সাক্ষাৎকার

ভুটান ম্যাচের পরই না হয় ট্রফি নিয়ে ভাবব

Thumbnail Image

পুরো নাম পিটার জেমস বাটলার। ডজনের বেশি দলে কোচিং করিয়েছেন। তাঁর কাছে সততা, সম্মান আর শৃঙ্খলাই এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র। এই মন্ত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে দেখাচ্ছেন পথ। মারিয়া-মনিকাদের নিয়ে তাঁর দারুণ স্বপ্ন। তবে রাতারাতি সেই স্বপ্নের শৃঙ্গে আরোহণের পক্ষে নন। এমনই পেশাদার এই ইংলিশ কোচের সাক্ষাৎকার মুঠোফোনে নিয়েছেন জহির উদ্দিন মিশু

প্রশ্ন: ভারতকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ভুটানকে পেয়েছে বাংলাদেশ। কী মনে হয়, সাবিনারা পারবেন এই বাধা পেরিয়ে শিরোপায় চুমু আঁকতে?

পিটার বাটলার: আমি সব সময় বাস্তবতার পক্ষে। শিরোপা জেতার বিষয় নিয়ে এখনই ভাবতে চাই না। খেলোয়াড়দেরও বলব অতি আত্মবিশ্বাসী না হতে। আমাদের এখনো কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। আপাতত ভুটান ম্যাচটা নিয়েই পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। সবাইকে এই অধ্যায়ে রাখতে চাই। এরপর নাহয় ট্রফি নিয়ে ভাবা যাবে।

প্রশ্ন: সম্প্রতি দলে সিনিয়র-জুনিয়র ইস্যুতে আপনার নামও জড়িয়েছে। টুর্নামেন্ট চলাকালে এমন কিছু দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে কি?

বাটলার: এ ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে চাই না। একটা দল একটা পরিবারের মতো। যেখানে মান-অভিমান কিংবা একটু-আধটু ভুল-বোঝাবুঝি হতেই পারে। আমাদের সবার দৃষ্টি পরবর্তী ম্যাচে। কেউ আর এটা নিয়ে কথা বলছে না। কীভাবে দারুণ কিছু করা যায়, সেটাই এখন বড় বিষয়। সে ক্ষেত্রে মাঠের পারফরম্যান্সে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না।

প্রশ্ন: আপনি এর আগে বহু ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ হয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন?

বাটলার: আমার কোচিংয়ে আসা ২০০০ সালের দিকে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ক্লাবে কোচের দায়িত্ব পালন করেছি। এই দায়িত্বে নিতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটা ভালো আবার মন্দও। কিন্তু কোনো কিছুই আমাকে খুব বেশি হতাশ কিংবা খুব বেশি উচ্ছ্বসিত করেনি। কারণ, যেখানে যত দিন থাকি, চেষ্টা করি পেশাদারত্ব ঠিক রাখতে। এদিক থেকে বিন্দুমাত্র কাউকে ছাড় দিতে চাই না। সে জন্য অনেক সময় অনেকে মনঃক্ষুণ্ন হন। এসব নিয়ে আমি মোটেও ভাবি না।

প্রশ্ন: হাই প্রোফাইল কোচ হয়েও কেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের দায়িত্বে এসেছেন?

বাটলার: লাইবেরিয়া জাতীয় দলের দায়িত্ব যখন ছেড়ে দিই, তখনই মনস্থির করি, নতুন একটা চ্যালেঞ্জ নেব। শেষ পর্যন্ত সুযোগটাও আসে। আমিও এশিয়ায় কাজ করতে উন্মুখ হয়ে উঠি। অনেকে বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। বন্ধুদের কেউ কেউ বলে, তুমি কি পাগল হয়ে গেলে! তাদের কথা কানে তুলিনি। আমার মন যা বলেছে, সেটাই শুনেছি। এখন বেশ আছি। বাংলাদেশের মানুষও আমাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। আমিও এই সময়টা দারুণ উপভোগ করছি।

প্রশ্ন: এই দলকে নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? ফুটবল দুনিয়ায় মারিয়া-মনিকাদের কোন অবস্থায় দেখতে চান?

বাটলার: বলব না রাতারাতি সবকিছু বদলে দেব। আমি তো আর জাদুকর নই। আমার লক্ষ্য—এই দলকে একটা সুন্দর কাঠামোয় দাঁড় করানো। এরপর দলের মধ্যে শৃঙ্খলা আনা। সর্বোপরি নিজস্ব একটা পরিচয় দেওয়া। সেটা হতে পারে অ্যাটাকিং ফুটবলের দল।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পুরুষ ফুটবল অনেকটা পিছিয়ে। তাদের জন্য কোনো পরামর্শ?

বাটলার: এই বিষয়ে কথা বলার উপযুক্ত নই। আমার পথটা ভিন্ন। এখানে এসেছি একটা ছোট্ট পরিকল্পনা নিয়ে। সময়ও খুব বেশি নয়। তাই বাংলাদেশ জাতীয় দল নিয়ে সমালোচনা করা আমার কাজ নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি, এমন কাউকে পুরুষ ফুটবলের কোচের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে, যিনি যোগ্য এবং উন্নতিটা আনতে পারেন। সেই সঙ্গে দলে একটা শৃঙ্খলাও আনতে পারেন। এ জন্য দেশি কোচদের গুরুত্ব দিতে বলব।

প্রশ্ন: যদি সুযোগ আসে, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হবেন?

বাটলার: না, এ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই না। বর্তমানে যেখানে আছি, সেই দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করতে চাই। সব মনোযোগ এখন সাফ চ্যাম্পিয়নসশিপে।

প্রশ্ন: অনেক দিন তো হলো, কোচিং জগতের সঙ্গে আছেন। এই অঙ্গনে কাকে আইডল মানেন?

বাটলার: আমি এককভাবে কাউকে আইডল মনে করি না। আমার শেখাটা ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকজন নামী কোচের কাছ থেকে। তাঁরা আমাকে শিখিয়েছেন কোচিংয়ে সম্মান, সততা আর শৃঙ্খলার গুরুত্ব কতখানি। এখানে সফল হতে শর্টকাট পথ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত