরি। যদি ট্যাকা থাকিল হায়, তাহলি কি এটি থাকি! কোনোমতে কষ্ট-মষ্ট করি এ্যাটে কোনা দিন কাটাই হামরা। তিস্তার মহিপুর সেতুর বাঁধের পাশোত এ্যাকন হামরা মানষের জমিত ঘর করি আছি। জমিঅলা যদি কয় তোরা জমি ছাড়ো, তাহলে হামার মরণ। যাওয়ার জাগা শ্যাষ। সরকার হামাক এ্যাকনা ঘর বানে দিলে বাকি জেবনটা থাকনো হয়।’
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪প্রতিদিন ভোরে ট্রেনের হুইসেলে ঘুম ভাঙে রাকিব হাসানের। একটু একটু করে গড়ে ওঠা রেলপথ নির্মাণকাজ তাঁর চোখে দেখা। এরপর রেলপথে ট্রেন ছুটে চলা, ট্রেন ছুঁয়ে দেখা—সবই হলো; কিন্তু এখনো হয়নি চড়া। রাকিবের মুখে তাই ভারতীয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান। ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪