সেই দশরথ রঙ্গশালায় সাবিনাদের জয়ধ্বনি

জহির উদ্দিন মিশু,ঢাকা
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০০: ৫৮
গোলের পর জয়োচ্ছ্বাস ঋতুপর্ণা-শামসুন্নাহারদের। গতকাল নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ফাইনালে শেষেও এই উচ্ছ্বাস ছিল বাংলার মেয়েদের। ছবি: বাফুফের সৌজন্যে

‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’—সময় এখন সাবিনাদের জয়ধ্বনি করার।

দেশের অন্যান্য খেলায় যখন হার আর হার, যখন হতাশার সাগরে ভাসছে ক্রিকেটও। তখন মেয়েদের ফুটবল ভেসেছে সাফল্যের উচ্ছ্বাসে। এই উল্লাসে বাংলাদেশ ভেসেছে ২০২২ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও। গতকাল বুধবার সেই সাফল্যেরই পুনরাবৃত্তি কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায়। সাফের এভারেস্টে আবারও উঠলেন সাবিনারা। নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিজেদের কাছেই রাখলেন সাবিনা-তহুরারা।

কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় বোধ হয় শিল্পীর ভূমিকায় হাজির হন ঋতুপর্ণা চাকমা। টুর্নামেন্টজুড়ে দ্যুতি ছড়ানো এই বাংলাদেশি ফরোয়ার্ড ফাইনালে বলকে যেন রংতুলির মতোই ব্যবহার করেছেন।

মনের ক্যানভাসকে যে স্বপ্ন দিয়ে সাজিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই গতকাল বল পায়ে আঁকাবুঁকি করেন টুর্নামেন্টসেরা হওয়া ফরোয়ার্ড। ম্যাচের ৮১ মিনিটে চোখধাঁধানো গোলে ১-১ সমতায় থাকা ম্যাচটির সব আলো নিজের করে নিলেন ঋতুপর্ণা। আর ঘুরেফিরে একই দুর্গে ডোবে নেপালের তরি। যেখানে এর আগেও পাঁচবার ডুবেছিল তারা। বলা যায় সাফের ফাইনাল এখন নেপালিদের কাছে অভিশপ্ত এক লড়াই! এক-দুবার নয়, এ নিয়ে ছয়বার ফাইনাল খেলেছে দলটি। কিন্তু একবারও স্বপ্নের শিরোপাটা ছোঁয়া যায়নি। সেখানে তিনবার ফাইনাল খেলে দুবারই চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। আফসোস, আক্ষেপ আর না পাওয়ার বেদনা বুকে নিয়েই স্টেডিয়াম থেকে ঘরে ফিরতে হলো নেপালি দর্শকদের। অন্যদিকে এক আকাশ ভালোবাসা আর প্রাপ্তির মালা গলায় নিয়ে আজ বীরের বেশে দেশে ফিরছেন পিটার বাটলারের শিষ্যরা। তাঁদের জন্য এই ইংলিশ কোচেরও গর্ব হচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আজকের পত্রিকাকে বাটলার বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি এত বাধার সম্মুখীন হয়েছি যে বলে শেষ করা যাবে না। তবে সবকিছু মেনে এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। সত্যি এদের (বাংলাদেশ দল) নিয়ে এখন আমার গর্ব হয়।’

শুধু পিটার নয়, সারা দেশ এখন মেয়েদের নিয়ে গর্ব করতে পারে। টানা দুবার সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। যেখানে একটা সময় ছিল ভারতের দাপট। যারা পাঁচবার এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই ভারতের দুর্গে হানা দিল বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে তাদের দম্ভ চূর্ণ করে ফাইনালে লিখল দারুণ এক ইতিহাস। যে ইতিহাসের পরতে পরতে থাকবে মনিকা-মারিয়াদেরও নাম। শুরুটা অবশ্য মনিকাই করেছিলেন। ৫২ মিনিটে জোরালো এক আক্রমণে নেপালের রক্ষণ তছনছ করে দেয় বাংলাদেশ। ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে চমৎকারভাবে ড্রিবল করে আলতো শটে বল তহুরা খাতুনকে দেন। তহুরাকে ততক্ষণে ঘিরে ধরেন নেপালের দুজন।

কিন্তু বিচক্ষণতার সঙ্গে তহুরাও বলটা মনিকার উদ্দেশে সামনে বাড়িয়ে দেন। এমন সুযোগ কে হাতছাড়া করে! মাথা ঠান্ডা রেখে নিখুঁতভাবে বলটা নেপালের জালে পাঠিয়ে দেন মনিকা। যদিও সমতায় ফিরতে বেশি সময় নেয়নি নেপাল। তবে ঋতুপর্ণার মুগ্ধ করা ফিনিশিংয়ে তাদের স্বপ্নের জলাঞ্জলি আর বাংলাদেশের উল্লাসধ্বনি! ৮১ মিনিটে বাংলাদেশকে জয়সূচক গোলটি উপহার দেন এই ফরোয়ার্ড। তাতেই নেপালকে আশ্চর্য নৈঃশব্দ্যে ডুবিয়ে বাংলাদেশ মাতে জয়োৎসবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত