‘টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রথম হ্যাটট্রিক করতে পারে ফিজ কিংবা রুবেল’

তাসনীম হাসান, ঢাকা
Thumbnail image

বাংলাদেশকে ‘হ্যাটট্রিক’ নামের ছোট্ট অথচ অসাধারণ শব্দটির সঙ্গে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অলক কাপালির সেই হ্যাটট্রিকের দেড় যুগ পূর্তিও হয়ে গেল গতকাল। 

সময়ের বয়স যতই বাড়ুক—এখনো অলকের নাম বললে প্রথমেই আসে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে সেই ঐতিহাসিক হ্যাটট্রিকের কথা। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় থাকা অলককেও ২৯ আগস্ট এলে নতুন করে বলতে হয় রেকর্ডের পাতায় অমলিন হয়ে থাকা সেই হ্যাটট্রিক নিয়ে, জানাতে হয় অনুভূতি।

গতকাল তাই বারবার বেজে উঠেছে অলকের মোবাইল ফোন। কেউ ফোনে তাঁকে জানিয়েছেন অভিনন্দন, কেউবা খুদে বার্তায় পাঠিয়েছেন শুভেচ্ছা বার্তা। আজকের পত্রিকাকেও অলক শুনিয়েছেন ২০০৩ সালের ২৯ আগস্ট পেশোয়ার টেস্টে কীভাবে এসেছিল হ্যাটট্রিক–সেই গল্প। কথা বলতে বলতে রাত হয়ে যাওয়ায় ‘অন দিস ডে’ হিসেবে লেখাটা কাল প্রকাশ হলো না। তাতে কী? অলকের এই হ্যাটট্রিক নিয়ে গল্প করা যায় বছরের যেকোনো দিনই!

হ্যাটট্রিক করার সেই অনুভূতি জানাতে গিয়ে ১৮ বছর পরও গলায় আবেগ ভর করে অলকের, ‘হ্যাটট্রিকের সেই অনুভূতি তো আসলে সারা জীবনই থাকবে। এটা যে অনেক আনন্দের । শব্দ দিয়ে বুঝিয়ে বলা কঠিন। এখন তো এটা (প্রথম কে হ্যাটট্রিক করেছিলেন) বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ও চাকরির পরীক্ষায়ও আসে।’

অলকের মনের আয়নায় এখনো ঝকঝকে হয়ে আছে সেই দিনের স্মৃতি। সেদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে খালেদ মাহমুদ দ্বিতীয় স্পেলে অলককে বোলিংয়ে আনেন ১০৭তম ওভারে। ৫৮ রানে অপরাজিত থাকা মোহাম্মদ ইউসুফ তখন চেষ্টায় আছেন লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বড় কিছু করার। ইউসুফের সঙ্গে শাব্বির আহমেদের ৮ম উইকেট জুটিতে উঠে গেছে ২৪ রানও। ওভারের পঞ্চম বলে অলককে তুলে মারতে গিয়ে শাব্বির মিড–অফে ধরা পড়েন মাশরাফি বিন মুর্তজার হাতে। পরের বলে দানিশ কানেরিয়া অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা ছেড়ে দিয়ে ডেকে আনেন নিজের বিপদ—এলবিডব্লু। পরের ওভারে এসেই অলক দারুণ এক ফ্লিপারে উমর গুলকে বিভ্রান্ত করে পেয়ে যান হ্যাটট্রিক।

অলক কাপালি বললেন,  মোস্তাফিজুর রহমান কিংবা  রুবেল হোসেনের হাত ধরে আসতে পারে প্রথম টি-টোয়েন্টি হ্যাটট্রিকঅথচ হ্যাটট্রিক হয়ে যাবে সেই চিন্তা মাথায়ও ছিল না অলকের। বলছিলেন, ‘আমাকে যখন সুজন ভাই (খালেদ মাহমুদ) বোলিংয়ে আনেন তখন আমার লক্ষ্যটাই ছিল দলকে একটা ব্রেক-থ্রু এনে দেওয়া। সেই চেষ্টায় স্টাম্প-টু-স্টাম্প বোলিং করে হ্যাটট্রিক পেয়ে গেছি। অবশ্য ভাগ্যও আমার হয়ে কথা বলেছে।’

হ্যাটট্রিক পেতে হলে ভাগ্যটাও যে লাগে সেটি অলক স্পষ্ট  করেছেন এভাবে, ‘দুই বলে দুই উইকেট অনেকেই পেয়েছে। কিন্তু টানা তিন বলে ৩ উইকেট সহজ না। ভালো জায়গায় বলটাও পড়েছে।’

অলকের দারুণ হ্যাটট্রিকের পরও বাংলাদেশ টেস্টটা হেরেছিল ৯ উইকেটেই। সেটি নিয়ে এখনো আক্ষেপে পোড়েন অলক, ‘আমরাই প্রথমে লিড নিয়েছিলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করতে না পারায় এরপরও ম্যাচটা হারতে হয়েছিল। এই আক্ষেপটা কখনো ফুরাবে না। কারণ, টেস্টটা জিতলে হয়তো আমার হ্যাটট্রিকটাও আলাদা মর্যাদা পেত।’

অলক হ্যাটট্রিক-বাধার গিঁটটা খুলে দেওয়ার পর আরও ছয়টি হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। এই সাত হ্যাটট্রিকের দুটি টেস্টে ও বাকি পাঁচটি ওয়ানডেতে। এখনো ক্রিকেটের ছোট্ট সংস্করণে হ্যাটট্রিকের দেখা পাননি কোনো ক্রিকেটার।

কার হাত ধরে আসতে পারে টি–টোয়েন্টির হ্যাটট্রিক, এমন প্রশ্নে অলক চটপট জবাব দিলেন, ‘আমার মনে হয় মোস্তাফিজুর রহমান অথবা রুবেল হোসেন। তারা অনেক ম্যাচেই পরপর দুই বলে ২ উইকেট পেয়েছে। দুজনের সম্ভাবনাই তাই বেশি।’

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দলে আছেন মোস্তাফিজ–রুবেল দুজনেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পথে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে টানা দুই বলে ম্যাথু ওয়েড ও অ্যাশটন অ্যাগারকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। সেবার না হলেও নিউজিল্যান্ড সিরিজেই যদি ফলে যায় অলকের ভবিষ্যদ্বাণী, তাহলে তো অভিজ্ঞ এ লেগ স্পিনার জ্যোতিষী হিসেবেও বেশ নাম কুড়াবেন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত