বিজয় দিবসে অসাধারণ বিজয় বাংলাদেশের

ক্রীড়া ডেস্ক    
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯: ৪৯
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ২৫
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭ রানের রুদ্ধশ্বাস জয় পেল বাংলাদেশ। ছবি: ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ

মহান বিজয় দিবস আজ। বিজয় দিবসের সকালে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ভেসে এল বিজয়ের আনন্দ। সুদূর ক্যারিবীয় দ্বীপ সেন্ট ভিনসেন্টে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। এই জয়ে বাংলাদেশ করল চক্রপূরণ।

বাংলাদেশের সঙ্গে ১০ ঘণ্টা পার্থক্য থাকায় সেন্ট ভিনসেন্টে প্রথম টি-টোয়েন্টি হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর। সময়ের ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ জয়টা উপহার পেয়েছে বিজয় দিবসের (১৬ ডিসেম্বর) সকালে। সেন্ট ভিনসেন্টে ৭ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ক্যারিবীয় দ্বীপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে, টেস্ট, টি-টোয়েন্টি-তিন সংস্করণেই বাংলাদেশ জয় পেল বিজয় দিবসের দিন।

এ বছরের জুনে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখা গেছে সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেট স্পিনারদের জন্য দারুণ সহায়ক। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শেখ মেহেদী হাসানের ঘূর্ণিজাদুতেও সেটার প্রমাণ মিলেছে আজ। ১৪৭ রান করেও বাংলাদেশের ৭ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ের নায়ক মেহেদী। ৪ ওভারে ১৩ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। উইন্ডিজের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের এই স্পিনার।

সেন্ট ভিনসেন্টে আজ একটা সময় মনে হচ্ছিল রভমান পাওয়েল ম্যাচটা কেড়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশের থেকে। সেখান থেকে শেষ ওভারে পাওয়েলকে যখন হাসান মাহমুদ ফিরিয়েছেন, তখন ম্যাচের পাল্লা হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। হাসান মাহমুদ এরপর আলজারি জোসেফকে ফিরিয়ে উইন্ডিজের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছেন। ১৯.১ ওভারে ১৪০ রানে শেষ উইন্ডিজ। ইনিংস সর্বোচ্চ ৬০ রান করেন পাওয়েল। ৩৫ বলের ইনিংসে ৫ চার ও ৪ ছক্কা মেরেছেন।

১৪৮ রানের লক্ষ্যে নেমে দলীয় ১ রানেই ভেঙে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্বোধনী জুটি। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে তাসকিন আহমেদকে তুলে মারতে যান ব্র্যান্ডন কিং। মিড অফ থেকে উল্টো দিকে দৌঁড়ে তানজিদ হাসান তামিম দারুণ ক্যাচ ধরেছেন।

তাসকিনের মতো শেখ মেহেদী হাসানও নিজের প্রথম ওভারে উইকেট নেওয়া একরকম অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে নিকোলাস পুরানকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মেহেদী। ২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বেকায়দায় পড়া উইন্ডিজ এরপর পাল্টা আক্রমণ চালায় বাংলাদেশের ওপর। তৃতীয় ওভারে তানজিম হাসান সাকিবকে পিটিয়ে ২৫ রান নেয় স্বাগতিকেরা। এই ওভারে জনসন চার্লস ২ ছক্কা ও ১ চার মেরেছেন।

অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই নিজের উইকেটটা খুইয়েছেন চার্লস। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে মেহেদীকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়েছেন চার্লস। ১২ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় চার্লস করেন ২০ রান। তৃতীয় উইকেটে রস্টন চেজের সঙ্গে চার্লস ১৫ বলে ৩১ রানের জুটি গড়তে অবদান রেখেছেন।

এক ওভার বিরতিতে এসে মেহেদী দিয়েছেন জোড়া ধাক্কা। সপ্তম ওভারের তৃতীয় ও পঞ্চম বলে মেহেদী নিয়েছেন আন্দ্রে ফ্লেচার ও চেজের উইকেট। দুটি উইকেটেই ক্যাচ ধরেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর হয়েছে ১০ ওভারে ৫ উইকেটে ৫৭ রান। স্বাগতিকদের ইনিংসের অর্ধেক হওয়ার আগেই মেহেদী তাঁর নির্ধারিত ৪ ওভার বোলিং করেছেন। ১৩ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট।

নিজের প্রথম ওভারে বেধড়ক পিটুনি খেলেও তানজিম সাকিব এরপর তাঁর দ্বিতীয় ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। ১১তম ওভারে ২ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। ঠিক তার পরের ওভারে রিশাদ হোসেন নিয়েছেন আরও এক উইকেট। ১১.৪ ওভারে ৭ উইকেটে ৬১ রানে পরিণত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশের ওপর তাণ্ডব। অষ্টম উইকেটে ৩৩ বলে ৬৭ রানের জুটি গড়েছেন পাওয়েল ও রোমারিও শেফার্ড। উইন্ডিজ অধিনায়ক পাওয়েলের এক একটা ছক্কা গ্যালারিতে আছড়ে পড়তেই ক্যারিবীয় সমর্থকেরা করেছেন উল্লাস।

হাতে ৩ উইকেট নিয়ে ৩ ওভারে ২০ রান প্রয়োজন-এমন সমীকরণ দেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভক্ত-সমর্থকেরা হয়তো জয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই মুহূর্তে ১৮তম ওভারের প্রথম বলে শেফার্ডকে ফিরিয়েছেন তাসকিন। এই ওভারে তাসকিন দিয়েছেন মাত্র ২ রান। শেষ ২ ওভারে ১৮ রানের সমীকরণ দাঁড়ালে সেটা আর উইন্ডিজ মেলাতে পারেনি।

এর আগে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং পাওয়া বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৭ রান করে বাংলাদেশ। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন সৌম্য সরকার। ৩২ বলে মেরেছেন ২ চার ও ৩ ছক্কা। উইন্ডিজের আকিল, ম্যাকয় নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। আকিল ৪ ওভারে দিয়েছেন ১৩ রান। এক ওভার মেডেনও দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত