Ajker Patrika

ওয়ানডের সাফল্য ঢাকা পড়েছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির ব্যর্থতা

বোরহান জাবেদ ও সাহিদ রহমান অরিন, ঢাকা
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮: ৪৮
ওয়ানডের সাফল্য ঢাকা পড়েছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির ব্যর্থতা

বাংলাদেশে ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের রক্তে মিশে গেছে ক্রিকেট। পাঁচ দশকে নানা চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ ক্রিকেট বিশ্বে সমীহ জাগানিয়া দল। যদিও ওয়ানডের সাফল্য ঢাকা পড়েছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির ব্যর্থতায়। বিজয়ের ৫০ বছরে আজকের পত্রিকার তিন পর্বের আয়োজনের শেষ পর্বে আজ থাকছে ক্রিকেট।

১৯৭১-১৯৮০

ক্রিকেট বোর্ড গঠন
স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রিকেটের বিকাশ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছিল সবচেয়ে জরুরি। এ লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিবি)।  
বোর্ডের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। তবে মূল কাণ্ডারি ছিলেন কার্যনির্বাহী সম্পাদক রেজা-ই-করিম। তিনিই সে সময় প্রায় এক হাতে চালিয়েছেন দেশের ক্রিকেট।

রেজাবোর্ডের আসল উদ্দেশ্য ছিল দেশের সর্বস্তরে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ক্রিকেট তুলে ধরা। শুরুটা খুব একটা সহজ ছিল না। কারণটাও অনুমেয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ক্রীড়ার আগে অন্য ক্ষেত্র বিনির্মাণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এমনকি বোর্ড প্রতিষ্ঠার সময় দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে (তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়াম) ছিল ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। স্টেডিয়ামেরই একটি কক্ষে ছিল বোর্ড কার্যালয়। আসবাবপত্র বলতে একটি করে টেবিল-চেয়ার আর স্টিলের আলমারি। সেখানেই রাখা হতো দেশের ক্রিকেটের সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। রেজা-ই-করিম বিদ্যুৎহীন বোর্ড অফিসে বসে মোমবাতির আলোয় কাজ চালিয়েছেন। আর্থিক দুরবস্থা মেটাতে কখনো ধর্ণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সরকারের কাছে, কখনো ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে।

বাংলাদেশিদের ক্রিকেটপ্রীতি ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বে 
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নাম তখনো অনেকে শোনেননি। এ পরিস্থিতিতেই একজন মানুষ আঁচ করেছিলেন এ দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তিনি ইংল্যান্ডের রবিন মারলার। এই ক্রিকেট সাংবাদিক ১৯৭৬ সালে ‘সানডে টাইমস’ পত্রিকায় আগ্রহ নিয়ে লিখেছিলেন ‘উইদার বাংলাদেশ’ (যেখানে বাংলাদেশ) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদন আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশ্ব প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে বিশদ ধারণা পায়।  তাতে নড়চড়ে বসে বিসিসিবি। 

মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের বাংলাদেশ সফর
১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে ঘরোয়া লিগ শেষে রেজা-ই-করিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি) একটি চিঠি পাঠান। চিঠির মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশকে আইসিসির সহযোগী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা। ১৯৭৬ সালের জুনে আইসিসির সভায় ওঠে বিষয়টি। আইসিসি বিসিসিবিকে পরামর্শ দেয় ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা  মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবকে (এমসিসি) আমন্ত্রণ জানাতে। বিসিবি আমন্ত্রণ জানায় এমসিসিকে। সে বছরের ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসে এমসিসি। পরের বছরের শুরুতে ৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে বিসিসিবির বিপক্ষে খেলে তিন দিনের ম্যাচ। সেটিই ছিল বাংলাদেশ দলের প্রথম অনানুষ্ঠানিক ম্যাচ।   

আইসিসির সদস্যপদ লাভ 
এমসিসির ওই সফরের সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পদচ্ছাপের সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনা সত্যি হয় পরের বছর। ১৯৭৭ সালে আইসিসির সহযোগী সদস্য হয় বাংলাদেশ। 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আত্মপ্রকাশ
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার আত্মপ্রকাশ করে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। টুর্নামেন্টটা অম্লমধুর কাটে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। চার ম্যাচ খেলে দুটি করে জয়-হার। টুর্নামেন্টে দলকে নেতৃত্ব দেন রকিবুল হাসান। যিনি একাত্তরে একটি ম্যাচে ব্যাটে ‘জয় বাংলা’ স্টিকার লাগিয়ে খেলতে নেমে সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

১৯৮১-১৯৮৯

অভিষেক ওয়ানডের অধিনায়ক লিপু।বাংলাদেশের ওয়ানডে অভিষেক 
আইসিসির সদস্য হওয়ার ৯ বছর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ আসে বাংলাদেশের সামনে। সেটিও বেশ নাটকীয়ভাবে। ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল শ্রীলঙ্কা। তবে লঙ্কানদের সঙ্গে শীতল সম্পর্কের জেরে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। তাদের শূন্যস্থান পূরণ করে বাংলাদেশ। ৩১ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয় বাংলাদেশের। ম্যাচটি তারা হেরে যায় ৭ উইকেটে। তবে ফল ছাপিয়ে ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে আছে ভিন্ন কারণে। বাংলাদেশের অধিনায়ক গাজী আশরাফ লিপুর সঙ্গে নাকি বাউন্ডারির বাইরেই টস সেরেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে তাতে বাংলাদেশকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার মতো কোনো ব্যাপার ছিল না। 

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ দল। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট
এশিয়া কাপের তৃতীয় আসর বসে বাংলাদেশে। সেটি ছিল স্বাধীন দেশে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। আসরে মোট সাতটি ম্যাচ হয় দুটি ভেন্যু ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। এ টুর্নামেন্টেও বাংলাদেশ পায়নি সাফল্যের দেখা। হেরেছে নিজেদের তিন ম্যাচের তিনটিতেই। 

১৯৯০-২০০০

প্রথম দিবা-রাত্রির ম্যাচ 
গত এক দশকে কিংবা তারও আগে থেকে বিশ্ব ক্রিকেটে দিবা-রাত্রির ম্যাচই দর্শকের চাহিদা তুঙ্গে। তবে বাংলাদেশ প্রথম দিবা-রাত্রির ম্যাচের সাক্ষী হয় ১৯৯০ সালে। ঢাকা স্টেডিয়ামে বিসিবি অনূর্ধ্ব-২৫ (তখনকার বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড) বিপক্ষে খেলে ডেকান ব্লুস। দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক সৈয়দ কিরমানি। কপিল দেবের ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যেও ছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। 

সার্ক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের প্রথম স্বাগতিক 
এ বছরের ডিসেম্বরে প্রথম সার্ক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের স্বাগতিক হয় বাংলাদেশ। কিন্তু বাবরি মসজিদ নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিশীলতায় লিগ পর্বেই বাতিল হয়ে যায় টুর্নামেন্টটি। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হারে স্বাগতিকেরা। ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে ৮ ওভার খেলা হওয়ার পরই ম্যাচসহ টুর্নামেন্ট বাতিল হয়। সার্কের পরের দুটি টুর্নামেন্টেরও স্বাগতিক ছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৪ সালে দ্বিতীয় টুর্নামেন্টে ফাইনালে ভারতের কাছে শিরোপা স্বপ্ন ভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। তৃতীয়টির শিরোপা যায় পাকিস্তানের ঘরে। 

আইসিসি ট্রফি জয়
এক-দুই-তিনবার নয়, ষষ্ঠবারের চেষ্টায় কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথমবার আইসিসি ট্রফি জেতার লালিত স্বপ্ন পূরণ হয় বাংলাদেশের। এর আগে টুকটাক সাফল্য পেলেও ক্রিকেটে পুরো জাতিকে এক করার এটাই প্রথম উপলক্ষ্য। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি গর্ডন গ্রিনিজের হাত ধরে বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের চেনানোর সেই শুরু। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিলাত কেলাব ক্লাব মাঠের গর্জন সেদিন পোঁছে গিয়েছিল টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। তবে তার চেয়েও বড় সুখবর বাংলাদেশ পেয়ে যায় সেমিফাইনালে। স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। 

পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রথম জয় পায় ২২ ম্যাচ হারের পর। ১৯৯৮ সালে মোহাম্মদ রফিকের অসাধারণ নৈপুণ্যে (৭৭ রান ও ৩ উইকেট) কেনিয়ার বিপক্ষে ভারতের মাটিতে জয় পায় বাংলাদেশ। আইসিসি ট্রফি জয়ের পর এই দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো। প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে বিশ্বকে নিজেদের আগমনী বার্তা জানান দিয়েছিল বাংলাদেশ। 

অভিষেক টেস্টে টসের আগ মুহূর্ত।আইসিসি পূর্ণ সদস্যের স্বীকৃতি ও টেস্ট অভিষেক 
প্রথম শ্রেণির জাতীয় ক্রিকেট লিগ দেশের ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে যুক্ত হওয়ার পর ২০০০ সালের ২৬ জুন ক্রিকেটের কুলীন জগতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। তবে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলতে পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হয়। একই বছরের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। অভিষেকে যাই ঘটে সেটাই রেকর্ড-এই প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে টস জেতেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। আরও একটি রেকর্ডেও নাম তোলেন দুর্জয়। দেশের প্রথম পাঁচ উইকেট শিকারী বোলার। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া টেস্ট সেঞ্চুরিতে প্রথমবার দলীয় ৪০০ রানের মাইলফলক ছোঁয়ে বাংলাদেশ। 

২০০১-২০১০
প্রথম টেস্ট খেলতে নামা আর টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম জয়ের অপেক্ষাটা বেশ দীর্ঘই বাংলাদেশের। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ম্যাচ সেরা হন বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র। এই দশকের প্রথম বিশ্বকাপটা (২০০৩) দুঃস্বপ্নের মতো কাটলেও পরের বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখে বাংলাদেশ। ভারতকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের মঞ্চে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় হাবিবুল বাশারের সুমনের দল। সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আরেকবার বিশ্বকে নিজেদের সক্ষমতার জানান দেয় বাংলাদেশ। এই বিশ্বকাপ দিয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের (সাকিব, তামিম, মুশফিক) পাদপ্রদীপের আলোয় আসার শুরু। ভারতের বিপক্ষে তিনজনই ফিফটি করেন। জহির খানকে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে তামিমের সেই বিখ্যাত বনে যাওয়া ছক্কা কিংবা কাভার দিয়ে মুনাফ প্যাটেলকে মুশফিকের সেই ড্রাইভ-সবই স্মরণীয় হয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। 

২০১১-বর্তমান

প্রথমবার বিশ্বকাপের স্বাগতিক 
২০১১ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের স্বাগতিক হয় বাংলাদেশ। জমকালো এক উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাঠের বাইরের আয়োজনেও নিজেদের সক্ষমতা দেখায় বাংলাদেশ। তবে মাঠের ক্রিকেটে মনে রাখার মতো মুহূর্ত খুব বেশি দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে প্রথমবার ইংল্যান্ডকে হারানো ছাড়া গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ। তবে গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে নকআউটে যাওয়া হয়নি। এই দশকে বাংলাদেশের আক্ষেপের গল্পগুলোর একটি ২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনাল। ভারত-শ্রীলঙ্কাকে বিদায় করে দিয়ে ফাইনানে জায়গা করে নেওয়া। সেখান থেকে পাকিস্তানের কাছে হৃদয় ভাঙার সেই হার। ২০১৪ সালে এককভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে পাওয়ার চেয়ে না পাওয়া আর হারানোর সমকক্ষ হয়ে থাকবে এই বিশ্বকাপ।

প্রথমবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে
২০১৪ বিশ্বকাপের হতাশা মুছতে পরের বছর ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অন্য রূপে হাজির হয় বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বপ্নের বিশ্বকাপ বলাই যায়। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনাল কিংবা ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেনের ‘বাংলাদেশ টাইগার্স হেভ নকড দ্য ইংলিশ লায়ন্স আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ’ দশকের সেরা প্রাপ্তি হয়ে থাকবে। পরের বছর ২০১৬ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হার কিংবা একই বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একই প্রতিপক্ষের কাছে এক রানের হার-সবই তীরে এসে তরী ডোবানোর গল্প হয়ে আছে। 

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর পতাকা হাতে সৌম্য-সাকিবদের উচ্ছ্বাস।২০১৫ বিশ্বকাপের পর আইসিসি টুর্নামেন্টের পর ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের আরেক ধাপ ওপরে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর অবিস্মরণীয় সেঞ্চুরিতে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে প্রথমবার সেমিফাইনাল খেলার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৫ বিশ্বকাপের পর নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সোনালি সময় পার করে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা আর ভারতকে সিরিজ হারায় মাশরাফি বিন মতুর্জার দল। ওয়ানডেতে ভালো করলেও এই সময়ে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস অনেক সমালোচনা হয়েছে। তবে ২০১৭ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সব সমালোচনার জবাব দেয় বাংলাদেশ। 

অন্য খেলার সঙ্গে তুলনায় ক্রিকেট বাংলাদেশকে অনেক কিছুই দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী পরিচয়, এশিয়ান গেমসের সোনা। কিন্তু সোনালি প্রজন্মের সারথি সাকিব, মাশরাফিরা একটি অতৃপ্তি রেখে দিচ্ছিলেন বারবার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো শিরোপা জিতে উৎসবের সুযোগ করে দিতে পারেননি তাঁরা। ২০০৯ ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২০১২ এশিয়া কাপ, ২০১৬ এশিয়া কাপ-সবই এতো কাছে তবু এতো দূরের গল্প হয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য। ছেলেদের অতৃপ্তি ঘোচানোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন মেয়েরা। রুমানা-আয়েশাদের হাত ধরে ২০১৮ সালের ১০ জুন এশিয়ার ক্রিকেটের হিমালয় সমদূরত্বে থাকা ভারতকে স্তব্ধ করে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম শিরোপা ঘরে তোলে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ১৯৯৭ সালে পরম আকাঙ্ক্ষিত প্রথম আইসিসি ট্রফি জিতেছিল বাংলাদেশ। কাকতালীয়ভাবে সেই কুয়ালামাপুরেই এল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা। ভারতকে ৩ উইকেটে হারানোর অন্যতম রুপকার রুমানা হন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়।

এশিয়া কাপের শিরোপা হাতে বাংলাদেশ নারী দল।বলা হয়ে থাকে, একটা সাফল্যে নাকি আরেকটা সাফল্যের দার উন্মুক্ত করে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়ানডে-টি টোয়েন্টি মিলিয়ে মোট ছয়টি ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। সবগুলোতে পরাজয়ের গ্লানির সঙ্গে একটা শিরোপার হাহাকার ততদিনে আক্ষেপ গাঁথায় রূপ নিয়েছে। ২০১৯ সালের ১৭ মে। অবশেষে সেই গোরো খোলে। বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। প্রথম শিরোপা জয়ের তারিখটাতে (১৭ মে) চাইলে আপনি স্মৃতিকাতর হতে পারেন। ২১ বছর আগে-পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট অনেকটা পথ পেরিয়ে এলেও স্মৃতিতে অম্লান থাকে সব প্রথমই। ১৯৯৮ সালের ১৭ মে এমনই একদিনে ভারতের হায়দরাবাদে প্রথম ওয়ানডে জেতে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপের ঠিক আগে আয়ারল্যান্ডে এই শিরোপা জিতে যতটা খুশি হয়েছিল বাংলাদেশ ততটাই হতাশ হতে হয়েছিল বিশ্বকাপে। আশার বেলুন ফুলিয়ে যাওয়া বিশ্বকাপটাই বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি হতাশায় ডুবিয়েছে। বিশ্বকাপের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল তো বটেই নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল নিয়ে ইংল্যান্ড থেকে একরাশ হতাশা নিয়ে ফেরে বাংলাদেশ। তবে ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে সাকিব বিশ্বকাপটা আপন আলোয় আলোকিত করেন এসেছিলেন। বলে-ব্যাটে সাকিবের ওমন পারফরম্যান্স বিশ্বকাপের ইতিহাসেই বিরল। 

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়।যুবাদের বিশ্বজয়
ওপরেই বলছিলাম, একটা সাফল্যে আরেকটা সাফল্যের দার উন্মুক্ত করে। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর শিরোপার দেখা পায়নি বাংলাদেশ। সেখানে গত তিন বছরে তিনটি শিরোপা জেতে। যার শেষটা আবার এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা সাফল্যে হিসেবে বিবেচিত হবে। নতুনের কেতন উড়িয়ে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ভারতকে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ৩ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা স্বাদ পান আকবর আলী-রাকিবুলরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারত ম্যাচে দেরি করায় বাফুফেকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মোরসালিনের গোলে ২২ বছর পর ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোরসালিনের গোলে ২২ বছর পর ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আয়োজন করে আরও একবার জরিমানার মুখে পড়ল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড দেরিতে শুরু হওয়ায় বাফুফেকে ১২৫০ ডলার জরিমানা করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। গত ১৭ ডিসেম্বর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এএফসির শৃঙ্খলা ও নীতি কমিটি।

গত ১৮ নভেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি নিয়মরক্ষার হলেও উন্মাদনার কমতি ছিল না। ২২ বছর পর ভারতকে হারানোর স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ৷ একমাত্র জয়সূচক গোলটি আসে ম্যাচের প্রথমার্ধে শেখ মোরসালিনের পা থেকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সময়মতো খেলা মাঠে গড়াতে পারেননি রেফারি।

একই কারণে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকেও এক হাজার ডলার জরিমানা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর এই অপরাধ দুবার করায় বাংলাদেশের জরিমানার অঙ্ক বেশি ধরা হয়েছে। এর আগে গত জুনে ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতে দুই মিনিট বিলম্ব হওয়ায় দেড় হাজার ডলার জরিমানা করা হয়।

এএফসির শৃঙ্খলা নীতিমালার ১১.৩ ধারা অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে দুই ফেডারেশনের। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ৩১ মার্চ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। সিঙ্গাপুর ইতোমধ্যে ১১ পয়েন্ট নিয়ে এশিয়ান কাপে খেলা নিশ্চিত করেছে। ৫ পয়েন্ট নিয়ে চার দলের মধ্যে ‘সি’ গ্রুপে বাংলাদেশের অবস্থান তিনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোস্তাফিজদের বিপক্ষে খরুচে বোলিংয়ে তাসকিনের ৩ উইকেট

ক্রীড়া ডেস্ক    
মোস্তাফিজুর রহমানের দু্বাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ৪০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ছবি: ফেসবুক
মোস্তাফিজুর রহমানের দু্বাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ৪০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ছবি: ফেসবুক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক লিগ টি-টোয়েন্টি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ—বাংলাদেশের তিন তারকা ক্রিকেটার খেলছেন এখন আমিরাতের এই লিগে। কদিন আগে সাকিব-মোস্তাফিজের একটি ছবি ‘দ্য বাংলা’ ক্যাপশনে পোস্ট করেছিল সাকিবের দল এমআই এমিরেটস। আজ দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছেন তাসকিন-মোস্তাফিজ।

বাংলাদেশের তিন তারকা সাকিব, তাসকিন, মোস্তাফিজ এবারই প্রথমবারের মতো আইএল টি-টোয়েন্টিতে খেলছেন। এই তিন বাংলাদেশির মধ্যে মোস্তাফিজ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিচ্ছেন। এদিকে তাসকিন উইকেট তেমন পাচ্ছেন না। উপরন্তু মুক্ত হস্তে রান বিলিয়ে দিচ্ছেন। দুবাইয়ে আজ মোস্তাফিজের দুবাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে তাসকিন ৩ উইকেট হলেও ১০ ইকোনমিতে বোলিং করেছেন।

দুবাই ক্যাপিটালসের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শারজা ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। দলীয় ৩ রানে ভেঙে যায় দুবাই ক্যাপিটালসের উদ্বোধনী জুটি। ইনিংসের পঞ্চম বলে দুবাইয়ের ওপেনার শায়ান জাহাঙ্গীরকে (১) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রাজা। দ্বিতীয় উইকেটে এরপর ৩১ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন জর্ডান কক্স ও সেদিকউল্লাহ আতাল। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে কক্সকে (২৮) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন।

দুবাই ক্যাপিটালসের ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৭ রানের জুটি গড়েছেন কক্স ও আতাল। আরেকটি চল্লিশোর্ধ্ব রানের জুটিতেও অবদান রয়েছে আতালের। চতুর্থ উইকেটে আফগানিস্তান দলের সতীর্থ মোহাম্মদ নবির সঙ্গে ২৬ বলে ৪২ রানের জুটি গড়তে অবদান রেখেছেন আতাল। ওপেনিংয়ে নামা আতাল আউট হয়েছেন পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আতালের উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। ৪৪ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৬ রানের ইনিংস খেলেছেন আফগান এই ব্যাটার। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮০ রান করে দুবাই ক্যাপিটালস। দুবাইয়ের ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৬ রান এসেছে আতালের ব্যাট থেকে।

শারজা ওয়ারিয়র্সের তাসকিন ৪ ওভারে ৪০ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। যার মধ্যে ইনিংসের শেষ ওভারে ১২ রান খরচ করে পেয়েছেন ১ উইকেট। একটি করে উইকেট পেয়েছেন রাজা, মাথিসা পাতিরানা ও আদিল রশিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কলম্বিয়ায় ফুটবল ম্যাচে সহিংসতায় আহত ৫৯

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৭
কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫৯ জন আহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি
কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫৯ জন আহত হয়েছেন। ছবি: এএফপি

লাতিন আমেরিকার ফুটবলে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকাতেই ঘটে মারামারির ঘটনা। স্থানীয় টুর্নামেন্টে সহিংসতার কারণে তো প্রায়ই খবরের শিরোনামে আসে লাতিন আমেরিকার ফুটবল। কলম্বিয়ায় এক ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরের আতানাসিও জিরারদোত স্টেডিয়ামে পরশু রাতে কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হয়েছিল দেপোর্তিভো ইন্দিপেন্দিয়েন্তে-আতলেতিকো ন্যাশনাল। ১-০ গোলে আতলেতিকো ন্যাশনালের জয়ের পরই ভক্ত-সমর্থকেরা মাঠে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করেন। আতশবাজি-আগুন নিয়ে এমনভাবে হামলা চালিয়েছিলেন ভক্তরা, যেটা সামাল দিতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে। সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কলম্বিয়ার স্থানীয় পত্রিকা এল কলোম্বিয়ানোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মাঠের কিছু অংশে আগুন ধরানো হয়েছে। উপড়ে ফেলা হয়েছে অনেক আসন। গ্যালারিতে আতশবাজির ধোঁয়ার কারণে ম্যাচ শুরু হতেও দেরি হয় ১৪ মিনিট।

মেডেলিনের মেয়র ফেদেরিকো গুতিয়েরেস কোপা কলম্বিয়ার ফাইনালে সহিংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। গুতিয়েরেস বলেন, ‘যারা স্টেডিয়ামে হামলা, ধ্বংসযজ্ঞ বা ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে, তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। সবাই মাঠে বসে খেলা উপভোগ করতে পারবেন। হাতে গোনা কয়েকজনের জন্য পরিবেশ নষ্ট হবে, এমনটা তো হতে দেওয়া যাবে না। বছরের পর বছর ধরে আমরা পুরো লাতিন আমেরিকায় শান্তিপূর্ণ ফুটবলের মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি।’ পুলিশ কমান্ডার উইলিয়াম কাস্তানো বলেন, স্টেডিয়ামে দর্শকদের কাছ থেকে অস্ত্র ও আতশবাজি জব্দ করা হয়েছে। ১২০ কেজির বেশি পাইরোটেকনিক (বিস্ফোরণের প্রভাব তৈরির মতো রাসায়নিক বস্তু) ছিল সেখানে।

দেপোর্তিভো ইন্দিপেন্দিয়েন্তে-আতলেতিকো ন্যাশনাল কলম্বিয়া কাপ ফাইনালের প্রথম লেগ গোলশূন্য ড্র হয়েছে। পরশু রাতে দ্বিতীয় লেগটা হয়ে যায় শিরোপা নির্ধারণী। দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ গোলে শিরোপা জিতেছে আতলেতিকো ন্যাশনাল। কিন্তু মেডেলিন শহরের আতানাসিও জিরারদোত স্টেডিয়ামে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনায় আতলেতিকো ন্যাশনালের ম্যাচপরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, শিরোপা নিয়ে উদ্‌যাপন—কিছুই করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে সোনার লড়াইয়ে বাংলাদেশের জুমার-ঊর্মি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মিশ্র দ্বৈতে ফাইনালে উঠেছেন জুমার-ঊর্মি। ছবি: ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন
মিশ্র দ্বৈতে ফাইনালে উঠেছেন জুমার-ঊর্মি। ছবি: ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন

ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে মিশ্র দ্বৈত বিভাগে ফাইনালে উঠেছেন বাংলাদেশের আল আমিন জুমার ও ঊর্মি আক্তার। আজ সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের কুনলাপাথ লোথোং ও সারিসা জানপেং জুটিকে হারিয়েছেন ২১-১১ ও ২১-১৪ গেমে। পদক তো নিশ্চিত হয়েছে আগে, জুমার-ঊর্মি এবার দেখাচ্ছেন সোনা জয়ের ঝিলিকও। ফাইনালে কাল মালয়েশিয়ার দাতু আনিফ ইসাক দাতু আসরা ও ক্লারিসা সানের মুখোমুখি হবেন তারা।

পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন ইনডোর স্টেডিয়ামে সকালটাও অন্যরকম ছিল জুমার-ঊর্মির। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের স্বস্তিক মাথারাসান-কীর্তি মাঞ্চালাকে তিন সেটের লড়াইয়ে হারিয়েছেন ২১-১৬, ১৯-২১ ও ২১-১৮ গেমে। প্রথম সেট খানিকটা সহজে জিতলেও দ্বিতীয় সেটে হারতে হয়। তৃতীয় সেটে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে নিশ্চিত করেন ব্রোঞ্জ পদক।

রাতে সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের জুটিকে পাত্তাই দিলেন না জুমার-ঊর্মি। প্রথম সেটে একটা সময় অবশ্য পিছিয়ে ছিলেন ৫-৩ পয়েন্টে। সেখান থেকে অনবরত পয়েন্ট তুলতে থাকেন জুমার। শেষ দিকে ঊর্মিও দেখান তাঁর দাপট। দ্বিতীয় সেটে শুরুতেই আধিপত্য দেখাতে থাকে বাংলাদেশের জুটি। নিয়ে নেন বড় ব্যবধানের লিড। যা পরে আর ছোট করতে পারেননি থাইল্যান্ডের শাটলাররা।

ফাইনালে উঠে জুমার বলেন, ‘ফাইনাল নিয়ে প্রত্যাশা অবশ্যই ভালো খেলার চেষ্টা করব। বাকিটা আল্লাহ ভরসা, জানিনা কি হবে। দেখা যাক। আগে যে রেজাল্টগুলো আমরা আশাও করতে পারতাম না, এখন বাংলাদেশ অন্যান্য বারের মতো হচ্ছে না যে মানে বাংলাদেশ আসছে আর হেরে যাচ্ছে—এরকম হচ্ছে না। প্রত্যেকটা টিমই আমাদের লড়াই করে হেরেছে।’

জুমারের সঙ্গে বোঝাপড়া নিয়ে ঊর্মি বলেন, ‘সকালেই আমি বলেছিলাম, আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ফাইনাল নিশ্চিত করেছি। এবার সোনা জিততে চাই। জুমারের সঙ্গে ছয়-সাত বছর ধরে জুটি বেঁধে খেলছি। যেহেতু অনেকদিন ধরে খেলছি, সেহেতু আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো। আমরা এর আগেও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পদক জিতেছি।’

এর আগে একক ইভেন্টে কেবল হতাশাই উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের শাটলাররা। দ্বৈতে গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে কেউই জয়ের হাসি হাসতে পারেননি। মিশ্র দ্বৈতে জুমার-ঊর্মি ফুটলেন আশার আলো হয়ে। রুপা নিশ্চিত করে লক্ষ্য এবার সোনার পদক গলায় ঝুলানো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত