জলবায়ুর ডি–বক্সে ইউরোর আঘাত!

ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২১, ১৫: ৪২
আপডেট : ০৬ জুন ২০২১, ১৫: ৪৯

ঢাকা: অদ্ভুত এক সময়ে মাঠে গড়াচ্ছে ইউরো ২০২০। ইতিহাসে এর আগে কখনোই এতগুলো দেশ মিলে একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করেনি। আয়োজনকে আরও জটিল করে তুলেছে করোনা মহামারি। মহামারির কারণেই ইউরো পিছিয়েছে এক বছর। তবে সব অনিশ্চয়তা পেছনে ফেলে ১২ জুন থেকে মাঠে নামছে ইউরোপের পরাশক্তিরা।

ইউরো ঘিরে আরও একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরো কোনো হুমকি তৈরি করছে কিনা। ইউরোতে ১১টি দেশে টুর্নামেন্ট চলার সময় খেলোয়াড়, সমর্থক এবং আয়োজকেরা অবিরত এই শহর, ওই শহর করবে। এতে বিমান ভ্রমণ অনেক বেড়ে যাবে। মহামারিজনিত বিধিনিষেধে বিমান ভ্রমণ অবশ্য অন্যবারের তুলনায় এবার কিছুটা কম দেখা যাবে। তবু যতটা বিমান ভ্রমণের ঘটনা দেখা যাবে সেটিও উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবাদী কর্মীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়টি মাথায় রেখে বিমান ভ্রমণ কমাতে হবে। পরিসংখ্যান বলছে, বৈশ্বিকভাবে বিমান পথে ৩.৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের ঘটনা ঘটে। তবে বিমান ভ্রমণের ঘটনা অল্প কিছু দেশেই বেশি ঘটে থাকে। যেমন লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্কের ফিরতি ফ্লাইটে বছরে গড়ে ১১ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের ঘটনা ঘটে। এমন উদাহরণ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিরল।

আগের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপগুলো হয়েছে এককভাবে, নয়তো দুটি দেশ মিলে আয়োজন করেছে। খেলা দেখার জন্য দূরে কোথাও ভ্রমণের বিষয়টি ছিল সীমিত। পাশাপাশি কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণও হয়েছে কম। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে আকাশপথ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাও ছিল কম। ট্রেন কিংবা অন্য যানবাহন ব্যবহারই যথেষ্ট ছিল।

 এবারের ইউরোতে সে সুযোগ আছে সামান্যই। যেমন—সুইজারল্যান্ডের একজন সমর্থককে তাঁর দলের গ্রুপ পর্বের খেলা দেখতে ভ্রমণ করতে হতে পারে ১৩১১৫ কিলোমিটার। অথচ তাদের পূর্বের সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ভ্রমণ করতে হয়েছিল ৬৭৫০ কিলোমিটার। আবার সুইজারল্যান্ড যদি ফাইনালে পৌঁছায় তবে দলটির সমর্থকদের ভ্রমণ করতে হবে ২১৬৫৬ কিলোমিটার পথ।

শুধু সুইজারল্যান্ড নয়, আগে অংশ নেওয়া ২২ দলের মধ্যে ১৩ দলকে অতীতের আসরগুলোর চেয়ে বেশি ভ্রমণ করতে হবে। অথচ অনেকেই এবারের আসরে খেলবে স্বাগতিক দেশ হিসেবে। দূরত্বের এই হিসাবকে জলবায়ুর প্রাসঙ্গিকতায় বিবেচনা করলে দেখা যায়, সুইজারল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল পৌঁছালে ভ্রমণ করা প্রত্যেক সমর্থক ৩৯৭৩ কেজি কার্বন ডাই–অক্সাইডের জন্য দায়ী থাকবে। যেখানে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ সারা বছরে গড়ে ৪০০০ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইডের জন্য দায়ী থাকে। যদিও পাশ্চাত্যের দেশগুলোয় একজন মানুষ গড়ে ১০০০০ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইডের জন্য দায়ী।

উয়েফা বলছে, সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে ভ্রমণকারী দর্শক, দল এবং উয়েফা কর্মকর্তা কর্তৃক কার্বন নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও করা হচ্ছে। স্টেডিয়ামগুলোর ধারণ ক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করে এটি করা হচ্ছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এবারের ইউরো আয়োজনের জন্য শুধু একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে হয়েছে। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে নির্মিত হয়েছে এই মাঠটি। বিপরীতে ২০১৬ সালের ইউরোর সময় ফ্রান্সে ১০টি স্টেডিয়ামের চারটিই ছিল একেবারে নতুন। ২০১৯ সালে উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্ডার ক্যাফেরিন বলেন, ‘এবারের টুর্নামেন্ট আগের গতানুগতিক আসরগুলোর চেয়ে বিভিন্নভাবে লাভজনক।’

আয়োজনের নতুন ধরনের কারণে বাড়তি স্টেডিয়াম ও পরিবহন ব্যবস্থা লাগছে না। যা পরিবেশগত দিক থেকে সুবিধাজনকও। অবকাঠামো তৈরিতে যে কাঁচামাল ও সংস্থান প্রয়োজন হতো তাও লাগবে না। স্টেডিয়ামকে পরিচ্ছন্ন রাখতে যা যা করা দরকার তাও করবে বলে জানিয়েছে উয়েফা।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এন্ড্রু সিমস বলেন, ‘উয়েফার সুরক্ষা পরিকল্পনা ব্যাপকভাবে সমস্যাপূর্ণ। যা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত নয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত