ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশকে যেভাবে মনে করাল আফগানিস্তান

ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৩: ১৭
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৩: ৩৮

টানটান উত্তেজনা, রুদ্ধশ্বাস লড়াই-২০২৩ বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি কোনো ম্যাচেও। রানের বন্যা বয়ে যাওয়া টুর্নামেন্টে একরকম হেসেখেলেই জয় পাচ্ছে দলগুলো। মাঠের লড়াই তেমন না জমলেও ‘খেলা’ জমে উঠেছে সামাজিকমাধ্যমে। কদিন আগে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এক ছবিতে দেখা গেছে, ঠেলাগাড়িতে ফল বিক্রি করছেন ফেরিওয়ালা। ফেরিওয়ালাকে বানানো হয়েছিল আফগানিস্তান। ক্যাপশন দেওয়া হয়েছিল, ‘ফ্রি পয়েন্টস লে লো।’ গতকাল দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সেটা বুমেরাং হয়ে ফিরেছে ইংল্যান্ডের কাছে। আফগানদের কাছে ৬৯ রানে হেরে বাংলাদেশকে পুরোনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিল ইংল্যান্ড। 

২০১৯ বিশ্বকাপে যেখানে শেষ করেছিল, ২০২৩ বিশ্বকাপের শুরুটা আফগানিস্তান করেছিল সেখান থেকেই। বাংলাদেশ, ভারত এশিয়ার এই দুই দলের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে আফগানিস্তান। গতকাল দিল্লিতে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং পেলেও আফগানদের ইনিংস খুব একটা মসৃণ ছিল না। রোলার-কোস্টার জার্নির পর আফগানরা করেছিল ২৮৪ রান। একেই তো ইংলিশরা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন, তার ওপর অনেক পরিসংখ্যান তাদের পক্ষেও কথা বলছিল। এখানেই পাশার দান উল্টে দিয়েছেন মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খানরা। ইংল্যান্ডের ১০ উইকেটের ৮টিই নিয়েছেন আফগান স্পিন ত্রয়ী। মুজিব-রশিদদের ঘূর্ণি জাদুতে হাঁসফাঁস করা ইংল্যান্ড ৪০.৩ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ২১৫ রানে। টানা ১৪ ম্যাচ হারার পর বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেল আফগানরা। প্রত্যেকটা উইকেটের পর আফগান খেলোয়াড়দের উদযাপনই বলে দিচ্ছিল যে জয়ের জন্য তারা কতটা ক্ষুধার্ত ছিলেন। একমাত্র জয় ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে ডানেডিনে আফগানরা পেয়েছিল ১ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয়। 

৬৯ রানের জয়ের পর উচ্ছ্বসিত আফগানিস্তান ক্রিকেট দলযে ২০১৫ তে আফগানদের জন্য ‘অভিষেক’ বিশ্বকাপ, বাংলাদেশের জন্য তা ছিল পঞ্চম বিশ্বকাপ। সেখানেও জড়িয়ে আছে ইংল্যান্ডের নাম। অ্যাডিলেডে রুবেল হোসেনের বলে জেমস অ্যান্ডারসন বোল্ড হওয়ার পর ধারাভাষ্যকক্ষে নাসের হুসাইনের কণ্ঠে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশ নকড দ্য ইংলিশ লায়নস আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ’। ৮ বছর পুরোনো হলেও বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকদের কাছে তা এখনো জীবন্ত। আফগানদের ‘ইংল্যান্ড বধের’ পর নাসেরের সেই পুরোনো কণ্ঠস্বর যেন আরও একবার ভেসে উঠেছে। অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের কাছে ১৫ রানে হেরে সেবার বিশ্বকাপ স্বপ্ন সেখানেই থেমে যায় ইংলিশদের। 

শুধু এখানেই শেষ নয়, ২০১১ তে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা-যৌথভাবে উপমহাদেশে হওয়া বিশ্বকাপেও আছে ইংল্যান্ডের নাম। সেবার ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে বাঁচিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও শফিউল ইসলাম। এক্সট্রা কাভার দিয়ে মাহমুদউল্লাহর চারে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের ২ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয়। এর আগে বেঙ্গালুরুতে আয়ারল্যান্ডকে ৩২৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের নিশ্চিত জয় অনেকেই তখন দেখতে পাচ্ছিলেন। কেননা আয়ারল্যান্ডের সেটা মাত্র দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আর ইংল্যান্ড যে অনেক অভিজ্ঞ। কেভিন ও’ব্রায়েন যেন তখন মুচকি হেসে বলছিলেন, ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়।’ ৫০ বলে ও’ব্রায়েনের ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে লন্ডভন্ড করে দেন ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ। ৩ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপে তৎকালীন সর্বোচ্চ ৩২৮ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়ে আইরিশরা। ১২ বছর পর ব্রায়েনের ঝোড়ো সেঞ্চুরি, আইরিশদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড—সব ভেঙে গেছে এবার। ৪৯ বলে সেঞ্চুরি করেন এইডেন মার্করাম। আর ৩৪৫ রান তাড়া করে জিতেছে পাকিস্তান। দুটো রেকর্ডই হয়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। 

ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেওয়া তুলনামূলক দুর্বল দল: 
২০১১-বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড
২০১৫-বাংলাদেশ
২০১৯-শ্রীলঙ্কা
২০২৩-আফগানিস্তান

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত