যে রেকর্ডটা আশরাফুলকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩: ৩৮
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ৫৯

বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল ধূমকেতুর মতো। অভিষেক টেস্টেই মোহাম্মদ আশরাফুল ব্যাট হাতে ক্রিকেট বিশ্বকে বার্তা দিয়েছিলেন—‘আমার নামটি মনে রেখো’। সেটি এমন এক রেকর্ডে, দুই দশকেও যেটি অম্লান।

২০০১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কলম্বোয় ১৭ বছর ৬১ দিনে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডের পাতা উলটপালট করে দিয়েছিলেন আশরাফুল। সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরির অসামান্য রেকর্ড গড়ার সেই দিনের ২০ বছর পূর্তি হলো আজ।

রেকর্ডের কথা বলতে গিয়ে এখনো স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠেন দেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার। স্মৃতির সরণিতে হাঁটতে হাঁটতে আশরাফুল আজকের পত্রিকাকে বলছিলেন, 'এই রেকর্ডটা আমাকে একটা বিশেষ জায়গায় নিয়ে গেছে। সবার কাছে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে—একজন এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। এটা সবচেয়ে আলাদা ভালো লাগার একটা জায়গা।’

২০০০ সালের জুনে টেস্ট মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টটা আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সেঞ্চুরিতে চড়ে স্মরণীয়ও করে রাখে নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের দল। তবে সেই সুখস্মৃতি মিলিয়ে যেতেও সময় লাগেনি। কারণ এর পরই যে টেস্টের আসল পরীক্ষায় পড়ে বাংলাদেশ। এর মধ্যে একটি ২০০১ সালের এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। চ্যাম্পিয়নশিয়পের প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারে ইনিংস ও ২৬৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। পরের টেস্টে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। 

আর সেই টেস্টেই অভিষেক আশরাফুলের। যদিও এর আগেই দেশের ক্রিকেটে নাম ছড়িয়ে পড়া আশরাফুলকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে খেলানোর জোর দাবি ওঠে। তবে তখনকার অধিনায়ক নাঈমুর কিছুতেই রাজি ছিলেন না। তাঁর যুক্তি ছিল, ‘জিম্বাবুয়ের পর শ্রীলঙ্কা সফর ছিল। তখন আশরাফুলকে খেলাতে চেয়েছি। নিঃসন্দেহে প্রতিভাবনা। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, জাতীয় দলের পরিবেশটা বুঝতে ওকে সময় দেওয়া উচিত। আশরাফুলকে খেলানোর ব্যাপারে অনেক চাপ ছিল। সে ভীষণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়, তবে আমি তাকে নষ্ট হতে দিইনি।’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয়ে আশরাফুলের এক দিক দিয়ে ভালোই হলো। সেঞ্চুরিটা যে এসেছিল মুত্তিয়া মুরালিধরন–চামিন্ডা ভাসদের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলে। মুরালিধরন তখন স্বপ্নের ফর্মে। বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামার আগের সপ্তাহে ভারতের বিপক্ষে ২–১-এ জেতা সিরিজে একাই নিয়েছেন ২৩ উইকেট।

সেঞ্চুরিটা এতটাই অনন্য, সতীর্থ-প্রতিপক্ষ সবার বাহাবা পেলেন আশরাফুলমুরালিকে সামলাতে না পেরে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশও অলআউট ৯০ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটাও একই। ৬ নম্বরে আশরাফুল যখন নামলেন, তখন স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছিল ৮১/৪। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও শতরান আসবে কি না—এ আলোচনা যখন চারপাশে, তখন আশরাফুল ভেবে নিলেন ভিন্ন কিছু। মুরালি–ভাসদের বিপক্ষে লিকলিকে শরীরের টিনএজার আশরাফুল লড়েছেন দাঁতে দাঁত চেপে। অন্য প্রান্তে সঙ্গী বদল হচ্ছে, তবে আশরাফুল অনড় পাহাড়ের মতো। শেষমেশ যখন থামলেন, নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১১৪ রান। আর তাতেই হয়ে গেল অনন্য এক রেকর্ড।

১৯৬১ সালে দিল্লি টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ১৭ বছর ৭৮ দিনে সেঞ্চুরি করে কনিষ্ঠতম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের মুকুট পরেছিলেন পাকিস্তানের মুশতাক মোহাম্মেদ। হানিফ মোহাম্মদের ছোট ভাইয়ের রেকর্ডটা অক্ষুণ্ন ছিল চার দশক। ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে মুশতাকের ‘পরে থাকা’ মুকুটটা নিজের করে নিলেন আশরাফুল। দল হারলেও মুরালির সঙ্গে যুগ্মভাবে ম্যাচ-সেরার পুরস্কার সেটিরই যেন স্বীকৃতি!

এই সেঞ্চুরি আশরাফুলকে আলাদা পরিচয় দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বে। সেই সেঞ্চুরির পরে আশরাফুলও ছুটেছেন ওপরের দিকে। কার্ডিফ থেকে জোহানেসবার্গ, মিরপুর থেকে চট্টগ্রাম—আশরাফুল বীরত্বে উড়েছে বাংলাদেশের পতাকা।   

নিজের কীর্তি আরও উজ্জ্বল করার  সময়ে একটা কালো অধ্যায় আশরাফুলের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। অনেক কিছু আশরাফুল হারালেও প্রাপ্তির খাতাটা কম মণিমুক্তায় পূর্ণ নয় তাঁর! সেখানে সবচেয়ে যেটি বেশি জ্বলজ্বল করে—সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানের রেকর্ডটা। নিজের সৃষ্টি এতটাই অমূল্য, আশরাফুল হেসে বলেন, 'ওটার আজ ২০ বছর পূর্তি৷'

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত