এগিয়ে গিয়েও আবারও বিধ্বস্ত আবাহনী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৩, ২২: ০৫
Thumbnail image

কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্টের গোলের পর মনে হচ্ছিল এবার বুঝি ইতিহাস পাল্টাতে চলেছে আবাহনী লিমিটেড। গ্রানাডিয়ান ফরোয়ার্ডের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর মোহনবাগানের বিপক্ষে পরিসংখ্যানকেও খানিকটা চোখ রাঙিয়েছিল বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দলটা। তবে পরিসংখ্যান সঙ্গ দিল মোহনবাগানকেই। দুই মিনিটের ঝড়ে মোহনবাগানের বিপক্ষে আবারও বিধ্বস্ত হয়ে এএফসি কাপের মূল পর্বে ওঠা হলো না মারিও লেমোসের দলের। 

গত বছর এএফসি কাপের প্লেঅফে মোহনবাগানের আছে ৩-১ গোলে হেরে কলকাতা থেকে ফিরেছিল আবাহনী। সেই ম্যাচের ভেন্যু ছিল সল্টলেকের যুব ভারতী স্টেডিয়াম। সেই একই মাঠে আজও এএফসি কাপের প্লেঅফে ৩-১ গোলে কুপোকাত ২০১৯ সালে এই আসরে জোনাল সেমিফাইনাল খেলা আবাহনী। 

এই হারে ২০২০ সালের পর এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে খেলার স্বপ্নটাও আবারও অপূর্ণ রয়ে গেল মারিও লেমোসের দলের। মোহনবাগানের বিপক্ষে জয়হীন থাকার ইতিহাসটাকেও হলো না পাল্টানো। সব মিলিয়ে মেরিনার্সদের কাছে চার ম্যাচের তিনটিতেই বড় ব্যবধানে হারের বৃত্তে ঢুকে গেল আবাহনী। 

হারের ম্যাচে শুরুটা অন্যরকম বার্তা দিয়েই শুরু করেছিল আবাহনী। খেলার ১৬ মিনিট পর্যন্ত মনে হচ্ছিল আবাহনীকে সুযোগই দিতে চায় না মোহনবাগান। স্বাগতিকদের আক্রমণাত্মক ফুটবলে কোণঠাসা হয়ে থাকা আকাশি-নীলরা হঠাৎ পাল্টা আক্রমণে ভড়কে দেওয়ার চেষ্টায় ছিল। সে রকম একটা প্রচেষ্টা থেকেই এগিয়ে যাওয়া দলটার। 

যুব ভারতী ঠাসা মোহনবাগানের সমর্থকদের স্তব্ধ করে দিয়ে ১৭ মিনিটে আবাহনীকে এগিয়ে নেয় কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট। গোলটা অবশ্য উপহার পাওয়ার মতোই। বড় ভুল মোহনবাগান গোলরক্ষক বিশাল কাইতের। আবাহনীতে ধারে আসা মুজাফফরজন মুজাফফারভের কর্নার বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন মোহনবাগানের এক ফুটবলার। পোস্টে শট নেন আবাহনীর ডেভিড ইফেগুই। ডেভিডের নির্বিষ সেই শটে বল গ্লাভসে জমাতে পারেননি মোহনবাগান গোলরক্ষক, গ্লাভস ফসকে যায় বল। এমন একটা সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন স্টুয়ার্ট, আলতো খোঁচায় বল জড়িয়ে দেন জালে। 

গোলটা যেন তাতিয়ে দিল মোহনবাগানকে। একের পর এক আক্রমণে আবাহনীর রক্ষণে হামলে পড়েন স্বাগতিক ক্লাবের ফুটবলাররা। ৩২ মিনিটে সুযোগও এসেছিল স্বাগতিকদের সামনে। আবাহনীর রক্ষণ ভেঙে বক্সে ঢুকে পড়েন সাহাল আবদুস সামাদ। তাঁর কোনাকুনি শট কর্নারে ঠেকান আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল। 

আক্রমণ ঠেকাতে ঠেকাতে ক্লান্ত হয়ে যে ভুল নিয়মিত করেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা, সেই ভুলটিই করে বসলেন সুশান্ত ত্রিপুরা। ৩৫ মিনিটে বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে ফাউল করে বসেন লিস্টন কোলাচোকে। রেফারির ফাউলের বাঁশি বাজানোর সঙ্গে হলুদ কার্ডও দেখান সুশান্তকে। দুই মিনিট পর স্পট কিক থেকে মেরিনার্সদের সমতায় ফেরান অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা ফরোয়ার্ড জেসন কামিন্স। 

সমতায় ফিরে মোহনবাগানে এল স্বস্তি, গতি বাড়ল আক্রমণেও। 
জেসন কামিন্স আবারও প্রায় বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন আবাহনীকে। ৪৩ মিনিটে শুভাশিস বোসের ক্রস থেকে কামিন্সের ছোঁয়ায় বল পোস্টে না থাকায় রক্ষা আবাহনীর। 

অবশ্য প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ সুযোগ নষ্ট করেছে আবাহনীও। মুজাফফারভের ফ্রিকিক থেকে মিলাদ শেখের হেড মাটি কামড়ে আটকায় পোস্টে। ফাঁকাতেই ছিলেন আবাহনীর মিসরীয় ডিফেন্ডার ইউসেফ মোহাম্মেদ, বল তার পায়ে থাকলেই দ্বিতীয়বারে মতো এগিয়ে যেতে পারত আকাশি-নীলরা। 

দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণে মোহনবাগানের দাপট। মেরিনার্সদের একের পর এক আক্রমণে বিপর্যস্ত আবাহনী এবার পুরোপুরি ছন্নছাড়া। 
দুই মিনিটের ঝড়ে হজম করে দুই গোল। ৫৮ মিনিটে মোহনবাগানের দ্বিতীয় গোলটি আবাহনীই উপহার দিয়েছে স্বাগতিকদের। বক্সের বাইরে থেকে লিস্টন কোলাচোর বাড়ানো বলে বুদ্ধিদীপ্ত পাস বাড়ান জেসন কামিন্স। কামিন্সের পাস থেকে হুগো বুমোর ক্রস বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো নিজেদের জালে বল ঠেলে দেন মিলাদ শেখ। 

পিছিয়ে পড়া আবাহনীকে ফেরার সুযোগ না দিয়ে দুই মিনিট পরেই তৃতীয় গোল আদায় করে নেয় মোহনবাগান। এই গোলেরও উৎস ছিলেন লিস্টন কোলাচো। ৬০ মিনিটে তার ক্রসে পা ছুঁয়ে বল পোস্টে ঠেলে দেন আলবেনিয়ান ফরোয়ার্ড আরমান্দো সাদিকু। আর এই গোলে আবাহনীর ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা সেখানেই শেষ! বাকিটা সময় আক্রমণে বারবার উঠলেও ব্যবধান কমানোর মতো আর কোনো সুযোগই পায়নি আকাশি-নীলরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত