রোনালদোদের কাঁদিয়ে মরক্কোর রূপকথা 

ক্রীড়া ডেস্ক
Thumbnail image

কান্না তাঁর বাঁধ মানলো না। চোখের পানি দেখাতে চাননি বলে সবার আগে চলে গেলেন ড্রেসিং রুমে। টানেলে সারাটা পথ চোখ গড়িয়ে নামল অশ্রু। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কেঁদে কাঁদালেন সবাইকে। অপরপ্রান্তে তখন ইতিহাস গড়ার আনন্দে উদযাপনে ব্যস্ত মরক্কো।

পর্তুগালের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে মরক্কোর সামনে হাতছানি দিচ্ছিল ইতিহাস গড়ার। পর্তুগিজদের হারাতে পারলেই প্রথম আরব দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠবে মরক্কো। ম্যাচের প্রথমার্ধে হেডে দারুণ একটি গোল করে ইতিহাসের পাতায় মরক্কোর নাম লিখে দিয়েছেন ইউসেফ আন-নাসেরি। তাঁর গোলেই ১-০ গোলে পর্তুগালকে বিদায় করে সেমিফাইনালে মরক্কো। এই হারে শেষ হয়ে গেল রোনালদোর বিশ্বকাপ জয়ের অভিযান। ৩৮ বছর বয়সী মহাতারকার জীবনে বিশ্বকাপ হয়ে রইল আজন্ম আক্ষেপের নাম।

আল-থুমামা স্টেডিয়ামে পর্তুগাল-মরক্কো দুই দলই খেলেছে ৪-৩-৩ ফরমেশনে। নিজের শেষ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালেও শুরুর একাদশে জায়গা হয়নি রোনালদোর। পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোস আগেই বলেছেন, ম্যাচটি কঠিন হবে। মরক্কোর ফরমেশনে তা আরও স্পষ্ট। শুরু থেকেই সমানতালে লড়াই শুরু করে অ্যাটলাস সিংহরা।

প্রথমার্ধে পর্তুগালের দখলে বেশি সময় বল থাকলেও আক্রমণে এগিয়ে ছিল মরক্কো। আশরাফ হাকিমি-হাকিম জিয়েশদের আক্রমণে দিশেহারা পর্তুগালের রক্ষণ।

তবে ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় পর্তুগাল। ডি-বক্সের বাইরে ফাউল থেকে পাওয়া ফ্রি-কিক নেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ, হোয়াও ফেলিক্সের হেড কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন মরোক্কান গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু। তিন মিনিট পর হাকিম জিয়েশের কর্নার কিকে ইউসেফ আন নাসেরি হেড পর্তুগালের ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ১৮ মিনিটে জিয়েশের জোরাল শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ২৫ মিনিটে মরক্কো ডিফেন্ডার জাওয়াদ এল ইয়ামিকের হেডও ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।

৩১ মিনিটে বক্সের বামপ্রান্ত থেকে নেওয়া ফেলিক্সের জোরালো শট ইয়ামিকের গায়ে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিন মিনিট পর মরক্কোর দলীয় আক্রমণে স্ট্রাইকার সোফিয়ান বাউফলের শট গ্লাভসবন্দী করেন পর্তুগালের গোলরক্ষর দিয়োগো কস্তা।

মরক্কো এগিয়ে যায় ৪২ মিনিটে। বামপ্রান্ত থেকে লম্বা করে বাড়ানো বল লাফিয়ে ওঠে দুর্দান্ত হেডে পর্তুগালের জালে জড়ান ইউসুফ আন-নেসরি।

বিরতির পর নেমেই আক্রমণে ওঠে মরক্কো। ৪৮ মিনিটে একাই বল নিয়ে পর্তুগালের দুর্গে আক্রমণ করেন হাকিমি। কিন্তু ডি বক্সের সামনে তাঁকে ফাউল করেন পেপে। আর্জেন্টাইন রেফারি ফাকুন্দো তেলো ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজান। জিয়েশের দারুণ শট দক্ষতার সঙ্গে ঠেকিয়ে দেন কস্তা। গুনে ধরা আক্রমণে ধার দিতে ৫১ মিনিটে রুবেন নেভেসকে উঠিয়ে রোনালদোকে মাঠে নামান সাস্তোস। এর পর বার বার আক্রমণ হানে পর্তুগিজরা। 

 ৫৪ মিনিটি দিয়োগো দালোত আক্রমণে গিয়েও মরক্কোর গোলরক্ষকের হাতে বল তুলে দেন। ৫৮ মিনিটের গনসালো রামোসের হেডে পোস্টের বাইরে দিয়ে যায় বল। ৬৪ মিনিটে ব্রুনোর আরও একটি শট ক্রসবার ঘেঁষে ওপর দিয়ে চলে যায়। ৬৮ মিনিটেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা। ৮২ মিনিটে ফেলিক্সের একটি শটও চলে যায় ওপর দিয়ে।

দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ম্যাচের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন মরক্কোর স্ট্রাইকার ওয়ালিদ শেদিরা। তবুও আর কোনো বিপদ গড়তে দেননি সতীর্থরা।

১৯৯০ বিশ্বকাপে আফ্রিকার হয়ে প্রথমবার কোয়ার্টারে ওঠে ক্যামেরুন। ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে আয়োজিত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে সেনেগাল। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে শেষ আটে উঠেছিল ঘানা। এই বিশ্বকাপে ওয়ালিদ রেগরাগির অধীনে সেমিফাইনালে উঠল মরক্কো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত