Ajker Patrika

ছোটনকে ছাড়া বাফুফেতে থাকতে চান না অন্য কোচরাও 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মে ২০২৩, ১৭: ৩১
ছোটনকে ছাড়া বাফুফেতে থাকতে চান না অন্য কোচরাও 

প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে কমলাপুর স্টেডিয়ামে শুরু হয় নারী ফুটবলারদের কঠিন অনুশীলন। কঠিন একটা দিন শুরু হয় নারী ফুটবলারদের সঙ্গে থাকা কোচিং স্টাফদেরও। হাড়ভাঙা খাটুনির মাঝেও নারী ফুটবলারদের ভরসার ছায়া হয়ে থাকেন প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। কিন্তু আজকের অনুশীলনে সেই ভরসাকে না পেয়ে উদ্বেগ আর শঙ্কা জেঁকে বসেছে ফুটবলার আর কোচিং স্টাফদের মাঝে। 

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ হিসেবে এক যুগের দীর্ঘ পথচলার ইতি টানতে চান সফলতম কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, গতকাল এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আবারও তোলপাড় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে)। আজ সকালে মেয়েদের অনুশীলনে তাঁকে দেখা যায়নি। আলোচনার টেবিলে বসতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন নারী ফুটবল উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, ছোটন সাড়া দেননি তাতেও। দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভে এতটাই কঠিন হয়েছেন যে আর বাফুফের সঙ্গে চুক্তিতেই থাকতে চাইছেন না তিনি। 

প্রধান কোচের এমন কঠিন সিদ্ধান্তে অবাক হচ্ছেন না তাঁর সঙ্গে থাকা নারী ফুটবলের অন্য কোচিং স্টাফরা। তবে এই কোচিং স্টাফদের আশা, সিদ্ধান্ত পাল্টে আবারও মেয়েদের ভরসার ছায়া হয়ে ফিরবেন ছোটন। অভিভাবক হয়ে আগলে রাখবেন প্রিয় শিষ্যদের। কিন্তু জমে থাকা ক্ষোভ থেকে আর ফেরার কোনো ইচ্ছাই যেন দেখা যাচ্ছে না সাফজয়ী কোচ ছোটনের কাছ থেকে। 

ছোটনের সরাসরি শিষ্য থেকে তাঁর সহকারী কোচ হয়েছেন মাহমুদা আক্তার অনন্যা। আরেক সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটুকে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন ফুটবলেই। প্রায় এক দশক ধরে ছোটনের সহকারীর পদে থাকা অনন্যার চাওয়া জাতীয় দলে থাকলে তাঁরা একসঙ্গেই থাকবেন, চলে যেতে হলে বাফুফে ছাড়বেন একসঙ্গেই। আজকের পত্রিকাকে অনন্যা বলেছেন, ‘আমরা একটা পরিবার। আমরা হাসিমুখে একসঙ্গে এসেছি। বিদায় নিলে হাসিমুখেই একসঙ্গে বিদায় নেব। তবে আমার ব্যক্তিগত চাওয়া ছোটন স্যার যেন একটু বিবেচনা করেন। এই ক্যাম্পের অনেক মেয়ে ছোট থেকে স্যারকে পেয়েছে, বাবার মতো দেখে এসেছে। আমরা আমাদের অভিভাবককে চাই। মেয়েরা তাদের অভিভাবককে চায়।’ 

ছোটন আজ অনুশীলন না যাওয়ায় শঙ্কায় ক্যাম্পে থাকা নারী ফুটবলাররা। তাদের মনে জমা হয়ে আছে অসংখ্য প্রশ্ন। প্রিয় স্যার কী সত্যিই চাকরি ছাড়ছেন, এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান ফুটবলাররাও। 

আগামীকাল বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার নেবেন ছোটন। জানা গেছে, পরদিন অর্থাৎ ২৯ মে বাফুফেতে জমা দেবেন নিজের পদত্যাগ পত্র। প্রধান কোচ না থাকলে নিজেরাও থাকতে চান না লিটু-অনন্যা কোচ দম্পতি। যদি বাফুফের কাছ থেকে প্রধান কোচের প্রস্তাব আসে তাহলে সেটি গ্রহণ করবেন কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে অনন্যার উত্তর, ‘লিটু স্যার কী করবেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি বলব আমার সময় এখনো আসেনি। আমি এখনো প্রস্তুত নই।’ 
 
 নিজের দায়িত্ব ছাড়ার কারণ হিসেবে মানসিক চাপ, প্রতি পদে জবাবদিহি আর ক্লান্তির কথা জানিয়েছিলেন ছোটন। আড়ালে যে পারিশ্রমিক নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল, সেটিও লুকাননি তিনি। ছোটনের মতো বাফুফের আচরণ আর পারিশ্রমিক নিয়ে বৈষম্যে অসন্তুষ্ট অন্য কোচরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কোচ বললেন, ‘নারী ফুটবলে অনেক কিছুর অভাব আছে। সবাই ভেবেছিল সাফ জয়ের পর এই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। কিন্তু বাফুফে আমাদের বেতন বাড়িয়েছে কারও তিন হাজার, কারও চার হাজার আবার কারও মাত্র দুই। ফুটবলাররাও ভেবেছিল তারাও সাফের পর থেকে মাসে ভালো বেতন পাবে কিন্তু বাফুফে কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি।’ 

ভোর থেকে শুরু করে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজের ভেতর ডুবে থাকতে হয় কোচিং স্টাফদের। অল্প কিছু সময় যা বাঁচে সেই সময় পরিবারকে দিতে গেলেও ফেডারেশন থেকে আসে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন। ঘুম থেকে উঠে দিন শুরুর একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হয় টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলিকে। প্রতিবেদন জমা দিতে হয় অনুশীলনের পরও। আগামী দিনের কী পরিকল্পনা জমা দিতে হয় টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে। এত হাড়ভাঙা খাটুনির পরও কোচিং স্টাফদের বেতন কারই লাখ পেরোয়নি। নারী দলের কোচদের উপলব্ধি, এত সাফল্য এনে দেওয়ার পরও বাফুফে আসলে তাদের পরিশ্রমের যথার্থ মূল্যায়নই করেনি!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত