Ajker Patrika

 ১৬০০ মিটার দৌড়ে কেমন করলেন মাহমুদউল্লাহরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৩: ২৫
 ১৬০০ মিটার দৌড়ে কেমন করলেন মাহমুদউল্লাহরা

দেশের ক্রিকেটের অনেক ইতিহাস বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটাররা এই মাঠে খেলার সুযোগ না পেলেও বাংলাদেশর ক্রিকেটের অনেক স্মৃতিময় মুহূর্তের জন্ম হয়েছে এখানেই। আজ সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যেন ওই মাঠে ফিরল কিছু অতীতও। জাতীয় দল ও আশপাশে থাকা ৩৪ ক্রিকেটার আজ ফিটনেস টেস্ট দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসিবিতে কাজ করা অনেকেই, যাঁরা একসময় এই মাঠে ক্রিকেট খেলেছেন। তীর্থভূমিতে ফিরে পুরোনো স্মৃতি সতেজ হয়ে ওঠে তাঁদের। 

খেলোয়াড়দের ফিটনেস টেস্ট এবার একটু ব্যতিক্রম ছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহরা দৌড়ালেন টানা চার চক্করে ১৬০০ মিটার। ১৭ জন করে দুই দলে রানিং পরীক্ষা দিয়েছেন ৩৪ ক্রিকেটার। পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করছেন বিসিবির নতুন কন্ডিশনিং কোচ ও ট্রেইনার নাথান কেইলি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অন্য ট্রেইনাররাও। 

দুই ধাপের রানিং টেস্টে প্রথম হয়েছেন দুই পেসার। প্রথম ধাপে ১৬০০ মিটার দৌড়ে সবচেয়ে কম সময় নিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। আর বেশি সময় নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দ্বিতীয় ধাপের দৌড়ে আরেক পেসার নাহিদ রানা হয়েছেন প্রথম। সবার শেষে ছিলেন শামীম হোসেন। দুই দল মিলিয়ে ১৬০০ মিটার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়েছেন শামীমই। এই দৌড়কে বলা হচ্ছে ফিজিক্যাল পারফরম্যান্স অ্যাসেসমেন্ট। 

ট্রেইনার ন্যাথান কেইলি চেয়েছেন এ রকম একটা জায়গায় ক্রিকেটারদের স্প্রিন্ট দেখে কার ফিটনেসের অবস্থা কেমন তা পরখ করতে। ভোর ৬টায় শুরু হয়ে রানিং সেশন চলে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। ৩৯ ক্রিকেটার টেস্ট দেওয়ার কথা থাকলেও সাকিব আল হাসান দেশের বাইরে, মোস্তাফিজুর রহমান আইপিএল খেলছেন ভারতে, চোটের কারণে সৌম্য সরকার-তাইজুল ইসলাম ছিলেন না। আর ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম ধাপের পরীক্ষা শেষে খেলোয়াড়েরা ফেরেন মিরপুরে। সেখানে দিয়েছেন জিমসহ অন্যান্য পরীক্ষা। 

রানিং টেস্ট প্রসঙ্গে বিসিবির ট্রেইনার মীর ইফতি খায়রুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘অনেক দিন আমরা ফিটনেস পরীক্ষা নিইনি ক্রিকেটারদের। এটাতে আসলে পাস-ফেলের কিছু নেই। খেলোয়াড়দের বর্তমান অবস্থা কী, তা জানা। বেশ কয়েকটা সিরিজ গেছে, বিপিএল গেছে, ডিপিএল যাচ্ছে, এরপর ওদের ফিটনেসের অবস্থা কী, সেটা জানার জন্য। এটা জানার পরে খেলোয়াড়দের আলাদা আলাদা কাকে কোন ফিটনেস ট্রেনিং করাতে হবে, এগুলো আমরা বের করব। তারপর ওদের জানিয়ে দেব, সেভাবে আমরা বাস্তবায়ন করব সেটি। ১৬০০ মিটার নিয়েছি তাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমটা কীভাবে কাজ করে বা ওদের সামর্থ্য কেমন সব মিলিয়ে ফিটনেসের জানার জন্য।’ 

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিটনেস টেস্ট দেওয়ার এক ফাঁকে সতীর্থদের সঙ্গে মজা করছিলেন মুশফিকুর রহিম। ছবি: হাসান রাজাঅ্যাথলেটিকস ট্র্যাক বেছে নেওয়ার ব্যাপারে ইফতি বলেন, ‘অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক বেছে নেওয়ার কারণ আসলে টাইমিংয়ের একটা বিষয় আছে। আমরা যদি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসরণ করি, তাহলে বেশ কিছু টেস্টিং মেথড আছে, আমরা আজ ১৬০০ মিটার টাইম-ট্রায়াল নিলাম। অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে যদি নিই, তাহলে প্রপার টাইমিংটা হয়। কারণ ওইভাবেই হিসাব করা হয়। এটা ওদের কাছে নতুন মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে ভালো।’ 

দৌড় পরীক্ষা শেষে সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীসের স্মৃতি ভাগাভাগি, ‘বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আবারও ফেরা সত্যি দারুণ। আমাদের জীবনে খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়া, খেলা দেখে শেখা—সব এই স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করেই।’ 

অ্যাথলেটদের ট্র্যাক আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দখলে। ছবি: হাসান রাজাতারপর এই মাঠে প্রথম পা রাখার গল্প শোনালেন নাফীস, ‘১৯৯৪ সালে প্রথম এই মাঠে আসি আমি। অনেক আইকন ক্রিকেটার এখানে খেলতেন। তাদের দেখতে মাঠে আসতাম। ২০০৪ সালে আমার ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস এই মাঠে খেলেছি, ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলাম। তখন হয়তো বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝি সেই ইনিংসটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রতিটা ইঞ্চি ইতিহাস বহন করে। আমাদের প্রজন্মের খেলোয়াড়, শুধু ক্রিকেটার নয়, অন্য খেলার খেলোয়াড়েরাও এ কথা বলবে।’ 

এই প্রজন্মের ক্রিকেটাররা এই মাঠে না খেললেও নাফীসের ভাষায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সবার কাছেই আলাদা মাহাত্ম্য নিয়ে থাকবে ‘যারা একদম নতুন প্রজন্ম, তারা হয়তো এখানে খেলেনি। কিন্তু এই স্টেডিয়ামের কথা নিশ্চয়ই শুনেছে। অনেকের জন্ম ২০০০ সালের আশপাশে। তাদের খেলার কথাও নয়। তবে আইকনিক স্টেডিয়াম যেহেতু, এটার গল্প নিশ্চয়ই শুনেছে। দেখুন, সাধারণত সকাল ৬টায় ফিটনেস টেস্ট দেখতে এত মানুষের আশার কথা নয়। যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, তাই এসেছে। সবার জন্যই দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত