অনলাইন ডেস্ক
মানুষ সাধারণত তার বদ্ধমূল ধারণা বা সমাজে বহুদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চায় না। যেমন, এখনো অনেক মানুষ বিশ্বাস করে, পৃথিবী সমতল! অথচ পৃথিবীর দিগন্তের দিকে তাকালেই বুঝতে পারার কথা পৃথিবী গোলাকার। তা ছাড়া এ নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও লেখালেখি আছে। কিন্তু বিশ্বাসীরা যেসব পড়তে আগ্রহী না।
জানার প্রতি এ অনাগ্রহকে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন ‘স্বেচ্ছা অজ্ঞতা’। জানার কাজটি আয়াসসাধ্য বলে নয় বরং এ ক্ষেত্রে প্রধানতম প্রেষণা হিসেবে কাজ করে— নিজের কাজের নেতিবাচক পরিণতি তুলে ধরে এমন তথ্য এড়িয়ে চলার প্রবণতা।
খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমরা সবাই জীবনে এমন এক পর্যায় কাটিয়ে এসেছি যেখানে আমরা সম্মুখ সত্যকে অগ্রাহ্য করেছি এবং সব ঠিক আছে এমন ভান ধরেছি। হতে পারে সেটি আমাদের ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক বা পেশাজীবনের অংশ ছিল। তবে সচেতন মনে আমরা সবাই জানি, এ কাজ আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এটি করা হয়তো ঠিক হয়নি।
ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডামের পিএইচডি শিক্ষার্থী লিন ভু বলেন, ‘দৈনন্দিন জীবনে স্বেচ্ছা অজ্ঞতার উদাহরণ প্রচুর। আমরা শুধু জানতে চাই, জানার প্রতি এ অনাগ্রহ কতটা প্রচলিত এবং কতটা ক্ষতিকর। এ ছাড়া মানুষ কেন এভাবে অজ্ঞ থাকাটাকেই বেছে নেয়—সেটিই জানাই আমাদের গবেষণার বিষয়।’
প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে ভু ও এক দল গবেষক স্বেচ্ছা অজ্ঞতার ওপর বর্তমান পরীক্ষামূলক প্রমাণের ভিত্তিতে প্রথম মেটা–বিশ্লেষণ করেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাইকোলজিক্যাল বুলেটিনে প্রকাশিত হয়েছে।
মানুষের এই প্রবণতা বুঝতে গবেষকেরা ৬ হাজার অংশগ্রহণকারীর তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি মোট ২২টি গবেষণা তুলনা করেছেন। এতে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা সংক্ষেপে এমন—
নৈতিক চ্যুতি কক্ষ
স্বেচ্ছা অজ্ঞতার ওপর গবেষণার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পরীক্ষাটি হলো নৈতিক চ্যুতি কক্ষ। এ পরীক্ষাটির ধারণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ও ব্যবস্থাপনার সহকারী অধ্যাপক জেসন ডানা।
এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের দৈবচয়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং উপকারভোগীর ভূমিকা দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হয়: তাঁরা ৫ অথবা ৬ ডলার নিতে পারবেন। ৫ ডলার নিলে উপকারভোগী পাবেন ৫ ডলার পাবে। আর ৬ ডলার নিলেন উপকারভোগী পাবেন মাত্র ১ ডলার।
অংশগ্রহণকারীদের এই তথ্য জানালে বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীই পরোপকারী আচরণ করেন এবং ৫ ডলার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে উপকারভোগীও বেশি অর্থ পেতে পারে। মাত্র চার ভাগের এক ভাগ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী স্বার্থপরের মতো সিদ্ধান্ত নেন, অর্থাৎ ৬ ডলার বেছে নেন।
তবে পরীক্ষাটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানানোর কারণেই মানুষ মূলত সামান্য ত্যাগের বিনিময়ে অন্যের উপকার করতে আগ্রহী হয়েছেন। এখানে ত্যাগ মাত্র ১ ডলার। বড় অঙ্কের টাকা হলে বিপরীত আচরণ করার সম্ভাবনাই বেশি।
মূল পরীক্ষাটি শুরু হয় তখন যখন গবেষকেরা আগে থেকেই সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া বন্ধ করেন। তখন এই সামান্য ত্যাগের বিনিময়ে অন্যের উপকার করার প্রবণতাও বড় ধাক্কা খায়।
মূল পরীক্ষা শুরু হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের আবারও ৫ ডলার বা ৬ ডলার বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে এবার উপকারভোগী কত টাকা পাবেন সে তথ্য দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ৫ বা ৬ ডলার যেটিই বেছে নেন না কেন, উপকারভোগীর ৫ বা ১ ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা সমান।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী চাইলে গবেষকের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন, তাঁর কোনো সিদ্ধান্তের জন্য উপকারভোগী কত টাকা পেতে পারেন এবং এর জন্য তাঁর অর্থের পরিমাণ কমবে না।
২০০৭ সালে ডানার মূল পরীক্ষায় দেখা যায়, ৪৪ শতাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীই নিজ গরজে সম্পূর্ণ তথ্য জানতে অনাগ্রহ দেখান এবং পরীক্ষার সময় স্বার্থপরের মতো আচরণ করেন।
মেটা–বিশ্লেষণের কয়েকটি গবেষণা ছিল মূল গবেষণারই ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ। একটি সংস্করণে পরীক্ষায় উপকারভোগীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়। উপকারভোগী যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অসম্মতি জানান, তবে দুই পক্ষই কোনো অর্থ পাবেন না। আরেকটি সংস্করণে দলের সদস্যদের ৫ বা ৬ ডলারের কোনো একটি বেছে নেওয়া এবং অজ্ঞাত উপকারভোগীকে অর্থ দেওয়ার বিষয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
গবেষকেরা দেখতে পান, সব ধরনের গবেষণার মধ্যে ডানার মূল পরীক্ষাটিই সবচেয়ে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীই তাঁদের সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্পর্কে জানতে চাননি।
এভাবে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যারা ইচ্ছে করেই পরিণতি সম্পর্কে জানতে চাননি, তাঁরা তুলনামূলক কম পরোপকারী আচরণ করেছেন। অর্থাৎ স্বেচ্ছা অজ্ঞতার ক্ষেত্রে উপকারভোগী কম অর্থ পেয়েছেন।
অজুহাত হিসেবে অজ্ঞতা
গবেষকেরা অনুমান করেন, স্বেচ্ছা অজ্ঞতার পেছনে সম্ভাব্য দুটি প্রেষণা কাজ করে থাকতে: প্রথমত, কর্মকাণ্ডে উদারতা না দেখানোর একটি অজুহাত হিসেবে স্বেচ্ছা অজ্ঞতাকে ব্যবহার করা যেতে পারে। কাজের পরিণতি সম্পর্কে না জানা থাকলে স্বার্থপরের মতো কাজ করার পরও ব্যক্তির নিজেকে নৈতিকভাবে সঠিক বলে দাবি করার সুযোগ থাকে। ফলে স্বেচ্ছা অজ্ঞতা নিজের ভাবমূর্তি রক্ষায় সাহায্য করে।
দ্বিতীয় সম্ভাব্য প্রেষণা হলো— ‘চৈতন্যগত অন্যমনস্কতা’ বা গভীর চিন্তায় অনাগ্রহ। মানুষ সাধারণত তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের বেশি ভাবতে বা চিন্তা করতে চায় না। অলসতা, অমনোযোগিতা বা আরও শেখার জন্য সময় দিতে না চাওয়া থেকে এ প্রবণতা তৈরি হতে পারে। তবে যাই হোক, মানুষ দ্রুত ও সহজ সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করে। এমনকি তারা যদি পরোপকারী আচরণ করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেটি আগে থেকে জানানো হয়েছিল বলে করেছে।
এ তত্ত্বগুলোর সত্যতা যাচাই করতে গবেষকেরা অংশগ্রহণকারীদের বেছে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তুলনা করেন—যারা স্বেচ্ছায় সম্পূর্ণ তথ্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন এবং গবেষকেরা যাদের নিজ থেকে সম্পূর্ণ তথ্য দিয়েছেন— এই দুই ভাগের মধ্যে তুলনা করা হয়।
গবেষকেরা বলেন, ‘চৈতন্যগত অন্যমনস্কতা’ যদি প্রধান প্রেষণা হিসেবে কাজ করত তবে, উভয় দলেই পরোপকারের হার কাছাকাছি হতো।
অপরপক্ষে, পরিণতি সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পর বেশি সংখ্যক উদারতা দেখিয়েছেন। এ থেকে ধারণা করা যায়, যাদের আগে থেকেই পরিণতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে তাঁদের জানার সুযোগ দেওয়া হলেও নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়াকেই বেছে নিতেন। তাঁরা পরিণতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হতেন না। গবেষণাতেও সেটিই উঠে এসেছে।
সব গবেষণাতেই দেখা গেছে, যেসব অংশগ্রহণকারী পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানতে আগ্রহী হয়েছে, তাঁদের মধ্যে পরোপকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা ৭ শতাংশ বেশি ছিল।
গবেষণা প্রতিবেদনটির সহ–লেখক ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডামের বিহেভিওরাল এথিকসের অধ্যাপক শল শালভি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ গবেষণার ফলাফল বেশ আকর্ষণীয়। কারণ এ গবেষণা অনুসারে, আমরা যত পরোপকারী আচরণ দেখতে পাই এর বেশির ভাগই— অন্যরা আমাদের কাছে কেমন আচরণ প্রত্যাশা করে— সেই অনুযায়ী আচরণ করার ইচ্ছা দ্বারা চালিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের পরোপকারী আচরণের আরও একটি কারণ হলো, সামাজিক চাপ এবং ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। নৈতিক ও পরোপকারী হওয়ার জন্য অনেক সময় মূল্য দিতে হয়। পরোপকার করতে সময় ও অর্থ ব্যয় এবং চেষ্টা লাগে। এ কারণে সবাই পরোপকারী হয় না। তবে এই দ্বিধা থেকে সহজে মুক্তি দিতে পারে অজ্ঞতা।’
তবে বিশ্লেষণটিতে সম্ভাব্য প্রেষণা হিসেবে ‘চৈতন্যগত অন্যমনস্কতা’কে একবারে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়নি। অনেকগুলো প্রেষণার প্রভাবেই স্বেচ্ছা অজ্ঞতার প্রবণতা তৈরি হয়। এর মধ্যে অনেকগুলোই এই মেটা বিশ্লেষণে তুলে ধরা হয়নি। যেমন—আত্মসম্মানবোধ।
গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, অন্যের সামনে ‘নিজের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে চাওয়া’ এই প্রেষণাগুলোর মধ্যে একটি।
এই মেটা–বিশ্লেষণের অবশ্য বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন—অংশগ্রহণকারীরা বেশির ভাগই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যান্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ফলাফল একই নাও হতে পারে। এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে গবেষণাগারে। বাস্তব জীবনে মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরন ভিন্ন হতে পারে। আর গবেষণাটি বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, যা শুধু একবারই করা হয়েছে। বারবার লেনদেনের ক্ষেত্রে আচরণ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এতে ফলাফল ভিন্ন হতে পারে।
মানুষ সাধারণত তার বদ্ধমূল ধারণা বা সমাজে বহুদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চায় না। যেমন, এখনো অনেক মানুষ বিশ্বাস করে, পৃথিবী সমতল! অথচ পৃথিবীর দিগন্তের দিকে তাকালেই বুঝতে পারার কথা পৃথিবী গোলাকার। তা ছাড়া এ নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও লেখালেখি আছে। কিন্তু বিশ্বাসীরা যেসব পড়তে আগ্রহী না।
জানার প্রতি এ অনাগ্রহকে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন ‘স্বেচ্ছা অজ্ঞতা’। জানার কাজটি আয়াসসাধ্য বলে নয় বরং এ ক্ষেত্রে প্রধানতম প্রেষণা হিসেবে কাজ করে— নিজের কাজের নেতিবাচক পরিণতি তুলে ধরে এমন তথ্য এড়িয়ে চলার প্রবণতা।
খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমরা সবাই জীবনে এমন এক পর্যায় কাটিয়ে এসেছি যেখানে আমরা সম্মুখ সত্যকে অগ্রাহ্য করেছি এবং সব ঠিক আছে এমন ভান ধরেছি। হতে পারে সেটি আমাদের ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক বা পেশাজীবনের অংশ ছিল। তবে সচেতন মনে আমরা সবাই জানি, এ কাজ আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এটি করা হয়তো ঠিক হয়নি।
ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডামের পিএইচডি শিক্ষার্থী লিন ভু বলেন, ‘দৈনন্দিন জীবনে স্বেচ্ছা অজ্ঞতার উদাহরণ প্রচুর। আমরা শুধু জানতে চাই, জানার প্রতি এ অনাগ্রহ কতটা প্রচলিত এবং কতটা ক্ষতিকর। এ ছাড়া মানুষ কেন এভাবে অজ্ঞ থাকাটাকেই বেছে নেয়—সেটিই জানাই আমাদের গবেষণার বিষয়।’
প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে ভু ও এক দল গবেষক স্বেচ্ছা অজ্ঞতার ওপর বর্তমান পরীক্ষামূলক প্রমাণের ভিত্তিতে প্রথম মেটা–বিশ্লেষণ করেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাইকোলজিক্যাল বুলেটিনে প্রকাশিত হয়েছে।
মানুষের এই প্রবণতা বুঝতে গবেষকেরা ৬ হাজার অংশগ্রহণকারীর তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি মোট ২২টি গবেষণা তুলনা করেছেন। এতে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা সংক্ষেপে এমন—
নৈতিক চ্যুতি কক্ষ
স্বেচ্ছা অজ্ঞতার ওপর গবেষণার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পরীক্ষাটি হলো নৈতিক চ্যুতি কক্ষ। এ পরীক্ষাটির ধারণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ও ব্যবস্থাপনার সহকারী অধ্যাপক জেসন ডানা।
এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের দৈবচয়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং উপকারভোগীর ভূমিকা দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হয়: তাঁরা ৫ অথবা ৬ ডলার নিতে পারবেন। ৫ ডলার নিলে উপকারভোগী পাবেন ৫ ডলার পাবে। আর ৬ ডলার নিলেন উপকারভোগী পাবেন মাত্র ১ ডলার।
অংশগ্রহণকারীদের এই তথ্য জানালে বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীই পরোপকারী আচরণ করেন এবং ৫ ডলার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে উপকারভোগীও বেশি অর্থ পেতে পারে। মাত্র চার ভাগের এক ভাগ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী স্বার্থপরের মতো সিদ্ধান্ত নেন, অর্থাৎ ৬ ডলার বেছে নেন।
তবে পরীক্ষাটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানানোর কারণেই মানুষ মূলত সামান্য ত্যাগের বিনিময়ে অন্যের উপকার করতে আগ্রহী হয়েছেন। এখানে ত্যাগ মাত্র ১ ডলার। বড় অঙ্কের টাকা হলে বিপরীত আচরণ করার সম্ভাবনাই বেশি।
মূল পরীক্ষাটি শুরু হয় তখন যখন গবেষকেরা আগে থেকেই সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া বন্ধ করেন। তখন এই সামান্য ত্যাগের বিনিময়ে অন্যের উপকার করার প্রবণতাও বড় ধাক্কা খায়।
মূল পরীক্ষা শুরু হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের আবারও ৫ ডলার বা ৬ ডলার বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে এবার উপকারভোগী কত টাকা পাবেন সে তথ্য দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ৫ বা ৬ ডলার যেটিই বেছে নেন না কেন, উপকারভোগীর ৫ বা ১ ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা সমান।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী চাইলে গবেষকের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন, তাঁর কোনো সিদ্ধান্তের জন্য উপকারভোগী কত টাকা পেতে পারেন এবং এর জন্য তাঁর অর্থের পরিমাণ কমবে না।
২০০৭ সালে ডানার মূল পরীক্ষায় দেখা যায়, ৪৪ শতাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীই নিজ গরজে সম্পূর্ণ তথ্য জানতে অনাগ্রহ দেখান এবং পরীক্ষার সময় স্বার্থপরের মতো আচরণ করেন।
মেটা–বিশ্লেষণের কয়েকটি গবেষণা ছিল মূল গবেষণারই ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ। একটি সংস্করণে পরীক্ষায় উপকারভোগীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়। উপকারভোগী যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অসম্মতি জানান, তবে দুই পক্ষই কোনো অর্থ পাবেন না। আরেকটি সংস্করণে দলের সদস্যদের ৫ বা ৬ ডলারের কোনো একটি বেছে নেওয়া এবং অজ্ঞাত উপকারভোগীকে অর্থ দেওয়ার বিষয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
গবেষকেরা দেখতে পান, সব ধরনের গবেষণার মধ্যে ডানার মূল পরীক্ষাটিই সবচেয়ে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীই তাঁদের সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্পর্কে জানতে চাননি।
এভাবে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যারা ইচ্ছে করেই পরিণতি সম্পর্কে জানতে চাননি, তাঁরা তুলনামূলক কম পরোপকারী আচরণ করেছেন। অর্থাৎ স্বেচ্ছা অজ্ঞতার ক্ষেত্রে উপকারভোগী কম অর্থ পেয়েছেন।
অজুহাত হিসেবে অজ্ঞতা
গবেষকেরা অনুমান করেন, স্বেচ্ছা অজ্ঞতার পেছনে সম্ভাব্য দুটি প্রেষণা কাজ করে থাকতে: প্রথমত, কর্মকাণ্ডে উদারতা না দেখানোর একটি অজুহাত হিসেবে স্বেচ্ছা অজ্ঞতাকে ব্যবহার করা যেতে পারে। কাজের পরিণতি সম্পর্কে না জানা থাকলে স্বার্থপরের মতো কাজ করার পরও ব্যক্তির নিজেকে নৈতিকভাবে সঠিক বলে দাবি করার সুযোগ থাকে। ফলে স্বেচ্ছা অজ্ঞতা নিজের ভাবমূর্তি রক্ষায় সাহায্য করে।
দ্বিতীয় সম্ভাব্য প্রেষণা হলো— ‘চৈতন্যগত অন্যমনস্কতা’ বা গভীর চিন্তায় অনাগ্রহ। মানুষ সাধারণত তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের বেশি ভাবতে বা চিন্তা করতে চায় না। অলসতা, অমনোযোগিতা বা আরও শেখার জন্য সময় দিতে না চাওয়া থেকে এ প্রবণতা তৈরি হতে পারে। তবে যাই হোক, মানুষ দ্রুত ও সহজ সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করে। এমনকি তারা যদি পরোপকারী আচরণ করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেটি আগে থেকে জানানো হয়েছিল বলে করেছে।
এ তত্ত্বগুলোর সত্যতা যাচাই করতে গবেষকেরা অংশগ্রহণকারীদের বেছে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তুলনা করেন—যারা স্বেচ্ছায় সম্পূর্ণ তথ্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন এবং গবেষকেরা যাদের নিজ থেকে সম্পূর্ণ তথ্য দিয়েছেন— এই দুই ভাগের মধ্যে তুলনা করা হয়।
গবেষকেরা বলেন, ‘চৈতন্যগত অন্যমনস্কতা’ যদি প্রধান প্রেষণা হিসেবে কাজ করত তবে, উভয় দলেই পরোপকারের হার কাছাকাছি হতো।
অপরপক্ষে, পরিণতি সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পর বেশি সংখ্যক উদারতা দেখিয়েছেন। এ থেকে ধারণা করা যায়, যাদের আগে থেকেই পরিণতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে তাঁদের জানার সুযোগ দেওয়া হলেও নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়াকেই বেছে নিতেন। তাঁরা পরিণতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হতেন না। গবেষণাতেও সেটিই উঠে এসেছে।
সব গবেষণাতেই দেখা গেছে, যেসব অংশগ্রহণকারী পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানতে আগ্রহী হয়েছে, তাঁদের মধ্যে পরোপকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা ৭ শতাংশ বেশি ছিল।
গবেষণা প্রতিবেদনটির সহ–লেখক ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডামের বিহেভিওরাল এথিকসের অধ্যাপক শল শালভি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ গবেষণার ফলাফল বেশ আকর্ষণীয়। কারণ এ গবেষণা অনুসারে, আমরা যত পরোপকারী আচরণ দেখতে পাই এর বেশির ভাগই— অন্যরা আমাদের কাছে কেমন আচরণ প্রত্যাশা করে— সেই অনুযায়ী আচরণ করার ইচ্ছা দ্বারা চালিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের পরোপকারী আচরণের আরও একটি কারণ হলো, সামাজিক চাপ এবং ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। নৈতিক ও পরোপকারী হওয়ার জন্য অনেক সময় মূল্য দিতে হয়। পরোপকার করতে সময় ও অর্থ ব্যয় এবং চেষ্টা লাগে। এ কারণে সবাই পরোপকারী হয় না। তবে এই দ্বিধা থেকে সহজে মুক্তি দিতে পারে অজ্ঞতা।’
তবে বিশ্লেষণটিতে সম্ভাব্য প্রেষণা হিসেবে ‘চৈতন্যগত অন্যমনস্কতা’কে একবারে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়নি। অনেকগুলো প্রেষণার প্রভাবেই স্বেচ্ছা অজ্ঞতার প্রবণতা তৈরি হয়। এর মধ্যে অনেকগুলোই এই মেটা বিশ্লেষণে তুলে ধরা হয়নি। যেমন—আত্মসম্মানবোধ।
গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, অন্যের সামনে ‘নিজের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে চাওয়া’ এই প্রেষণাগুলোর মধ্যে একটি।
এই মেটা–বিশ্লেষণের অবশ্য বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন—অংশগ্রহণকারীরা বেশির ভাগই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যান্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ফলাফল একই নাও হতে পারে। এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে গবেষণাগারে। বাস্তব জীবনে মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরন ভিন্ন হতে পারে। আর গবেষণাটি বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, যা শুধু একবারই করা হয়েছে। বারবার লেনদেনের ক্ষেত্রে আচরণ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এতে ফলাফল ভিন্ন হতে পারে।
সেলিব্রিটি শেফ বা ইতালি নানিরা যা কখনোই কল্পনা করতে পারেননি তাই তৈরি করে দেখালেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা। বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা স্প্যাগেটি তৈরি করলেন তাঁরা। গবেষকেরা এমন এক স্টার্চ ন্যানোফাইবারের তৈরি স্প্যাগেটি তৈরি করেছে, যা মাত্র ৩৭২ ন্যানোমিটার চওড়া। চুলের চেয়ে ২০০ গুণ পাত
৭ ঘণ্টা আগেপ্রথমবারের মতো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের বাইরে একটি নক্ষত্রের মৃত্যুর মুহূর্তের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ছবিতে সুপারনোভা বিস্ফোরণের আগের পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। ছবিতে নক্ষত্রটিকে অদ্ভুত ডিম আকারের কোকুনের (রেশমগুটি) মতো দেখা যায়।
৯ ঘণ্টা আগেআমাদের অনেকেরই অফিসে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘসময় বসে থাকতে হয়। আর দিনের একটা বড় সময় বসে থাকাটা বাড়ায় হৃৎপিণ্ডের রোগের ঝুঁকি। এমনকি অবসর সময়ে শরীরচর্চা করেও এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রেহাই মিলবে না। এসব তথ্য উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।
৩ দিন আগেবিজ্ঞানীরা বলছেন, জিপিএসের সাহায্য ছাড়াই এআই ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া থেকে কোনো ব্যক্তির সাম্প্রতিক অবস্থান চিহ্নিত করা যাবে।
৯ দিন আগে