বাংলাদেশ কেন ভালো ফাস্ট বোলার পায় না

মোহাম্মদ ইসাম
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২১, ১০: ০০
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২১, ১৯: ৪৬

বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং আক্রমণ বেশ প্রশংসিত হচ্ছে গত কিছুদিনে। ভালো পেস বোলিং আক্রমণের হাহাকারটা যদিও পুরোনো। কিন্তু কেন? আজকের পত্রিকার হয়ে উত্তর খুঁজেছেন ইএসপিএন–ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম।

টাকা-পয়সাওয়ালা বেশির ভাগ ক্রিকেট ক্লাবের কর্মকর্তারা ফাস্ট বোলিংয়ের কথা বললেই প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যেতে চান। ক্রিকেটের অন্য বিষয়গুলোর মতো বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং ওই কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করে, যাঁদের ওপর ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার নির্ভর করে। ফাস্ট বোলিং গত পাঁচ বছরে বড় আলোচনার বিষয় হলেও সম্প্রতি এটি নিয়ে একটু বেশিই কথা হচ্ছে।

ফাস্ট বোলিং হলো ক্রিকেটের এমন এক দক্ষতা, যেটি দিয়ে সহজেই ক্রিকেটারদের প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। শুধু লম্বা রানআপই নয়, লাফ দিয়ে ওঠা (গ্যাদার), পিভট, বলটা কোথা থেকে ছোড়া হচ্ছে—সবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পেস বোলিং খুবই কষ্টদায়ক এক স্কিল। এ কারণে নিয়মিত শারীরিকভাবে নিজেকে তৈরি করতে হয়। ফিট থাকতে হয়। নিখুঁত বোলিং অ্যাকশনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সহ্যক্ষমতা ও নমনীয়তা।

আরও জটিল ব্যাপার হচ্ছে, ব্যাটসম্যানকে কীভাবে বোলিংটা করতে হবে। আউটসুইং ও ইনসুইং করতে হলে শক্ত বাহু, কবজি, ঘাড় যথেষ্ট শক্ত হতে হয়। একজন পেস বোলারকে শীর্ষে উঠতে হলে ফিটনেস ভালো থাকতে হয়। প্রচুর ধকল নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হয়।

ঠিক এ কারণেই বাংলাদেশে ভালো ফাস্ট বোলার পাওয়া খুব কঠিন। ফাস্ট বোলাররা অনেক পরিশ্রম করেও অনেক সময় ভালো ফল পান না। বাংলাদেশের পিচগুলো সাধারণত স্পিনবান্ধব। পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো ফাস্ট বোলিং–সহায়ক পিচ তৈরির ব্যাপারে খুব কম চিন্তাভাবনাই করা হয়। এতে পেস বোলারদের দক্ষতা আরও কমিয়েছে।

দলের সংগঠক ও স্বত্বাধিকারীরা স্পিনার ও ব্যাটসম্যানদের মতো পেসারদের দিকে ও রকম মনোযোগ দেন না। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁদের পারিশ্রমিক তেমন বাড়েই না। তখনই শুধু বাড়ে, যখন মাশরাফি মর্তুজা, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো খেলেন। অবশ্য এসব ভালো চুক্তিও বেশি দিন স্থায়ী হয় না।
ক্রিকেটারদের মধ্যে ফাস্ট বোলারদেরই বেশি অর্থ খরচ হয় নিজেদের ফিট রাখতে। পেসারদের ফিটনেসে উন্নতি তাঁদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ক্লাব ক্রিকেটে ক্রিকেটাররা যখন ক্যারিয়ার শুরু করেন, প্রায় সময়ই পর্যাপ্ত খাবারটুকুও তাঁরা পান না। যে কারণে ফাস্ট বোলাররা পুরো ক্রিকেট মৌসুমেই ফিটনেস সমস্যায় ভোগেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট যখন ঘরের মাঠে স্পিনিং উইকেটে টেস্ট সিরিজ জয়ের লক্ষ্য ঠিক করল, বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের সমস্যা আরও প্রকট হলো তখনই। এতে বোঝা গেল, বাংলাদেশ দল পেস বোলিং নিয়ে কতটা উদাসীন। যখন দেশের জাতীয় দলই ফাস্ট বোলারদের ব্যাপারে উদাসীন, তখন ক্লাব ও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো আর কীই–বা করবে?

তবু আশা আছে। কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে যে প্রেসিডেন্টস কাপ ও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি দিয়ে গত বছর দেশে ক্রিকেট ফিরেছে, সেখানে পেসাররাই সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন। লকডাউনে পেসাররা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। গত কয়েকটি সিরিজে নতুন পিচে ব্যাটসম্যানদের ভালোই ভুগিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে তাসকিন আহমেদের নাম বলা যায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি তাসকিন তাঁর ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছেন।  

যদি ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের খরচে পেসবান্ধব উইকেট তৈরি করে, তাহলে ফাস্ট বোলাররা উন্নতি করতে পারবেন। স্পোর্টিং উইকেট বানালে ব্যাটসম্যানরাও উপকৃত হবেন। অধিকাংশ দেশ এমনকি এই উপমহাদেশেও এমন উইকেট বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ভালো ফাস্ট বোলিং আক্রমণ আর পাইপলাইনে পর্যাপ্ত ফাস্ট বোলার না থাকলে কোনো দেশের পক্ষেই ক্রিকেটের শীর্ষে ওঠা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড’ তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সাগরে নিম্নচাপ, কত দিন বৃষ্টি হতে পারে জানাল আবহাওয়া দপ্তর

শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান যার যার স্থানে শ্রেষ্ঠ: গয়েশ্বর

র‌্যাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি: নূর খান লিটন

হাসিনার আমলে রাশিয়ার সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি, জড়াল টিউলিপের নামও

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত