ভালো হাথুরু, মন্দ হাথুরু

রানা আব্বাস, ঢাকা
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ০০
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ৫৪

বাংলাদেশ দল তখন পাকিস্তান সফরে; ক্ষমতার পটপরিবর্তনে নাজমুল হাসান পাপন আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তখন দেশের ক্রিকেটে মূল প্রশ্ন—কে হতে যাচ্ছেন নতুন বিসিবি সভাপতি। একটি সূত্র থেকে পাওয়া খবরে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে জানানো হলো, বিসিবি সভাপতি হিসেবে ক্রিকেট বোর্ডে ফিরতে যাচ্ছেন ফারুক আহমেদ।

এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে খবরটা শুনে হাথুরুর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘ওকে, দ্যাটস আ নিউজ।’ কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে ফারুক আহমেদের একটা ইতিহাস আছে। ফারুক যখন প্রধান নির্বাচক ছিলেন, তখনো জাতীয় দলের কোচ ছিলেন হাথুরু। ২০১৬ সালের মে মাসে পাপনদের বিতর্কিত দ্বিস্তরবিশিষ্ট দল নির্বাচনপদ্ধতির সঙ্গে একমত না হতে পেরে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারুক। হাথুরু দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হয়ে বাংলাদেশে ফেরার পর ফারুক সব সময়ই তাঁর সমালোচনা করেছেন। ফারুক বোর্ডের প্রধান হওয়ার পরই তাঁর সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, হাথুরুর বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান আগের মতোই আছে।

ফারুকের এই অবস্থানে চাকরি নিয়ে কি শঙ্কিত—এমন প্রশ্নে পাকিস্তান থেকে হাথুরু একটা হাসির ইমোজি পাঠান। হাথুরুকে যে ফারুক রাখবেন না, সেটি গত দুই মাসে ‘ওপেন সিক্রেট’ ছিল দেশের ক্রিকেটে। ফারুক যতই দাবি করুন, হাথুরুর বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর কোনো ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের প্রভাব নেই, অতীতে কী নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছিল, সেটি ‘ভুলে গেছেন’—হাথুরুর এই বিদায় নিয়ে বিতর্ক এত সহজে যাচ্ছে না। কারণ, একজন পেশাদার কোচকে বিদায় করা হচ্ছে তাঁর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে নয়; তিনি কেন চুক্তির বাইরে বেশি ছুটি কাটিয়েছেন, ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নাসুম আহমেদের সঙ্গে কী ঘটেছিল, সেটার জেরে।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশে ফেরার পর জানিয়েছিলেন, জয়-পরাজয় ছাপিয়ে এবার বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমন কিছু করে যেতে চান, যেটির ছাপ থেকে যায় বহুদিন। সেই ছাপ তৈরিতেই বাংলাদেশ দলে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে বিশেষ বই ‘দ্য টাইগার্স কোড’, ম্যাচে বিশেষ পারফরম্যান্সের জন্য মেরুন জ্যাকেট দেওয়ার সংস্কৃতি তৈরি করেছেন। আগের মেয়াদে মোস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজের মতো ক্রিকেটারদের যেমন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবির্ভাব ঘটেছিল; এই মেয়াদে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটকে ‘পরিচয়’ করে দিয়েছেন রিশাদ হোসেনের সঙ্গে। আগের মেয়াদে ওয়ানডেতে ধারাবাহিক সাফল্যের পাশাপাশি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ, এবারও সাফল্য নেহাত কম নয়। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তলানিতে পড়ে থাকা বাংলাদেশ এবার সর্বোচ্চ চারে পর্যন্ত উঠেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তিন জয়ও তাঁর মেয়াদে। সাফল্যের উল্টো দিকে যথেষ্ট ব্যর্থতাও আছে। বিশেষ করে সবশেষ ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার সবার সামনে আসবে। মাঠের সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব করলে হাথুরুকে পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ক্রিকেটাররাও তাঁর কৌশল, পরিকল্পনার প্রশংসা করেন। হাথুরুকে নিয়ে মূল বিতর্কটা হচ্ছে তাঁর কর্তৃত্ববাদী আচরণ নিয়ে। এ কারণেই হাথুরুকে খুব পছন্দ করতেন সাবেক সভাপতি পাপন। ‘কড়া হেডমাস্টার’ তকমা পাওয়া হাথুরু নিজের ছড়ি ঘোরাতে পারতেন পাপনের কাছ থেকে পাওয়া সবকিছু করার লাইসেন্স পাওয়ায়। এতে হাথুরুকে নিয়ে খেলোয়াড়দের মধ্যে বিভক্তি আছে। কেউ তাঁকে পছন্দ করেন, কেউ আবার করেন না। হাথুরুকে অপছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে রাখবেন, এমন খেলোয়াড়ের নাম বললে সবার আগে আসবে তামিম ইকবালের নাম। গত বছরের জুলাইয়ে তামিমের আকস্মিক অবসর এবং তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পেছনে অনেকে হাথুরুর ‘দায়’ দেখেন।

হাথুরুর ভালো-মন্দ নিয়ে অনেক আলোচনা হবে। তবে এটা ঠিক, বিসিবির সঙ্গে তিনি যা করেছিলেন, সাত বছর পর তেমনই ঘটল তাঁর সঙ্গে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের মাঝে তিনি মেয়াদ শেষের আগে বিসিবিকে হুট করেই বিদায় জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে আরেক অক্টোবরে তাঁকেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই হুট করে বিদায় জানিয়ে দিল বিসিবি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত