সৌরভকে নিয়ে সিনেমা হচ্ছে

ক্রীড়া ডেস্ক
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১: ৫৩
Thumbnail image

সবার জীবনেরই গল্প থাকে। কিন্তু কারো কারো জীবনের গল্প সিনেমাকেও হার মানায়। তখন তাদের জীবনের গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র। তেমনই এক চরিত্র সৌরভ গাঙ্গুলী। এবার সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক ও বোর্ডের বর্তমান সভাপতির জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত হবে বায়োপিক। বিষয়টি সৌরভ নিজেই টুইটারে নিশ্চিত করেছেন।

সৌরভ গাঙ্গুলীর জীবনের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ক্রিকেট। দেড় দশকের খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় জানানোর জানানোর পরও তাই ক্রিকেট ছেড়ে থাকতে পারেননি তিনি। ২০১৯ সালের অক্টোবরে বসেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের মসনদে। নিশ্চিতভাবেই তাঁর বায়োপিকের একটা বড় অংশজুড়ে থাকবে এই ক্রিকেট। টুইটারে সৌরভ সে আভাসই দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘ক্রিকেট আমার জীবন। মাথা উঁচু করে চলতে ও সামনে এগোতে এটা সব সময় আমাকে আত্মবিশ্বাস জোগায়।’

ক্রিকেটার সৌরভের দেড় দশকের ক্যারিয়ারের পরতে পরতে আছে রোমাঞ্চ। খ্যাতির চরম শিখরে পৌঁছেও ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়া। সে সময়ের কথা ভেবে তিনি নিজেও হয়তো রোমাঞ্চিত হন। টুইটারে লিখেছেন সে কথাও, ‘ক্রিকেট জীবনের এই পথটা সব সময় আমাকে শিহরণ জাগায়। আমার এই চলার পথ নিয়ে লাভ ফিল্ম বায়োপিক নির্মাণ করবে। বড় পর্দায় তারা আমার জীবনের গল্প তুলে আনবে।’

সৌরভের ক্রিকেট ক্যারিয়ার এতটাই বৈচিত্র্যময় যে, অনেক ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়ার মতো। এর মধ্যে একটি ঘটনা ২০০৫ সালের শুরুর দিকের। এর আগে ক্যারিয়ারের প্রথম ১১ বছরে দল থেকে কখনো বাদ পড়েননি সৌরভ। সে সময়ের কোচ জন রাইটের চুক্তির মেয়াদও তখন শেষ।

এর দুই বছর আগে ২০০৩-২০০৪ অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে গ্রেগ চ্যাপেলের সঙ্গে ভালো সখ্য হয় সৌরভের। মূলত তাঁর চাওয়াতেই ভারতের কোচ হিসেবে রাইটের পর নিয়োগ পান গ্রেগ। গ্রেগের কোচ হওয়া যেন কাল হয়ে দাঁড়াল সৌরভের জন্য। সাজানো-গোছানো ক্যারিয়ার এলোমেলো হয়ে গেল গ্রেগ আসার পর। অধিনায়কত্ব হারানোর সঙ্গে দল থেকেও বাদ পড়েন সৌরভ।

এ ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ। প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। সেখানে লেখা, ‘ফিরে এসো সৌরভ’, ‘জয় মহারাজ জয়’, ‘চ্যাপেল পালাচ্ছে, সৌরভ আসছে’। আর তখন নতুন আলোর খোঁজে নিজের সঙ্গেই লড়াইয়ে নেমেছিলেন সৌরভ। তাঁর সে লড়াইয়ের পুঁজি ছিল জেদ, বিশ্বাস, প্রতিজ্ঞা, অঙ্গীকার আর কোটি ভক্তের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। ওই এক বছর সৌরভের রক্ত পানি করা ঘাম আর চোখের পানির সাক্ষী হয়ে আছে স্বয়ং ইডেন গার্ডেনস।

খোলা মাঠে দিনের পর দিন ঘাম ঝরিয়ে, ইডেনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, হায়দ্রাবাদে সামিয়ানা টাঙানো ড্রেসিং রুম ব্যবহার করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে, ধারাবাহিক পারফর্ম করে, নির্বাচকদের বাধ্য করেছেন তাঁকে দলে ভেড়াতে। অবশেষে ১০ মাস পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ডাক পান তিনি।

সৌরভ গাঙ্গুলীর জীবনের এই অধ্যায়টা দেখলে জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া কোনো মানুষ আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র খুঁজে পাবেন। নিজের পেশাকে ভালোবাসতে শিখবেন, শিখবেন দায়বদ্ধতা।

দুঃসময়ে সৌরভ তখন অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হাজির ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অরিজিৎ সিং। খ্যাতির সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছানোর পরও সৌরভের ওই পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ে মুগ্ধ অরিজিৎ সেদিন গানও গেয়েছিলেন আর উৎসর্গ করেছিলেন ‘প্রিন্স অব কলকাতা’র জীবনের ওই পর্বটাকে।

দেড় দশকের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে এই ঘটনাগুলো সিনেমার গল্পের চেয়ে কম কী! বায়োপিকে হয়তো উঠে আসবে তাঁর ব্যক্তিজীবনেরও কিছু ঘটনা। জীবনের এ অংশটাও যে কম রোমাঞ্চকর নয়। নাটকীয়তা আছে তাঁর ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি হওয়া নিয়েও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত