পেস বোলিংয়ে নতুন আশা দেখাচ্ছেন শরিফুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২১, ১৬: ৫৪
Thumbnail image

বাংলাদেশের ক্রিকেটে বাঁহাতি পেসারের সংকট পুরোনো। গত ছয় বছরে সাদা বলের ক্রিকেটে মোস্তাফিজুর রহমানকে দিয়ে সংকটটা কাটিয়ে ওঠা গেলেও লাল বলে সেটি এখনো প্রকট। মোস্তাফিজের চোটাঘাত, টানা খেলার ধকল আর টেস্টে অনিয়মিত হওয়ায় আরেকজন বাঁহাতি পেসারের খোঁজ বিসিবি অনেক দিন ধরেই করছে।

এখানেই আশার আলো হয়ে এসেছেন শরিফুল ইসলাম। গতকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত বোলিং জিম্বাবুয়েকে ২৪০ রানে বেঁধে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একটা সময় জিম্বাবুয়ে বড় সংগ্রহের দিকেই যাচ্ছিল। সেখান থেকেই পেসার শরিফুল রানের লাগামটা টেনে ধরেন। বাংলাদেশের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ানো ব্রেন্ডন টেলরকে (৪৬) ফেরিয়েছেন তিনিই। ফিফটি করা ওয়েসলি মাধিভেরের ইনিংসটা আর বড় করতে দেননি শরিফুল। শেষ দিকে ব্যাটসম্যানদেরও প্রতিরোধ গড়তে দেননি তরুণ বাঁহাতি পেসার। চোটে পড়ে একাদশের বাইরে থাকা মোস্তাফিজের অনুপস্থিতি একেবারেই বুঝতেই দেননি শরিফুল। ৪৬ রানে পেয়েছেন ৪ উইকেট, যেটি তাঁর ক্যারিয়ারসেরা বোলিং।

ফাস্ট বোলারদের স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মকভাব তাঁর বোলিংয়ে আগেই ছিল। কালও সেটির ব্যতিক্রম হয়নি। তবে শরিফুল বেশি মুগ্ধ করেছেন নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে। শর্ট লেংথের বলে উইকেট নিয়েছেন দুটি। গুড লেংথে নিয়েছেন এক উইকেট। অন্যটি পেয়েছেন ফুল লেংথের বলে। ৪.৫৯ ইকোনমি রেট বলে দিচ্ছে কতটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন শরিফুল।

গত বছর অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য শরিফুলের ওপর আলাদা নজর ছিল নির্বাচকদের। একজন ভালো বাঁহাতি পেসার পেতে তাঁকে গত এক বছর পরিচর্যা করা হয়েছে বিসিবির সেটআপে রেখে। শরিফুলকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে মার্চে খেলানো হয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ তখনই বোঝা হয়েছে তাঁর।

শরিফুলের টেস্ট অভিষেক হয়েছে গত মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। টেস্ট ও টি–টোয়েন্টিতে সেভাবে আলো ছড়াতে না পারলেও টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁর ওপর আস্থা হারায়নি। মে মাসেই দেশের মাঠে লঙ্কানদের বিপক্ষেই ওয়ানডে অভিষেক হয় শরিফুলের। সিরিজে দুই ওয়ানডে খেলে পান ২ উইকেট। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১ উইকেট পাওয়া শরিফুল নিজেকে চেনালেন আসলে কালই। দারুণ বোলিংয়ে ২০ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার বার্তা দিলেন, তাঁর ওপর আস্থা রাখা যায়!

বয়স ২০ হলেও মানসিকভাবে শরিফুল যথেষ্ট শক্ত। দারিদ্র্য জয় করে বেড়ে ওঠা এই বাঁহাতি পেসারের ক্রিকেটে হাতেখড়ি ২০১৬ সালে দিনাজপুর ক্লেমন একাডেমিতে। সেখান থেকে চলে আসেন রাজশাহী। এরপর ঢাকায় তৃতীয় বিভাগ, প্রিমিয়ার লিগ হয়ে জায়গা মেলে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দলে। গত বছর ইতিহাস গড়া বিশ্বকাপ জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এক বছরের মধ্যে খুলে গেছে জাতীয় দলের দরজাও।

টিম ম্যানেজমেন্ট আপাতত স্বস্তি পেতে পারে, মোস্তাফিজের সঙ্গে আরও একজন বাঁহাতি পেসার তবে মিলল! এই শরিফুলকে নিয়ে আশাবাদী মোস্তাফিজ নিজেও। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘শরিফুল প্রায়ই শুনতে চায় কখন কী করলে ভালো হয়। আমি ওকে এটাই বলি, যেটা যেটা সে ভালো পারে সেগুলো যেন আরও ভালোভাবে আয়ত্ত করে। শরিফুল একদিন মন খারাপ করায় বলেছিলাম, পরের ম্যাচে বাদ পড়বি এমন চিন্তা খেলার সময় মোটেও মাথায় আনবি না। একেবারে মন খুলে খেলবি।’

মোস্তাফিজের এই উপদেশগুলো হয়তো মনে রেখেছেন শরিফুল। প্রথম ওয়ানডেতে ১ উইকেট পাওয়ার পর কাল পেলেন ৪ উইকেট। উপদেশ দেওয়া মোস্তাফিজ ড্রেসিংরুমে থেকে সতীর্থের এই পারফরম্যান্স দেখে নিশ্চিত খুশি হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত