আট মিনিটের ঝড়ে দারুণ জয় বসুন্ধরার 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

কিংস অ্যারেনায় সাড়ে ৬ হাজার দর্শক দম বন্ধ করে অপেক্ষায়। ম্যাচ শেষ হতে বাকি আর ১০ মিনিট। মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের বিপক্ষে তখন ১-০ গোলে পিছিয়ে স্বাগতিক বসুন্ধরা কিংস। নিজেদের মাঠে প্রথমবারের মতো হারের শঙ্কায় কাঁপছে অস্কার ব্রুজোনের দল।

বারবার পিছিয়ে পড়েও ফিরে আসার মানসিকতায় নিজেদের মাঠে কখনো হারেনি বসুন্ধরা। কাল যখন প্রথম হার চোখ রাঙাচ্ছে তখনই সেরাটা দিয়ে ফিরল বাংলাদেশের লিগ চ্যাম্পিয়নরা। বোবুরবেগ ইয়ুলদাশোভ ও মিগেল দামাশিনার কল্যাণে আট মিনিটের ঝড়ে দুই গোলে মাজিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে এএফসি কাপে প্রথমবারের মতো আঞ্চলিক সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখল অস্কার ব্রুজোনের দল।

দারুণ এক জয়ে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে টেবিলের শীর্ষেই থাকল বসুন্ধরা। ৫ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১০। ১১ ডিসেম্বর ভুবনেশ্বরে গিয়ে ওডিশা এফসির বিপক্ষে খেলবে ব্রুজোনের দল। সেই ম্যাচে জয় পেলেই প্রথমবারের মতো প্রথমবারের মতো আঞ্চলিক সেমিফাইনাল খেলবে বসুন্ধরা।

স্বস্তির এই জয় পেতে অবশ্য বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়েছে বসুন্ধরাকে। চোটের কারণে বসুন্ধরার আক্রমণের সেরা অস্ত্র রবসন রবিনহো যে খেলবেন না সেটা জানাই ছিল। ম্যাচে ছিলেন না চার্লস দিদিয়েরও। লেবানন ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে গোল করা শেখ মোরসালিনকে শুরুতে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন কোচ অস্কার ব্রুজোনও। ম্যাচে রবসনের অভাবটা প্রতিনিয়তই টের পেল বসুন্ধরা। ২ ও ৩ মিনিটে পরপর দুইবার বক্সে ঢুকেও ফিনিশিংয়ের অভাবে ভুগলেন রবসনের জায়গায় খেলতে নামা এমফোন উদোহ ও দরিয়েলতন গোমেজ। ৭ মিনিটে মালদ্বীপ রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে বক্সে আরেকবার ঢুকে পড়েছিলেন দরিয়েলতন গোমেজ। নিজে শট নিয়ে বল বাইরে মেরে দলকে গোল বঞ্চিত করেন এই ব্রাজিলিয়ান।

শেষ কয়েক মিনিটের ঝড়ে মাজিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও জয় পেয়েছে বসুন্ধরা কিংস।বসুন্ধরার আক্রমণাত্মক ফুটবলের ছন্দ থমকে যায় ১০ মিনিটে গোলরক্ষক মেহেদি হাসান শ্রাবণের ভুলে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের জার্সিতে লেবাননের বিপক্ষে ভুল করেছিলেন শ্রাবণ। বসুন্ধরার হয়ে ভুল করলেন আজকেও।

বক্সের মুখে তারিক কাজীর ব্যাকপাসে ভুলে মাজিয়া মিডফিল্ডার ব্রানিমির জোচিচের পায়ে বল তুলে দেন শ্রাবণ। জোচিচের শট বোবুরবেকের পায়ে লেগে বল পান মাজিয়ার আরেক মিডফিল্ডার রেগান ওবেং। বসুন্ধরার দর্শকদের স্তব্ধ করে বল জালে জড়ান রেগান।

এই গোলে প্রথমার্ধে নিজেদের খেলার ধার হারিয়ে ফেলল বসুন্ধরা। দুইবার মাজিয়া বলও জড়াল জালে। তবে হ্যান্ডবল আর অফসাইডে গোল দেননি রেফারি।

অগোছাল বসুন্ধরার সামনে তবু সুযোগ এসেছিল। ৪২ মিনিটে মাজিয়ার গোলমুখে রাকিব হোসেনের ক্রসে বল এমফোন উদোহর পায়ে যাওয়ার আগেই ফেরান মাজিয়া ডিফেন্ডার। কর্নার থেকে হেডে গোলের সুযোগ থাকলেও এমফোন নষ্ট করেন সেই সুযোগও। অতিরিক্ত সময়ে রাকিবের শট ফেরান হুসেন শরীফ।

বিরতি থেকে ফিরেই দারুণ সুযোগ আসে কিংসের সামনে কিন্তু আবারও ব্যর্থ এমফন উদোহ। মিগেলের বাড়ানো পাস বক্সে পেয়ে যান এমফন। দেখে শুনে শটও নিয়েছিলেন কিন্তু তা ফিস্ট করে ফেরান মাজিয়া গোলরক্ষক। ৪৮ মিনিটে বিশ্বনাথ ঘোষেরও ফেরান তিনি।

৫১ মিনিটে বসুন্ধরার দারুণ এক আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন মাজিয়া গোলরক্ষক হুসেন শরীফ। ডান প্রান্ত ধরে এমফোন উদোহর পাসে গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন বিশ্ব। শটও করলেন কিন্তু বল জালে জড়াতে পারেননি বসুন্ধরা ডিফেন্ডার। ৬৮ মিনিটে মিগেল দামাশিনার ফ্রিকিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট।

রাকিব হোসেনের বদলি হয়ে মাঠে নেমেছিলেন লেবানন ম্যাচে বাংলাদেশের নায়ক শেখ মোরসালিন। সুযোগ পেয়েছিলেন দলকে সমতায় ফেরানোর। ৭৮ মিনিটে বোবুরবেগের পাস থেকে মোরসালিনের দুর্বল শট ফেরান মাজিয়া গোলরক্ষক।

নিজে গোল না পেলেও ৮০ মিনিটে বসুন্ধরাকে সমতায় ফেরানোর পরোক্ষ অবদান মোরসালিনের। তার কর্নার থেকে উজবেক ডিফেন্ডার বোবুরবেগ ইয়ুলদাশোভের হেডে বল মাজিয়া গোলরক্ষকের পায়ের নিচ দিয়ে জড়ায় জালে। শেষ সময়ে সমতায় বসুন্ধরা।

আট মিনিট পরেই ৩০ গজ দূর থেকে অসাধারণ এক গোলে বসুন্ধরাকে জয় এনে দেন মিগেল দামাশিনা। মাঝমাঠ থেকে দরিয়েলতনকে বল বাড়ান মিগেল, ব্যাক পাসে বল ফিরিয়ে দেন দরিয়েলতন। কাউকে বল না দিয়ে নিজেই বাঁ পায়ে শট নেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। তার বাঁ পায়ের শট রংধনুর মতো বেঁকে গিয়ে মাজিয়া গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জড়ায় জালে। গোলের উল্লাস ডাগআউট ছেড়ে এসে উল্লাসে মাতেন বসুন্ধরা কোচ অস্কার ব্রুজোন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত