মুখে হিলিয়াম গ্যাস নিলে কণ্ঠস্বর কেন বদলে যায়

প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম, ঢাকা 
Thumbnail image

প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ অনন্য। মানুষের কণ্ঠ কেমন হবে তা ঠোঁট, জিহ্বা, মুখ, নাক ও গলার মতো বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু মুখ দিয়ে হিলিয়াম গ্রহণ করলে মানুষের কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে কার্টুনের মতো চিকন কণ্ঠ শোনা যায়।

মানুষের স্বরযন্ত্রে ভোকাল কর্ড বা স্বরতন্ত্র থাকে। একে বাগযন্ত্রও বলা হয়। বাগযন্ত্রে দুটি ভাঁজযুক্ত শ্লেষ্মা ঝিল্লি থাকে। এই ঝিল্লির মধ্য দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হলে এগুলোতে কম্পন সৃষ্টি হয়। এই কম্পন থেকেই স্বর সৃষ্টি হয়। কোন ধরনের বায়ু শ্বাস–প্রশ্বাসের সময় মানুষ গ্রহণ করে তার ওপর কণ্ঠস্বরের ধরন নির্ভর করে। তাই হিলিয়াম গ্রহণে মানুষের কণ্ঠস্বর কেন পরিবর্তন হয়, তা ব্যাখ্যা করা খুব সহজ। 

মানুষ শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য যে স্বাভাবিক বায়ু গ্রহণ করে তাতে প্রধানত মুক্ত অবস্থায় নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন থাকে। কিন্তু হিলিয়াম এ দুটি গ্যাসের চেয়ে হালকা গ্যাস। এ কারণে বেলুন ওড়ানোর জন্য হিলিয়াম ব্যবহার করা হয়।

এই হিলিয়াম স্বরযন্ত্রে প্রবেশ করলে অস্বাভাবিক চিকন কণ্ঠ শোনা যায়। অনেকেই মনে করেন, হিলিয়ামের কণ্ঠের ওঠানামা (কম্পাঙ্ক) পরিবর্তন করে। কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়।

শব্দের গতি নির্ভর করে মাধ্যমের প্রকৃতির ওপর। ভারী গ্যাসের চেয়ে হালকা গ্যাসের মাধ্যমে শব্দ দ্রুত ভ্রমণ করে। হালকা গ্যাসের অণুগুলোর ভর কম, তাই এতে তরঙ্গের চাপ পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় শব্দ আরও দ্রুত গতিতে চলতে পারে।

হিলিয়াম বা অন্য কোনো গ্যাস স্বরযন্ত্রে কোনো প্রভাব ফেলে না। কিন্তু স্বরযন্ত্রের চারপাশ হিলিয়াম গ্যাসে পূর্ণ থাকলে সৃষ্ট শব্দের কম্পাঙ্ক একই থাকলেও তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে যায়। এতে পার্শ্ববর্তী শ্রোতার কানে শব্দটি বেশি কম্পাঙ্কের বলে ভ্রম হয়, ফলে স্বর চিকন মনে হয়। যেখানে হিলিয়ামে শব্দের গতি বাতাসের তুলনায় প্রায় তিনগুণ।

আর বাতাসের চেয়ে ভারী কোনো গ্যাস গ্রহণ করলে মানুষের কণ্ঠস্বর মোটা ও ভারী হয়। যেমন–সালফার ডাই অক্সাইড গ্রহণ করলে শব্দ সাধারণ বায়ুর ৩৯ শতাংশ গতিতে চলে। ফলে কণ্ঠস্বর ভারী মনে হয়।

হিলিয়াম গ্রহণের বিপদ
অনেকেই মজা করে কণ্ঠের পরিবর্তন করার জন্য হিলিয়াম গ্রহণ করেন। অল্প পরিমাণ হিলিয়াম গ্রহণে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অনেক বেশি পরিমাণ গ্রহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ।

কোনো ট্যাংকের ভেতর চাপে রাখা হিলিয়াম সরাসরি গ্রহণ করা ঠিক নয়। কারণ আকস্মিক চাপে ফুসফুস ফেটে যেতে পারে বা রক্তে হিলিয়াম ঘনীভূত হয়ে অক্সিজেনের সংকট তৈরি করে ব্রেইন স্ট্রোক, খিঁচুনি, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত