সবাই খেলছে, আমি খেলতে পারছি না, অনেক কষ্ট লাগে

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০৯: ৩২
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৭: ৫৫

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে গত পরশু সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এসেছিলেন ইবাদত হোসেন। ইনিংস বিরতিতে তাঁর সঙ্গে যখন প্রেসিডেন্ট বক্সে দেখা, সেখানে ছিলেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসও। জালাল ইবাদতকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমাদের স্ট্রাইক বোলার ছিলে। এশিয়া কাপ-বিশ্বকাপে তোমাকে অনেক মিস করেছি।’ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে-সাকিব আল হাসানও কয়েকবার ইবাদতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। অ্যালান ডোনাল্ডের ‘সিলেটের রকেট’ এখন ব্যস্ত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে। পরশু ইবাদতের হালহকিকত শুনলেন রানা আব্বাস

প্রশ্ন: আপনার পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে আছে?

ইবাদত হোসেন: পুনর্বাসনের তৃতীয় পর্যায়ে আছি। আমার পায়ে ৭০ শতাংশ স্ট্রেংথ বিল্ডআপ হয়েছে। আগামীকাল (গতকাল) থেকে আমার রানিং শুরু হবে ইনশা আল্লাহ।

প্রশ্ন: তারপর?

ইবাদত: দৌড়ানো শুরু মানে জগিংটা শুরু করব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার দৌড়ানোর তীব্রতা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হলে শর্ট রানআপে বোলিং শুরু করব। এটা করতে যত দিন সময় লাগে। আশা করছি যে চার-পাঁচ সপ্তাহ।

প্রশ্ন: জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কি আপনাকে পাওয়ার আশা করতে পারে বাংলাদেশ?

ইবাদত: এটা বলা মুশকিল। আমি যদি বলি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলব আর যদি খেলতে না পারি, তাহলে অনেকে বলবে যে, না আমি পুনর্বাসনের কাজ করিনি বা ভালো হয়নি (পুনর্বাসনের কাজ)। আমার প্রত্যাশা ও লক্ষ্য আছে। যদি এর ভেতরে ফিরতে পারি, তো আলহামদুলিল্লাহ। তবে আমার চেষ্টা থাকবে।

প্রশ্ন: একটু আগে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানের সঙ্গে যে কথা হচ্ছিল আপনার, যখন সেরা সময়, তখনই ছিটকে গেলেন। এটা আপনার ক্যারিয়ার বা জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা বলা যায়?

ইবাদত: হ্যাঁ, অবশ্যই। দেখুন, বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে সাকিব ভাইও ফোন করেছেন। আমিও অনেক মিস করেছি দলকে। বাংলাদেশ দলও আমাকে মিস করেছে। এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। এই পর্যায়ে আসতে আমার অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেই পরিশ্রমের ফলেই হয়তো সবাই আমাকে (মিস করেছে)….এমন একটা সময় আমি চোটে পড়েছি, যে সময় বাংলাদেশ দলের বেশি দরকার ছিল। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমার চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। চোট থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরব ইনশা আল্লাহ।

প্রশ্ন: কঠিন এই সময়ে দলের সবার কাছ থেকে কেমন সমর্থন পেয়েছেন?

ইবাদত: সবাই... আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। আমাদের ফাস্ট বোলিং যে গ্রুপ আছে, সেখানে প্রতিদিনই সবাই সবার আপডেট দিচ্ছে। সবাই সবার প্রশংসা করছে। দল থেকে সবাই হাথুরুসিংহে, নিক পোথাস ও দলের সবাই আমার খুব খোঁজখবর নিয়েছেন।

প্রশ্ন: আপনাদের এ বছর অনেকগুলো টেস্ট। আপনি চোটে পড়ে বাইরে। তাসকিন আহমেদেরও সমস্যা রয়েছে, টেস্ট খেলতে পারবেন না। মোস্তাফিজুর রহমান তো অনেক আগে থেকেই নেই। শীর্ষ তিন ফাস্ট বোলার নেই টেস্টে। তবু আপনি কতটা আশাবাদী বর্তমান ফাস্ট বোলিং আক্রমণ নিয়ে?

ইবাদত: অবশ্যই, দেখুন, আমার কাছে যেটা মনে হয় তাসকিনের ওপর দিয়ে অনেক চাপ গেছে। ওর কাঁধের কিছু সমস্যা আছে। আমিও এ মুহূর্তে চোটে পড়ে আছি। আমার দেখার মধ্যে খালেদ আহমেদ, শরীফুল, হাসান মাহমুদ আছে। আমি খুবই আশাবাদী যে যে সুযোগ পাক না কেন, যতটুকু পারে সবাই ভালো করার চেষ্টা করবে ইনশা আল্লাহ।

প্রশ্ন: কঠিন সময়ে নিজেকে অনুপ্রাণিত করেন কীভাবে?

ইবাদত: ওই সময়টা সত্যি বলতে আগে কখনো চোটে পড়িনি। চোটে পড়ার পর মানসিকভাবে... আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। নামাজ পড়েছি। এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।

প্রশ্ন: আপনার সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী এ সময়টাতে?

ইবাদত: পুনর্বাসন জিনিসটা অনেক কষ্টের। কেউ যদি পুনর্বাসনের কাজ না করে, সে বুঝতে পারবে না। এটাই আর কী, ওই সময়ে খুবই খারাপ লাগে যে, খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে পারছি না। সবাই খেলছে। নিজের মধ্যে অনেক কষ্ট লাগে। সেই কষ্টটা যখন আসে, তখন অন্যদিকে মন ঘুরিয়ে ফেলি।

প্রশ্ন: আপনি মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের নায়ক ছিলেন। আবার সিলেটে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে যখন বাংলাদেশ টেস্ট জিতল, তখন আপনার মনের অবস্থা কেমন ছিল?

ইবাদত: ওরা দেশে এসেছে। সেখানে যদি আমি খেলতে পারতাম, জিততে পারতাম, আরেকটু ভালো লাগত। তো মিস করছি। ইনশা আল্লাহ যত তাড়াতাড়ি সুস্থ হব, দলে ফিরব।

প্রশ্ন: সিলেটে দল আছে এখন। দেখা তো হয়েছে সবার সঙ্গেই। সবাই কী বলে?

ইবাদত: সবাই খোঁজখবর নিল, কতটুকু এগোলাম, পুনর্বাসন কীভাবে চলছে, কবে দৌড়ানো শুরু করব।

প্রশ্ন: অ্যালান ডোনাল্ড আপনাকে বিশেষ একটা তকমা দিয়েছিলেন। আবারও বলতে হচ্ছে, সিলেটের রকেট কবে উড়তে দেখবে বাংলাদেশ?

ইবাদত: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আমার তো মন বলে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরব ইনশা আল্লাহ।

প্রশ্ন: চোট থেকে ফেরার পর আরেকটা চ্যালেঞ্জে পড়তে হয় ফাস্ট বোলারদের। ছন্দ ফিরে পেতে অনেকের সময় লাগে। ছন্দ ফিরে পেতে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?

ইবাদত: এ জন্যই তো বিশ্বের সেরা সার্জনকে (ইংল্যান্ডে) দিয়ে অস্ত্রোপচার করানো, যাতে আবার আগের ছন্দে ফিরে আসি। সেটা নির্ভর করে কতটুকু শক্তিশালী হয়ে আমি বোলিং করছি। ইনশা আল্লাহ যদি সুস্থ হয়ে যাই, তাহলে ছন্দে ফিরতে বেশি সময় লাগবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত