বোরহান জাবেদ, ঢাকা
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে বিশেষ যোগ আছে নিল ম্যাকেঞ্জির। ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশ দলে দুই বছর কাজ করা সাবেক এই প্রোটিয়া তারকা ওপেনার এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে আছেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাফল্য তাঁকে যেমন অভিভূত করেছে, আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থতায় তিনি নিদারুণ হতাশ। মিশ্র এই অনুভূতির কথাই তিনি শোনালেন আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। ম্যাকেঞ্জির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বোরহান জাবেদ।
প্রশ্ন: ২০২০ সালের আগস্টে আপনি যেখানে দেখে গেছেন, সেখান থেকে এই সময়ে বাংলাদেশের ব্যাটাররা কতটা উন্নতি করেছে বলে মনে করেন?
নিল ম্যাকেঞ্জি: তাদের ব্যাটিংয়ে আমি দারুণ খুশি হয়েছি। এই দলের অনেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময় পার করেছে, স্বাভাবিকভাবে খেলাটা সম্পর্কে তাদের জানা-বোঝা অনেক বেড়েছে। ম্যাচের বিভিন্ন পর্যায়ে একজন ব্যাটারের কীভাবে রি-অ্যাক্ট করা উচিত, এই সিরিজে তারা সেটা করে দেখিয়েছে। লিটন-আফিফরা দায়িত্ব ভালোভাবে নিতে শিখেছে। বাংলাদেশের সাবেক কোচ হিসেবে ব্যাপারটা আমার জন্য দারুণ তৃপ্তিদায়ক।
প্রশ্ন: লিটনের কথা বলছিলেন, লিটন যখন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করছিলেন, আপনি সব সময় সমর্থন দিয়ে গেছেন। লিটনের সাফল্যে আপনার জন্য কতটা আনন্দের?
ম্যাকেঞ্জি: সে খুবই শান্ত প্রকৃতির, তবে তার রসবোধ দারুণ। সে তার খেলাটা খুব ভালোভাবে বুঝতে শিখেছে। সে এমন একজন ব্যাটার, আক্রমণাত্মক মনোভাবের সঙ্গে শট খেলতে পছন্দ করে। শট খেলার সময় তার টাইমিং নিখুঁত। ব্যাটিং নিয়ে পরিকল্পনায় আগের চেয়ে আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। শট নির্বাচনে আগের চেয়ে উন্নতি করেছে। তাকে নিয়ে আমি অনেক খুশি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের ব্যাটারদের মানসিকতায় আর কী কী পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন?
ম্যাকেঞ্জি: এই দলে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। লিটন-আফিফ তাদের অন্যতম। এটা তাদের (বিসিবির) নীতি—খেলোয়াড়দের কীভাবে ব্যবহার করতে পারছে। আমি আনন্দিত যে ব্যাটাররা সুযোগগুলো সাফল্যে রূপ দিচ্ছে। ব্যাপারটা এমন নয় যে আপনি একজনকে সুযোগ দিচ্ছেন, সে পারছে না, তার থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন। আরেকজনকে দিলেন, সে-ও পারছে না, তার থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন। নির্বাচনপ্রক্রিয়া আগের চেয়ে ভালো মনে হচ্ছে। আপনাকে ঠান্ডা মাথায় স্থির থাকতে হবে। বিশেষ করে দল যখন হারে, ওদের ওপর পুরো দেশ যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, এ সময় মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি। আমি নিশ্চিত, রাসেল ডমিঙ্গো ও তার আগে স্টিভ রোডস দলের মধ্যে একটা স্থিরতা আনতে সক্ষম হয়েছেন। যখন জিনিসগুলো পক্ষে যাচ্ছে না, তখনো পরিকল্পনায় স্থির থাকার চেষ্টা করেছেন তাঁরা।
প্রশ্ন: দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দ্রুতগতির পিচে বাংলাদেশের ব্যাটারদের দুর্বলতা পুরোনো। এবার তাদের ব্যাটিং কতটা অবাক করেছে আপনাকে?
ম্যাকেঞ্জি: ব্যাটারদের নিয়ে যেটা বলছিলাম, মানসিকতায় আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। সাকিব-মুশি-তামিমদের সঙ্গে ইয়াসির-লিটন-আফিফরা যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। একটা ব্যাটিং বিভাগের জন্য সংঘবদ্ধভাবে ভালো করার চেয়ে ইতিবাচক আর কিছু হতে পারে না। তাসকিন-শরীফুলরা যেভাবে প্রতিপক্ষের ওপর দাপট দেখাতে পারছে, তাতে ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়তে বাধ্য। এটাই তো একটা ধারাবাহিক দলের সবচেয়ে বড় লক্ষণ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের পেসারদের পারফরম্যান্স কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
ম্যাকেঞ্জি: তাসকিন-শরীফুলরা বিদেশে ভালো করা শুরু করেছে। উচ্চতা কাজে লাগিয়ে তারা উইকেটের হার্ড লেংথে বল ফেলে ব্যাটারকে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। একই সঙ্গে গতির সমন্বয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করছে। উইকেট নিতে বাংলাদেশকে এখন স্পিনারদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। তারা প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে উড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতাও রাখে। এটা দারুণ ব্যাপার।
প্রশ্ন: নেটে তাসকিন-শরীফুলদের সামলানো ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কতটা ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন?
ম্যাকেঞ্জি: নেটে তাসকিনদের খেলা অবশ্যই ব্যাটারদের সহায়তা করছে। উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বোলাররা যখন উইকেটের হার্ড লেংথ কিংবা গুড লেংথে বল ফেলে, তখন ব্যাটাররা নেট অনুশীলনেই ম্যাচের একটা ঝাঁজ পায়। প্রতিপক্ষ বোলারদের মুখোমুখি হওয়ার আগেই মানসিকভাবে তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশে যেমনটা হয়, মন্থর ও স্কিডি উইকেটে খেলে হঠাৎ একজন ব্যাটার স্টার্ক-কামিন্স কিংবা এনগিডি-রাবাদাকে সামলাতে বেকায়দায় পড়ে। নেটে তাই মানসম্পন্ন বোলারদের বিপক্ষে খেলা অবশ্যই ব্যাটারদের সুন্দর মানসিকতা তৈরি করে দেয়।
প্রশ্ন: অ্যাশওয়েল প্রিন্স, শন পোলক ও আপনার ধারাভাষ্যের বেশ প্রশংসা হচ্ছে। মাইক্রোফোন ছাড়াও ধারাভাষ্যকক্ষে আপনাদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে কেমন আলোচনা হয়?
ম্যাকেঞ্জি: হ্যাঁ, অ্যাশওয়েল বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করেছে, আমিও করেছি। দক্ষিণ আফ্রিকার পর বাংলাদেশ আমাদের দ্বিতীয় পছন্দের আন্তর্জাতিক দল। স্বাভাবিকভাবে তাই বাংলাদেশের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বিশেষ করে খেলোয়াড়দের মানসিকতা, আত্মবিশ্বাসের ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে। এবার যে দলটা এখানে এসেছে আর আগে যে দলগুলো এখানে এসেছিল—নিজেদের নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল, শর্ট বলের বিপক্ষে নড়বড়ে এবং ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। এ দলটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে তাই ব্যাপারটা তৃপ্তিদায়ক। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার দৃষ্টিকোণ থেকে ততটাই পীড়াদায়ক।
প্রশ্ন: তামিমদের এ সিরিজ জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকানদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশের কোচিং প্যানেলের ভূমিকা কতটা বলে মনে করেন?
ম্যাকেঞ্জি: দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জয়ের প্রক্রিয়াটা আসলে শুরু হয়েছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে। যখন (ওভালে) বাংলাদেশ তাদের হারিয়ে দিয়েছিল। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ দলের কোচিং প্যানেলে আছে দারুণ কিছু মুখ। নির্দিষ্ট করে তাই কারও নাম বলা কঠিন। আমার সময়ে কোর্টনি ওয়ালশ ও ওটিস গিবসন পেস বোলিং কোচ; সুনীল যোশি ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরি স্পিন বোলিং কোচ; রায়ান কুক ফিল্ডিং কোচ এবং স্টিভ রোডস প্রধান কোচ ছিলেন। খেলোয়াড়দের স্কুল ও ক্লাব কোচদের ভূমিকাও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আর এখন রাসেল ডমিঙ্গো তো আছেনই। তাঁরা দলের মধ্যে ভালো পরিবেশ গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছেন। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে দলের একজন সাবেক কোচ হিসেবে এ ব্যাপারগুলো ভালো লাগার।
প্রশ্ন: ওয়ানডে সিরিজজুড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আসলে কোথায় পিছিয়ে ছিল বলে মনে করেন?
ম্যাকেঞ্জি: বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ বোলিং করেছে, তবে আমাদের ব্যাটারদের ভুল শট নির্বাচন ওদের ডুবিয়েছে। এটা এমন একটা সিরিজ ছিল, যেখানে পিচগুলো পুরোটা দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ছিল না। সাধারণত ওয়ান্ডারার্স আর সেঞ্চুরিয়নে যে ধরনের উইকেট থাকে, সেটা ছিল না। এখানে টসের আগেই বোঝা যায় পিচ কেমন আচরণ করবে। তবে সেটা হয়নি। তবে আমরা আশা করি, ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার যেকোনো উইকেটে যেকোনো প্রতিপক্ষকে হারাতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ দলটাই তো ভারতের বিপক্ষে জিতেছে, নিউজিল্যান্ডে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ ড্র করে এসেছে। এটা হতাশার। এক-দুজন হয়তো ভালো খেলেছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা একটা দল হয়ে খেলতে পারেনি। আমার মনে হয় দক্ষিণ আফ্রিকা অবাক হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ দলের গভীরতা দেখে। আফিফের মতো ব্যাটার কত নিচে ব্যাটিং করছে, যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটিং করেছে, যে তিন ফাস্ট বোলার এনেছে ওরা—এটা আশা করেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। গত তিন মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে খেলছিল, সেদিক দিয়ে এটা সত্যিই হতাশার। দক্ষিণ আফ্রিকাকে অনেক ভাবতে হবে এখন।
প্রশ্ন: ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের কেমন সম্ভাবনা দেখছেন?
ম্যাকেঞ্জি: টেস্ট দলের ছয়জন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আইপিএলের জন্য টেস্ট সিরিজে থাকছে না। কিন্তু আমি মনে করি টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করার মতো গভীরতা দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে আছে। তবু এ মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের যে মানসিকতা ও জেতার ক্ষুধা এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে তারা যেভাবে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জিতেছে, কে বলতে পারে—এখানেও কিছু ঘটবে না! তবে যেকোনো সময়ের চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, এখানে তিন দিনেই বাংলাদেশ গুটিয়ে যায়। তবু বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখছি। কারণ, টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা সেরা তারকাদের পাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে বিশেষ যোগ আছে নিল ম্যাকেঞ্জির। ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশ দলে দুই বছর কাজ করা সাবেক এই প্রোটিয়া তারকা ওপেনার এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে আছেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাফল্য তাঁকে যেমন অভিভূত করেছে, আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থতায় তিনি নিদারুণ হতাশ। মিশ্র এই অনুভূতির কথাই তিনি শোনালেন আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। ম্যাকেঞ্জির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বোরহান জাবেদ।
প্রশ্ন: ২০২০ সালের আগস্টে আপনি যেখানে দেখে গেছেন, সেখান থেকে এই সময়ে বাংলাদেশের ব্যাটাররা কতটা উন্নতি করেছে বলে মনে করেন?
নিল ম্যাকেঞ্জি: তাদের ব্যাটিংয়ে আমি দারুণ খুশি হয়েছি। এই দলের অনেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময় পার করেছে, স্বাভাবিকভাবে খেলাটা সম্পর্কে তাদের জানা-বোঝা অনেক বেড়েছে। ম্যাচের বিভিন্ন পর্যায়ে একজন ব্যাটারের কীভাবে রি-অ্যাক্ট করা উচিত, এই সিরিজে তারা সেটা করে দেখিয়েছে। লিটন-আফিফরা দায়িত্ব ভালোভাবে নিতে শিখেছে। বাংলাদেশের সাবেক কোচ হিসেবে ব্যাপারটা আমার জন্য দারুণ তৃপ্তিদায়ক।
প্রশ্ন: লিটনের কথা বলছিলেন, লিটন যখন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করছিলেন, আপনি সব সময় সমর্থন দিয়ে গেছেন। লিটনের সাফল্যে আপনার জন্য কতটা আনন্দের?
ম্যাকেঞ্জি: সে খুবই শান্ত প্রকৃতির, তবে তার রসবোধ দারুণ। সে তার খেলাটা খুব ভালোভাবে বুঝতে শিখেছে। সে এমন একজন ব্যাটার, আক্রমণাত্মক মনোভাবের সঙ্গে শট খেলতে পছন্দ করে। শট খেলার সময় তার টাইমিং নিখুঁত। ব্যাটিং নিয়ে পরিকল্পনায় আগের চেয়ে আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। শট নির্বাচনে আগের চেয়ে উন্নতি করেছে। তাকে নিয়ে আমি অনেক খুশি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের ব্যাটারদের মানসিকতায় আর কী কী পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন?
ম্যাকেঞ্জি: এই দলে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। লিটন-আফিফ তাদের অন্যতম। এটা তাদের (বিসিবির) নীতি—খেলোয়াড়দের কীভাবে ব্যবহার করতে পারছে। আমি আনন্দিত যে ব্যাটাররা সুযোগগুলো সাফল্যে রূপ দিচ্ছে। ব্যাপারটা এমন নয় যে আপনি একজনকে সুযোগ দিচ্ছেন, সে পারছে না, তার থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন। আরেকজনকে দিলেন, সে-ও পারছে না, তার থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন। নির্বাচনপ্রক্রিয়া আগের চেয়ে ভালো মনে হচ্ছে। আপনাকে ঠান্ডা মাথায় স্থির থাকতে হবে। বিশেষ করে দল যখন হারে, ওদের ওপর পুরো দেশ যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, এ সময় মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি। আমি নিশ্চিত, রাসেল ডমিঙ্গো ও তার আগে স্টিভ রোডস দলের মধ্যে একটা স্থিরতা আনতে সক্ষম হয়েছেন। যখন জিনিসগুলো পক্ষে যাচ্ছে না, তখনো পরিকল্পনায় স্থির থাকার চেষ্টা করেছেন তাঁরা।
প্রশ্ন: দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দ্রুতগতির পিচে বাংলাদেশের ব্যাটারদের দুর্বলতা পুরোনো। এবার তাদের ব্যাটিং কতটা অবাক করেছে আপনাকে?
ম্যাকেঞ্জি: ব্যাটারদের নিয়ে যেটা বলছিলাম, মানসিকতায় আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। সাকিব-মুশি-তামিমদের সঙ্গে ইয়াসির-লিটন-আফিফরা যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। একটা ব্যাটিং বিভাগের জন্য সংঘবদ্ধভাবে ভালো করার চেয়ে ইতিবাচক আর কিছু হতে পারে না। তাসকিন-শরীফুলরা যেভাবে প্রতিপক্ষের ওপর দাপট দেখাতে পারছে, তাতে ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়তে বাধ্য। এটাই তো একটা ধারাবাহিক দলের সবচেয়ে বড় লক্ষণ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের পেসারদের পারফরম্যান্স কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
ম্যাকেঞ্জি: তাসকিন-শরীফুলরা বিদেশে ভালো করা শুরু করেছে। উচ্চতা কাজে লাগিয়ে তারা উইকেটের হার্ড লেংথে বল ফেলে ব্যাটারকে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। একই সঙ্গে গতির সমন্বয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করছে। উইকেট নিতে বাংলাদেশকে এখন স্পিনারদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। তারা প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে উড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতাও রাখে। এটা দারুণ ব্যাপার।
প্রশ্ন: নেটে তাসকিন-শরীফুলদের সামলানো ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কতটা ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন?
ম্যাকেঞ্জি: নেটে তাসকিনদের খেলা অবশ্যই ব্যাটারদের সহায়তা করছে। উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বোলাররা যখন উইকেটের হার্ড লেংথ কিংবা গুড লেংথে বল ফেলে, তখন ব্যাটাররা নেট অনুশীলনেই ম্যাচের একটা ঝাঁজ পায়। প্রতিপক্ষ বোলারদের মুখোমুখি হওয়ার আগেই মানসিকভাবে তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশে যেমনটা হয়, মন্থর ও স্কিডি উইকেটে খেলে হঠাৎ একজন ব্যাটার স্টার্ক-কামিন্স কিংবা এনগিডি-রাবাদাকে সামলাতে বেকায়দায় পড়ে। নেটে তাই মানসম্পন্ন বোলারদের বিপক্ষে খেলা অবশ্যই ব্যাটারদের সুন্দর মানসিকতা তৈরি করে দেয়।
প্রশ্ন: অ্যাশওয়েল প্রিন্স, শন পোলক ও আপনার ধারাভাষ্যের বেশ প্রশংসা হচ্ছে। মাইক্রোফোন ছাড়াও ধারাভাষ্যকক্ষে আপনাদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে কেমন আলোচনা হয়?
ম্যাকেঞ্জি: হ্যাঁ, অ্যাশওয়েল বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করেছে, আমিও করেছি। দক্ষিণ আফ্রিকার পর বাংলাদেশ আমাদের দ্বিতীয় পছন্দের আন্তর্জাতিক দল। স্বাভাবিকভাবে তাই বাংলাদেশের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বিশেষ করে খেলোয়াড়দের মানসিকতা, আত্মবিশ্বাসের ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে। এবার যে দলটা এখানে এসেছে আর আগে যে দলগুলো এখানে এসেছিল—নিজেদের নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল, শর্ট বলের বিপক্ষে নড়বড়ে এবং ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। এ দলটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে তাই ব্যাপারটা তৃপ্তিদায়ক। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার দৃষ্টিকোণ থেকে ততটাই পীড়াদায়ক।
প্রশ্ন: তামিমদের এ সিরিজ জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকানদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশের কোচিং প্যানেলের ভূমিকা কতটা বলে মনে করেন?
ম্যাকেঞ্জি: দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জয়ের প্রক্রিয়াটা আসলে শুরু হয়েছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে। যখন (ওভালে) বাংলাদেশ তাদের হারিয়ে দিয়েছিল। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ দলের কোচিং প্যানেলে আছে দারুণ কিছু মুখ। নির্দিষ্ট করে তাই কারও নাম বলা কঠিন। আমার সময়ে কোর্টনি ওয়ালশ ও ওটিস গিবসন পেস বোলিং কোচ; সুনীল যোশি ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরি স্পিন বোলিং কোচ; রায়ান কুক ফিল্ডিং কোচ এবং স্টিভ রোডস প্রধান কোচ ছিলেন। খেলোয়াড়দের স্কুল ও ক্লাব কোচদের ভূমিকাও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আর এখন রাসেল ডমিঙ্গো তো আছেনই। তাঁরা দলের মধ্যে ভালো পরিবেশ গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছেন। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে দলের একজন সাবেক কোচ হিসেবে এ ব্যাপারগুলো ভালো লাগার।
প্রশ্ন: ওয়ানডে সিরিজজুড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আসলে কোথায় পিছিয়ে ছিল বলে মনে করেন?
ম্যাকেঞ্জি: বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ বোলিং করেছে, তবে আমাদের ব্যাটারদের ভুল শট নির্বাচন ওদের ডুবিয়েছে। এটা এমন একটা সিরিজ ছিল, যেখানে পিচগুলো পুরোটা দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ছিল না। সাধারণত ওয়ান্ডারার্স আর সেঞ্চুরিয়নে যে ধরনের উইকেট থাকে, সেটা ছিল না। এখানে টসের আগেই বোঝা যায় পিচ কেমন আচরণ করবে। তবে সেটা হয়নি। তবে আমরা আশা করি, ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার যেকোনো উইকেটে যেকোনো প্রতিপক্ষকে হারাতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ দলটাই তো ভারতের বিপক্ষে জিতেছে, নিউজিল্যান্ডে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ ড্র করে এসেছে। এটা হতাশার। এক-দুজন হয়তো ভালো খেলেছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা একটা দল হয়ে খেলতে পারেনি। আমার মনে হয় দক্ষিণ আফ্রিকা অবাক হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ দলের গভীরতা দেখে। আফিফের মতো ব্যাটার কত নিচে ব্যাটিং করছে, যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটিং করেছে, যে তিন ফাস্ট বোলার এনেছে ওরা—এটা আশা করেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। গত তিন মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে খেলছিল, সেদিক দিয়ে এটা সত্যিই হতাশার। দক্ষিণ আফ্রিকাকে অনেক ভাবতে হবে এখন।
প্রশ্ন: ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের কেমন সম্ভাবনা দেখছেন?
ম্যাকেঞ্জি: টেস্ট দলের ছয়জন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আইপিএলের জন্য টেস্ট সিরিজে থাকছে না। কিন্তু আমি মনে করি টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করার মতো গভীরতা দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে আছে। তবু এ মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের যে মানসিকতা ও জেতার ক্ষুধা এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে তারা যেভাবে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জিতেছে, কে বলতে পারে—এখানেও কিছু ঘটবে না! তবে যেকোনো সময়ের চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, এখানে তিন দিনেই বাংলাদেশ গুটিয়ে যায়। তবু বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখছি। কারণ, টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা সেরা তারকাদের পাচ্ছে না।
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হবে আজ রাত ৮টায়। তার আগে বিকেল ৪টায় শু ২০২৫ আইপিএল সামনে রেখে আইপিএলের মেগা নিলাম শুরু। ক্লাব ফুটবলের একগাদা ম্যাচ রয়েছে রাতে। এক নজরে দেখে নিন টিভিতে কী কী খেলা রয়েছে।
৩৭ মিনিট আগেএগিয়ে থেকেও জিততে না পারা যে কতটা কষ্টের, সেটা গত রাতে বুঝতে পেরেছেন বার্সেলোনা কোচ হ্যান্সি ফ্লিক। সেলতা ফিগোর সঙ্গে লা লিগায় না হারলেও বার্সা ড্র করেছে। ফ্লিকের কাছে এই ড্র যেন মনে হচ্ছে হারের সমান।
১ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাসান মাহমুদের পথচলা শুরু ২০২০ সালের মার্চে। তবে টেস্টে তাঁর অভিষেক ২০২৪ সালেই। ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে মাত্র ৮ মাসেই গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। নিয়মিত উইকেট নেওয়া হাসান এবার তাড়া করছেন সাকিব আল হাসানকে।
২ ঘণ্টা আগে