কারখানার শ্রমিক থেকে ফুটবলের বড় তারকা

ক্রীড়া ডেস্ক
Thumbnail image

ঢাকা: সময় কাকে কখন কোথায় নিয়ে যাবে, কেউ কি আগে থেকে বলতে পারবে? সময় এমনই অদ্ভুত! কারখানায় কাজ করা জেমি ভার্ডিও কি কখনো ভেবেছিলেন একদিন ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তিনি খেলবেন?

কল্পনা আসলে কখনো কখনো বাস্তবতাকেও হার মানায়! এ প্রবাদ মেনেই যেন ৩৪ বছর বয়সী ভার্ডির হাত ধরেই কদিন আগে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো এফএ কাপের শিরোপা জিতেছে লেস্টার সিটি।

৫২ বছর আগে এফএ কাপের ফাইনাল খেলেছিল লেস্টার। এর আগে তিনবার ফাইনাল খেলেও শিরোপার স্বাদ পায়নি ফক্সেসরা। অবশেষে গত শনিবার ওয়েম্বলিতে চেলসিকে ১-০ গোলে হারিয়ে রূপকথা লিখেছে লেস্টার। আর সেই রূপকথার প্রধান চরিত্রের নাম জেমি ভার্ডি। ভার্ডিও যে ইতিহাস গড়েই লেস্টারকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন। ২০০৭ সালে স্টকব্রিজে এফএ কাপ অভিষেকের পর প্রথম ফুটবলার হিসেবে খেলে ফেললেন এফএ কাপের সবকটি রাউন্ডেই।

দরিদ্র এক পরিবারে জন্ম নেওয়া ভার্ডির গল্পটা এমন নাও হতে পারত। ইংল্যান্ডের শেফিল্ড শহরের এক ক্রেন ড্রাইভারের ছেলে আর কত দূরই–বা যেতে পারতেন? কিন্তু জেমি ভার্ডি যে অন্য ধাতুতে গড়া। বারবার প্রতিবন্ধকতা আসার পরও স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানো থামাননি। নিজেই নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ফিরে এসেছেন বারবার।

ভার্ডি প্রথম ধাক্কা খান স্থানীয় ক্লাব ‘শেফিল্ড উইডন্যসড’ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার পর। পড়াশোনায় অমনোযোগী ছেলেটার শৈশব–কৈশোর সবটুকু জুড়েই ছিল ফুটবল। প্রত্যাখ্যাত হওয়াটা ভার্ডির মনোবল ভেঙে দেয়। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে নিরুপায় ভার্ডি স্বপ্নের উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলেন। জীবনে আরও অন্ধকার নেমে এল তাঁর বাবা-মা যখন তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। নিজেই বড় হও—এ ভাবনা থেকেই বাবা–মা তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

অভিভাবকহীন ছেলেটা পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে একটা কারখানায় কাজ শুরু করলেন। কাজের ফাঁকে ধীরে ধীরে আবারও ফুটবল অনুশীলন শুরু করলেন। এবার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্পদিনেই সুযোগ পান স্থানীয় একটি দলে। ‘স্টকব্রিজ পার্ক’ নামের সেই দলে খেলার সময় সহজাত ফুটবলশৈলীতে মুগ্ধ করেন সবাইকে। এভাবেই সাফল্যের সিঁড়িটার খোঁজ পেয়ে গেলেন ভার্ডি। আরও দুটি ক্লাব ঘুরে ২০১২ সালে পেয়ে যান স্বপ্নের ঠিকানা লেস্টার সিটিতে। লেস্টার দিয়েই পেশাদার লিগে ক্যারিয়ার শুরু। এই লেস্টারের হয়েই তাঁর কত কত রেকর্ড–ইতিহাস।

ভার্ডি সর্বশেষ লেস্টারের হয়ে জিতেছেন এফএ কাপ। ৩৪ বছর বয়সী তারকা ফুটবলার ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবের হয়ে এফএ কাপের সকল পর্যায়েই খেলা একমাত্র ফুটবলার। শূন্য থেকে শিখরে ওঠা ভার্ডিকে অন্যভাবে সম্মান জানিয়েছে সাবেক ক্লাব ফ্রিটউড টাউন। যে ক্লাব দিয়ে ৯ বছর আগে শুরু করেছিলেন অপেশাদার লিগ। এখন এই ক্লাবে একটা গ্যালারির নামকরণই করা হয়েছে তাঁর নামে।

ক্লাব ফুটবল তো আছেই, গায়ে জড়িয়েছেন জাতীয় দলের জার্সিও। ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় নিয়ে যাবেন সেই প্রশ্নের উত্তর পরে। তবে আপাতত তাঁর জীবনের গল্প যেন সাহসী ঔপন্যাসিকের পাণ্ডুলিপিকেও হার মানিয়েছে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত