নীরবে-নিভৃতেই এগোচ্ছে দেশের রাগবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

বিকেলের দিকে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। পানি জমে আর্মি স্টেডিয়ামের মাঠ বেশ ভারী হয়ে উঠেছে। কাদা মাটিতে খেলতে সমস্যা হবে না?
বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মৌসুম আলী বললেন, ‘সমস্যা হবে কেন? রাগবির জন্মই হয়েছে কাদা মাঠে, বর্ষাকালে। রাগবি হলো বর্ষার খেলা। গোড়ালি পানিতে খেলতেও খেলোয়াড়দের সমস্যা হয় না।’

ভারী বৃষ্টিতে ক্রিকেট যেখানে থমকে থাকে, মাঠে পানি জমলে ফুটবল খেলা কঠিন, সেখানে একটা বল আর খেলার মতো খেলোয়াড় হলেই খুব সহজেই খেলা যায় রাগবি। ভরা বর্ষায় স্কুল-কলেজের মাঠগুলো খুব একটা ব্যবহার করা যায় না। তবে ব্যতিক্রম রাগবি। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির মধ্যেও খেলার সুযোগ পাবে, করা যাবে টুর্নামেন্ট—এসব বিবেচনা করেই জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে জায়গা দেওয়া হয়েছে রাগবিকে।

বছরে প্রশাসনিক কাজে বরাদ্দ শুধু আড়াই লাখ টাকা। তৃণমূলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে রাগবি পায় ২০ লাখ টাকা। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নীরবেই উল্লেখ করার মতো কাজ করে যাচ্ছে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাগবি ফেডারেশন। গত বছর তৃণমূলে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজনসহ মোট ২১৮টি কার্যক্রম পরিচালনা করছে রাগবি, এমন তথ্যই দিলেন মৌসুম আলী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে টুর্নামেন্ট করেছে রাগবি ফেডারেশন। আছে পথশিশু, মাদকাসক্তদের নিয়েও ব্যতিক্রম সব আয়োজন। অন্য যেকোনো ফেডারেশনের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব উপস্থিতি রাগবি ফেডারেশনের। সব রকম কার্যক্রমের ছবি, ভিডিও নিয়মিত পোস্ট হচ্ছে ফেসবুকে। নিয়মিত হচ্ছে লিগ আয়োজন। বাংলাদেশের আগ্রহ দেখে গত বছর ৪ হাজার বলও পাঠিয়েছে এশিয়ান রাগবি ফেডারেশন। সেই বল দিয়েই স্কুল পর্যায়ে ও গ্রামগঞ্জে খেলাটা ছড়িয়ে দিতে চায় দেশের রাগবি ফেডারেশন।

‘একটা বল হলেই খেলা যায়, বন-জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, সব ঠিক থাকলে হয়তো একদিন গ্রামগঞ্জে ২৫ শতাংশ খেলোয়াড় রাগবি খেলবে।’— আজকের পত্রিকাকে বলছিলেন মৌসুম আলী। সেই ‘একদিন’ আসতে কত অপেক্ষা করতে হবে, এ প্রশ্নে তিনি বললেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য সবাইকে খেলাটায় নিয়ে আসা। এভাবেই একদিন আমরা প্রতিভাবান খেলোয়াড় পাব। তখন সাফল্যও আসবে।’

১৪ বছর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেললেও এই প্রথম দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে রাগবি। নেপালের বিপক্ষে আজ আর্মি স্টেডিয়ামে দুটি সেভেন-এ-সাইড ও আগামীকাল ফিফটিন-এ-সাইড ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে ভারত থেকে আনা হয়েছে কোচ রেহমানুদ্দিনকে। দলের সহকারী কোচের দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোচ আবদুল কাদের সুমন। প্রথমবারের মতো দেশের মাঠে খেলতে খেলোয়াড়রা রোমাঞ্চিত বলে জানালেন তিনি, ‘আগে তো সবাই অন্য দেশে খেলছে। আজ প্রিয়জন-বন্ধুরা মাঠে আসবেন, উৎসাহ দেবেন। অন্য রকম এক রোমাঞ্চ কাজ করছে সবার মধ্যে।’

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেটের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় রাগবি। এশিয়ান পর্যায়ে অন্যতম সেরা দল শ্রীলঙ্কা। ভার‍ত-পাকিস্তানও এগোচ্ছে রাগবিতে। নেপালে আছে ২৫ থেকে ৩০টি ক্লাব। ফিটনেস ট্রেনার, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি পাওয়া গেলে রাগবিতে দক্ষিণ এশিয়ান কাতারে ভালো করা সম্ভব করা বলে মনে করেন বাংলাদেশের সেভেন-এ-সাইড অধিনায়ক নাদিম মাহমুদ, ‘১৯২০ সাল থেকে রাগবির বিশ্বকাপ হয়। আমরা মাত্র নতুন শুরু করলাম। বাংলাদেশ একসময় এখানে ভালো করবে।’ প্রথমবারের মতো ফিফটিন-এ-সাইড আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারার রোমাঞ্চে অধিনায়ক মিলন হোসেন বলেন, ‘আমাদের দলটা ভালো। সবারই আত্মবিশ্বাস আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত