নাজিম আল শমষের, ঢাকা
জনপ্রিয়তার নিক্তিতে এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে এগিয়ে ক্রিকেট আর ফুটবল। তবে এ দুইয়ের বাইরে অন্য খেলাতেও গত পাঁচ দশকে আছে বলার মতো অনেক অর্জন। আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেখে নেওয়া যাক সেসব অর্জন।
মুজিবরের সোনার হাসি (১৯৮৪)
নেপালের কাঠমান্ডু। সাউথ এশিয়ান (সাফ) গেমসের প্রথম আসর। ২০০ অ্যাথলেট নিয়ে যখন সোনা জিততে না পারার হতাশায় ডুবতে বসেছিল বাংলাদেশ, তখনই সতীর্থদের আলো দেখালেন এক অ্যাথলেট। ট্রিপল জাম্পে সোনা জিতলেন মুজিবর রহমান মল্লিক। এসএ গেমসে প্রথম সোনাজয়ীকে পেল বাংলাদেশ।
শুধু একটি নয়, একই আসরে আরেকটি সোনাজয়ী ইভেন্টের অংশীদার ছিলেন মুজিবর রহমান। ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতেও সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। সাইদুর রহমান ডন, শাহ আলম ও আফতাব মোল্লার সঙ্গে চতুর্থ সঙ্গী ছিলেন মুজিবর রহমান। দেশে ফিরে ফুলেল সংবর্ধনা তো ছিলই, নিজের গ্রামের বাড়িতে দুই কিলোমিটারজুড়ে রাস্তা সাজিয়ে মুজিবরকে বরণ করে নিয়েছিল তাঁর গ্রামবাসী।
দ্রুতমানবের ট্র্যাজেডির বিদায় (১৯৯০)
সাফল্যে তিনি এখনো দেশের সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টার। ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশের স্প্রিন্টারদের পেছনে হয়েছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার ‘দ্রুতমানব’। তা-ও একবার নয়, দুই দুইবার। শাহ আলমের কাছে আরও পাওয়ার ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিজেই দিলেন নিজেকে ছুটি।
ঢাকার মাঠে ১৯৮৫ সাফ গেমসের আসরে নতুন রেকর্ড ১০.৮০ সেকেন্ড সময়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতেছিলেন শাহ আলম। দুই বছর পর কলকাতা সাফ গেমসেও ধরে রাখলেন সোনা। সেটাও নিজের রেকর্ড ভেঙে। ১০.৭৯ সেকেন্ডে গড়লেন নতুন আরেক রেকর্ড।
১৯৮৯ ইসলামাবাদ সাফ গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন শাহ আলম। তাতে পূরণ হয়নি হ্যাটট্রিক ‘দ্রুতমানব’ খেতাব জয়ের স্বপ্ন। সেই ব্যথা বুকে নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন ১৯৯০ বেইজিংয়ে এশিয়ান গেমসের জন্য। গেমসের আগেভাগে ছুটিতে গিয়েছিলেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। ফেরার পথে ২৯ মে ট্রাকের ধাক্কায় নিভে যায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা অ্যাথলেটের প্রাণ। ঠিক ২০ বছর পর আরেক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মাদ্রাজ সাফ গেমসে ২০০ মিটারে সোনাজয়ী স্প্রিন্টার মাহবুব আলম। সেই দুর্ঘটনার ঘাতক ছিলও এক ট্রাক!
শাহানার সোনাজয়ী লক্ষ্যভেদ (১৯৯১)
১৯৮৪ কাঠমান্ডু সাফ গেমসে বাংলাদেশকে প্রথম সোনা এনে দিয়েছিলেন মুজিবর রহমান মল্লিক। এর পরের আসরগুলোতে নিয়মিত সোনা এলেও অপূর্ণতা ছিল একটা জায়গাতেই, কোনো নারী অ্যাথলেটের কাছ থেকেই সোনা পাচ্ছিল না দেশ।
সেই আক্ষেপ মিটেছিল ১৯৯১ সালে। কলম্বো সাফ গেমসে। সেই আসরে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল শুটিং। আর তাতেই দেশকে সাফল্য এনে দেন কাজী শাহানা পারভীন। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশি নারীর সেটাই ছিল প্রথম সোনা জয়। অংশ নেন ১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিকে। অলিম্পিকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রথম নারীও তিনি। ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সাফ গেমসেও তাঁর লক্ষ্যভেদে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ।
বিমলের উত্থান-পতন (১৯৯৩)
শাহ আলমের অকালপ্রয়াণে স্প্রিন্টে বাংলাদেশের আধিপত্য কমে যাবে কি না, এমন একটা সংশয় ছিলই। সেই সংশয় কেটে গেল ঢাকার মাঠে ১৯৯৩ সাফ গেমসে। ১০.৬১ সেকেন্ড সময়ে নতুন রেকর্ড গড়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনলেন ১৯ বছরের তরুণ বিমল চন্দ্র তরফদার। সোনা জিতলেও নিজের জীবনের অনিশ্চয়তায় ডুবতে বসেছিলেন বিমল। ১৯৯৮ আটলান্টা অলিম্পিকে অংশ নিতে গিয়ে আর দেশেই ফিরলেন না। পরিবার নিয়ে তিনি এখন নিউইয়র্কে থাকেন।
কমনওয়েলথ জয়ী আসিফ (২০০২)
বয়স মাত্র ১৫। বাংলাদেশ গেমসে শুটিংয়ে তৃতীয় হওয়া এক কিশোরকে নিয়ে ম্যানচেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে খেলতে গিয়েছিল। কেউ ভাবেওনি আসিফ হোসেন খান নামের সেই কিশোর গড়বে ইতিহাস!
খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না বলেই হয়তো ইতিহাস গড়তে পেরেছিলেন আসিফ। কিশোর বয়স চাঞ্চল্য, চাপকে পাত্তা না দিয়েই ভারতের অভিনব বিন্দ্রাকে পেছনে ফেলে কমনওয়েলথ গেমসে শুটিংয়ে সোনা জিতেছিলেন আসিফ। ৬৯১ দশমিক ৯ স্কোরে গড়েন বিশ্ব রেকর্ড।
কৈশোরের সেই সাফল্যের পর যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যান আসিফ। কমনওয়েলথের পর বড় সাফল্য বলতে ইসলামাবাদ সাফ গেমসে সোনা জয়। ২০০৬ সালে পুলিশের কাছে মার খাওয়ার পর শুটিং থেকে যেন পুরোপুরি মুছে গেল আসিফের নাম। যাকে হারিয়ে জিতেছিলেন কমনওয়েলথ গেমসের সোনা, সেই অভিনব বিন্দ্রা ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে জিতলেন সোনা। আক্ষেপের নাম হয়ে রইলেন আসিফ।
সিদ্দিকুরের ব্রুনাই জয় (২০১০)
ধনীদের খেলা গলফের সম্পর্কে এই দেশের মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষের ধারণা খুব বেশি ছিল না বললেই চলে। বিশ্ব খেলাধুলার নিয়মিত যাঁরা খোঁজখবর রাখতেন তাঁরা হয়তো জানতেন যে এই গলফ খেলেই বিলিয়নিয়ার হয়েছেন টাইগার উডস নামের এক মার্কিন গলফার। এক টুর্নামেন্ট জিতলে ন্যূনতম আয় করা সম্ভব সেটাই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্যাডিবয় থেকে পেশাদার গলফার সিদ্দিকুর রহমান।
২০১০ সালে ব্রুনাই ওপেন জিতে হইচই ফেলে দেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর সেই শিরোপায় দেশের মানুষের কাছে নতুন করে জন্ম নেয় গলফ নিয়ে আগ্রহ। প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ব্রুনাই এশিয়ান ট্যুর জিতেছিলেন সিদ্দিক। পুরস্কার হিসেবে পান ৫৪ হাজার ডলার। ২০১৩ সালে ভারতের দিল্লিতে হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন জেতেন। পুরস্কার পেয়েছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে খেলেন গলফ বিশ্বকাপে। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রিও অলিম্পিকে সরাসরি সুযোগ পাওয়ার কৃতিত্বটাও তাঁর দখলে।
মাবিয়া কাঁদলেন, কাঁদালেন (২০১৬)
মাথার ওপর জাতীয় পতাকা। বাজছে জাতীয় সংগীত। সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে এক অ্যাথলেটের অঝোরে কান্না। ২০১৬ গুহাটি সাফ গেমসে মাবিয়া আক্তার সীমান্তের এই কান্না নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়।
কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে সাফল্যের হাসিতে না হেসে কেঁদেছিলেন মাবিয়া। ৬৩ কেজি শ্রেণিতে ভারোত্তলনে প্রথম নারী হিসেবে জিতেছিলেন সোনা। পদক, দেশ আর জাতীয় সংগীতের বাজনায় আবেগকে মানাতে পারছিলেন না মাবিয়া। সারা জীবনের দুঃখ, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের চিত্র হয়ে উঠেছিল মাবিয়ার সেই কান্না।
রোমান সানার অলিম্পিকের টিকিট (২০১৯)
অ্যাথলেটিকসে বড় কোনো সাফল্য নেই। ফুটবল যেন ডুবতে বসেছে। দেশের মানুষের সব চাওয়া তাই ক্রিকেটকে ঘিরেই। আড়ালে, নিভৃতে উঠে এসে হঠাৎই চমকে দিয়েছে আর্চারি নামের অজানা এক খেলা। ক্রিকেটের পর গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সাফল্য এসেছে এই আর্চারি থেকেই। বিশেষ করে বললে রোমান সানা নামের এক তিরন্দাজ থেকে।
রোমান যে আসছেন তার নমুনা পাওয়া যাচ্ছিল গত কয়েক বছর ধরেই। ২০১৫ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এশিয়া কাপ স্টেজ-২ ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে রিকার্ভ এককে প্রথম সোনা জয়। ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে ঢাকায় প্রথম আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ইলিমিনেশন রাউন্ডের রিকার্ভ ডিভিশনের পুরুষ দলগত ইভেন্টে সানোয়ার হোসেন ও তামিমুল ইসলামকে নিয়ে এবং মিশ্র দলগত ইভেন্টে বিউটি রায়কে নিয়ে সোনা জয় তো ছিলই। ২০১৯ সালে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ পুরুষ এককে জেতেন রুপা।
কিন্তু রোমানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সাফল্যটা আসে ২০১৯ সালের জুনে। নেদারল্যান্ডসে ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশি সরাসরি জায়গা পান টোকিও অলিম্পিকে। এই বছরের মে মাসে লোজানে ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের স্টেজ-২ এর রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টে দিয়া সিদ্দিকীকে নিয়ে জিতেছেন রুপাও।
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল
জনপ্রিয়তার নিক্তিতে এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে এগিয়ে ক্রিকেট আর ফুটবল। তবে এ দুইয়ের বাইরে অন্য খেলাতেও গত পাঁচ দশকে আছে বলার মতো অনেক অর্জন। আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেখে নেওয়া যাক সেসব অর্জন।
মুজিবরের সোনার হাসি (১৯৮৪)
নেপালের কাঠমান্ডু। সাউথ এশিয়ান (সাফ) গেমসের প্রথম আসর। ২০০ অ্যাথলেট নিয়ে যখন সোনা জিততে না পারার হতাশায় ডুবতে বসেছিল বাংলাদেশ, তখনই সতীর্থদের আলো দেখালেন এক অ্যাথলেট। ট্রিপল জাম্পে সোনা জিতলেন মুজিবর রহমান মল্লিক। এসএ গেমসে প্রথম সোনাজয়ীকে পেল বাংলাদেশ।
শুধু একটি নয়, একই আসরে আরেকটি সোনাজয়ী ইভেন্টের অংশীদার ছিলেন মুজিবর রহমান। ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতেও সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। সাইদুর রহমান ডন, শাহ আলম ও আফতাব মোল্লার সঙ্গে চতুর্থ সঙ্গী ছিলেন মুজিবর রহমান। দেশে ফিরে ফুলেল সংবর্ধনা তো ছিলই, নিজের গ্রামের বাড়িতে দুই কিলোমিটারজুড়ে রাস্তা সাজিয়ে মুজিবরকে বরণ করে নিয়েছিল তাঁর গ্রামবাসী।
দ্রুতমানবের ট্র্যাজেডির বিদায় (১৯৯০)
সাফল্যে তিনি এখনো দেশের সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টার। ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশের স্প্রিন্টারদের পেছনে হয়েছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার ‘দ্রুতমানব’। তা-ও একবার নয়, দুই দুইবার। শাহ আলমের কাছে আরও পাওয়ার ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিজেই দিলেন নিজেকে ছুটি।
ঢাকার মাঠে ১৯৮৫ সাফ গেমসের আসরে নতুন রেকর্ড ১০.৮০ সেকেন্ড সময়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতেছিলেন শাহ আলম। দুই বছর পর কলকাতা সাফ গেমসেও ধরে রাখলেন সোনা। সেটাও নিজের রেকর্ড ভেঙে। ১০.৭৯ সেকেন্ডে গড়লেন নতুন আরেক রেকর্ড।
১৯৮৯ ইসলামাবাদ সাফ গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন শাহ আলম। তাতে পূরণ হয়নি হ্যাটট্রিক ‘দ্রুতমানব’ খেতাব জয়ের স্বপ্ন। সেই ব্যথা বুকে নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন ১৯৯০ বেইজিংয়ে এশিয়ান গেমসের জন্য। গেমসের আগেভাগে ছুটিতে গিয়েছিলেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। ফেরার পথে ২৯ মে ট্রাকের ধাক্কায় নিভে যায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা অ্যাথলেটের প্রাণ। ঠিক ২০ বছর পর আরেক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মাদ্রাজ সাফ গেমসে ২০০ মিটারে সোনাজয়ী স্প্রিন্টার মাহবুব আলম। সেই দুর্ঘটনার ঘাতক ছিলও এক ট্রাক!
শাহানার সোনাজয়ী লক্ষ্যভেদ (১৯৯১)
১৯৮৪ কাঠমান্ডু সাফ গেমসে বাংলাদেশকে প্রথম সোনা এনে দিয়েছিলেন মুজিবর রহমান মল্লিক। এর পরের আসরগুলোতে নিয়মিত সোনা এলেও অপূর্ণতা ছিল একটা জায়গাতেই, কোনো নারী অ্যাথলেটের কাছ থেকেই সোনা পাচ্ছিল না দেশ।
সেই আক্ষেপ মিটেছিল ১৯৯১ সালে। কলম্বো সাফ গেমসে। সেই আসরে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল শুটিং। আর তাতেই দেশকে সাফল্য এনে দেন কাজী শাহানা পারভীন। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশি নারীর সেটাই ছিল প্রথম সোনা জয়। অংশ নেন ১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিকে। অলিম্পিকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রথম নারীও তিনি। ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সাফ গেমসেও তাঁর লক্ষ্যভেদে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ।
বিমলের উত্থান-পতন (১৯৯৩)
শাহ আলমের অকালপ্রয়াণে স্প্রিন্টে বাংলাদেশের আধিপত্য কমে যাবে কি না, এমন একটা সংশয় ছিলই। সেই সংশয় কেটে গেল ঢাকার মাঠে ১৯৯৩ সাফ গেমসে। ১০.৬১ সেকেন্ড সময়ে নতুন রেকর্ড গড়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনলেন ১৯ বছরের তরুণ বিমল চন্দ্র তরফদার। সোনা জিতলেও নিজের জীবনের অনিশ্চয়তায় ডুবতে বসেছিলেন বিমল। ১৯৯৮ আটলান্টা অলিম্পিকে অংশ নিতে গিয়ে আর দেশেই ফিরলেন না। পরিবার নিয়ে তিনি এখন নিউইয়র্কে থাকেন।
কমনওয়েলথ জয়ী আসিফ (২০০২)
বয়স মাত্র ১৫। বাংলাদেশ গেমসে শুটিংয়ে তৃতীয় হওয়া এক কিশোরকে নিয়ে ম্যানচেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে খেলতে গিয়েছিল। কেউ ভাবেওনি আসিফ হোসেন খান নামের সেই কিশোর গড়বে ইতিহাস!
খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না বলেই হয়তো ইতিহাস গড়তে পেরেছিলেন আসিফ। কিশোর বয়স চাঞ্চল্য, চাপকে পাত্তা না দিয়েই ভারতের অভিনব বিন্দ্রাকে পেছনে ফেলে কমনওয়েলথ গেমসে শুটিংয়ে সোনা জিতেছিলেন আসিফ। ৬৯১ দশমিক ৯ স্কোরে গড়েন বিশ্ব রেকর্ড।
কৈশোরের সেই সাফল্যের পর যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যান আসিফ। কমনওয়েলথের পর বড় সাফল্য বলতে ইসলামাবাদ সাফ গেমসে সোনা জয়। ২০০৬ সালে পুলিশের কাছে মার খাওয়ার পর শুটিং থেকে যেন পুরোপুরি মুছে গেল আসিফের নাম। যাকে হারিয়ে জিতেছিলেন কমনওয়েলথ গেমসের সোনা, সেই অভিনব বিন্দ্রা ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে জিতলেন সোনা। আক্ষেপের নাম হয়ে রইলেন আসিফ।
সিদ্দিকুরের ব্রুনাই জয় (২০১০)
ধনীদের খেলা গলফের সম্পর্কে এই দেশের মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষের ধারণা খুব বেশি ছিল না বললেই চলে। বিশ্ব খেলাধুলার নিয়মিত যাঁরা খোঁজখবর রাখতেন তাঁরা হয়তো জানতেন যে এই গলফ খেলেই বিলিয়নিয়ার হয়েছেন টাইগার উডস নামের এক মার্কিন গলফার। এক টুর্নামেন্ট জিতলে ন্যূনতম আয় করা সম্ভব সেটাই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্যাডিবয় থেকে পেশাদার গলফার সিদ্দিকুর রহমান।
২০১০ সালে ব্রুনাই ওপেন জিতে হইচই ফেলে দেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর সেই শিরোপায় দেশের মানুষের কাছে নতুন করে জন্ম নেয় গলফ নিয়ে আগ্রহ। প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ব্রুনাই এশিয়ান ট্যুর জিতেছিলেন সিদ্দিক। পুরস্কার হিসেবে পান ৫৪ হাজার ডলার। ২০১৩ সালে ভারতের দিল্লিতে হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন জেতেন। পুরস্কার পেয়েছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে খেলেন গলফ বিশ্বকাপে। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রিও অলিম্পিকে সরাসরি সুযোগ পাওয়ার কৃতিত্বটাও তাঁর দখলে।
মাবিয়া কাঁদলেন, কাঁদালেন (২০১৬)
মাথার ওপর জাতীয় পতাকা। বাজছে জাতীয় সংগীত। সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে এক অ্যাথলেটের অঝোরে কান্না। ২০১৬ গুহাটি সাফ গেমসে মাবিয়া আক্তার সীমান্তের এই কান্না নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়।
কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে সাফল্যের হাসিতে না হেসে কেঁদেছিলেন মাবিয়া। ৬৩ কেজি শ্রেণিতে ভারোত্তলনে প্রথম নারী হিসেবে জিতেছিলেন সোনা। পদক, দেশ আর জাতীয় সংগীতের বাজনায় আবেগকে মানাতে পারছিলেন না মাবিয়া। সারা জীবনের দুঃখ, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের চিত্র হয়ে উঠেছিল মাবিয়ার সেই কান্না।
রোমান সানার অলিম্পিকের টিকিট (২০১৯)
অ্যাথলেটিকসে বড় কোনো সাফল্য নেই। ফুটবল যেন ডুবতে বসেছে। দেশের মানুষের সব চাওয়া তাই ক্রিকেটকে ঘিরেই। আড়ালে, নিভৃতে উঠে এসে হঠাৎই চমকে দিয়েছে আর্চারি নামের অজানা এক খেলা। ক্রিকেটের পর গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সাফল্য এসেছে এই আর্চারি থেকেই। বিশেষ করে বললে রোমান সানা নামের এক তিরন্দাজ থেকে।
রোমান যে আসছেন তার নমুনা পাওয়া যাচ্ছিল গত কয়েক বছর ধরেই। ২০১৫ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এশিয়া কাপ স্টেজ-২ ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে রিকার্ভ এককে প্রথম সোনা জয়। ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে ঢাকায় প্রথম আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ইলিমিনেশন রাউন্ডের রিকার্ভ ডিভিশনের পুরুষ দলগত ইভেন্টে সানোয়ার হোসেন ও তামিমুল ইসলামকে নিয়ে এবং মিশ্র দলগত ইভেন্টে বিউটি রায়কে নিয়ে সোনা জয় তো ছিলই। ২০১৯ সালে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ পুরুষ এককে জেতেন রুপা।
কিন্তু রোমানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সাফল্যটা আসে ২০১৯ সালের জুনে। নেদারল্যান্ডসে ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশি সরাসরি জায়গা পান টোকিও অলিম্পিকে। এই বছরের মে মাসে লোজানে ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের স্টেজ-২ এর রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টে দিয়া সিদ্দিকীকে নিয়ে জিতেছেন রুপাও।
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল
অফ স্টাম্পের কিছুটা বাইরে পিচ করেছিল বল। ভেতরে ঢুকে মুখে লাইনে না গিয়েই খেলতে গেলেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে তাসকিনের সেই বল লাগল ব্যাটারের প্যাডে।
৩ ঘণ্টা আগেপ্রথম সেশন বেশ ভালো কাটল বাংলাদেশের। মধ্যাহ্নভোজের আগে নিয়েছে ২ উইকেট। দুটি উইকেটই নিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
৫ ঘণ্টা আগেপেপ গার্দিওলাকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল ইংল্যান্ড। কদিন আগে রোনালদো নাজারিও জানিয়েছিলেন, ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের আগামী নির্বাচনে সভাপতি হলে সেলেসাওদের জন্য নিয়ে আসবেন স্প্যানিশ কোচকে। তবে আপাতত কোথাও যাচ্ছেন না গার্দিওলা। থাকছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেই।
৫ ঘণ্টা আগেউয়েফা নেশনস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে পেল গতবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। মুখোমুখি হবে চারবারের দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি-জার্মানি।
৬ ঘণ্টা আগে