ইডেনে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই

রানা আব্বাস, কলকাতা থেকে
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৯: ২৭
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৫: ২৮

কলকাতার একটি দৈনিক গতকাল লিখেছে, খেলা বাদে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা নাকি কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেন না। এ তথ্য কতটা সঠিক, সেটি পর্যালোচনার জন্য ঠিক নয়, গতকাল ইডেনে দলের অনুশীলনে যে ছবি দেখা গেল, সে কারণেই প্রসঙ্গটা আনা। অনুশীলনের ফাঁকে সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকুর রহিম মাঠেই ধুমসে আড্ডা দিলেন। 

তিন ঘণ্টার অনুশীলনে সাকিব এ রকম আড্ডার মুডেই ছিলেন। ব্যাট হাতে বার কয়েক শ্যাডো করা ছাড়া আর তেমন কিছুই করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। সতীর্থদের সঙ্গে গল্প, ঠাট্টা, রসিকতা করেই পুরোটা সময় কাটিয়েছেন। ম্যাচের আগের দিন সাকিব খুব একটা অনুশীলন করেনও না। নেদারল্যান্ডসের ম্যাচের আগে আবার ঢাকায় শৈশবের কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে দুটি নিবিড় সেশন করে এসেছেন। প্রস্তুতিতে তাঁর ঘাটতি থাকার কথা নয়। 

টুর্নামেন্টের মাঝপথে সাকিবের এই আকস্মিক ঢাকা সফর নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছে গত দুই দিনে। তবে দলের প্রতিনিধি হয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসা তাসকিন আহমেদ মনে করেন, সাকিব কোনো ভুল করেননি, বরং বিশ্রামের মাঝে তাঁর এই অনুশীলনকে ‘অ্যাপ্রিশিয়েট’ করতে বলেছেন তাসকিন। 

অনুশীলনের এক ফাঁকে দেখা গেল, সাকিব ইডেনের চারদিকে ঘুরে ঘুরে শূন্য গ্যালারিতে চুমু ছুড়ে দিচ্ছেন; যেন তিনি অসাধারণ কিছু করেছেন, দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দিচ্ছেন। গত পরশু নিজের দেশে দর্শকদের দুয়ো শুনে আসা সাকিব কলকাতায় গতকাল উষ্ণ ভালোবাসা পেয়েছেন। ইডেনের ফটকে তাঁর নামে স্লোগান উঠেছে। তাঁর প্রতি ভারতীয়দের এই ভালোবাসা অবশ্য যতটা না বাংলাদেশের জন্য, তার চেয়ে আইপিএলের সৌজন্যেই বেশি। 

জনপ্রিয়তা যেখানে যেমনই থাক, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে আজ সাকিবকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তাঁর কাছে একটা লম্বা ইনিংস পাওনাও হয়ে গেছে। তবে সাকিবকে যেন বিপর্যয়ে খেলতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে টপ অর্ডারকে। টুর্নামেন্টের অর্ধেক চলে গেল, এখনো বাংলাদেশের টপ অর্ডার ঘুমিয়ে। আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তাদের জেগে ওঠার সময় হয়েছে। ইডেনে বড় স্কোর যেমন হয়, পেসারদের জন্য বাড়তি বাউন্সও মেলে। তাসকিনের চোখে এটা আদর্শ স্পোর্টিং উইকেট। 

দুই দলেরই ভাবনায় থাকছে শিশির। মুম্বাইয়ের গরমে যেমন আগে ব্যাটিং করতে টস জেতা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কলকাতায় ঠিক উল্টো কারণে টস জেতা গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটিয়ে দেওয়া ডাচদের এখন লক্ষ্য, বাংলাদেশের বিপক্ষেও দারুণ কিছু করে চমকে দেওয়া। ওয়ানডেতে দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে ১২ বছর পর। ২০১১ বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে সর্বশেষ সাক্ষাতে ডাচদের বিপক্ষে অনায়াস জয়ই পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডেতে হারের অভিজ্ঞতাও আছে সাকিবদের। ২০১০ সালে গ্লাসগোতে ৩০ ওভারে নেমে আসা ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরেছিল ৬ উইকেটে। আর আইসিসির টুর্নামেন্টে ২০১৬ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডাচরা হারলেও প্রতিবার জিততে ঘাম ছুটে গেছে সাকিবদের। প্রতিপক্ষ দলের প্রধান কোচ রায়ান কুক তিন বছর আগেও ছিলেন বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ। বাংলাদেশ দলের নাড়িনক্ষত্র তাঁর ভালোই জানা। 

সব মিলিয়ে আজ ইডেনের ম্যাচে বাংলাদেশ কিছুটা চাপে থাকবে। এ ম্যাচ থেকে ২ পয়েন্ট পাওয়ার লক্ষ্য তারা অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছে। এখন শুধু পয়েন্টের হিসাব করলে চলছে না, নিজেদের সবশেষ চার ম্যাচের হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতেও এ ম্যাচে জেতা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। আর জয় পেতে তাদের সমর্থন দিতে থাকবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিপুল সমর্থক। একটি জয় বদলে দিতে পারে পুরো দলের ছবি। তখন দূর থেকে দেখে আর মনে হবে না, এই দলের ক্রিকেটাররা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা! জিতলে সুখী পরিবারের ছবিটাই বেশি দৃশ্যমান হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত