গ্লাভস হাতে ‘মাইন্ড গেম’ খেলেন তাঁরা

ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১০: ২০
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১০: ৪৩

আরও অনেক লাতিন ফুটবলারের মতো ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কশাঘাত সইতে হয়েছে এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে। মাঝরাতে বাবা আলবার্তোকে কাঁদতে দেখেছেন পরিবারের ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায়। কিন্তু দারিদ্র্য মেরে ফেলতে পারেনি ‘মার্তিনিনহো’র স্বপ্নকে। ছোটবেলায় সবাই ওই নামেই ডাকত তাঁকে। আর এখন কারও কাছে তিনি ‘এমি’, কারও কাছে ‘নায়ক’।

দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা মার্তিনেজের ওই শক্ত হাত দুটিতেই যে বেঁচে রইল লা আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টাইব্রেকারে প্রথম দুটি শট ঠেকিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে সেমিফাইনালের টিকিট এনে দিয়ে আরেকবার নায়ক বনে গেলেন মার্তিনেজ। আর্জেন্টিনার সাবেক ডিফেন্ডার পাবলো জাবালেতার চোখে তো তা-ই।

স্নায়ুযুদ্ধে পরীক্ষা দেওয়া এ আর এমনকি মার্তিনেজের জন্য। গত বছর কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোপা আমেরিকায় টাইব্রেকারে তিন সেভে তিনিই আর্জেন্টিনাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন ফাইনালে। স্পট-কিক নিতে আসা ইয়েরি মিনার সঙ্গে যেভাবে মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলেছিলেন, তা দেখালেন ডাচদের বিপক্ষেও। এমন ম্যাচের আগে মানসিক চিকিৎসকের শরণ নিয়ে আত্মবিশ্বাসটা চাঙা করে নেওয়া স্বভাব তাঁর। সেবার দীর্ঘ ২৮ বছর পর কোপা জিতেছিলেন লিওনেল মেসিরা। এবার মার্তিনেজ নৈপুণ্যেই বিশ্বকাপের শেষ চারে তাঁরা।

টাইব্রেকারে ব্রাজিলকে হারিয়ে ক্রোয়েশিয়ার নায়ক গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। ডাচদের বিপক্ষে সহজ জয়টা কঠিন বানিয়ে ফেলা আর্জেন্টিনা জিতেছে টাইব্রেকারের লটারিতে। ২ গোলে পিছিয়ে থেকেও লুই ফন গালের শিষ্যরা শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে একসময় ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন মেসিদের মনে। তবে আরেকবার ত্রাতা হলেন মার্তিনেজ। রুখে দিলেন ভার্জিল ফন ডাইক ও স্টিভেন বের্গহোইসের স্পটকিক। এরপর লাওতারো মার্তিনেজ যখন জাল খুঁজে নেন, জয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন আর্জেন্টাইনরা। আর এক পাশে পাহাড়সম চাপ সামাল দেওয়া মার্তিনেজ শুয়ে পড়েন মাঠে। দৌড়ে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন মেসি। এই দুই তারকাই যে ডাচ নাচ থামানোর নায়ক!

ক্যারিয়ারের শুরুতে কী কঠিন সংগ্রামই না করতে হয়েছে মার্তিনেজকে। ২০১২-২০ পর্যন্ত আর্সেনালে কাটালেও পিওতর চেকদের ছায়ায় গানারদের তৃতীয় পছন্দের গোলরক্ষক হয়েছিলেন। এমিরেটসে সুযোগবঞ্চিত এমি দুই বছর আগে যোগ দেন অ্যাস্টন ভিলায়। জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়াও শুরু তখন। পরের বছর জাতীয় দলে ডাক পেয়ে কলম্বিয়ার বিপক্ষে উপহার দিলেন অবিস্মরণীয় ম্যাচ। আলবিসেলেস্তেরা তখনই বুঝেছিল গোলপোস্টের নিচে সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী এক যোদ্ধা পেয়ে গেছে তারা। যিনি কিনা প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেন। জাবালেতার চোখে যিনি কিঞ্চিৎ ‘পাগলও’! প্রতিভাবানরা যে একটু পাগল হয়, তার প্রকৃত উদাহরণ বোধ হয় মার্তিনেজই। সঙ্গে যোগ করুন ধৈর্য ও সাহস। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে উচ্ছ্বসিত মার্তিনেজ বলছিলেন, ‘আমরা সেমিফাইনালে। কারণ আমাদের ধৈর্য ও হৃদয় আছে। লোকজনের মতো আমরাও উচ্ছ্বসিত।’

গত পরশু আর্জেন্টিনা শেষ চার নিশ্চিত করতে পারলেও আরেক লাতিন পরাশক্তি ব্রাজিল পারেনি। ডাচদের মতো সেলেসাওরাও হেরেছে এক গোলরক্ষকের কাছে। টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে শুরুতেই বাজপাখির মতো ঝাঁপিয়ে রদ্রিগোর শট রুখে দিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয় ভাঙেন ক্রোয়েশিয়ার দমিনিক লিভাকোভিচ। ক্রোয়াটদের সেমিফাইনালে যাওয়াটাও তাঁর হাত ধরে। দ্বিতীয় রাউন্ডে জাপানের বিপক্ষে টাইব্রেকারে তিনটি সেভে রাতারাতি নায়ক হয়ে ঠেছিলেন লিভাকোভিচ। গত পরশু রাতে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৮টি সেভে গড়লেন রেকর্ড। বিশ্বকাপের এক ম্যাচে কোনো ক্রোয়েট গোলরক্ষকের এটাই সর্বোচ্চ সেভ।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ড্যানিয়েল সুবাসিচ থাকায় লিভাকোভিচকে ফাইনাল দেখতে হয়েছে বেঞ্চে বসে। নিশ্বাস দূরত্বে গিয়েও শিরোপা ছোঁয়া হয়নি জ্লাতকো দালিচের শিষ্যদের। বিশ্বকাপ শেষে সুবাসিচ অবসর নেন জাতীয় দল থেকে। ক্রোয়াটদের গোলপোস্ট সামলানোর দায়িত্ব পড়ে লিভাকোভিচের কাঁধে। সেই দায়িত্ব যে তিনি দারুণভাবে সামলাচ্ছেন, সেটির প্রমাণ কাতারে বেশ ভালোভাবেই দিয়েছেন। সেমিতে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া। মার্তিনেজের সঙ্গে এবার ‘মাইন্ড গেম’ খেলতে চাইবেন লিভাকোভিচও।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত