শিকড়ের টানে বাংলাদেশের বক্সিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন রুকসানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩, ১৭: ৩৩
Thumbnail image

ব্রিটেনে তিনি রীতিমতো মহাতারকা। মুয়েই থাইয়ের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। লন্ডনে জন্ম নেওয়া সিলেটী বংশোদ্ভূত সেই রুকসানা বেগম নীরবে নিভৃতে আগামীকাল লড়বেন বাংলাদেশের পেশাদার বক্সিং ‘বেক্সিমকো এক্সবিসি ফাইট নাইট’ প্রতিযোগিতায়।

এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট গত বছর থেকেই আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশের বক্সারদের নিয়ে পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতা। আন্তর্জাতিক বক্সারদের নিয়ে নিয়ে এটি দ্বিতীয় আসর। এবারের আসরে অবশ্যই বড় চমক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বক্সার রুকসানা। ৩৬ বছর বয়সী সাবেক কিক বক্সিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের জীবনটাই অবশ্য চমকে ভরা।

২০১০ সালে থাই মার্শাল আর্টখ্যাত মুয়েই থাইয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে সাড়া ফেলেছিলেন রুকসানা। তাঁরও আগে ২০১২ সালে হয়েছিলেন ব্রিটেনে মুসলিম নারী খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছাদূত। একই বছর ব্রিটেনে ১০০ প্রভাবশালী বাংলাদেশির তালিকাতেও ছিলেন রুকসানা। ২০২০ সালে প্রকাশিত তাঁর জীবনী ‘বর্ন ফাইটার’ ব্রিটেনের অন্যতম সাড়া জাগানো বইয়ের একটি।

পেশাদার লড়াকুর মতো রুকসানার জীবনটাও লড়াইয়ে ভরপুর। ২০০৬ সালে বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন ব্যাংকার সাঈদ চৌধুরীকে। দুই বছর পরই হয়ে যায় ছাড়াছাড়ি। নিজের জীবনীতে রুকসানা লিখেছিলেন, বিয়ের পর লড়াকু পরিচয়টাই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। মানসিক সমস্যায় ভর্তি হোন হাসপাতালে। সেখান থেকেই বাবা-মায়ের সমর্থন পেয়েই বিবাহ বিচ্ছেদের পরপরই মুয়েই থাইয়ে ব্রিটিশ চ্যাম্পিয়ন হোন রুকসানা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে হোন কিক বক্সিংয়ে হোন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।

মুয়েই থাই ছেড়ে ২০১৮ সালে পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লেখান রুকসানা। নিজের শেকড়ে আগামীকাল বাংলাদেশের তানজিলার বিপক্ষে লড়বেন ৩৬ বয়সী বক্সার। ইংল্যান্ডের পর বাংলাদেশেও চ্যাম্পিয়ন হতে চান সিলেটী বংশোদ্ভূত রুকসানা, ‘বাংলাদেশ আমার ঘর। এখানে আমার শেকড় গাঁথা। বাংলাদেশে এসে খেলটা আমার জন্য অনেক বড় কিছু। ইংল্যান্ডে একজন নারী বক্সার হিসেবে আমি যে পরিবর্তন আনতে পারি তার চাইতে অনেক বেশি পরিবর্তন আমি এখানে আনতে পারব। এখানে মেয়েরা আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে। তারা বিশ্বাস করবে যে স্বপ্ন সত্যি করা সম্ভব।’

সিলেটের বালাগঞ্জে রুকসানার শেকড়। বাবার হাত ধরে তিন বছর বয়সে প্রথম বাংলাদেশে আসেন রুকসানা এরপরও একাধিকবার এসেছেন নিজের বাবার ভিটায়। সবশেষ এলেন ২০ বছর পর। কিক বক্সিং ছেড়ে বক্সিংয়ে এসেছেন নিজের লড়াকু মানসিকতার পরিচয় রেখেই। রুকসানার মতে, ‘বক্সিং খেলাটা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বক্সিং আমাকে জীবন যাপনের নতুন পথ দেখিয়েছে। কিভাবে প্রাণবন্ত ভাবে বাঁচা যায়, লক্ষ্যে কীভাবে অবিচল থাকতে হয় এটা আমাকে বক্সিং শিখিয়েছে। আমি জানি জীবনে সব কাজে আমি সফল হব না। তবে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে বক্সিং আমাকে শিখিয়েছে।’

মোট ১৪ বক্সার বিভিন্ন ওজনের ৭টি শ্রেণিতে আগামীকাল লড়বেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। ফেদারওয়েট, লাইট হেভিওয়েট, ব্যান্টামওয়েট, ক্রুজারওয়েট, ফ্লাই ওয়েট, লাইটওয়েট এবং ওয়েল্টারওয়েট শ্রেণিতে লড়বেন বক্সাররা। ব্যান্টামওয়েট ক্যাটাগরিতে ছয় রাউন্ডের একটি ম্যাচের মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্টটি শুরু হবে যেখানে দুজন বাংলাদেশি বক্সার অংশগ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, আদনান হারুন বলেন, ‘এই বছরের ফাইট নাইটে সুপারস্টার রুকসানা বেগম এবং তানজিলাকে মুখোমুখি করাতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করি এর মাধ্যমে দেশের নারী বক্সারদের পথ আরও প্রশস্ত হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত