রানা আব্বাস, ঢাকা
সত্তরের দশকে ক্রীড়া সংগঠকেরা গাঁটের পয়সা খরচ করে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বা আজকের বিসিবি। তখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের (ঢাকা স্টেডিয়াম) যে ছোট্ট কক্ষে এর কার্যালয় ছিল, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ পর্যন্ত ছিল না। রাতের বেলা সংগঠকেরা কাজ করতেন মোমবাতি জ্বালিয়ে। বিসিবির আজকের বৈভবের কাছে সে গল্প সত্যিই বেমানান। সেদিনের মোমবাতির আলো ছাপিয়ে বিসিবি এখন অর্থের পাহাড়ে। সে পরিমাণও চমকে ওঠার মতো।
করোনা মহামারিতে লোকসানে পড়েনি–সারা পৃথিবীতে এমন প্রতিষ্ঠান বোধহয় কমই আছে। ব্যতিক্রম যা আছে, তাদের তালিকায় বিসিবি। তাদের আর্থিক অগ্রগতি এ সময়েও বেড়ে চলেছে।
বিসিবির গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয়-ব্যয়, নিট উদ্বৃত্ত, নগদ ও ব্যাংক জমা, এফডিআর মিলে বিসিবির স্থায়ী মূলধন বা পুঞ্জিভূত তহবিলে আছে ৮৩২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে যা ছিল ৩৯৭ কোটি ৫২ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
করোনা মহামারিতে যেখানে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী ক্রিকেট বোর্ডগুলো কর্মী ছাঁটাই, বেতন কমানো কিংবা ব্যয় সংকোচনের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে, বিসিবিকে তার কোনো পথেই হাঁটতেই হয়নি। করোনাধাক্কায় কারও চাকরি যায়নি। দেশি-বিদেশি কোচসহ চার শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন ছিল নিয়মিত। এর বাইরে কোভিড মহামারিতে বিসিবি প্রধানমন্ত্রী তহবিল, ত্রাণ, আম্পায়ার্স সমিতি, সাবেক-বর্তমান খেলোয়াড়দের চিকিৎসা, সাংবাদিক, ক্রিকেট সরঞ্জামাদি ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান দিয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে (ডব্লিউআইসিবি) ঋণও দিয়েছে ৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
বিশ্বে বিসিবির অবস্থান
প্রশ্ন উঠতে পারে, মাত্র এক দশকে বিসিবি আর্থিকভাবে কী করে এত শক্তিশালী হলো? তার জবাব দিয়েছেন ক্রীড়া সংগঠকেরা। তাঁরা বলছেন, ক্রিকেট অর্থনীতিতে বিসিবি সবচেয়ে বড় লাফ দিয়েছে গত দশকের শুরুর দিকে। সাবেক বিসিবি সভাপতি (বর্তমানে অর্থমন্ত্রী) আ হ ম মুস্তফা কামালের (সেপ্টেম্বর ২০০৯ থেকে অক্টোবর ২০১২) সময়ে যে গতিটা পেয়েছিল, সেটা অব্যাহত রাখেন টানা নয় বছর বোর্ডের সভাপতির পদে থাকা নাজমুল হাসান পাপন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও টেস্টখেলুড়ে ক্রিকেট বোর্ডগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিসিবি এখন বিশ্বের পঞ্চম ধনী ক্রিকেট বোর্ড। অন্যান্য ক্রীড়া সংগঠনের তুলনায় দেশে তারা যে এক নম্বর, তা বলাই বাহুল্য। দেশের দ্বিতীয় বড় ক্রীড়া সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনের (বাফুফে) আয় গত পাঁচ বছরে গড়ে ৪০ কোটি টাকাও ছাড়ায়নি। উদ্বৃত্ত দূরে থাক, গত চার বছরে বাফুফের বাজেট ঘাটতি ছিল ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মতো।
ধনী ক্রিকেট বোর্ডের তালিকায় চার নম্বরে থাকা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে খুব বেশি দূরত্ব নেই বিসিবির। সবার ওপরে থাকা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) তহবিলে আছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। এই তালিকায় দুইয়ে থাকা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) আছে তিন হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি আর তৃতীয় ধনী ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। আর্থিক অবস্থানে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে পেছনে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বললেন, ‘আমরা তহবিল ব্যবস্থাপনা (ফান্ড ম্যানেজমেন্ট) ঠিকভাবে করার চেষ্টা করছি। যেন আয় ও ব্যয়ে ভারসাম্য থাকে। আইসিসি থেকে শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে টাকা পায়, আমরাও সেটাই পাই। ম্যানেজমেন্ট এখানে বড় বিষয়। এরপরও যে কিছু হয় না, সেটি বলব না।’
বিসিবির আয়ের উৎস
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা আইসিসি ও আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা এসিসি থেকে পাওয়া লভ্যাংশ, ফান্ড, স্পনসরশিপ মানি, টেলিভিশনের সম্প্রচারস্বত্ব, ব্যাংক সুদ ও দেশের মাঠে হওয়া বিভিন্ন সিরিজ-টুর্নামেন্ট থেকেই মূলত আয় করে বিসিবি।
গত এক দশকে বিসিবির আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে পাঁচটি বড় টুর্নামেন্ট। ২০১১ বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক হিসেবে বিসিবি আইসিসি থেকে পেয়েছে ১৮৬ কোটি ৩৫ লাখ আর ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এককভাবে আয়োজন করে পেয়েছে ১৩০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০১২ থেকে ২০১৬—টানা তিনটি এশিয়া কাপ আয়োজন করে বিসিবির অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৬৪ কোটির বেশি টাকা। গত এক দশকে এই পাঁচ টুর্নামেন্ট থেকেই বিসিবির আয় প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা।
নিজাম উদ্দিন বলেন, ঘরের মাঠে আয়োজিত আইসিসির টুর্নামেন্ট বিসিবির আর্থিক চেহারাটা বদলে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, বিশেষ করে বিপিএল। তবে বড় অংশ এসেছে আইসিসি থেকেই।
গত চার বছরে বিসিবির বিপণন খাতেও আয় বেড়েছে। মিডিয়া, টিম স্পনসর ও অন্যান্য স্পনসর রাইটস ফি থেকে বোর্ডের আয় প্রায় ২.৯ কোটি ডলার বা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
বিসিবির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর)। নিয়মিত বিভিন্ন শিডিউল ব্যাংকে এফডিআর বিনিয়োগ করে গত তিন অর্থবছরে এসেছে ১৫২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। উল্লিখিত অর্থবছরে সুদ থেকে বিসিবির অর্জিত আয়ের ওপর কর রেয়াতি সুবিধা অনুমোদন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই সময়ে বিসিবি ব্যাংকে বিনিয়োগকৃত অর্থের সুদবাবদ প্রাপ্ত আয়ের ওপর কর রেয়াতি বা ট্যাক্স এক্সাম্পশন সুবিধা বাবদ সাশ্রয় করেছে ১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
মহামারিতেও বেড়েছে আয়
করোনা মহামারিতে যেখানে দেশ-বিদেশে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান আর্থিক লোকসানে পড়েছে, বিসিবির সেটির আঁচ খুব একটা লাগেনি। উল্টো চলতি অর্থবছরে গত বছরের তুলনায় সম্ভাব্য আয় ৪১ কোটি টাকার বেশি আশা করছে বিসিবি।
করোনায় খেলা বন্ধ থাকায় বিসিবিকে গত মৌসুমে আয়োজন করতে হয়নি ছেলে, মেয়ে ও বয়সভিত্তিক নানা পর্যায়ের ১৫টির বেশি লিগ বা টুর্নামেন্ট। স্থগিত হয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সিরিজ। যেগুলোয় লাভের চেয়ে ব্যয়ই হতো বেশি। অন্যদিকে আইসিসির ফান্ড, স্পনসর মানি কিংবা এফডিআর থেকে আয় অব্যাহত থেকেছে।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বললেন, ‘গত দুই বছরে আইসিসির একটা ফান্ড বেড়ে গেছে। সে কারণে আমাদেরও বেড়েছে। এখন দেখা যাক আইসিসির টুর্নামেন্টগুলো হয় কি না! সামনে ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে। আমরা কিন্তু খুবই ভেবেচিন্তে, নিশ্চিত হয়েই বাজেট করি।
কমছে বিসিবির উদ্বৃত্ত
চলতি অর্থবছরে বিসিবির আয়-ব্যয় প্রায় সমান হতে চলেছে। এতে কমতে শুরু করেছে উদ্বৃত্তের পরিমাণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয়-ব্যয় শেষে বেঁচেছিল ৫২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। পরের বছরে উদ্বৃত্ত প্রায় সমানই থাকে। গত অর্থবছরে এটি কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। চলতি অর্থবছরে বিসিবির সম্ভাব্য উদ্বৃত্ত ধরা হচ্ছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। গত ১৫ জুন বিসিবির পরিচালনা পরিষদের দশম সভায় অনুমোদন হওয়া চলতি অর্থবছরে বিসিবির সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ২৬৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা আর ব্যয় ২৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
মহামারিতে ক্রিকেট আয়োজনে জৈব সুরক্ষাবলয় তৈরি করতে হয়, যেটি বেশ ব্যয়বহুল। অন্য সময়ের তুলনায় বিসিবির খরচ বেড়ে যাওয়ার এটিও একটি কারণ। ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে নিজাম উদ্দিনের ব্যাখ্যা, ‘আন্তর্জাতিক সিরিজের সংখ্যা বেড়েছে। খরচও অনেক বেড়ে গেছে। বেশির ভাগ খরচ বিদেশ সফরে হচ্ছে। আমাদের কিন্তু ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলো সেভাবে বাড়েনি। সুরক্ষাবলয়, ১৫ দিনের কোয়ারেন্টিন, যে দল বাংলাদেশে আসছে তাদের ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে গেছে। এতেই ব্যয় বাড়ছে।’
তবে খরচ বেড়ে যতই উদ্বৃত্ত কমুক, এটা অবশ্য বিসিবিকে ধাক্কা দেওয়ার মতো কিছইু নয়।
বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হকের প্রত্যাশা, বিপুল এই অর্থ বিসিবি আরও বেশি কাজে লাগাবে ক্রিকেটের উন্নয়নে, ‘এটা ব্যবহার করা দরকার ক্রিকেট উন্নয়নে। আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে। ক্রিকেটের জন্যই তো হয়েছে এই ফান্ড। আমাদের মূল আয় আইসিসি থেকে। আমরা যদি পূর্ণ সদস্য না হতাম, তাহলে আমাদের হয়তো এত টাকা থাকত না। তখন সরকারি বাজেটের ওপর নির্ভর করতে হতো। ক্রিকেটে আরও উন্নতি করতে হলে ঠিক জায়গায় টাকাটা খরচ করতে হবে।’
সত্তরের দশকে ক্রীড়া সংগঠকেরা গাঁটের পয়সা খরচ করে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বা আজকের বিসিবি। তখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের (ঢাকা স্টেডিয়াম) যে ছোট্ট কক্ষে এর কার্যালয় ছিল, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ পর্যন্ত ছিল না। রাতের বেলা সংগঠকেরা কাজ করতেন মোমবাতি জ্বালিয়ে। বিসিবির আজকের বৈভবের কাছে সে গল্প সত্যিই বেমানান। সেদিনের মোমবাতির আলো ছাপিয়ে বিসিবি এখন অর্থের পাহাড়ে। সে পরিমাণও চমকে ওঠার মতো।
করোনা মহামারিতে লোকসানে পড়েনি–সারা পৃথিবীতে এমন প্রতিষ্ঠান বোধহয় কমই আছে। ব্যতিক্রম যা আছে, তাদের তালিকায় বিসিবি। তাদের আর্থিক অগ্রগতি এ সময়েও বেড়ে চলেছে।
বিসিবির গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয়-ব্যয়, নিট উদ্বৃত্ত, নগদ ও ব্যাংক জমা, এফডিআর মিলে বিসিবির স্থায়ী মূলধন বা পুঞ্জিভূত তহবিলে আছে ৮৩২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে যা ছিল ৩৯৭ কোটি ৫২ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
করোনা মহামারিতে যেখানে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী ক্রিকেট বোর্ডগুলো কর্মী ছাঁটাই, বেতন কমানো কিংবা ব্যয় সংকোচনের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে, বিসিবিকে তার কোনো পথেই হাঁটতেই হয়নি। করোনাধাক্কায় কারও চাকরি যায়নি। দেশি-বিদেশি কোচসহ চার শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন ছিল নিয়মিত। এর বাইরে কোভিড মহামারিতে বিসিবি প্রধানমন্ত্রী তহবিল, ত্রাণ, আম্পায়ার্স সমিতি, সাবেক-বর্তমান খেলোয়াড়দের চিকিৎসা, সাংবাদিক, ক্রিকেট সরঞ্জামাদি ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান দিয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে (ডব্লিউআইসিবি) ঋণও দিয়েছে ৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
বিশ্বে বিসিবির অবস্থান
প্রশ্ন উঠতে পারে, মাত্র এক দশকে বিসিবি আর্থিকভাবে কী করে এত শক্তিশালী হলো? তার জবাব দিয়েছেন ক্রীড়া সংগঠকেরা। তাঁরা বলছেন, ক্রিকেট অর্থনীতিতে বিসিবি সবচেয়ে বড় লাফ দিয়েছে গত দশকের শুরুর দিকে। সাবেক বিসিবি সভাপতি (বর্তমানে অর্থমন্ত্রী) আ হ ম মুস্তফা কামালের (সেপ্টেম্বর ২০০৯ থেকে অক্টোবর ২০১২) সময়ে যে গতিটা পেয়েছিল, সেটা অব্যাহত রাখেন টানা নয় বছর বোর্ডের সভাপতির পদে থাকা নাজমুল হাসান পাপন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও টেস্টখেলুড়ে ক্রিকেট বোর্ডগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিসিবি এখন বিশ্বের পঞ্চম ধনী ক্রিকেট বোর্ড। অন্যান্য ক্রীড়া সংগঠনের তুলনায় দেশে তারা যে এক নম্বর, তা বলাই বাহুল্য। দেশের দ্বিতীয় বড় ক্রীড়া সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনের (বাফুফে) আয় গত পাঁচ বছরে গড়ে ৪০ কোটি টাকাও ছাড়ায়নি। উদ্বৃত্ত দূরে থাক, গত চার বছরে বাফুফের বাজেট ঘাটতি ছিল ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মতো।
ধনী ক্রিকেট বোর্ডের তালিকায় চার নম্বরে থাকা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে খুব বেশি দূরত্ব নেই বিসিবির। সবার ওপরে থাকা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) তহবিলে আছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। এই তালিকায় দুইয়ে থাকা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) আছে তিন হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি আর তৃতীয় ধনী ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। আর্থিক অবস্থানে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে পেছনে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বললেন, ‘আমরা তহবিল ব্যবস্থাপনা (ফান্ড ম্যানেজমেন্ট) ঠিকভাবে করার চেষ্টা করছি। যেন আয় ও ব্যয়ে ভারসাম্য থাকে। আইসিসি থেকে শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে টাকা পায়, আমরাও সেটাই পাই। ম্যানেজমেন্ট এখানে বড় বিষয়। এরপরও যে কিছু হয় না, সেটি বলব না।’
বিসিবির আয়ের উৎস
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা আইসিসি ও আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা এসিসি থেকে পাওয়া লভ্যাংশ, ফান্ড, স্পনসরশিপ মানি, টেলিভিশনের সম্প্রচারস্বত্ব, ব্যাংক সুদ ও দেশের মাঠে হওয়া বিভিন্ন সিরিজ-টুর্নামেন্ট থেকেই মূলত আয় করে বিসিবি।
গত এক দশকে বিসিবির আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে পাঁচটি বড় টুর্নামেন্ট। ২০১১ বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক হিসেবে বিসিবি আইসিসি থেকে পেয়েছে ১৮৬ কোটি ৩৫ লাখ আর ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এককভাবে আয়োজন করে পেয়েছে ১৩০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০১২ থেকে ২০১৬—টানা তিনটি এশিয়া কাপ আয়োজন করে বিসিবির অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৬৪ কোটির বেশি টাকা। গত এক দশকে এই পাঁচ টুর্নামেন্ট থেকেই বিসিবির আয় প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা।
নিজাম উদ্দিন বলেন, ঘরের মাঠে আয়োজিত আইসিসির টুর্নামেন্ট বিসিবির আর্থিক চেহারাটা বদলে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, বিশেষ করে বিপিএল। তবে বড় অংশ এসেছে আইসিসি থেকেই।
গত চার বছরে বিসিবির বিপণন খাতেও আয় বেড়েছে। মিডিয়া, টিম স্পনসর ও অন্যান্য স্পনসর রাইটস ফি থেকে বোর্ডের আয় প্রায় ২.৯ কোটি ডলার বা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
বিসিবির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর)। নিয়মিত বিভিন্ন শিডিউল ব্যাংকে এফডিআর বিনিয়োগ করে গত তিন অর্থবছরে এসেছে ১৫২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। উল্লিখিত অর্থবছরে সুদ থেকে বিসিবির অর্জিত আয়ের ওপর কর রেয়াতি সুবিধা অনুমোদন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই সময়ে বিসিবি ব্যাংকে বিনিয়োগকৃত অর্থের সুদবাবদ প্রাপ্ত আয়ের ওপর কর রেয়াতি বা ট্যাক্স এক্সাম্পশন সুবিধা বাবদ সাশ্রয় করেছে ১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
মহামারিতেও বেড়েছে আয়
করোনা মহামারিতে যেখানে দেশ-বিদেশে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান আর্থিক লোকসানে পড়েছে, বিসিবির সেটির আঁচ খুব একটা লাগেনি। উল্টো চলতি অর্থবছরে গত বছরের তুলনায় সম্ভাব্য আয় ৪১ কোটি টাকার বেশি আশা করছে বিসিবি।
করোনায় খেলা বন্ধ থাকায় বিসিবিকে গত মৌসুমে আয়োজন করতে হয়নি ছেলে, মেয়ে ও বয়সভিত্তিক নানা পর্যায়ের ১৫টির বেশি লিগ বা টুর্নামেন্ট। স্থগিত হয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সিরিজ। যেগুলোয় লাভের চেয়ে ব্যয়ই হতো বেশি। অন্যদিকে আইসিসির ফান্ড, স্পনসর মানি কিংবা এফডিআর থেকে আয় অব্যাহত থেকেছে।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বললেন, ‘গত দুই বছরে আইসিসির একটা ফান্ড বেড়ে গেছে। সে কারণে আমাদেরও বেড়েছে। এখন দেখা যাক আইসিসির টুর্নামেন্টগুলো হয় কি না! সামনে ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে। আমরা কিন্তু খুবই ভেবেচিন্তে, নিশ্চিত হয়েই বাজেট করি।
কমছে বিসিবির উদ্বৃত্ত
চলতি অর্থবছরে বিসিবির আয়-ব্যয় প্রায় সমান হতে চলেছে। এতে কমতে শুরু করেছে উদ্বৃত্তের পরিমাণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয়-ব্যয় শেষে বেঁচেছিল ৫২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। পরের বছরে উদ্বৃত্ত প্রায় সমানই থাকে। গত অর্থবছরে এটি কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। চলতি অর্থবছরে বিসিবির সম্ভাব্য উদ্বৃত্ত ধরা হচ্ছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। গত ১৫ জুন বিসিবির পরিচালনা পরিষদের দশম সভায় অনুমোদন হওয়া চলতি অর্থবছরে বিসিবির সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ২৬৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা আর ব্যয় ২৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
মহামারিতে ক্রিকেট আয়োজনে জৈব সুরক্ষাবলয় তৈরি করতে হয়, যেটি বেশ ব্যয়বহুল। অন্য সময়ের তুলনায় বিসিবির খরচ বেড়ে যাওয়ার এটিও একটি কারণ। ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে নিজাম উদ্দিনের ব্যাখ্যা, ‘আন্তর্জাতিক সিরিজের সংখ্যা বেড়েছে। খরচও অনেক বেড়ে গেছে। বেশির ভাগ খরচ বিদেশ সফরে হচ্ছে। আমাদের কিন্তু ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলো সেভাবে বাড়েনি। সুরক্ষাবলয়, ১৫ দিনের কোয়ারেন্টিন, যে দল বাংলাদেশে আসছে তাদের ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে গেছে। এতেই ব্যয় বাড়ছে।’
তবে খরচ বেড়ে যতই উদ্বৃত্ত কমুক, এটা অবশ্য বিসিবিকে ধাক্কা দেওয়ার মতো কিছইু নয়।
বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হকের প্রত্যাশা, বিপুল এই অর্থ বিসিবি আরও বেশি কাজে লাগাবে ক্রিকেটের উন্নয়নে, ‘এটা ব্যবহার করা দরকার ক্রিকেট উন্নয়নে। আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে। ক্রিকেটের জন্যই তো হয়েছে এই ফান্ড। আমাদের মূল আয় আইসিসি থেকে। আমরা যদি পূর্ণ সদস্য না হতাম, তাহলে আমাদের হয়তো এত টাকা থাকত না। তখন সরকারি বাজেটের ওপর নির্ভর করতে হতো। ক্রিকেটে আরও উন্নতি করতে হলে ঠিক জায়গায় টাকাটা খরচ করতে হবে।’
অফ স্টাম্পের কিছুটা বাইরে পিচ করেছিল বল। ভেতরে ঢুকে মুখে লাইনে না গিয়েই খেলতে গেলেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে তাসকিনের সেই বল লাগল ব্যাটারের প্যাডে।
১ ঘণ্টা আগেপ্রথম সেশন বেশ ভালো কাটল বাংলাদেশের। মধ্যাহ্নভোজের আগে নিয়েছে ২ উইকেট। দুটি উইকেটই নিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
৩ ঘণ্টা আগেপেপ গার্দিওলাকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল ইংল্যান্ড। কদিন আগে রোনালদো নাজারিও জানিয়েছিলেন, ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের আগামী নির্বাচনে সভাপতি হলে সেলেসাওদের জন্য নিয়ে আসবেন স্প্যানিশ কোচকে। তবে আপাতত কোথাও যাচ্ছেন না গার্দিওলা। থাকছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেই।
৪ ঘণ্টা আগেউয়েফা নেশনস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে পেল গতবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। মুখোমুখি হবে চারবারের দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি-জার্মানি।
৪ ঘণ্টা আগে