জাকেরের ‘৩টা পরোটা’, ৯১ রান আর বাবার স্মৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দেন জাকের আলী অনিক। ছবি: বিসিবি

তিনটা পরোটা, আনলিমিটেড সবজি, একটা কাঁচা লঙ্কা! কথাগুলো শুনেই কি হেসে উঠলেন? ফেসবুকের সৌজন্যে পশ্চিমবঙ্গের এক স্ট্রিট ফুড বিক্রেতা রাজুদার বিখ্যাত ডাক এখন অনেকেরই মুখে মুখে। আর এবার সেটা পৌঁছে গেছে জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে, যেখানে বাংলাদেশের টেস্ট দলের ব্যাটার জাকের আলী অনিক শোনালেন এই কথাগুলো। তবে একটু ভিন্ন উদ্দেশেই বলেছেন।

দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন ঘটনার। জ্যামাইকার রোদ ঝলমলে দুপুরে মাঠের উত্তাপের মধ্যেই স্বাগতিক দলের ব্যাটার কেসি কার্টি ব্যাটিং করছিলেন। তাসকিন আহমেদ তখন বল হাতে তোপ দাগছেন। এমন মুহূর্তে জাকেরের যেন রাজু দার সেই ‘তিনটা পরোটার’ গল্প তুলে আনলেন মাঠে। তবে উদ্দেশ্য প্রতিপক্ষের মনোযোগে একটু ব্যাঘাত ঘটানো।

‘তিনটি পরোটা, আনলিমিটেড সবজি, একটা কাঁচা লঙ্কা’—ফিল্ডিংয়ের সময় চিৎকার করে জাকের কথাগুলো বলতে থাকেন। সতীর্থরাও মজা পাচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যাটার কার্টি? তিনি হয়তো কিছুই বুঝতে পারেননি। তবে স্লেজিং যে কখনো ভাষার বাধা মানে না, সেটা যেন প্রমাণ করলেন জাকের। এ ধরনের স্লেজিং কখনো কখনো প্রতিপক্ষ ভাষা না বুঝতে পারে, তবে তার মনোযোগে নিশ্চয়ই চিড় ধরে। ১৩ তম ওভারের সেই রসিকতার পর দুই ওভারেও টিকলেন না কার্টি। নিজের উইকেট হারালেন, তাসকিনের বলে। সেই হালকা স্লেজিং আর তাসকিনের গতি মিলে বাংলাদেশের আনন্দের কারণ হয়ে উঠল। এভাবে জ্যামাইকায় শুধু পারফরম্যান্সে নয়, প্রতিপক্ষকে কথায়ও হার মানিয়েছে বাংলাদেশ।

তবে জাকেরের আসল গল্পটা শুরু হয় ব্যাট হাতে। ক্যারিবীয় পেসারদের শর্ট বল আর বাউন্সার সামলাতে সামলাতে ১০৬ বলে ৯১ রান! ৮টি চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা। প্রতিটি শট যেন বলে দিচ্ছিল, শাসন করতেই আমি এসেছি। প্রথম ইনিংসে নাহিদ রানার ৫ উইকেট আর দ্বিতীয় ইনিংসে জাকেরের ঝোড়ো ইনিংসে ভর করেই বাংলাদেশ পেল ১০১ রানের দুর্দান্ত জয়। আর এই জয়ের সঙ্গে শেষ হলো ক্যারিবীয় মাঠে ১৫ বছরের অপেক্ষা।

জ্যামাইকা শেষ টেস্টে জাকের আলী খেলেছেন দলের সেরা ইনিংসটি। নিজের প্রথম তিন টেস্টে তিনটি ফিফটি করে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে। জাকের যেন ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, বাংলাদেশের হয়ে সামনেও দারুণ কিছু করার তাঁর সামর্থ্য রয়েছে।

ম্যাচ শেষে জাকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন এক পোস্টে স্মৃতির পাতা উল্টে দিলেন, ‘তখন আমার বয়স ১১। ২০০৯ সালের সেই সিরিজের একটি ম্যাচও মিস করিনি। সারা রাত জেগে খেলা দেখতাম। আব্বা আমাকে দেখে অবাক হলেও কিছু বলতেন না। আর আজ, সেই সিরিজেই আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলছি। যদি আব্বা বেঁচে থাকতেন, তবে নিশ্চয়ই আমার খেলা দেখতেন। এই জয় আমি বাবাকে উৎসর্গ করলাম।’ জয়ের আনন্দের সঙ্গে বাবার প্রতি ভালোবাসাও প্রকাশ করলেন জাকের।

তিনটা পরোটা, আনলিমিটেড সবজি, একটা কাঁচা লঙ্কা—জাকেরের এই মজার স্লেজিং সতীর্থদের মাঝে প্রফুল্লতাও হয়তো জাগিয়ে তুলেছে। দলের জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া ইনিংস খেললেন। ম্যাচ শেষে আবেগঘন স্মৃতিচারণ—জ্যামাইকা টেস্ট জাকের আলী ক্যারিয়ারের আলাদা এক গল্প হিসেবেই ফ্রেমবন্দী হয়ে থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত